আমার চোখে বর্তমান... দুপুরের কিছু আগে বন্ধু রুপন বলল সাভারের জন্য ও কিছু করতে চাচ্ছে। আমিও একমত। ঠিকহলো সন্ধ্যায় যাব, আমার অফিস মোটামুটি গুছিয়ে। কিন্তু বিকালেই রওনা হলাম, প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনে নিয়ে একসংগে রওনা হবো বলে।
গনজাগরন মন্চের ফিল্ড হসপিটালের বাধন ভাইকে (০১৬৭৪৭৭৪৬৩৩) ফোনে জিগ্গেস করলাম কি কি প্রয়োজন এই মুহুর্তে।
তিনি জানালেন অক্সিজেন । ওষুধের কথা জিগ্গেস করলাম। তিনি জানালেন তাদের কাছে যথেষ্ট আছে, তবে এনাম মেডিকেলে কিছু ওষুধ দরকার।
এর মধ্যে স্কুলের দুই বন্ধু, আমার অফিসের দুই কলিগ ও এক কাজিন জানাল তারাও কিছু টাকা দিতে চায়। আমরা যেন আপাতত দিয়ে দেই, তারা আমাদের পরে দিয়ে দিবে।
৪ টার দিকে বের হলাম। গুলশান থেকে ওষুধ গুলো (ফেসবুকে পাওয়া লিস্ট অনুযায়ী) কিনে তেজগাঁ গেলাম অক্সিজেনের সন্ধানে। কিন্তু আমাদের যে ছোট সাইজের অক্সিজেন বোতল দরকার, সেগুলো তারা তৈরী করেন না। তারা হাসপাতালে ব্যবহার উপযোগী বড় বোতল তৈরী করেন। তারা জানালেন সাভারের হাসপাতাল গুলোতে অক্সিজেনের অভাব নেই।
আর ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়াদের বড় বোতল দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করাটা খুবই রিস্কি। তাই তারা বুদ্ধি দিলেন পারলে ছোট বোতল গুলো নিতে।
এর মধ্যে আরে কয়েকজনকে পেলাম তেজগাঁওতে অক্সিজেন কিনতে এসেছেন। তারা জানালেন ঢাকা শহরের সব সোর্স তারা খুজেঁছেন, ছোট বোতলের অক্সিজেন কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের একজনের কাছে এনাম হাসপাতালের ডাক্তার শুভর (০১৭২৩৮০৬৩৩৩) নাম্বার পেলাম।
তিনি জানালেন তাদের সব ওষুধই আছে কেবল Meropeenum ইনজেকশন শেষের দিকে। এটা পেলে ভাল হয়।
আমরা অক্সিজেনের আশা ত্যাগ করে ভাবলাম ইনজেকশনটি বেশী করে কিনে নিয়ে যাই। পথে আসতে আসতে কয়েক জায়গায় খোজঁ করলাম। অবশেষে সাভারের কাছে দুটি হাসপাতালের ফার্মেসীতে পেলাম, তাও যথেষ্ট পরিমানে নয়।
যতটুক পেলাম কিনে নিলাম। সাভারে ঢুকার রাস্তা ভলান্টিয়াররা নিয়ন্ত্রন করছে। আমরা জানালাম হাসপাতালের জন্য ওষুধ এনেছি, তখন আমাদের গাড়ী যেতে দিল।
এগিকে গুলশান থেকে কেনা ওষুধগুলো ইতিমধ্যে এনাম মেডিকেলের একটি গাড়ীতে দিয়ে দিলাম। বাকীগুলো নিয়ে মেডিকেলে গিয়ে শুভ সাহেবকে ফোন দিলাম।
ভদ্রলোক এসে ওষুধ গুলো নিয়ে জানতে চাইলেন আমরা কোন কোম্পানী থেকে এসেছি? কারো কাছে প্রাপ্তি স্বীকার বা কোন ফরমালিটিজ করতে হবে কিনা? বললাম যে, আপনার নাম্বার একজনের কাছ থেকে পেয়ে যোগাযোগ করেছি, কোন কোম্পানী, কি কোম্পানী এসব জানতে হবে না। আপনি প্রয়োজন মতো ব্যবহার করেন। ডঃ শুভ আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কৃতজ্ঞতায়। আর আমি তখন নিশ্চিন্ত হলাম, ওষুধ গুলো ঠিক জায়গাতেই দিয়েছি।
আমাদের কাছে তখনো কিছু এয়ার ফ্রেসনার আছে।
সেগুলো কাকে দেয়া যায় ভাবছিলাম। ধ্বংস স্তুপের কাছে গিয়ে ঘুরছি কিন্তু দেয়ার মতো কাউকে পাচ্ছি না। এক সময় দেখলাম আরো একজন আমার মতো এয়ার ফ্রেসনার নিয়ে ঘুরছেন। একে ওকে জিগ্গেস করে পরে আর্মির বুথের কাছে দিয়ে আসলাম। বন্ধু রুপন বাকী টাকাগুলো এনাম হাসপাতালের ১০৬ নাম্বার রুমে (মার্কেটিং ডিরেক্টরের রুমে) দিয়ে আসল।
কয়েকটি পরামর্শ:
১. যারা সহযোগীতা করতে চান, একটি টিমের কাছে টাকা হস্তান্তর করাটাই বোধহয় বেশী ভাল। যোগাযোগ করতে পারেন: গন জাগরন মন্চের সাথে শাহবাগে বা সাভারে (বাধন ভাই ০১৬৭৪৭৭৪৬৩৩), অথবা Iresh Zaker (01779012817) এর সাথে।
২. সম্ভবত কাল থেকে এই লোকগুলোর খাবার, অক্সিজেন বা ওষুধের থেকে নগদ অর্থের প্রয়োজন পড়বে বেশী।
৩. সাভারের রাস্তার শুরুতেই (যেখান থেকে যানবাহন নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে) যদি একটি কালেকশন বুথ থাকতো, যেখানে সবাই নিয়ে আসা পন্যগুলো জমা দিত, সেখান থেকে যেখানে যখন প্রয়োজন ওষুধ, পথ্য বা অক্সিজেন নেয়া হতো, তাহলে লোকজনের ভীড় অনেকটা কমানো যেত।
৪. সুস্ঠভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে হলে সাধারনের ও মিডিয়ার ভীড় কমানোটা খুব দরকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।