- তুমি আগে বল প্রষ্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য গবেষনা হোক সেটা তুমি চাও কীনা?
- আমি আমার গোঁফটা অর্ধেক ফেলে দিতে পারি
- না না ডেভিড ফ্রি চ্যালেঞ্জ দিয়েছে যে টোনি যদি মাথা চেঁছে ফেলে, তাহলে ২০০০ ডলার গবেষনা ফান্ডে দেবে, তোমাকে চুলের মায়া ছাড়তে হবে...
আমার কিউবটা আমার বস টনির রুমের ঠিক পাশেই। সকালে অফিস শুরু হতে না হতেই দেখি সিইও ন্যান্সি আর ফাইনান্স ডিরেক্টর হিদার দুই মহিলা টনির রুমে ঢুকলো। আমি তাদের আলাপ শুনছিলাম আমার কিউবে বসে বসে।
কয়েকদিন আগে অপারেশন ইনচার্জ ডেভিড ফ্রিকে একজন চ্যালেঞ্জ করেছে – ১০০০ ডলারের চ্যালেঞ্জ, সে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছে – গোঁফ কড়া গোলাপি রঙ করে অফিসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, প্রষ্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার গবেষনায় চলে গেছে সেই টাকা। (এই সাইটটাতে আছে এই ফান্ড রেইজিঙ সংক্রান্ত তথ্য:http://ca.movember.com)
এইভাবে মজা করতে করতে ভালো কাজের ফান্ড তৈরী হচ্ছে।
আরেকবার দেখলাম একটা খেলা হলো অফিসে – কোন ডিপার্মেন্ট সর্বাধিক সংখ্যক পেনি জমা করতে পারে – পুরষ্কার হচ্ছে ডিপার্টমেন্টের সবার জন্য একবেলা পিটজা। সব সংগ্রহ যাবে একটা ফান্ডে যারা কমিউনিটির বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে। আমাদের দেশে চারানা আটানা যেমন আজকাল পড়েই থাকে, এইখানে তেমনই পেনিগুলো বলতে গেলে ব্যবহৃত হয়না, এই ড্রয়ারে সেই ড্রয়ারে কোণাকাঞ্চিতে পড়ে থাকে। এই খেলায় জেতার জন্য সবাই বাসার সবকিছু ঝাড়াঝুড়া দিয়ে পেনিগুলি নিয়ে আসে- পেনি রাখার রোল পাওয়া যায় সেই রোলে সাজিয়ে। আমিও আমার ছেলে আর বউকে নিয়ে বাসার যেখানে যত পেনি পেলাম রোল করলাম।
প্রায় চারশোর মত পেনি পেলাম খুঁজেপেতে। আমরাও মজা পেলাম, বিশেষ করে আমার ৩ বছরের ছেলে মহা আনন্দ পেল আমাকে হেল্প করে।
খেলার একটা মজার স্ট্রাটেজি হচ্ছে অন্য ডিপার্টমেন্টের পেনি সংগ্রহকে সাবোটাজ করা যায় – ধরেন ক ডিপার্টমেন্টে ৩০০ পেনি সংগ্রহ করেছে, এখন খ ডিপার্টমেন্ট যদি ক ডিপার্টমেন্টের ফান্ডে ৩ ডলার দেয়, তাহলে ক ডিপার্টমেন্টের পেনির কাউন্ট হয়ে যাবে শূণ্য। আর সাবোটাজ মানি কেউ অস্বিকার করতে পারবে না, কেউ যদি সাবোটাজ মানি দেয় সেটি নিতেই হবে, এইটা খেলার একটা রুল। এইভাবে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত একজন আরেকজনকে সাবোটাজ করতে চেষ্ঠা করে, এইভাবে ফান্ডটাও বাড়তে থাকে।
এই রকম অনেক নজির দেখি এইখানে কানাডায় আমার এই ছোট শহরে – ভালো ভালো উদ্যোগের জন্য ফান্ড সংগ্রহের নানান চমৎকার সব আইডিয়া।
শহরের দরিদ্রদের, অভাবীদের জন্য আছে ফুড ব্যাংক, টাকা না দিতে পারো খাবার দাও – শুকনো খাবার, টিনজাত খাবার, পাউডার দুধ থেকে শুরু করে বিনস অথবা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র যেমন টিস্যু পেপার অথবা টুথপেষ্ট।
তাছাড়া টেলিভিশনে বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থার নানা রকম মন ছোঁয়া বিজ্ঞাপন চলছে নিত্যই – মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য, সেবা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
আমি নিজে একবার এইরকম বিজ্ঞাপনে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটা সেলাই মেশিন কেনার টাকা দিয়ে দিলাম অনলাইনে আমার মায়ের মৃত্যু দিবসে। মিলাদতো করতে পারি না এইদেশে, তাই ভাবলাম এই পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে কোন এক গরীব মহিলা সেলাই মেশিনটা পাবে, তার সংসারে হয়ত কিছুটা স্বাচ্ছন্দ ফিরে আসবে।
অনলাইনে দান, কোন ঝক্কি ঝামেলা হলো না, ঘরে বসে আরামসে বেরিয়ে গেল কিছু টাকা। আমার বউকে বোঝালাম “সদগায়ে জারিয়া” জারী থাকবে (যদিও যে প্রতিষ্ঠানকে টাকাটা দিলাম সেটা খৃষ্টানদের পরিচালিত)।
এই রকম জন্মগতভাবে ঠোঁট কাটা বাচ্চাদের অপারেশনের জন্য টাকা দিতে পারেন। আপনার টাকায় একটা বাচ্চার মুখে ফুটবে হাসি। দিনে মাত্র ১ ডলার দিয়ে আপনি স্পন্সর হতে পারেন আফ্রিকার অথবা অন্য কোন গরীব দেশের গরীব কোন বাচ্চার, সেই বাচ্চার ছবি, তার খোঁজখবর পাঠাতে থাকবে, এইভাবে আপনি দেখতে পাবেন আপনার টাকায় দরিদ্র একটি শিশুর জীবনে গুনগত পরিবর্তন আসছে।
শুধু দেয়ার মত একমুখি নয়, বরং দেয়া-নেয়ার দুইমুখি একটা যোগসূত্র তৈরী করে দেবে, আপনি তখন সংগত কারনেই দান করতে স্বাচ্ছন্দ অনুভব করবেন।
আমরাও কি বাংলাদেশে বিদেশী দাতা সংস্হার উপর নির্ভর না করে, নিজেদের শক্তি ও সামর্থ থেকে এইরকম নানান মজার মজার আইডিয়ার মাধ্যমে নানা রকম ফান্ড গড়ে তুলতে পারি না বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কাজের জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।