আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরাগ উদ্ধারঃ পুলিশ বলছে "পুলিশ নাকি উদ্ধার করেছে, অথচ

মানবিক দায় ও বোধহীন শিক্ষা মানুষকে প্রশিক্ষিত কুকুরে পরিণত করে....আইস্ট্যাইন। মা-বাবার চোখে জমে থাকা অশ্রু তখনও টপটপ করে পড়ছিল। সেই অশ্রু বেদনার নয়, আনন্দাশ্রু। দুঃসহ প্রতীক্ষার প্রহর কেটে যাওয়ায় নির্ভার স্বজনরাও। তাদের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।

'হারিয়ে' যাওয়া সোনার মানিক ফিরে পাওয়ার তৃপ্তি। রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে অপহৃত ছয় বছরের শিশু পরাগ মণ্ডলকে ফিরে পেয়ে তার স্বজনদের অনুভূতি ছিল এমনই। অপহরণকারীদের ডেরা থেকে ছোট্ট পরাগ তার প্রাণপ্রিয় মা-বাবার কোল ফিরে পেল, তবে তাকে উদ্ধারে সেই 'অভিযান' ছিল রহস্যঘেরা। পরাগকে উদ্ধারে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও ধূম্রজাল কাটেনি মুক্তিপণ নিয়ে। পরাগ অপহরণের সঙ্গে জড়িত সাত-আটজনের মধ্যে ইতিমধ্যে দু'জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

তারা হলো অপহরণ চক্রের অন্যতম হোতা আমিরের স্ত্রী ইতি ও মামুন। এ ছাড়া অপহরণকারী চক্রের সদস্য সঞ্জয় ও রুবেলকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। র‌্যাব সূত্র জানায়, অপহরণে দুটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। অপহরণকারীদের অধিকাংশই ধনিয়া কলেজের ছাত্র। পরাগকে উদ্ধারের পর র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে শিশু পরাগকে উদ্ধার করা হয়েছে।

মুক্তিপণের টাকা দিয়েছেন পরাগের বাবা বিমল মণ্ডল। গতকালও র‌্যাব তাদের বক্তব্যে অটল ছিল। র‌্যাব বলছে, তাদের কাছে এ ব্যাপারে প্রমাণও রয়েছে। পুলিশ এমন তথ্য নাকচ করে দেন। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, শিশু পরাগকে সুস্থভাবে উদ্ধারই ছিল উদ্দেশ্য।

সে কারণেই মুক্তিপণ দিয়ে শিশুটিকে ছাড়িয়ে আনা হয়। টাকা না দিয়ে উদ্ধারের চেষ্টায় শিশুটির কোনো ক্ষতি হলে এর দায়িত্ব কে নিত? তখন প্রশ্ন উঠত, 'টাকাটাই বড় হলো। ' তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার ছানোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ফাঁদ পেতে পরাগকে উদ্ধার করেছে ডিবি। পরাগের বাবাকে ব্যবহার করেই অপহরণকারীদের সঙ্গে কথোপকথন চালায় ডিবি। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা অপহরণকারীদের নজরদারিতে রাখে।

অপহরণকারীদের সঙ্গে পরাগের বাবা বিমল মণ্ডলের ৫০ লাখ টাকার চুক্তি হয়। তবে ডিবির কৌশলের কাছে পরাজিত হয়ে ওই টাকা দিতে হয়নি। অন্য কোনোভাবে মুক্তিপণের টাকা দেওয়া হয়েছে কি-না, তা ডিবির জানা নেই। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে র‌্যাব-ডিবির মতো পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে পরাগের পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তায়ও। পরাগের বাবা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দাবি করেছেন, তার ছেলেকে উদ্ধার করতে কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়নি।

মুক্তিপণের টাকা দিলে আমি অন্তত জানতাম। তবে পরাগকে উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে থাকা বিমল মণ্ডলের ভগি্নপতি কৌশিক চন্দ্র বিশ্বাস মুক্তিপণের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি সমকালকে বলেন, 'গোল্ড কিনতে গিয়েছি। ফ্রি তো গোল্ড পাওয়া যায় না। ' অবশ্য পরাগের ঠাকুরমা সাবিত্রী ম ল বলেন, 'টাকা গেছে, এতে দুঃখ নেই।

বড় কথা হলো, নাতি ফিরে এসেছে তো। ' এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, শিশু পরাগ ম লকে উদ্ধারে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার খবর সঠিক নয়। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি বলেন, 'আমাদের দায়িত্ব ছিল শিশুটিকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা। আমরা কৌশল অবলম্বন করে তা করতে পেরেছি। তবে এতে কোনো লেনদেন হয়েছে_ এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।

' মঙ্গলবার রাতে পরাগকে কেরানীগঞ্জের নয়াবাজার থেকে উদ্ধারের পর স্কয়ার হাসপাতালের অষ্টম তলায় আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জ্ঞান ফিরে আসে তার। কথাবার্তাও বলে স্বাভাবিকভাবে। হাসপাতালের চিকিৎসক মাসুদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে রয়েছে পরাগ। হাসপাতাল সূত্র এবং স্বজনরা জানিয়েছেন, পরাগকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল।

বর্তমানে সে সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত। সে কথা বলতে পারছে এবং নিকটাত্মীয় যারা দেখা করেছে, তাদের সবাইকে সে চিনতে পেরেছে। হাসপাতাল থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও পরাগ শঙ্কামুক্ত বলে জানানো হয়। গতকাল পরাগকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেন তার স্বজনরা। পরাগকে দেখতে বিকেল ৫টার দিকে তার মা লিপি মণ্ডল স্কয়ার হাসপাতালে যান।

গত রোববার প্রথম শ্রেণীর ছাত্র পরাগ মণ্ডল অপহৃত হয়। স্কুলে যেতে গাড়িতে ওঠার সময় সন্ত্রাসীরা মা, বোন ও গাড়িচালককে গুলি করে পরাগকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পর পরাগকে নেওয়া হয় মোহাম্মদপুরে : গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, শিশুটিকে অপহরণে সরাসরি অংশ নেয় আমির, সঞ্জয় ও টুণ্ডা রুবেল ও মামুন নামে চার সন্ত্রাসী। তাদের সহযোগিতা করে আমিরের সাবেক স্ত্রী ইতি এবং তার বড় ভাই। ডিবি বলেছে, অপহরণকারীরা সকাল ৭টায় কেরানীগঞ্জ থেকে পরাগকে অপহরণ করে।

সকাল সাড়ে ৯টায় মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় নিয়ে যায় তাকে। ওই বাসাটি অপহরণকারী দলের এক সদস্যের আত্মীয়ের। ওই বাসায় অপহরণকারীরা বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। ওই বাসা থেকে বের হয়ে যোগাযোগ করে পরাগের বাবার সঙ্গে। তারা পরাগকে ফেরত দিতে দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

গোয়েন্দারা জানান, চার অপহরণকারী আর পরাগকে যে বাসায় রাখা হয়েছিল, সেই দম্পতির মোবাইল ফোনে নজরদারি চলতে থাকে। তাদের মধ্যে চার অপহরণকারী পরাগকে রেখে চলে যায় নারায়ণগঞ্জের শাহীন মহল্লা নামে একটি এলাকায়। এরপর তারা রাজধানীর লালবাগ, বঙ্গবাজার ও জুরাইন এলাকায় অবস্থান করে। পরাগকে পেতে কৌশল : ডিবি কর্মকর্তারা জানান, পরাগকে অপহরণকারী দলের মূল হোতা আমিরের স্ত্রী, বোন-ভগি্নপতি এবং বড় ভাইকে গোয়েন্দা কার্যালয়ের স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে ডেকে নেওয়া হয়। গোয়েন্দারা তাদের মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করেন।

এক পর্যায়ে গোয়েন্দারা কৌশলে আমিরের স্ত্রীর সঙ্গে আমিরের কথা বলান। এ ক্ষেত্রে আমিরের প্রথম স্ত্রীর ছেলেও কথা বলে আমিরের সঙ্গে। গোয়েন্দারা কোনোভাবেই বুঝতে দেয় না যে তারা গোয়েন্দারের হেফাজতে থেকেই কথা বলছে। ডিবির কন্ট্রোল রুম : ডিবি কর্মকর্তারা জানান, ১১ নভেম্বর সকালে অপহরণের পর ওই রাতেই পরাগকে উদ্ধারে ডিবি অফিসে খোলা হয় কন্ট্রোল রুম। রোববার রাত সাড়ে ১১টা থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা_ টানা ৪৮ ঘণ্টা পর পরাগ উদ্ধার অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটায় বলে দাবি করে ডিবি পুলিশ।

কন্ট্রোল রুমে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার, দু'জন সহকারী পুলিশ সুপার আর অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক কাজ করেন। সবকিছুর সমন্বয় করেন জিম্মি উদ্ধার বিষয়ে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ছানোয়ার হোসেন। এ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, 'আমাদের চেষ্টা ছিল শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। একই চেষ্টা করেছেন র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও। ফলে অপহরণকারীদের সন্ধান পাওয়ার পরও বলতে গেলে তাদের গ্রেফতারে তেমন কোনো অভিযান হয়নি।

তবে নেওয়া হয়েছিল ভিন্ন কৌশল। অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হলে পরাগের বাবাকে দিয়েই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একটি দল কন্ট্রোল রুমে বসে প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। অপর একটি দল মাঠপর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারি চালাতে থাকে। ' অভিযানে থাকা এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অপহরণকারীদের সন্দেহ এড়াতে পরাগের বাবার সঙ্গে গোয়েন্দারা সরাসরি দেখা করেননি।

তার কেরানীগঞ্জের বাসা কিংবা হাসপাতালেও যায়নি ডিবি। এমনকি প্রাথমিকভাবে তাকে ডিবি কার্যালয়েও ডেকে আনা হয়নি। শুধু মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কথা বলত গোয়েন্দারা। অপহরণকারীরা তাকে কী বলল, অপহরণকারীদের কী বলতে হবে_ সবকিছুই গোয়েন্দাদের শেখানো কথা ছিল। স্বামী-স্ত্রীর কথোপকথনে মেলে পরাগের হদিস : গোয়েন্দাদের সামনে আমিরের স্ত্রী ফোন দেয় তার স্বামীকে।

সে জানায়, পুলিশ জেনে গেছে, আমিরই পরাগকে অপহরণ করেছে। বাড়ির পাশে পুলিশ ঘুরছে। অপর প্রান্ত থেকে আমির তা স্বীকারও করে। স্ত্রী বলে, 'শিশুটাকে মেরো না। তুমি একজনকে মারবা।

ওরা তো আমাদের সব মেরে ফেলবে। ' এতেও মন গলে না আমিরের। পরাগ জীবিত আছে জানিয়ে সে দুই কোটি টাকা দাবি করে। পরে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানায়, ৫০ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে পরাগকে। এ সময় আমিরের শিশু ছেলেও বাবার সঙ্গে কথা বলে।

বাবাকে দেখার আকুতি জানায় সে। একপর্যায়ে ফোন কেটে দেয় আমির। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে আমিরসহ অপহরণকারীদের অপর সদস্যদের সঙ্গে পরাগের বাবা সমঝোতা চালাতে থাকেন। তিনি ৫০ লাখ টাকার মুক্তিপণে ছেলেকে ফিরে পেতে রাজি হন। মঙ্গলবার রাত ৯টায় আমির তার স্ত্রীকে ফোন দেয়।

সে জানায়, ছেলেটাকে ছেড়ে দিলে সে নিজে বাঁচবে না। পুলিশ তাকে ধরতে পারলে মেরে ফেলবে। এ সময় আমিরের স্ত্রী জানায়, পুলিশ বাসায় গিয়ে তাকে জানিয়েছে, ছেলেটাকে (পরাগকে) জীবিত ছেড়ে দিলে পুলিশ তাকে কিছু বলবে না। থানা থেকে মামলাও তুলে নেবে। এ সময় তার স্ত্রী কেরানীগঞ্জের বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা সহযোগিতা করবে বলেও আমিরকে আশ্বাস দেয়।

একপর্যায়ে আমির ছেলেটাকে (পরাগ) বছিলা ব্রিজ থেকে নিয়ে যেতে বলে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, খবর পেয়েই আমিরের স্ত্রী, অপহৃত পরাগের বাবা বিমল মণ্ডল ও তার কয়েক স্বজন এবং গোয়েন্দা দল বছিলা ব্রিজে ছুটে যায়। গোয়েন্দা দলটি আমিরের স্ত্রীকে নিয়ে আড়ালে থেকে যায়। পরাগের বাবাকে পাঠানো হয় মূল স্পটে। তবে বছিলা ব্রিজে পরাগকে না রেখে এর একটু দূরে আটিপাড়া এলাকায় রেখে যায়।

মোটরসাইকেল আরোহী শনাক্ত : আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি নির্ভরশীল সূত্র সমকালকে জানান, পরাগ অপহরণ করে যে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়া হয় তার চালক ছিল আমির। তার সহযোগী ছিল সঞ্জয়। পরাগকে অপহরণ করে মোটরসাইকেলে দু'জনের মাঝখানে বসানো হয়। এরপর তারা মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় পরাগকে লুকিয়ে রাখে। সেখানে একজন নারীও উপস্থিত ছিল।

সেও অপহরণকারী চক্রের সদস্য। পরাগকে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় মঙ্গলবার রাতে ওই নারীও অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে উপস্থিত ছিল। আমির ও সঞ্জয় মিলেই পরাগকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। তাদের সঙ্গে মোহাম্মদপুর, শুভাঢ্যা ও চুনকুটিয়া এলাকার আরও কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিল। র‌্যাবের বক্তব্য : র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ক্যাপ্টেন এম সোহায়েল বলেন, শিশুটি অপহরণের পর থেকেই র‌্যাবের একাধিক টিম মাঠে নামে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা শিশুটিকে উদ্ধারে কাজ করে। র‌্যাবের টার্গেট ছিল দুটি। প্রথমত, যে কোনো মূল্যে জীবিত অবস্থায় শিশুটিকে তার মা-বাবার কোলে ফেরত দেওয়া। দ্বিতীয়ত, অপহরণকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। প্রথম কাজটি নির্বিঘ্নে হয়েছে।

এবার অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে। পরাগ অপহরণের সঙ্গে জড়িত চক্রটি শনাক্ত করা হয়েছে। অপহরণকারীরা কালা চান নামে যে সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করে পরাগকে অপহরণ করে, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কেন অপহরণকারীদের গ্রেফতার করা যায়নি_ এমন প্রশ্নের জবাবে সোহায়েল বলেন, অপহরণকারীদের গ্রেফতার করা হলে শিশুটিকে জীবিত পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল। উদ্ধার অভিযানে অপহরণকারীদের সঙ্গে পরাগের বাবার কথোপকথনের সময় তারা এমনও বলছিল, পেছনের সিএনজিতে কারা আসছে।

যারা অপহরণের সঙ্গে জড়িত, তারা খুব বড় মাপের কোনো সন্ত্রাসী নয়। তার বয়সও খুব বেশি নয়। নয়াবাজারে যেভাবে পরাগকে ফেলে গেল অপহরণকারীরা : মঙ্গলবার রাতে কেরানীগঞ্জের আটিপাড়া এলাকার নয়াবাজারে শিশু পরাগকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। রাস্তার পাশ থেকে তাকে কুড়িয়ে নেন নৈশপ্রহরী হাবিবুর রহমান। তিনি গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সমকালকে জানান, রাত সোয়া ১১টার দিকে নয়াবাজারের মসজিদ মার্কেট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তখন ওই এলাকা ছিল অন্ধকার ও প্রায় নির্জন। এ সময় একটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে তার সামনে দিয়ে চলে যায়। কিছুটা সামনে গিয়ে আবার হঠাৎ করেই সেটি থেমে যায়। দূর থেকে দেখে হাবিবুরের মনে হয়, মোটরসাইকেল থেকে কিছু একটা নামানো হচ্ছে। কৌতূহলবশত তিনি এগিয়ে যান।

তবে তিনি পেঁৗছানোর আগেই মোটরসাইকেলটি দ্রুত আটিবাজারের দিকে চলে যায়। সেখানে গিয়ে হাবিবুর অচেতন অবস্থায় এক শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন। ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি শিশুটিকে কোলে করে নিয়ে যান ওসমান স্টোর নামে কাছের একটি মুদি দোকানে। দোকান মালিক ওসমান জানান, শিশুটির চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে চেতনা ফেরানোর চেষ্টা করেন তিনি। এ পর্যায়ে তার মনে হয়, এ শিশুই অপহরণ হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর ও ছবি বেরিয়েছে।

নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি পরাগের বাবার কর্মচারী দীপু সরকারকে ডেকে পাঠান। দীপুর বাসা কাছেই। তিনি ছুটে যান ওসমানের দোকানে; কিন্তু পরাগকে ভালো করে চিনতেন না বলে তিনিও নিশ্চিত হতে পারলেন না। এ সময় সেখানে উপস্থিত হয়ে একজন অটোরিকশাচালক শিশুটিকে তার হেফাজতে নিয়ে যেতে চান। তবে তার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে দীপু মোবাইল ফোনে পরাগের বাবা বিমল মণ্ডলকে এ ব্যাপারে জানান।

বিমল শিশুকে দেখভাল করতে বলেন এবং তিনি দ্রুত আসছেন বলে জানান। এরই মধ্যে শিশুটির চেতনা ফিরে আসে। তবে সে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি। তাকে নিজের বাসায় নিয়ে যান দীপু। দীপু সরকার সমকালকে জানান, পরাগকে বাসায় নিয়ে শুইয়ে দিলে সে 'জল' খেতে চায়।

পানি পান করার পর সে দীপুর ঠাকুরমার কাছে জানতে চায়, বাবা কোথায়? তখন তার আচরণ দেখে মনে হয়, সে ওই বাসাকে নিজের বাসা বলেই ভাবছে। একপর্যায়ে তাকে মোবাইল ফোনে বিমলের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। তখন পরাগ বলে, 'বাবা আসো আসো, আমাকে নিয়ে যাও। ' কণ্ঠস্বর শুনে বিমল নিশ্চিত হন, এই তার হারিয়ে যাওয়া সন্তান। রাত পৌনে ১২টার দিকে তিনি সাদা পোশাকে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দীপুর বাসায় উপস্থিত হন।

ছুটে গিয়ে কোলে তুলে নেন হারিয়ে যাওয়া বুকের ধনকে। নৈশপ্রহরী হাবিবুর রহমান আরও জানান, অপহরণকারীদের মোটরসাইকেলটি কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া এলাকার দিক থেকে আসে এবং পরে আটিবাজারের দিকে চলে যায়। সেটিতে কালো বোরকা পরা এক নারীসহ দু'জন আরোহী ছিল। প্রথমে তিনি পরাগকে লক্ষ্য করেননি। তার ধারণা, মোটরসাইকেলের চালক ও নারী আরোহীর মধ্যে পরাগকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।

এ কারণে আধো অন্ধকারে তিনি তাকে দেখতে পারেননি। View this link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.