মনোয়ারা মণি
অনেক আশা আকাংখা আর স্বপ্নে ঘেরা আমাদের জীবন।
শারীরিক সুস্থ্যতা রক্ষার জন্য আমাদের সচেতন থাকা আবশ্যক।
কারণে অকারণে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় আমাদের শরীরকেই আমরা সবচেয়ে বেশী অবহেলা করি।
এই কাজটি আমরা প্রতিদিন এজন্যই করতে পারি কারণ শরীর তৎক্ষণাৎ আমাদের সাথে বিদ্রোহ করে না আর যখন করে তখন হয়তো বা অনেক বেশী দেরী হয়ে যায়।
শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
আজকের প্রসংগ দুরারোগ্য শারীরিক অসুস্থ্যতা আমাদের মনের উপর কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে।
আমরা বিষয়টির কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করতে পারি।
শারীরিক অসুস্থ্যতাঃ
যে কোনো শারীরিক অসুস্থ্যতা আমাদের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক গতিতে কম বেশি প্রভাব ফেলে।
সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত হলে মন খারাপ হবে এটা অত্যন্ত স্বভাবিক। অসুখ চিকিৎসার পরে নিরাময় হলে আমাদের মন আস্তে আস্তে ভালো হয়।
আমরা আবার স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করি। যদি কোনো অসুস্থ্যতা দুরারোগ্য বা চিকিৎসায় ভালো না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে শারীরিক কষ্টের সাথে মানসিক কষ্ট মিলে পুরো সমস্যা আরো বেশী জটিল আকার ধারণ করে।
ব্যথা, সীমিত চলাফেরা বা যোগাযোগ করতে না পারা আমাদের যন্ত্রণাকে সার্বিকভাবে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
স্বনির্ভরতা হারানোর বেদনা হয় নিত্যদিনের সাথী।
মানসিক স্বাস্থ্যঃ
শারীরিক সুস্থ্যতা অথবা অসুস্থ্যতা আমাদের মনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
যেমন আমরা যখন ভালো বোধ করি তখন সব কাজে প্রফুল্লতা আসে আবার যখন ক্লান্ত থাকি বা সামান্য মাথা ব্যথা বা সর্দি হয় আমরা কেমন নিস্তেজ হয়ে যাই।
যে কোনো জটিল অসুখ হলে মানসিক স্বাস্থ্য এতো বেশী আক্রান্ত হতে পারে যে শারীরিক অসুস্থ্যতার অনুভূতিগুলো অনেক বেশী অনুভূত হয় এমনকি শারীরিক স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে পারে।
ইমোশনাল বিষয়গুলোঃ
ইমোশন বা আবেগ মানসিক স্বাস্থ্যের একটা বিরাট অংশ।
অসুস্থ্যতায় আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্থ হলে মনও দুর্বল হয়। একজন মানুষ যখন জানতে পারে তার অসুখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নাই তখন বিষয়টা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে বা করতে পারে।
চারিদিকের ভালো লাগা জিনিসগুলোও খারাপ লাগতে শুরু করে।
ভয় ভীতি আশংকা দুশ্চিন্তা এতো বেড়ে যায় যে মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয় এবং ডিপ্রেশনে ভোগে।
একজন হাসিখুশি মানুষের মেজাজও খিটখিটে হতে পারে।
অনেক সময় নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী বা বোঝা মনে হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স শুরু হয় অনেকের।
সেলফ হার্ম বা সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি আসতে পারে।
সব কাজে উৎসাহ হারিয়ে নিজেকে সামাজিক জীবন থেকে সরিয়ে একাকীত্ব জীবনকে আঁকড়ে ধরতেও দেখা যায়।
আর্থসামাজিক ও পারিবারিক সমস্যাঃ
পরিবারের একজন দুরারোগ্য শারীরিক অসুস্থ্যতায় ভুগছে এটা সবার জন্যই বেদনাদায়ক।
এই অসুখ শুধু যে শরীর, মন, বা আবেগজনিত কষ্টকে দীর্ঘায়িত করে তাই নয়।
এসবের সাথে যুক্ত হয় সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চাপ।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে একথা ভেবে অসুস্থ্য মানুষটি আরো অস্বস্থি অনুভব করতে পারে।
কোনো কোনো সময় স্বজনেরা তাকে দেখতে এসে এমন ভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বা সহানুভূতির কথা বলে যেগুলো তার অসহায়ত্বের কথা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার মতো।
আশা আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণা অনেক।
প্রতিনিয়ত পরাধীনতার আঘাত সহ্য করাও সহজ হয় না।
মানসিক আঘাতের সাথে থাকতে পারে পারিবারিক সীমাবদ্ধতা।
অসুখের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যায়বহুল সেটা সামলানোর সাথে সাথে রোগীকে দেখাশুনা করার জন্য সময় দিতে হয় অন্যান্যদের।
সব মিলিয়ে আত্মবিশ্বাস কমে গিয়ে আক্রান্ত মানুষটিকে প্রচণ্ড অসহায়ত্ব গ্রাস করতে পারে।
উপসংহারঃ
যে কোনো কারণেই আমাদের জীবনে সীমাবদ্ধতা বা হতাশা আসুক না কেনো আমরা যদি সেটাকে পজেটিভ ভাবে নিতে সচেষ্ট হই বা নিতে পারি তাতে আমাদের অসুস্থ্যতা বা ব্যথার অনুভূতি অনেকটা কমে আসে।
এই ক্ষেত্রে স্বজনদের সহনশীলতা ও সহানুভূতি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনুশোচনা, অনুতাপ অথবা হতাশাকে পরাজিত করে যদি মানসিক শক্তি সবল রাখা যায় তাহলে আমরাও
Stephen Hawking এর মতো পৃথিবীকে অনেক কিছু দিয়ে যেতে পারি বা পারবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।