তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা
এই যা! শুরু হল হেঁচকী।
শায়ান ক্রমাগত হেঁচকী দিতে শুরু করেছে। পরীক্ষার আগমুহূর্তে তার এই সমস্যা। সে কি শেষবারের মত বইয়ের পাতাগুলো দেখে নিবে নাকি হেঁচকী সামলাবে। কি যন্ত্রণা!! পরীক্ষার হলে প্রথম পনের মিনিট সে হেঁচকাতে থাকে।
স্যারের হাত থেকে প্রশ্ন নেওয়ার সময়ও তার হেঁচকী চলে আসে। প্রশ্নগুলো পড়ার পর ধীরে ধীরে তা থেমে আসে। ততক্ষণে তার আশেপাশের পরীক্ষার্থীরা লেখা শুরু করেছে। তারা শায়ানের উপর বিরক্ত। নিরব নিস্তব্ধ হলে একজন হুউ হুউ করে হেঁচকী মারছে, কেমন দেখায় ব্যাপারটা! তবুও কেউ তাকে কিছু বলছে না।
স্যাররাও না। কারণ, এ জীবনে শায়ানকে কেউ কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতে দেখেনি। এমন নিরীহ প্রজাতির মানবসন্তানকে কি বলা যায়?
শায়ান ছাত্র হিসেবে ভাল। তবে কিঞ্চিত সমস্যা।
কারণ সবসময় তার মাথায় আজগুবি প্রশ্নরা এসে ভীড় করে।
সে যখন রিকশায় চড়ে, তার মাথায় প্রশ্ন এসে হাজির। আচ্ছা, রিকশা না থাকলে কি আমাদের ক্ষতি হত নাকি আমরা না থাকলে রিকশাওয়ালাদের ক্ষতি হত? কার প্রয়োজনীয়তা বেশী? এ প্রশ্নের ভেতর সে এমনভাবে ডুবে থাকে যে, নামার সময় সে ভাড়ার পরিমাণ ভুলে যায়। দশ টাকা নাকি বার টাকা, দরদামের পর রিকশাওয়ালা কত টাকায় রাজী হয়ে তাকে উঠেন বলেছিল। সে শঙ্কায় শঙ্কায় দশ টাকার নোট বের না করে বিশটাকার নোট এগিয়ে দেয়। দেখা যাক, রিকশাওয়ালা কত ফেরত দেয়।
মলিনমুখে রিকশাওয়ালা যখন দশটাকা ফেরত দেয়, তার মনে পড়ে, হুম আমি তো দামাদামি করে দশটাকায় চড়েছিলাম। বাঁচা গেল, বেশি দিতে হল না।
মসজিদের মত পবিত্র ঘরেও সে বালামুসীবতে লিপ্ত।
নামাযের নিয়ত বাঁধা মাত্র তার মনে কিলিবিলি শুরু হয়। রাজ্যের সব সুওয়াল জওয়াব এসে হাযির।
কোনটি রেখে কোনটি নিয়ে সে ভাববে, তার রাকাত সংখ্যা সে ভুলে যায়। সে নাকি জান্নাতের সৌন্দর্য আর জাহান্নামের জ্বলার কথা ভাবতে থাকে। এসব ভাবতে গিয়্ইে যতসব তালগোল। শুধুই কি রাকাত সংখ্যা, সালাম ফেরানোর পর কোন জুতার বাক্সে সে জুতা রেখেছিল, তা খুঁজে বের করতে করতে মসজিদ খালি হয়ে যায়। নিজের উপর ততক্ষণে সে বিরক্ত।
ধুর যা! সামনে থেকে ছেঁড়া জুতা পরে আসব। জুতা দরজার বাইরে রাখব। লাভ নেই, পরের বারও সে ভাল জুতা নিয়ে মসজিদে হাযির। নামাজের পর আবার বাক্্র বাক্স খোঁজা।
বন্ধুরা বলে, তোর হার্ডডিস্ক ভাল কিন্তু র্যাম খারাপ।
সেজন্যই তাৎক্ষণিক বিষয়গুলো তোর মনে থাকেনা। শায়ানের নিজের কম্পিউটার নেই। না থাকলে কি হবে, কম্পিউটারের আবিষ্কারক থেকে নিয়ে মাইক্রোসফটের সর্বশেষ সংস্করণের খবর সে রাখে। বন্ধুদের কাছে তাই সে উপকারী বন্ধু হিসেবেই পরিচিত।
দুনিয়ার নানা গল্প দিয়ে শায়ানের হার্ডডিস্ক ঠাসা।
কত তথ্য আর ইতিহাস সে হরহর করে শোনায়। মোঘল শাসনামলে সম্রাটদের নাম, শায়েস্তা খার আমলে জিনিসপত্রের দাম, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের নাম ও মেয়াদকাল- ছোটখাট সাধারণ জ্ঞানের পকেট গাইডের মতো এসব তার মুখস্থ।
শায়ানের বাবা একজন গাড়ীচালক।
ঢাকা শহরে বাস চালিয়ে তার আয়রোজগার। পাড়া মহল্লায় ভাল মানুষ হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে।
এমন অতিভদ্র স্বামী আর শায়ানের মত আলাভোলা ছেলে নিয়ে বিপদ হয়েছে তার মায়ের। এদের দুজনকে শাসাতে গিয়ে নিজের গলার স্বাভাবিক স্বর হারিয়েছেন এই মহিলা। তার গলায় গানের রেওয়াজ এখন শোনা যায় ফাঁটা বাশের ক্যাক ক্যাক এর মত। শায়ান এবং তার বাবা চোখ বুঁজে এসব সহ্য করেন। প্রতিবেশিরা বলে, শায়ানের মায়ের বকাঝকা খেতে খেতে এ বেচারা বাপ পুত্র নিরীহ স্বভাব পেয়েছে।
শায়ানের মা উল্টা জবাব দেয়, এরা দু জন একটু চালাক হলে কি আর আমার আজকে এ দশা? এই ছিল আমার কপালে লেখা!!
গল্প লিখিয়ে অভিজ্ঞ ভাইদের কাছে জিজ্ঞাসা, এটা কি কোন গল্পের প্রাথমিক সূচনা হতে পারে? এভাবে কি গল্প লেখা যাবে? এই জীবনে আমি কোন গল্প লিখিনাই। আজকের অবসরে এটুকু সাজালাম। আগা মাথা জানা নেই। তাই আপনাদের দ্বারস্থ হলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।