You can do anything, but not everything. শুরুতেই বলে রাখছি এটি শিক্ষামূলক লেখা। সুতরাং এখানে রস আশা করে পরে "হাসতে পারলাম না, দুঃখিত" বলে আমাকে অপমান করার চেষ্টা করবেন না।
ফেইসবুকের যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বলা যায় এটার প্রাণ তা হল স্ট্যাটাস আপডেট। কিন্তু অনেকের ওয়ালে ঢুকলেই দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তাদের ওয়াল ফাকা, নয়ত অমুক পেইজ তমুক বন্ধুর ওয়াল থেকে ছবি শেয়ার করা; নিজের লেখা কোন স্ট্যাটাসই নাই।
আমার ওয়াল এই ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন। মাঝে মাঝেই “ তুই এক্টূ কম স্ট্যাটাস দে, তোর স্টেটাসের জ্বালায় অন্যদের কিছুই চোখে পরে না” – জাতীয় বাক্যও শুনতে হয়। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই আজকের টিউটরিয়াল – কিভাবে স্ট্যাটাস দিবেন।
স্ট্যাটাস দেওয়া না দেওয়ার উপর ভিত্তি করে ফেইসবুক ইউজার দের প্রধানত ৫ ভাগে বিভক্ত করা যায়। এরা হইল-
১ ফেইসবুক সেলিব্রেটি – ইনাদের প্রত্যেকটা স্ট্যাটাস সাধারণত উপন্যাস সাইজের এবং ব্যাপক আবেগমিশ্রিত থাকে।
এবং শয়ে শয়ে লাইক এবং শেয়ার প্রাপ্ত হয়ে থাকে। আমাদের মুল টার্গেট ইনারা নন; যদিও কোন একদিন আপনিও হয়ে যেতে পারেন এই সেলিব্রেটিদের একজন।
২। আঞ্চলিক সেলিব্রেটি – বন্ধুবান্ধব্দের মধ্যে ইনাদের দেখা বেশি মেলে। বেশ আনন্দদায়ক এবং মজার মজার স্ট্যাটাস দিয়ে এবং বেশ নিয়মিত স্ট্যাটাস দিয়ে থাকেন ইনারা।
প্রত্যেকটা স্ট্যাটাস বেশ বৈচিত্র্যময়ও হয়ে থাকে। আমাদের মূল লক্ষ্য মুলত ইনারাই।
৩। লেইম স্ট্যাটাস প্রদানকারি – ইনারা সাধারণত “ভাত খাইয়া উঠলাম, তুম্রা খাইছ ফ্রেন্ডস?” বা “ আইজকা বাসার বাইরে জাচ্ছি, তুম্রা দোয়া কইর” এই টাইপ স্ট্যাটাস প্রদান করে থাকে এবং ফ্রেন্ডলিস্টে ঘাড়তেড়া কেউ থাকলে তাদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়।
৪।
সিজনাল স্ট্যাটাসপ্রদানকারীঃ ইনারা বিশেষ বিশেষ দিন, সময় – যেমন ঈদ, পুজা কিংবা নিজেদের বিশেষ কোন অর্জনে স্ট্যাটাস দিয়ে থাকেন। ইনারা সাধারনত ফেইসবুকে ঢুকেনও কালেভদ্রে
৫। দিমু ভাবি কিন্তু দেওয়া হয় নাঃ এই টাইপ ইউজাররা সারাদিন ফেবুতে বসে থাকেন এবং লোকজনের দেওয়া স্ট্যাটাস দেখে মনে মনে ভাবেন – “ইস, এই স্ট্যাটাসটাই তো আমি দিতে চাইছিলাম” কিংবা “ আমারও তো এই রকম একটা স্ট্যাটাস দেওয়া দরকার, কিন্তু লোকজন কিভাবে নিবে স্ট্যাটাসটা?” আপনি যদি এই ক্যাটাগরিতে পরেন তাইলে এই টিউটোরিয়াল সম্পূর্ণ আপনার জন্য। এছাড়া আপনি যদি ৪রথ ক্যাটাগরিরও হয়ে থাকেন তবুও লেগে থাকুন, আপনিও পারবেন।
এইবার আসি মুল কথায়ঃ
“কিভাবে স্ট্যাটাস দিবেন?” এইটা আসলে পুরাটাই প্র্যাকটিসের বিষয়।
কথায় আছে না –practice makes a man perfect. প্র্যাকটিসটাই হইল মুল বিষয়। মনে যা আসে তাই নিয়া স্ট্যাটাস দিবেন; খালি খেয়াল রাখবেন সেইটা যেন গৃহস্থালি স্ট্যাটাস যেমন “খাইয়া উঠলাম” “ঘুমাইতে গেলাম” লেভেলের না হয়। প্রথম প্রথম স্ট্যাটাস লেইম হইতেই পারে, সেইটা নিয়া টেনশনের কিছু নাই। কেউই একবারে অসাধারণ লেভেলে পৌছায় নাই; আপ্নেও পারবেন না। লাইগা থাকেন, তাইলেই পারবেন।
টপিকস নিয়া প্রথম প্রথম মাথা ঘামানোর দরকার নাই। তবে প্রথম প্রথম কবিতা এবং রাজনৈতিক দিকে না যাওয়াটাই বেটার। সিম্পলের মধ্যে থাকেন। পেপার পত্রিকা পরেন। অমুক নায়ক আইজকা এইটা করসে, অমুক নায়িকা এইটা – এইগুলা নিয়া মজার কোন ফানি স্ট্যাটাস দিতে পারেন।
যেমন কিছুদিন আগ পর্যন্তও অনন্ত জলিল ভাল একটা টপিকস ছিল। এইসব ক্ষেত্রে পাব্লিক সেন্টিমেন্ট মাথায় রাখবেন। কয়দিন আগেও লোকজন জলিলরে ধুইয়া দিসিল; এখন আবার তেল দিতেসে। আপনিও এইরকম সুযোগ বুইঝা বুইঝা সাইড চেইঞ্জ কইরা স্ট্যাটাস দিতে পারেন।
চেষ্টা করবেন বাংলা অক্ষরে স্ট্যাটাস দিতে; আজকাল লুকজন ইংরেজি ফন্টে দেওয়া স্ট্যাটাসের দিকে ফিরাও তাকায় না।
দৈর্ঘ্যের ব্যাপারে বলা যায় শুরুতে একটু ছোট সাইজের দুই এক লাইনের স্ট্যাটাস দিবেন। সেলিব্রেটি টাইপ না হইলে বেশি বড় স্ট্যাটাস না দেওয়াটাই উত্তম।
“স্ট্যাটাস কেম্নে দিমু? মাথায় তো কিছুই আহে না। একটু ধরাইয়া দিলে ভাল হইত। “ ঠিক আছে; আসেন শুরু করি।
ধরেন, কালকে থেইকা বাংলাদেশের খেলা শুরু। এইটা নিয়া কিন্তু দুইদিনব্যাপী স্ট্যাটাস দেওয়া যায়। খেলার আগের দিন দিবেন খেলা নিয়া আপ্নের অতীত কোন ঘটনার বিবরণ। সাথে এক চিমটি আবেগময় কথা ঢুকাইয়া দিবেন। খেলার দিন বা আগের দিন রাতে দিবেন গুডলাক জানাইয়া।
কথাগুলা মুটামুটি এইরকম হইব – ইনারা অনেক হতাশ করসে; তারপরেও আপ্নে ইনাদের উপর ভরসা রাখেন। আশা করবেন যে ইনারা এইবার আর হতাশ করবে না। মুটামুটি এইরকমই। এরপর খেলার পর মনে করেন আবার দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে গালাগালি না কইরা বরং তাদের পক্ষে কথা কইতে পারলে ভাল লাইক টাইক পাওয়া যায়।
রাস্তাঘাটে হাটাহাটি করার সময় ইন্টারেস্টিং কিছু দেখলে অইটা সংক্ষেপে বর্ণনা কইরা দিতে পারেন। এছাড়া মাঝে মাঝে হুমায়ুন আহমেদ, রবীন্দ্রনাথের কবিতা দিতে পারেন; কিংবা জনপ্রিয় কোন গানের দুই চার লাইন দিতে পারেন। চেষ্টা করবেন স্ট্যাটাসের বিষয় এবং টোনে ভেরিএশন রাখতে। যেমন একটা স্ট্যাটাস দিলেন ফানি মুডে, একটু পর সিরিয়াস মুডে একটা দিলেন; একটু পর কবিতা – এইভাবে অল্টার করে করে। তবে অন্য জায়গা থেইকা জিনিস পত্র মাইরা আইনা না দেওয়াই ভাল – কারণ আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকজন ধরতে পারলে কাপড়চোপর খুইলা রাইখা দেয়।
কবিতা লিখতে না পারলে সেই চেষ্টা না করতে যাওয়াই ভাল; কারণ লেইম কবিতা অনেক ক্ষেত্রেই উলটা রিএকশন করে। এছাড়া ফ্রেন্ডলিস্টে নিয়মিত স্ট্যাটাস আপডেট দেয় এইরকম লোকজন রাখার চেষ্টা করেন; তাইলে দুইটা লাভ। উনারা কিভাবে স্ট্যাটাস দেয় সেইটা খেয়াল করতে পারবেন আর দ্বিতীয়ত বিষয়ের অভাব হইব না। উনারা একটা বিষয় নিয়া লেখলে আপনিও একটু ঘুরাইয়া ওই বিষয় নিয়া স্ট্যাটাস দিয়া দেন। বিশেষ বিশেষ দিবস সমন্ধে একটু খোঁজখবর রাখবেন; ওই সব দিবসে প্রথমদিকে স্ট্যাটাস দিলে ভালই লাইক আসে।
এছাড়া ফেইসবুকে বিভিন্ন এপ টেপ আছে; অইগুলা ইউজ করেন আর ছবির উপ্রে মজার কিছু লেইখা দেন। মনে রাখবেন মানুষজন সাধারণত মজার জিনিসে লাইক দেয় বেশি, তবে জিনিস ভাল হইলে সিরিয়াস জিনিসেও লাইক পাইবেন।
তবে এইজন্য বেশি বেশি স্ট্যাটাস দিতে হবে। না দিলে কিন্তু এত লম্বা লেখা পড়ার কুনো ফায়দা নাই। কারণ পানিতে না নেমে আপনি সাঁতার শিখতে পারবেন না।
এইজন্যে এই মুহূর্তে আপনার প্রথম কাজ হবে এই লেখাটা কেমন লাগসে বা কেমন উপকারে আসবে সেই বিষয়ে দুই-চার কথায় কিছু একটা লিখে লেখাটা শেয়ার করেন। এইখান থেকেই শুরু হোক স্ট্যাটাসহীন জীবনের সমাপ্তি। হয়ে উঠুন স্ট্যাটাসময়। কামান বেশি বেশি লাইক। বন্ধুমহলে হয়ে উঠুন জনপ্রিয়।
হ্যাপী ফেইসবুকিং। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।