© তন্ময় ফেরদৌস
যারা আগের পর্বটা পড়েন নিঃ প্রথম পর্বের লিঙ্ক। অন্তত ইন্ডেক্সটা দেখে নিন।
এই সিরিজ লেখার চেস্টা করতে গিয়ে বুঝলাম আসলে বিশাল এক ঝামেলার কাজে হাত দিয়েছি। অনেকটা খাল কেটে কুমির আনার মতন। তবে বলে ফেলেছি কি আর করা।
ব্লগার বন্ধুদের জন্য একটু কস্ট নাহয় করলাম।
সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে বাংলা কোন রেফারেন্স বই না পাওয়ায়। ইংরেজী থেকে সরাসরি বঙ্গানুবাদ করলে তা আসলে স্বার্থক হবেনা। আবার অনেক কন্টেন্ট আছে যা বাংলাদেশের নিউজ পেপারের সাথে যায় না। এ কারনে নিজের মত করে উদাহরন দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলাম।
আপনারা যারা সিরিজটা পড়ছেন, অবশ্যই চেস্টা করবেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং উদাহরন গুলা একটু ভালো করে বুঝে নিতে। না বুঝলে আমি তো আছিই। সাথে রিপোর্টিং এ অভিজ্ঞ ব্লগারদের সরনাপন্ন হয়া যাবে।
পোস্ট দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, সহজ ভাষায় লেখা।
রিপোর্টিং এবং রিপোর্টারের কাজঃ
একজন নিউজ রিপোর্টারের মূল কাজ হলো নিউজ সংগ্রহ করা পত্রিকার জন্য তা তৈরি করে প্রেজেন্ট করা।
নিউজ সংগ্রহের জন্য সে সারজমিনে তথ্য সগ্রহ করতে পারে অথবা সাহায্য নিতে পারে কোন সোর্সের। তবে সোর্স কে অবশ্যই অথেন্টিক হতে হবে এবং রিপোর্টের সোর্স অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। এটা কিন্ত মেন্ডাটরি। বাংলাদেশে এব্যাপারে অনেক রিপোর্টারের অনীহা দেখা যায়। অনেকেই নিউজে বলেন- জানা যায়, জানা গেছে, ধারনা করা হয়, খবর পাওয়া গেছে ইত্যাদি।
তবে এটা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। এধরনের কোন কিছুই বলা যাবেনা।
কাজেই রিপোর্টারের কাজ দুটি( 2R)।
প্রথম আর ফর "রিসার্চ"
এবং ২য় আর ফর " রিপ্রেসেন্ট"।
রিপোর্টার যা পারবেনঃ
ট্রেন্ড: যা হয়ে গেছে তার বিবরনী দিতে পারবেন।
যেমনঃ "গতকাল হরতালে পল্টনে আওয়ামী জামাত সঘর্ষে আহত শতাধিক। "
ফ্রিকোয়েন্সিঃ যা হচ্ছে বা চলছে তা বলতে পারবেন। অবশ্যম্ভাবি ঘটনা বলতে পারবেন। যেমনঃ "আজ রাত আট্টায় উন্মোচন করা হচ্ছে অলিম্পকের পর্দা। "
রিপোর্টার যা পারবেন নাঃ
ডিসিশনঃ কোন রকম সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না।
যেমনঃ আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, দেশ রাজনীতি হুমকির সন্মুখিন ইত্যাদি। তবে এভাবে বলতে পারবেন- আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার বাসিন্দারা। (তার মানে সোর্স উল্লেখ করে যে কোন কিছুই বলেতে পারবেন)
ডাইমেনশনঃ একজন রিপোর্টার এমন কিছু বলতে পারবেন না যাতে নিউজে একটা নতুন মাত্রা দেয়া হয়, বা নতুন রুপ দেয়া হয়। যেমনঃ "ট্রাঞ্জিট চুক্তিতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে বাংলাদেশের। "
জাজমেন্টঃ কোন রকম জাস্টিফিকেশন বা ঘটনা বিচারের দায়িত্ব নিতে পারবেন না রিপোর্টার।
রিপোর্টারের ধরনঃ
একজন রিপোর্টার সবসময়ি মুভ করতে পারেন। তবে-
কোরেস্পন্ডেন্ট রিপোর্টারঃ নির্দিশট যায়গার জন্য। যেমন- যিনি দিনাজপুরের রিপোর্ট কাভার করে থাকেন। এদের বাংলায় বলা হয় নিজস্ব প্রতিবেদক।
স্ট্রিঙ্গারঃ নির্দিশট ধরনের খবরের জন্য।
এরা আবার পার্টিকুলার কোন যায়গায় স্থির নয়। যেমন- যিনি স্পোর্টস নিউজ কাভার করে থাকেন,যেখানেই খেলা হোক না কেন তিনি স্পোর্টস স্ট্রিঙ্গার।
কয়েক ধরনের নিউজ রিপোর্টঃ
আমরা নিয়মিত পত্রিকাগুলাতে যে ধরনের নিউজ দেখি তাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
স্পেশাল রিপোর্টঃ এ ধরনের রিপোর্টের মূল বৈশিষ্ট হলো এনালাইজিং এবং এক্সপ্লেইনিং। এগুলো অনেক সময়ি দীর্ঘমেয়াদি হয়।
যেমন- "এবছর আমন ধানের দামও পড়তির দিকে। " এই নিউজটাতে কিন্ত নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে দেখাতে হবে আগে আমনের দাম কেমন ছিলো,এখন কেমন, কিভাবে পড়তির দিকে ইত্যাদি। কাজেই এটা স্পেশাল রিপোর্ট।
স্পট রিপোর্টঃ এ খরনের নিউজ সাধারনত ইভেন্ট বেইজড। রিপোর্টে কোন সাম্প্রতিক ইভেন্ট/ইন্সিডেণ্টের বর্ণনা থাকবে এবং রিপোর্টার উক্ত যায়গা হতে রিপোর্ট করবেন।
যেমন- "বনানীতে ১৫ তলা ভবন ধসে পড়ে তিন জনের মৃত্যু,আহত শতাধিক" ,ডাইরেক্ট স্পট থেকে ঘটনার বর্ননা। কাজেই এটা স্পট রিপোর্ট।
স্টাফ রিপোর্টঃ পত্রিকার নিজস্ব স্টাফ রা যে সকল নিউজ তৈরি করে থাকেন সেই গুলা।
কোরেস্পন্ডেন্ট রিপোর্টঃ একটু আগেই বলেছি। আবার বলি, নিদ্দিশট কোন জায়গা থেকে যদি প্রতিবেদক কোন রিপোর্ট পাঠালে তা কোরেস্পনডেন্ট নিউজ।
যেমন- "অপরাধী দাবি করে আহত শিশু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হলো মিরপুরে। "( নিজস্ব প্রতিবেদক)
ডেস্ক রিপোর্টঃ বিভিন্ন ধরনের কম্বিনেশনে পত্রিকা অফিস হতে তথ্য উপাত্ত সংরহ করে ডেস্কে বসে যে নিউজ বানানো হয় তা ডেস্ক রিপোর্ট। যেমন- "অস্রপোচার ছাড়াই সন্তান প্রসব ঐশরিয়ার। "(বিনোদন ডেস্ক)
ক্রেডিট লাইন রিপোর্টঃ সম্পুর্ন প্রতিবেদন যদি একজন বা দুইজন প্রতিবেদকের আন্ডারে যায় এবং ক্রেডিট লাইনে স্টাফ রিপোর্টার/নিজস্ব প্রতিবেদকের যায়গায় সেই রিপোর্টারদের নাম যায় তাহলে তা ক্রেডিট লাইন রিপোর্ট। সাধারনত সিনিয়র সাংবাদিক দের নাম ক্রেডিটলাইনে যায়।
এজেন্সী রিপোর্টঃ নানা ধরনের নিউজ এজেন্সী কতৃক যদি কোন নিউজ প্রোভাইড হয় তা হলে তা এজেন্সী নিউজের অন্তর্ভুক্ত। এমন একটি বিখ্যাত নিজ এজেন্সি হচ্ছে "রয়টার্স"।
হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। কাজেই আজ এই পর্যন্তই থাক।
হোমোয়ার্কঃ আজকের খবরের কাগজ নিয়ে বসুন।
তারপর সব রিপোর্টগুলাতে চোখ বুলাতে থাকুন, দেখুন আইডেন্টফাই করতে পারছেন কিনা কোনটা কোন ধরনের নিউজ রিপোর্ট।
---------------------------------------------------------------
পোস্ট উৎসর্গ করা হলো অকালপ্রয়াত সহব্লগার নোবেলজয়ী টিপুর নামে। এভাবে সবাইকে কাদিয়ে চলে গেলেন তিনি। তার প্রতি থাকুক আমাদের সবার শ্রদ্ধা।
আসুন আমরা সবাই অন্তত আজকের জন্য প্রোফাইল পিকচারটা কালো করে দেই।
এবং সামুর মডারেটরদের প্রতি অনুরোধ, তার সন্মানে কিছু একটা করা হোক। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।