তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা সেদিন ভারতের বহুল প্রচারিত হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার শিরোনাম ছিল, এক মুসলিম মনিষীর জন্য ভারতজুড়ে স্বাভাবিক বিমান চলাচল ব্যবস্থায় রদবদল। লাখনৌ এবং দিল্লীজুড়ে শিডিউল পরিবর্তন এবং আকাশ নিরাপত্তায় পুনর্বিন্যাস। ’
১৯৯৮ সাল।
তার শরীর ভাল নেই। জীবনের একেবারে শেষপ্রান্তে উপনীত এই মানুষটি ক্লান্ত এবং কিছুটা অসুস্থ।
দুবাই শাসকদের তরফ থেকে সংবাদ নিয়ে এসেছেন একজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
-হযরত!! আমরা বড়ই আনন্দিত। দুবাই রাজপরিবারের তরফ থেকে আপনাকে এ বছরের শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
এটা আমাদের জন্য সম্মান। আমরা গর্বিত। আপনি কি অনুগ্রহ করে দুবাইতে তাশরীফ নিবেন?
-দেখুন, আল্লাহ পাকের জন্য সমগ্র প্রশংসা এবং আপনাদেরকেও আমার কৃতজ্ঞতা। কিন্তু আমি কখনোই কোথাও পুরস্কার আনার জন্য নিজে যাইনি। তাছাড়া এ সময়ে আমার শরীর স্বাস্থ্যও ভাল নয়।
দুবাই পর্যন্ত ভ্রমণ আমার জন্য সম্বব নয়।
-শায়খজ্বী! আপনাকে আমাদের প্রয়োজন। আরবজাহানের নতুন প্রজন্ম আপনাকে এক নজর দেখার জন্য উদগ্রীব। আপনার সামান্য উপস্থিতি তাদের জন্য অসামান্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
তিনি চোখ বুঁজে ভাবছেন।
দেখা যাক, কী করা যায়।
আরব আমিরাতের রাজ পরিবার এ সংবাদে চিন্তিত। যে করেই হোক, শায়খকে আনতে হবে। এ মূল্যবান পুরস্কার এখানেই তার হাতে তুলে দেয়া দরকার। এর জন্য যা প্রয়োজন, দুবাই তা করতে প্রস্তুত।
সিদ্ধান্ত হল, দুবাই থেকে সরাসরি বিশেষ প্লেন যাবে লাখনৌতে। সেখান থেকে সরাসরি দুবাই। তারপর আবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তার সাথে প্রয়োজনীয় লোক এবং সব ব্যবস্থা করা থাকবে।
আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হল।
ভারত সরকার পড়ে গেল নতুন সমস্যায়।
কারণ, লাখনৌ বিমানবন্দর আর্ন্তজাতিক নয়। এটি অভ্যন্তরীন বিমান উঠা নামার জন্য নির্ধারিত। এ অল্প সময়ে কি করে তা সম্ভব? আরব আমিরাত সরকারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া ভারতের জন্য সম্ভব নয়। এর সাথে অনেক স্বার্থ জড়িত।
পরদিন থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ল ভারতের বিমানসংস্থা। খুব দ্রুত তারা লাখনৌ এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিক করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করল।
বিমানবন্দরে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক বসানো হল। কন্ট্রোল টাওয়ারের যন্ত্রপাতি বদলে ফেলা হচ্ছে। রানওয়ে সাজানো হচ্ছে।
আকাসসীমায় পরিবর্তন নিয়ে বৈঠকে বসেছে ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
নির্ধারিত দিন দিল্লী থেকে ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা চলে এলেন লাখনৌতে। সবকিছু তারা গুছিয়ে নিচ্ছেন। আগামীকাল নামবে দুবাই সরকারের বিশেষ বিমান।
এতসব আয়োজন আর ব্যতিব্যস্ততা দেখে ভারতের মিডিয়াও অবাক।
সেদিন ভারতের বহুল প্রচারিত হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার শিরোনাম ছিল, এক মুসলিম মনিষীর জন্য ভারতজুড়ে স্বাভাবিক বিমান চলাচল ব্যবস্থায় রদবদল। লাখনৌ এবং দিল্লীজুড়ে শিডিউল পরিবর্তন এবং আকাশ নিরাপত্তায় পুনর্বিন্যাস। ’
গোটা ভারত তো বটেই, পৃথিবীর ইতিহাসে একজন মাত্র মানুষের জন্য এত আয়োজন আর কখনো হয়েছে কিনা, সবার জানা নেই।
তিনি সহি সালামতে দুবাই পৌঁছলেন এবং সেখানে আবেগঘন বক্তৃতা দিয়ে ফিরে এলেন।
শতাব্দীর সন্তান- পর্ব- ০১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।