I want to make me as a blog writter. আওয়ামী লীগ সরকারের গত ৪ বছরে ভালই চলছিল দেশ। বিরোধী দলগুলোও ছিল সহিঞ্চু। বাংলাদেশের অর্থনীতির চলক ছিল প্রবহমান। যদিও দ্রব্য-মূল্যের উর্ধ্বগতি ছিল তারপরও সময়ের সাথে সাথে মানুষ এটিকে অনেকটাই নিজেদের জীবন যাপনের সাথে মানিয়ে নিয়েছে। তাই নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি হওয়া সত্তেও জনগণের জীবন যাত্রা ছিল স্বাভাবিক।
কিন্তু গত একবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে সবচেয়ে বড় ধরনের কয়েকটি কেলেঙ্কারীর ঘটনা। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক বিরুপ প্রভাব ফেলে। ডেসটিনি কেলেঙ্কারী, বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারী, হলমার্ক কেলেঙ্কারী হয়ে যায় বাংলাদেশের অন্যতম আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আর এই কেলেঙ্কারীগুলোর সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অর্থনৈতিক সম্পর্ক। অন্যদিকে আওয়ামীলিগ সরকারের নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন।
কিন্তু সেটিও ভেস্তে গেল স্বয়ং সরকারি মন্ত্রী-কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে। শুধু তাই নয় ছাত্রলীগের নাশকতামূলক কর্মকান্ড ও তাদের দ্বারা বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় স্বয়ং সরকার ছিল দিশেহারা। কোনমতেই সরকার পারেনি ছাত্রলীগকে প্রতিহত করতে। ফলে এসব কেলেঙ্কারী ও সরকারের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কারণে সরকারের ইমেজ অনেকটাই সংকটা পন্ন হয়েছে।
উপরোক্ত ঘটনা গুলো ছাড়াও বিরোধী দলের তত্তাবধায়ক সরকারের দাবি ছিল বছর জুড়ে।
কিন্তু সরকার তাদের দাবি না মেনে নেওয়ায় দেশ আজ এই পরিস্থিতিতে। যুদ্ধাপরীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সালে এবং এই বিচারের আওতায় জামায়াতের নেতা কাদের মোল্লার যাবত জীবন ও দেলোওয়ার হোসেন সাইদির ফাঁসির আদেশ হলে দেশজুড়ে শুরু হয় হরতাল ও নাশকতামুলক কর্মকান্ড। অন্যদিকে কাদের মোল্লার রায় গ্রহনযোগ্য হয়নি অনেকের কাছে ফলে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের জন্য তারা সমবেত হয় শাহবাগে। কয়েকদিনেই এই শাহবাগ পরিণত হয় মিশরের তাহরির স্কয়ারের আদলে শাহবাগ স্কয়ার। কিন্তু পরে রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রভাবিত এই শাহবাগ স্কয়ার বা গণজাগরণ মঞ্চ ধরে রাখতে পারেনি তার আবেদন।
কারন সেখানে যারা অবস্থান নিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল থাবা বাবার অনুসারী। যারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ব্লগে লিখেছে কুরুচী পূর্ণ অশ্লীল বাক্য। ফলে আবেগ কে ধরে রাখতে পারলো না এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। শুরু হয়ে গেল নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির জন্য আন্দোলন।
একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সংবিধানের ৪টি মূলনীতির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ গণতান্ত্রিক দেশ।
এই দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগ, অনুভূতি যে কত বেশি তা প্রমাণ করেছে হেফাজতে ইসলামের ৬ এপ্রিলের ঢাকা মূখী লংমার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী এত বড় সমাবেশ কখনো হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক দল নয় কিংবা সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্যও গঠিত হয়। সংগঠনটি গঠিত হয়েছে ২০১০ সালের ১৯ মার্চ। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হাটহাজারী কওমী মাদ্রাসার মোহতামিম আহমদ শাহ শফীর নেতৃত্বে এই দলটির যাত্রা শুরু হয়।
দলটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামকে রক্ষা করা। কেননা বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও এখানে নাস্তিকতাবাদের উপস্থিতি বেশ ভালই। আর এই নাস্তিকতাবাদ কে পুজিঁ করেই এক শ্রেনীর ব্লোগার ইন্টারনেটে ব্লগ গুলোতে লিখে যাচ্ছে ইসলাম ও আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে নানা ধরনের অশ্লীল বাক্য। যাদের বাঁচানোর জন্য চেচামেচি করছে বামপন্থী দলগুলো। যেটা একজন মুসলমান হিসেবে কেউই মেনে নিতে রাজি হবে না।
এদিকে এই হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কে সরকার অনুমোদন করেছিল। কিন্তু এই লংমার্চ প্রতিহত করার জন্য হরতাল ডেকেছিল ঘাদানিক সহ ২৫ টি সংগঠন। কিন্তু হরতাল বেশি কাজে দেয়নি হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কে প্রতিহত করার জন্য। কারণ তারা শান্তি পূর্ণভাবে ঢাকায় এক নজিরবিহীন সমাবেশ উপহার দিয়েছে জাতিকে এবং তারা যে ১৩ দফা দাবি দিয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছে। আর এই হেফজতে ইসলামের লংমার্চেকে সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জামায়াতসহ অনেক ইসলামী সংগঠন।
কিন্তু এদিকে হেফাজতে ইসলামকে জামায়াতের লক্ষ্য পরণের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। কিন্তু একটি দিক বিবেচ্য, সেটা হলো হেফাজতে ইসলাম গঠিত হয়েছে কওমী ওলামাদের সমন্বয়ে। আর জামায়তের সাথে তাদের আকিদাগত যে বিশ্বাস তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর বিরোধ। বলা যায় এই হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত একে অপরের অঘোষিত শত্রু। তাই সবাইকে জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক বলে তাদের দাবি গুলোকে মেনে না নিয়ে দেশকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা সাধারন মানুষের প্রশ্ন সরকারের কাছে।
অন্যদিকে একশ্রেনীর লেখক ও রাজনৈতিক নেতারা জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। বলা হচ্ছে যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়? অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছে উচ্চ আদালতে রিট থাকা অবস্থায় জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা যাবে না। কিন্তু এখানেই রিয়েল পলিটিক্স। কেননা যদিও বল হচ্ছে জামায়াতকে ও যুদ্ধাপরাধিদের বাঁচানোর জন্য বিএনপি মাঠে নেমেছে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষেই তা সত্যি নয়।
কারণ সরকার বুঝতে পারছে যে জামায়াত কে নিষিদ্ধ করা হলে তা সরকারের জন্যই ক্ষতি। কারণ যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয় সেক্ষেত্রে সামনের নির্বাচনে জামায়াতের যে জনসমর্থন রয়েছে তা যাবে বিএনপির ঝুলিতে। তাই বিএনপি চাচ্ছে যে তাদের তত্ত্ববধায়ক সরকার দেয়া হোক এবং জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু তারা এটা মুখে বলছে না। তাই বৃহৎ স্বার্থে সরকার ক্ষুদ্র স্বার্থকে পরিত্যাগ করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করবে না এটাই স্বাভাবিক।
এছাড়া একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, জামায়াত শিবিরের যে পরিমাণ কর্মী গেফতার করা হয়েছে তারপরও তাদের অপ্রতিরোধ্য হরতাল থেমে নেই। সরকারকে এ দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। তাই না বুঝে বিবেকহীনের মতো কোন গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে দেশকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া বাতুলতার ছাড়া বৈকি।
দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত রয়েছে সুযোগে। কেননা দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার টালমাটাল।
ভারতের সাথে ঝুলে থাকা সীমান্ত চুক্তি, তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়নও অনেকটাই অনিশ্চিত । এদিকে ভারত বাংলাদেশের আখাউড়া, আশুগঞ্জ ও শেরপুর দিয়ে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট দ্রুত চালু করার জন্য সরকারের উপর চাপ দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ২১ হাজার কোটি টাকা। অথচ ভারতের পণ্যে বাংলাদেশ ছয়লাভ। তারপরও থেমে নেই ভারতের সুযোগ নেয়ার তৎপরতা।
ফলে আজ বাংলাদেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থও সংকটের মুখে। যা বাস্তবায়ন না হলে প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশের জন্য হবে এক দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি।
বলাই বাহুল্য, দেশের মানুষ প্রকৃতপক্ষেই বিভক্ত হয়েছে। যেভাবে হরতাল, অবরোধ, নাশকতা সংঘটিত হচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটুকু আছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। গত কয়েক মাসের এই সংকটেও সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে কোন ধরনের আপোষের মানসিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
গণতন্ত্রের যে দাবি তা দেশে নেই বললেই চলে। বিরোধী দল সরকারকে সময় পুরনের সময় দিচ্ছে না। অন্যদিকে সরকার বিরোধীদের দাবি না মেনে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা তাদের দমনের নীতি গ্রহন করেছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে তো দেশ সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।
তাই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতির কৌশল ও সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন দেখে মনে হচ্ছে দেশের বর্তমান সংকট আরো গভীরতর সংকটে পড়তে যাচ্ছে।
অনেক আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এই চিত্রকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের গৃহযুদ্ধ। কথাটি উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই প্রতিয়নমান হচ্ছে। সরকার ও বিরোধীদলগুলোর আক্রমণাত্বক বক্তব্য এবং তাদের নাশকতামুলক কর্মকান্ডে জনগণের জীবন যাত্রা আজ দুর্বিষহ। বলাই বাহুল্য, দেশের এই গভীর সংকটে যেখানে সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠন গুলোর গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা সেখানে এসব সংগঠনও রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্রছায়ায় বিভক্ত হয়ে গেছে। তাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে এসব সংগঠন রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ আদায়ের বিকল্প হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
যার প্রমাণ হেফাজতে ইসলামকে প্রতিহত করতে বামপন্থীদের দেয়া হরতাল।
আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি কিন্তু গণতন্ত্রকে কিভাবে আরো সুসংহত করা যায় তা অনেকটাই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নীতির বাহিরে রেখে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে তাদের আখের গোছানোর জন্য মাঠে নেমেছে তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষ। সরকার চাচ্ছে যে কোনভাবে ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়ন করতে। অন্যদিকে বিএনপি চায় যেকোনভাবে সামনের নির্বাচনে জয়ী হতে।
ইসলামপন্থীরা পথে নেমেছে ইসলামকে রক্ষা করতে ও নাস্তিক ব্লোগারদের শাস্তির দাবিতে। অন্যদিকে জামায়াতের নেতারা যুদ্ধাপরাধি হিসেবে অভিযুক্ত, ফলে জামায়াত-শিবির কর্মীরা শুরু করেছে তাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার লড়াই। আর সবাই তাদের লক্ষ্য পূরণে ব্যবহার করছে গুজরাটি শব্দ হরতাল। যার ভয়াবহতা ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে দেশের সাধারণ মানুষের রোষানলে পড়বে সব দল।
তখন কোন দলই পাবে না তাদের লক্ষ্য অর্জনের সময়। তাই এখনই সময় সব ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে এবং নিজেদের ক্ষমতাকে চরিতার্থ করার সুযোগ না খুঁেজ দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে দলমত নির্বিশেষে আলোচনায় বসতে উদ্যোগী হওয়া এবং দেশের গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে, জাতীয় স্বার্থ অর্জনের জন্য একটি ঐক্যমতে আসা। যা হবে সকলের জন্যই মঙ্গলজনক।
রাশিদুল ইসলাম নাহিদ
শিক্ষাথী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাবি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।