পড়তে চাই বেশি বেশি ঘুমন্ত নীরবের মুখটি যেন দূরদিগন্তে মেঘেঢাকা চাঁদ। সালেহা সরাতেই পারছে না তার দুটো চোখ। এত কাছে তবু কত দূরে মনে হয় যেন ! কেন এত দূরে মনে হয় ! তোকে আমার কেন দূরে মনে হয় ! সালেহা বারবার উচ্চারণ করতে থাকে নিজের মনে। শব্দটা মাঝে মাঝে গোঙানির মত মনে হয়। ঘুমন্ত নীরবের মসৃন চুলগুলোতে হাত বুলোয়।
কই ! তোকে তো ছুঁতে পারছি বাবা। বাবা ! তোকে তো স্পর্শ করছি। এই আমি দেখ। আমি তোর মা। আমি তোকে ছুঁয়েছি।
এই দেখ আমি তোকে ছুঁয়ে আছি। ধীরে ধীরে কণ্ঠস্বরটা উচ্চ হয়ে ওঠে। দু’চোখ ভেঙে লবণাক্ত অশ্র“ গলগলিয়ে ঝরে পড়ে গাল বেয়ে। আড়মোড়া ভাঙে নীরব। মুখের ওপর থেকে চাদর সরিয়ে জিজ্ঞেস করে, মা !
সালেহা কিছুটা লজ্জা পায়।
আঁচল দিয়ে বাম হাতে চোখ মুছে তাড়াতাড়ি গ্লাসে পানি নিয়ে বলে, পানি খাবি বাবা ?
না মা। পানি খাবো না। তোমার একটা হাত দাও তো মা।
সালেহা একটা হাত বাড়িয়ে দেয়। নীরব হাত নাড়তে থাকে।
ব্যথা একটু কমেছে বাবা ?
কমেছে মনে হয়।
শরীরে কী মোচড় দিচ্ছে ?
একটু ভাল লাগছে।
সালেহার মুখটা উজ্জ্বল হয়। ঠোঁটে একটু হাসিও ফুটে ওঠে। আচ্ছা বাবা, আমি তোর মাথাটা নেড়ে দিই, তুই ঘুমিয়ে পড়।
আর কত ঘুমাবো মা ? আমি কবে ভালো হবো ? জানো মা, ক্লাসে স্যার বলেছে, আমাকে ডাক্তার হতে হবে। কতদিন স্কুলে যাই নি। আরিফ, আদনান ওরাও অনেকদিন এখানে আসেনি। কাল একটু স্কুলে যাবো তুমি কি আমাকে নিয়ে যাবে মা ?
যাবো বাবা। তুই একটু সুস্থ হলেই নিয়ে যাবো।
মা, আমি কবে সুস্থ ছিলাম, মনে পড়ছে না। আমি কি আর সুস্থ হবো না মা?
সালেহা নীরবের মুখে হাত দিয়ে বলে, ছি বাবা ! ও সব বলতে নেই। আর ওসব বলবি না। কিছুতেই বলবি না। বলতে বলতে শব্দ করে কেঁদে ওঠে সালেহা।
আর বলবনা মা। নীরব জানালার গ্রীলের ফাঁক গলিয়ে তারাভরা আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। মাঝে মাঝে চোখ ঘুরোয় ময়লা পুকুরের পাশে সজনে গাছে। ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় সজনে পাতাগুলো কেমন মোহময় হয়ে উঠেছে। পাশে সাদা হাসনাহেনা থেকে ভুরভুরে গন্ধ এসে ঘরময় মিষ্টি সুগন্ধে ভরিয়ে তুলেছে।
নীরব আরেকটু সরে এসে আকাশ দেখে। তারাদের মাঝে চাঁদের আবছা অবস্থিতি। হালকা মেঘ। কেমন আয়োজন আয়োজন ভাব। মনে হয় বিয়েবাড়ি।
নীরব মায়ের হাত তার হাতে মুঠো করে ধরে জিজ্ঞেস করে,
মা, আজ চাঁদের কত তারিখ?
কি জানি বাবা।
মনে হয় সাত আট তারিখ হবে। তাই না মা?
হ্যাঁ।
স্যার বলেছিল সাত আট তারিখে চাঁদকে খুব সুন্দর দেখায়। একেবারে কলসের নীচের অংশের মত।
জানো মা ঐ চাঁদকে নাকি আমাদের রাসুল দ্বি-খন্ডিত করে ফেলেছিলেন। এক খন্ড পড়েছিল পাহাড়ে। কোন পাহাড়ে যেন বলেছিল? এখন মনে পড়ছে না।
কে বলেছে তোকে?
হ্যা মা, আমাদের স্যার বলেছিল। এ দৃশ্য তখন অনেকেই দেখেছিল।
নীল আর্মষ্ট্রং যখন চাঁদে যায় তখন সেও দেখে এসেছিল চাঁদে ফাটল।
নীরব কথা বলার আগ্রহে কিছুটা উপুড় হবার চেষ্টা করে।
তুই এখন ঘুমা বাবা।
নীরব ডান পাশে ঘুরে শোয়। সালেহা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
মায়ের হাতের পরশে নীরব উম্ শব্দ করে। মনে হয় কিছুটা আরাম পেয়েছে ও। সালেহার চোখও ঘুমে জড়িয়ে আসছিল। কিন্তু নীরব কখন আবার জেগে যায় এই চিন্তায় ঘুমোতে যেতে পারছে না।
নীরব এ পাশ ফিরে হঠাৎ ফিক করে হেসে ওঠে।
সালেহার ঢুলুনি ছুটে যায়। হাসি হাসি মুখে বলে কী, স্বপ্ন দেখেছিস বাবা ?
না, আমি তো ঘুমোই-নি।
তবে হাসছিস যে,
একটা কথা মনে পড়ে গেল তাই হাসলাম। তোমার মনে পড়লে তুমিও হাসতে। আচ্ছা ছোট বেলাকার কোনো কথা তোমার মনে পড়ে না মা?
পড়ে।
অনেক কথাই তো মনে পড়ে।
তবে তুমি হাসোনা কেন মা? সব সময় আমার সামনে গোমড়া মুখো থাকো কেন? তোমার গোমড়া মুখ ভাল লাগেনা।
এইতো বাবা আমি হাসছি।
নীরবের মা হাসতে থাকে। কখন চোখ ভিজে যায় লবণাক্ত অশ্র“তে।
মাত্র দু’দিন আগে জেনেছে সালেহা নীরবের এই ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সারের কথা। কিন্তু ওর সমস্যা নতুন নয়। কখনো মাথা ব্যাথা সহ একেক দিন একেক রকম সমস্যা। দু’বছর আগে স্বামী শহীদুলের রোড এক্সিডেন্টে মারা যাবার কদিন পর থেকেই হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠতো নীরব। সালেহা ভাবতো বাবার রক্তমাখা শরীর দেখে ও হয়তো ভয় পেয়ে এ রকম করে।
কিন্তু তার আচরণ ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে। সমস্যা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
সালেহাকে কে সাহায্য করবে ? শহিদুলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই বলা যায় সালেহা একা। অফিসের পরে শহিদুল সংসারে এটা ওটা টুকিটাকি কাজে সাহায্য করতো। প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে কোথাও ঘুরতে বেড়াতো তারা।
ফুরফুরে চড়–ই দম্পতির মত। এক সময় ঘর আলো করে নীরব এলো সংসারে। ওরা ভেবেছিল এবার হয়তো সালেহার বাবা-মা তাদের মেনে নিবে। কিন্তু ওরা কেউ দেখতেও আসলো না। শহিদুল বলেছিল নিজ থেকে কখনো আগ বাড়িয়ে যেওনা।
নিশ্চয়ই একদিন ওরা একদিন ওরা আমাদের মেনে নেবে। এদিকে শহিদুলও তাকে ছেড়ে চলে গেল। সেই থেকে দীর্ঘ সংগ্রাম করে বেঁচে আছে সালেহা। আগে মাঝে মাঝে ছোট ভাই পলাশ আসতো দেখা করতে। পরে ডিভিতে আমেরিকা গিয়ে সেও লাপাত্তা।
অবশেষে একটি চাকুরি নেয় সালেহা। নীরবকে স্কুলে রেখে অফিসের কাছাকাছি। তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি এতদিন। কিন্তু নীরব যখন একদিন প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় সারারাত ঘুমোতে পারলোনা। সালেহা মাথায় পানি দিল।
মাথা নাড়লো, কিন্তু কিছুতেই ব্যথা কমছে না। সকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল তাকে। একগাদা পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হলো। ডাক্তার কাগজ পত্র দেখে সালেহাকে এক নজর দেখে বললেন,
ছেলের বাবা কই ?
নেই, মারা গেছে দু’বছর।
স্মরি।
সালেহার জবাবে দুঃখ প্রকাশ করে ডাক্তার।
আর কেউ অভিভাবক নেই?
আমি ওর অভিভাবক। আমাকে বলেন। আমি দ্বাড়া ওর কেউ আর নেই।
কথাতে এক রাশ গলিত অভিমান ঝরে পড়লো যেন।
রক্তে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে- বলে ডাক্তার ঘষ ঘষ করে কিছু লিখে কাগজ দিতে দিতে বললো- এই পরীক্ষাগুলো একটু করিয়ে নেবেন। আর আমি যে ওষুধ দিলাম তা নিয়মিত খাবে। এক সপ্তাহ পর দেখা করবেন। সবাধান নিজে হাসিখুশি থাকবেন ওকেও হাসিখুশি রাখবেন।
সালেহা যদিও বা একটু হাসতো টাসতো।
ডাক্তারের কথায় সেই হাসিটুকুও ছুটে গেল। মাথায় একরাশ আতঙ্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করলো- ডাক্তার সাহেব, আপনি কি বললেন? ওর রক্তে কিসের সমস্যা ? আপনি আমাকে বলেন।
এখনই কিছু বলা যাবেনা। পরীক্ষাটা করে নিয়ে আসুন। চিন্তা করবেন না।
আল্লাহ অসুখ দিয়েছেন, আবার চিকিৎসাও দিয়েছেন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।
সালেহা মুখ কালো করে বাড়িতে ফিরলো। সঙ্গে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন। নীরব সালেহাকে দেখে বুঝতে পারছে না রেগে আছে না কাঁদছে।
ডাক্তারের সাথে তার কি কথা হলো? যাওয়ার সময় তো তার মা তাকে বলেছিল, ডাক্তার দেখলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। তারপর বেশি বেশি পড়াশোনা করতে হবে। তার শিক্ষক তাকে বলেছে ডাক্তার হতে। বড় ডাক্তার। চোখে চশমা পরে হাতে স্টেথো লাগিয়ে চেয়ারে বসবে।
সব রোগীরা এলে বলবে আপনি কেমন বোধ করছেন?
ভালো
ভালো হলেই ভাল। এই ওষুধটা খান। খেলে সম্পুর্ণ সেরে যাবে। আপনি আবার হাটতে পারবেন, দৌড়াতে পারবেন, খেলতে পারবেন। স্কুলে যেতে পারবেন।
নীরব তার মায়ের কান্না শুনে থমকে যায়। মায়ের কাছে এলে জিজ্ঞেস করে মা, ডাক্তার কি বলেছে? আমি মরে যাবো ?
সালেহা নীরবের গালে একটা থপাশ করে চড় বসিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে। বুকের গভীর থেকে কান্নার ঢেউ উপচে এসে সালেহাকে অবস করে দিচ্ছে যেন। তারপর আর থামতে পারেনা সালেহা। ভেঙ্গে পড়ে কান্নায়।
নীরব কিছু বুঝতে পারে না। মায়ের কেন এই কান্না। ও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলতেও সাহস পায় না সে।
এক সপ্তাহ পর ডাক্তার নীরবকে রেফার্ড করে বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
থাকার জন্য জায়গা হলো ধানমণ্ডি আশিক ফাউন্ডেশনে। সালেহা এখানে নীরবকে নিয়ে উঠেছে। এখানে আগে অনেক ছোট ছোট ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুরা উঠেছে। কি সুন্দর কচি ফুলের মত মুখের শিশুদের দেহে বাস করছে ভয়ঙ্কর দানব ক্যান্সার। সালেহা এসে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে।
নীরবকে দেখে মনে হচ্ছে সুস্থ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ খেলাধুলা। শিশুদের খেলার জন্য অনেক খেলনা আছে এখানে। বিশালাকৃতির টিভিতে বাংলা সিনেমা চলছে। অনেক মায়েদের মত সালেহাও এখানে নিয়মিত টিভি দেখে।
দিনা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে নীরব সারাক্ষণ গল্প করে। কখনো অসুখের গল্প, কষ্টের গল্প, বাবার গল্প মায়ের গল্প, স্কুলের গল্প। খেলতে খেলতেই যখন কষ্টটা বেড়ে যায় দিনা ছুটে যায় ওর মায়ের কাছে। নীরব তখন একাকী হয়ে পড়ে। আরো শিশুরা আছে।
তাদের সঙ্গে এখনও সে রকম ভাব জমে ওঠেনি ওর। শুধু কয়েকজনের নাম জেনেছে ও। ওরা হলো তামিম, সালমা, রানা, রাকিব, ইমন। কিন্তু ওদের মনে হয় খুব কষ্ট। মাঝে মাঝে কথা বলতে বলতে থেমে যায়।
ছুটে যায় মায়েদের কাছে। জমিলা আন্টিকে নীরবের খুব ভাল লাগে। যেদিন ও মায়ের সঙ্গে প্রথম আসে সেদিনই এই আন্টি তাকে একটা ব্যাট বল দিয়েছে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সবার সাথে।
নীরব ওদের সাথে এখন অনেক খেলা খেলে।
ডাক্তার ডাক্তার খেলাটা এখন ওর বেশি প্রিয়। একজন ডাক্তার হবে। কয়েকজন রোগী, একজন নার্স। হাতে স্টেথো নিয়ে ডাক্তার রোগী দেখে বলে- তোমার তো ক্যান্সার। রক্ত লাগবে।
চিন্তা করোনা। একদম ভাল হয়ে যাবা। এই ওষুধনা লিখে দিলাম নার্সকে দিয়ে দাও। ও খাইয়ে দেবে। আর ওষুধ খেতে একদম ভুলনা যেন।
কখনো কখনো মিছিমিছি রোগীর হাতে সিরিঞ্জ ফুঁড়ে রক্ত নেয়ার অভিনয় করে। বলে তোমার ব্লাড তো খুব ফ্রেস। তুমি ভয় পাচ্ছো কেন? না না আর ভয় পাবানা।
সালেহা চিন্তিত। নীরবের মাথার চুল উঠে যাচ্ছে।
এত ঘন কালো মিশমিশে চুলগুলো ঝরে ঝরে মাথা একদম টাক হবার উপক্রম। ডাক্তারের সাথে কথা বলেছে। ডাক্তার বলেছে, বেশি পাওয়ারের ওষুধ খেলে ওরকম হবেই। ভাল হলে ঠিক হয়ে যাবে।
সত্যি ভাল হবে ডাক্তার সাহেব।
আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
আল্লাহর কাছে তো কত দোয়া করছি। আল্লাহর কাছেই তো দোয়া করছি। চোখ দুটি সজল হয়ে যায় সালেহার।
খবর আসলো দিনা মেয়েটি মারা গেছে।
সব মায়েরা একত্রিত হয়েছে দিনা শেষ সময়ে কি করেছে কি বলেছে। সবাই কি অবলীলায় ওর সম্পর্কে বলে যাচ্ছে। সালেহা বুক সেলফ থেকে ‘রুহ’ নামক বইটা খুলে পড়তে বসেছে। পড়ায় মন নেই। নীরবের খেলার সাথী দিনার কথাই মনে পড়ছে বারবার।
কি চমৎকার কথা বলতো মেয়েটি। প্রতি মাসে রক্ত নেয়া লাগতো তার। যারা তাকে রক্ত দিত তাদেরকে ফোন করে বলতো, আপনার মায়ের রক্ত লাগবে, আপনি কি দিতে পারবেন?
ওপার থেকে উত্তর আসতো, আম্মাজান, আপনার কত ব্যাগ রক্ত লাগবে? আপনার ছেলে এখনই রক্তের বন্যা বইয়ে দেবে।
সালেহা নিজেকে আর সামলাতে পারে না। ডুকরে কেঁদে ওঠে।
পরক্ষণেই মনে পড়ে নীরবের কথা। চোখ মুছে নীরবকে খুঁজতে থাকে সালেহা। টিভির ঘরে, বাথরুমে, ড্রইং রুমে কোথাও নেই। খুঁজতে খুঁজতে দেখে নীরব চোখ বুঁজে শুয়ে আছে বেডে। সালেহা কপালে হাত দেয়।
নীরব মায়ের হাতটি নিয়ে মুখে গলায় বুকে ছোঁয়ায়। তারপর চোখ খুলে বলে,
মা, আল্লাহ আমাকে কেন এ অসুখ দিল?
সালেহা চুপ করে থাকে।
শুনেছো মা, আজ দিনা মারা গেছে। জমিলা আন্টি বললো। ও খুব ভাল ছিল মা।
সালেহা মন দিয়ে শোনে। কোন কথা বলে না।
দিনা আমাকে একটা কার্ড দিয়ে গেছে। এই দেখ। নীরব পকেট থেকে দিনার কার্ডটি বের করে।
এখন ওটা পকেটে রেখে দাও বাবা। দিনার জন্য দোয়া কর।
নীরব আবারো চোখ বন্ধ করে। মুখে ঝরে পড়ছে কষ্ট। কাঁপা কাঁপা কষ্টে নীরব বলে,
মা তুমি আমাকে একটা কার্ড এনে দেবে?
কার্ড কি করবে তুমি? তোমার এখন কষ্ট হচ্ছে।
কথা বলো না। শুয়ে থাকো।
কার্ডে দিনাকে কিছু লিখে দেবো।
তুমি দিনার কথা ভেবো না। ওতো বেহেশতে চলে গেছে।
ওর সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে।
নীরব খুশি খুশি গলায় বলে, বেহেশতে গেলে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়? সত্যি মা আমিও বেহেশতে গেলে আমার আর কোন কষ্ট থাকবে না?
সালেহা উত্তর দিতে পারে না। আঁচল টেনে চোখ মুছে বলে, আমি তোকে যেতে দেবো না বাবা। তুই আমার কাছে থাকবি।
মা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
একটু পানি দাও। নীরব কাশতে কাশতে বিছানা থেকে উঠতে চেষ্টা করে। সালেহা পেছন থেকে মাথা ও পিঠে হাত দিয়ে উঠিয়ে বাসায়। চোখদুটো নীরবের লাল লাল হয়ে গেছে। সালেহা গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে বলে পানি নাও।
নীরব চোখ বন্ধ করে বলে, পানি খাবোনা মা। আমি শুয়ে থাকবো। সালেহা ধরে ধরে নীরবকে আবার শুইয়ে দেয়। নীরব কিছুক্ষন একদম চুপ থেকে ধীরে ধীরে একটু নাড়াচাড়া করে বললো, এবার একটু পানি দাও। সালেহা পানি দিল।
নীরব কয়েক ঢোক পানি খেলো। অত:পর গ্লাসটি মাকে দিতে দিতে বললো, মা তোমার মনে আছে?
কি?
একবার আমরা সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম। বাবা তোমাকে অনেকগুলো সেন্ডেল কিনে দিলো। আমাকে কিনে দিল একটি খেলনা। তাই না মা।
তোমার মনে নেই?
মনে আছে।
বাবা এখন থাকলে বলতাম, বাবা দেখ তুমি যে খেলনা আমাকে কিনে দিয়েছিলে- ঐ খেলনা তো কবেই ভেঙে গেছে। আমাকে এখন একটা সাইকেল কিনে দাও।
সাইকেল কি হবে বাবা। তুমি সুস্থ হলে তোমাকে সাইকেল কিনে দেবো।
আমিই কিনে দিবো।
আমি যখন ক্লাশে ফার্স্ট হলাম বাবা থাকলে কি যে খুশি হতো, তাই না মা।
আমি বুঝি খুশি হইনি।
নীরব কোন কথা বলে না। সালেহা ঘড়ির দিকে তাকায়।
নীরবের ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
নীরবের স্কুলের স্যার আদনান ও আরিফকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন। সঙ্গে সুখবর। স্কুল থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে নীরব। আদনান ও আরিফকে পেয়ে নীরব ভীষণ খুশি।
ওদের কথা শেষ হতে চাচ্ছে না। স্যার নীরবকে বললেন, তোমাকে তো দ্রুত সুস্থ হতেই হবে। তুমি স্কুলে না আসলে আমাদের তো ভাল লাগে না।
নীরবের চোখ দুটোয় স্বপ্ন চিকচিক করে ওঠে। কেমন অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে স্যারের দিকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।