আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাস্তা , টিউশনি , ওয়েভ ফাংশন আর বরুনা কিংবা নীলাঞ্জনার হাত (অপেক্ষাপর্ব)

আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া সন্ধানো করিয়া স্বপ্নেরও পাখি ধরতে চাই আমি স্বপ্নেরও কথা বলতে চাই আমার অন্তরের কথা বলতে চাই... তখন ক্লাস সিক্সে উঠেছি। আমার ছোট্ট সাদাকালো জীবনে এক একটা রঙের বর্ণচ্ছটা আমার স্কুলগুলো। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষার আগে গুনে দেখি দশটা হয়ে গেছে ! আমার শব্দের ঈশ্বর জাফর ইকবাল স্যার পড়েছেন ছয়টা স্কুলে তাই নিয়ে তার বই “হাফ ডজন স্কুল”। এই একটা দিকে তাকে হারিয়ে দিলাম। অনেক গুলো স্কুলে পড়া যেমন সুমধুর শোনায় বাস্তবে ততটা না, নতুন স্কুলে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়া কিংবা নতুন বন্ধু তৈরি করা যে কি জিনিস তাতো অস্থিতে অস্থিতে জানি।

আর যখন প্রাণের বন্ধু তৈরি হয়ে যাবে (এমন বন্ধু যার বাসায় শুধু পানি খাওয়ার জন্য না টয়লেট করার জন্য ও ঢুকে যাওয়া যায়) ঠিক তখনই আব্বার বদলী। খাট পালং গুটিয়ে ট্রাকে করে কেটে পড়। আমার এক অভিমানী বন্ধু একবার আমাদের গাড়ির পেছনে অনেক দূর সাইকেল নিয়ে চলে এসেছিল! সেই বন্ধুরা আজ কোথায় আছে জানি না, ব্যস্ত নগরে আজও ভিড়ের মাঝে হারানো মুখগুলো খুঁজে বেড়াই . . . এক শীতের সকালে জামালপুর জিলা স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছি। আব্বা বদলী হয়েছেন কক্সবাজার। সবাই গোছ-গাছ করতে খুব ব্যস্ত তাই নিজের টিসি নিজেকেই তুলতে হবে।

ক্লাস সিক্সের একটা ছেলে যে কি না ঠিকমত মাথা আঁচড়াতে পারে না সে এসেছে টিসি তুলতে। আমি বোকার মত স্কুল বিল্ডিংটার সামনে দাড়িয়ে আছি, কোথায় যাব কি করব কিছুই জানি না। এক দুই জনকে জিজ্ঞাসা করতেই রাম ধমক, তখন ঘরে ঘরে ফোনও ছিল না যে বাসায় ফোন করব। লজ্জা আর ভয়ে ঘামছি, শাটের হাতা দিয়ে ঘাম মুছছি প্রচণ্ড পানির পিপাসা। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না, কালকে সকালে ট্রেন।

কিছু না করে চার পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। শেষমেশ আব্বা এসে উদ্ধার করলেন। অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকা সেই প্রথম। - - - আমরা তখন ঢাকায়। আব্বা আফগানিস্তান থেকে ঢাকা আসবেন।

আমি আর বড় চাচা গেলাম এয়ারপোর্টে। দেখলাম তিনশ টাকা টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই। কিচ্ছুক্ষণ পরে আব্বার ফোন “ দু ঘণ্টা ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি বেটা আহাম্মক . . . “ - - - চোদ্দ নাম্বার পুলিশ ফাঁড়ি, বড় মাঠের উল্টো দিকে ব্রিজের উপর বসে আছি আমরা ক’জন। অপেক্ষা আরেকজনের।

সেই একটা ঢোলা সার্ট, মাথায় ক্যাপ, মুখে স্মিত হাসি। আজ অনেক দেরী হচ্ছে তাঁর, সে ছাড়া যে নক্ষত্ররাজি আলো ছড়াবে না। নক্ষত্র পুরুষ আজও ফিরে আসেনি। ছায়াপথের মত সে শুধুই দূরে সরে যাচ্ছে , আরও দূরে, বহু দূরে . . . । তখনকার আমাদের উত্তাল সময়ের দু’লাইন “তিনজনেতে সকাল হতে বিকেল পানে চেয়ে; কাটতনা যে মাঝের সময়, লাগত যে একঘেয়ে আশীর্বাদের বিকেল গুলো আসত ঘোরের মত, জীবনটাকে রাঙিয়ে দেব, দুঃখ গুলো কবর দেব মোদের ছিল ব্রত।

” আজও সেই একটা বিকেলের জন্য আমি আমার অর্ধেক জীবন দিয়ে দিতে পারি । - - - সকাল আটটা, সেনানিবাসের কোন এক ফুট ওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। যথা সম্ভব নিজেকে প্রথাগত স্মার্ট প্রমাণ করার আপ্রাণ প্রয়াস। হাতে যক্ষের ধনের মত বই দুটো আঁকড়ে ধরে রেখেছি। মোবাইলের ডিসপ্লেতে ঘড়ি দেখছি বারবার।

দেরী হচ্ছে কেন . . নাকি আজ আর আসবেই না . . . . হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি গির্জায় সবগুলো ঘণ্টা একসাথে বাজিয়ে তুমি আসছ ওভার ব্রিজটার উপর দিয়ে , “এত তাড়াতাড়ি এলে কেন তুমি আমাকে আর একটু অপেক্ষা করার সুযোগ না দিয়ে ? ?” প্রথম পর্ব রাস্তা , টিউশনি , ওয়েভ ফাংশন আর বরুনা কিংবা নীলাঞ্জনার হাত দ্বিতীয় পর্ব রাস্তা , টিউশনি , ওয়েভ ফাংশন আর বরুনা কিংবা নীলাঞ্জনার হাত (বসন্তপর্ব) তৃতীয় পর্ব রাস্তা , টিউশনি , ওয়েভ ফাংশন আর বরুনা কিংবা নীলাঞ্জনার হাত (কাব্যপর্ব) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।