আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বন্ধু রুনুর গল্প !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! খুব মেজাজ খারাপ হল রুনুর উপর । মুখে সেই ভাবটা একটু বিরক্ত আনার চেষ্টা করলাম । কিন্তু রুনুর সেই দিকে কোন লক্ষ্যই নেই । ও খিল খিল করে হেসেই চলেছে । আমি বললাম -তুই এমন করে হাসতেছিস ক্যান ? রুনু আমার দিকে তাকিয়ে কোন মতে হাসি থামিয়ে বলল -তা কি করবো আর ? তুই বোকা ছিলি জানতাম তাই বলে এতো বড় বেকুব জানতাম না ।

-মানে কি ? আমি বোকার মত এমন কি করলাম ? -কি করেছিস ? বলে রুনু আবারও হাসতে লাগল । -দেখ হাসবি না । থাবড়া খাবি কিন্তু । আমার কথা শুনে রুনু আরো জোরে হাসতে লাগল । -থাবড়া দিতে পারবি ? দে দেখি একটা ? আমি কিছুক্ষন রুনুর দিকে তাকিয়ে বললাম -তোর খুব মজা লাগছে ।

তাই না ? আমি অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে বসলাম । এই ফাজিল মেয়েটার সাথে কোন কথা বলবো না । রুনু আমার দিকে ঘুরে বসলো । বলল -তুই এমন পাগলামো কেন করছিস ? -আমি পাগলামীর কি করলাম ? -কিছু করিস নি । কিন্তু করতে যাচ্ছিস ।

স্রেফ পাগলামো । -কোন পাগলামো না । আমি এটা টিভিতে দেখেছি । -তা কি দেখেছেন জনাব একটু শুনি । -একবার একটা এনিম্যাশন মুভিতে দেখেছিলাম ।

একটা ছেলে তার পছন্দের মেয়ে কোথাও খুজে পায় না । তারপর নিজেই একটা পছন্দের মেয়ের ছবি আঁকে তারপর ইউরেটাসের কাছে প্রার্থনা করে সেই মেয়ের মধ্যে প্রান প্রদান করে । রুনু আমাকে বলল -ইউরেটাসকে ? -ইউরেটাস হল গ্রীক দেবী । -শোন তুই গ্রীসে থাকিস না বাংলাদেশে থাকিস । বোকামীর একটা সীমা থাকা দরকার ।

কোথায় না কোন কার্টুনে কি দেখেছে ! তুই আসলেই একটা গাধা । -তোর কি মনে হয় আমি কেবল ঐ এনিম্যাশন মুভি দেখেই এসব বলছি । না । আমি এই নিয়ে পড়াশুনা করেছি । গ্রীক দেবী ইউরেটাসের আসলেই এমন ক্ষমতা আছে ।

ঠিক কিছু প্রসিডিউর ফলো করলেই চলবে । রুনুর মুখটা একটু নমনীও হল । -আচ্ছা এসব তুই কেন করতে চাচ্ছিস । -তুই জানিস । খুব ভাল করেই জানিস কারনটা তুই ।

রুনু এবার হাতের উপর হাত রাখলো । শরীরের কোন অনুভূতি জাগলো না । জাগার কথাও না । কেবল আমার মনটা বলল যে রুনু আমার হাতের উপর রেখেছে । মিসির আলীর মত একজনের ভাষ্য অনুযায়ী রুনু নামের কারোর কোন অস্তিত্ব নাই ।

ভদ্রলোকের কথা ফেলে দেওয়ার উপায় নাই । কারন কথা যে সত্য এটা আমি নিজেও জানি । বাস্তবে রুনু নেই । কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে চাই যে রুনু আছে । ছোট বেলা থেকেই আমি একা একাই বড় হয়েছি ।

আসলে বাবা মার কাছে এতো সময় কোথায় আমাকে টাইম দেবার ? তারা তাদের জীবন দিয়ে ব্যস্ত । একদিন বিকেল বেলা আমি আমার ঘরে বসে খেলা করছিলাম । আমার বুয়া যার কিনা আমায় সাথে সাথে থাকার কথা ছিল সে টিভির ঘরে টিভি দেখায় ব্যস্ত । সব সময় যা করে সে ! ঐ দিন বিকেল বেলাতেই আমি রুনুকে আবিস্কার করি । লাল রংয়ের একটা ফ্রগ পরা ।

আমার কাছে এসে বলল -এই তুই একা একা খেলছিস ক্যান? আমার সাথে খেলবি ? সেই থেকে শুরু ! তারপর থেকেই রুনু সব সময় আমার সাথেই আছে । সব জায়গায় সব সময় আমার সাথে । রুনু বলল -আমি তো সব সময় তোমার সাথে আছি । তোমার পাশে । যখন তোমার কথা বলতে ইচ্ছা করে আমি কি আসি না ? তোমার পাশে কি বসি না ? এই যে দেখো তোমার হাত ধরেছি ! এটা অন্য কেউ যাই বলুক না কেন তোমার কাছে তো এটা বাস্তব ? তাই না ? তাহলে কেন আমাকে দরকার ? আমি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললাম -বাবা মা আমার জন্য মেয়ে দেখছে ।

-তো ভাল তো । -না ভাল না । -আমি অন্য কোন মেয়ে কে বিয়ে করতে চাই না । আমি তোকে বিয়ে করতে চাই । রুনু আমার দিকে একটু বিরক্তিতে তাকিয়ে বলল -তুই আসলেই একটা গাধারে ।

তোয় সাথে ফ্যাদা প্যাচাল পেড়ে লাভ নাই । থাক তুই । আমি যাই । রুনু চলে গেল । আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন ।

এই মেয়ে গুলো এমন কেন হয় ? একটু আগেই বলল আমাকে ছেড়ে যাবে না । সব সময় আমার পাশে আছে । আবার এখন চলে যাচ্ছে । বাস্তবের মেয়ে গুলা বোঝাতো জটিল বিষয়ই শালার এই কল্পনার মেয়েটাকেও দেখি বোঝা যায় না । আচ্ছা মেয়েটা কি বোঝে না ? আমি কেন এসব করি ? আসলে অন্য কোন মেয়েকে আমি ঠিক মত নিতেই পারবো না ।

আমি ভাবতেই পারি না অন্য কোন মেয়ে আমার উপর খবরদারী করবে আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোড়াবে । আমি জানি রুনুর মত করে কেউ আমাকে কোন দিন বুঝবে না । যদি খবরদারী কেউ করুক যেটা রুনুই করুক । অন্য কেউ না । দুদিন গেল কেবল প্রস্তুতি নিতেই ।

আমার ইউরেটাসকে ডাকার প্রথম শর্তটা হল তাকে ডাকতে হবে পাহাড়ের কোন গুহার ভেতর থেকে । পাহাড়ের গুহার ভেতরে তিনকোনা একটা ত্রিভুজ আকতে হবে । তারপর তিন কোনায় তিনটা গর্ত করে তাজা রক্ত দিয়ে ভর্তি করতে হবে । ত্রিভুজের মাঝখানে রুনুর ছবি রাখতে হবে আর তার চারিপাশে মোমবাতি জ্বালাতে হবে । তারপর এক মনে ইউরেটাসের নাম স্বরন করতে হবে ।

তারপরেই নাকি ইউরেটাসের আবির্ভাব হবে । সব জোগার যন্ত করে যখন বান্দরবনের ইলং পাহাড়ের সামনে হাজির হলাম তখন সূর্য মাথার উপর এসে দাড়িয়েছে । আমি বনের ভিতর দিয়ে হাটছি সামনে আমার গাইড । পনের ষোল বছরের একটা ছেলে । নাম ইতু মিয়া ।

ব্যাগ পত্র সব আমার কাধে থাকলেও ইতুর হাতে তিনটা মুরগি । ইতুর ধারনা হয়েছে আমি পাহাড়ের উপর উঠে পিকনিক করবো । মুরগি রান্না হবে । এই আনন্দ নিয়ে সে আগে হাটসে । -এই বেটা কই যাস ? পিছনে ঘুরে দেখি রুনু ।

একটু দৌড়ে এসে আমার পাশা পাশি চলে এল । -সব প্রস্তুতি শেষ ? হুম । তা বয়লার মুরগি কিনেছিস কেন ? ইউরেটাসের উদ্দেশ্য উত্‍সর্গ করবি ? এট লিষ্ট দেশি মুরগি কিনতে পারতি ? বয়লার মুরগি দিয়ে উত্‍সর্গ ? -তুই কি ফাজরামো করতে এসেছিস ? -আরে ফাজলামো করবো কেন ? তুই বয়লার মুরগি দিয়া ইউরেটাসকে ডেকে আনলি আর সে বলবে হু হু হা হা ! তুই আমাকে বয়লার মুরগির রক্ত উত্‍সর্গ করলি যাহ, তোর রুনুর গায়েও আমি বয়লার রক্ত ভরে দিলাম । তাহলে কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখেছিস ? আমি এবার দাড়িয়ে পড়লাম । রুনু জোরে জোরে হাসতে লাগলো ।

ইতু বেশ খানিকটা দুরে চলে গিয়েছিল । আমাকে ডাকতে লাগল । এই মেয়ের সাথে সময় নষ্ট করে লাভ নাই । আমি আবার হাটা দিলাম । ইতু মিয়া আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে লাগল ।

লতাপাতা ঘেরা পথ । মাঝে মাঝে রাস্তে খুব সংক্রীর্ন হয়ে উঠছে আবার খুব চওড়া হয়ে উঠছে । আরো আধা ঘন্টা খানেক চলার পর আমরা পাহাড়ে উঠতে শুরু করলাম । তখনই টের পেলাম পরিশ্রম কাকে বলে । পাহার খুব বেশি খাড়া না তবুও বেশ পরিশ্রম করতে হল ।

মাঝা মাঝি একটা জায়গায় এসে ইতু বলল যে আর পাহারে ওঠার দরকার নাই । আমি যে রকম গুহা খুজতেছি সেটা নাকি আর একটু সামনেই আছে । আমি বললাম -এখানে মানুষ জন আসবে না তো ? -না না কেউ আইবো না । আর কিছুদুর হাটার পর গুহাটা পাওয়া গেল । বড় একটা পাথর ।

তার পরেই বড় গুহাটা । চারিপাশের পরিস্থিতি দেখে মনে হল আসলে এখানে কেউ আসে টাসে না । ইতু আমাকে গুহার ভিতরে নিয়ে গেল । আমি একটা বড় ত্রিভুজ আকলাম । তারপর তিন কোনায় তিনটা গর্ত করলাম ।

ইতুর সাহায্যে তিনটা মুরগী জবাই করে রক্ত গর্তের ভিতর ফেললাম । ইতু একটু অদ্ভুদ চোখে তাকালেও কিছু বলল না । আমি ইতুকে মুরগী গুলো নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে বললাম । আর বললাম ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করতে । ইতু বাইরে গেলে আমি ত্রিভুজের মাঝখানে রুনুর ছবি গুলো রেখে ওর চারিপাশে মোমবাতি জ্বলিয়ে বসে পড়লাম ।

ছোট বেলা থেকে আমার ছবি আকার হাত ভাল ছিল । ছবি গুলো রুনুকে সামনে বসিয়ে রেখে আকা । যদিও রুনু আমার কল্পনার বন্ধু কিন্তু রুনুর মুখটা একদম বাস্তব । ঐ মন বিজ্ঞানীও ছবি গুলো দেখে বেশ অবাক হয়েছিল । বিশেষ করে রুনুর বিভিন্ন বয়সের ছবি ।

এখন শেষ কাজটা । এখন ইউরেটাসকে এক মনে ডাকতে হবে । আমি তাই করা শুরু করলাম । মনে মনে বলা শুরু করলাম ইউরেটাস তুমি এসো ! ইউরেটাস তুমি এসো ! কখন যে চোখ ঘুম চলে এসেছিল । কে যেন আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গালো ।

-বাবা ওঠ ! বাবা ! আমি আমি চোখ মেলে একটু অবাকই হলাম । বেশ বৃদ্ধ এক মহিলা । বয়স কত হবে কে জানে ! আমি চোখ মুছতে মুছতে বললাম -আপনি কে ? এখানে কি করছেন ? -বাবা তুমি আমাকে ডাকলে না ? -আমি ডাকলাম মানে ? আমি কখন আপনাকে ডাকলাম ? -তুমি এখানে কেন এসেছ ? এই যে এত আয়োজন ? এসব কার জন্য ? -আমি তো দেবী ইউরেটাসকে ডাকছি ! বৃদ্ধা মহিলা ফোলকা দাতে হেসে বলল -আমিই দেবী ইউরেটাস ! -কিন্তু .. এই মহিলা কি আমার সাথে ফাজলামি করছে নাকি ? আমি ছবিতে ইউরেটাসের কি চমত্‍কার ছবি দেখলাম ! কি চমক তার ! কি সৌন্দর্য ! আর এই মহিলা কোথা থেকে এসে বলে আমি ইউরেটাস ! বললেই হল । এসব নিশ্চই ইতু মিয়ার শয়তানী । কিন্তু আমি এখানে কি করতে এসেছে একথা তো আমি ইতু মিয়া কে বলি নি ।

ইতু মিয়াকে কেন আমি কাউকেই তো বলি নি । তাহলে ? বৃদ্ধা বলল -বাবা তুমি আমার যে ছবি দেখেছ সেটা আমার বয়স কালের ছবি । তাও সে কয়েক হাজার বছর আগের কথা । তুমি তো জানোই গ্রীক সভ্যতা কত পুরানো ! আর কেউ ই আমাকে তোমার কথা বলে নি । দেব দেবীদের তো তাহলে বয়স বাড়ে ? বৃদ্ধা আবার ফোকলা দাঁতে হাসল ।

আমি একটু দ্বিধায় পরে গেলাম । মহিলা আমার মনের কথা কিভাবে বুঝে ফেলছে ? তাহলে কি সত্যি সত্যি মহিলা ইউরেটাস ? আমার ইচ্ছা কি তাহলে সত্যি সত্যি পুরন হতে যাচ্ছে ? বৃদ্ধা বলল -তা বাবা দেশী মুরগি পাইলা না ? -মানে ? -বয়লায় মুরগিতে আজকাল ঘরে কামলারাও খুশি হয় না আর আমি তো দেবী । তাও আবার গ্রীক দেবী । এই মহিলার সমস্যা কি ? উনি যেই আমলের সেই আমলে তো বয়লার মুরগি আর দেশী মুরগির ভিতর পার্থক্য থাকার কথা না ? কি আশ্চার্য কথা ! তাহলে ? এই সব কি হচ্ছে ? এই মহিলার সমস্যা কোথায় ? এসব ভাবতে ভাবতে এবার সত্যি সত্যিই আমি জেগে উঠলাম । আমি বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ।

এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দেখলাম কোথায় কি ? চারিপাশে কেবলই অন্ধকার । মোমবাতি জ্বলছিল এখন নিভে গেছে । আমি টর্চ জ্বালিয়ে দেখলাম গর্তের রক্তও শুকিয়ে গেছে । ধুর সব ভূয়া ! আমি রুনুর ছবি গুলো নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম । গুহার মুখ থেকেই দেখলাম বড় পাথরটার ওপাশে ধোয়া উড়ছে ।

নিশ্চই ইতু মিয়া আগুন জ্বালিয়েছে । আমি পাথরটা পার হতেই একটা ধাক্কার মত খেলাম । ইতু মিয়া বারবি কিউ স্টাইলে মুরগি গুলো পোড়াচ্ছে । আর ইতুর ঠিক পাশের রুনু বসে আছে । কালো জিন্স সাথে কালো টিশার্ট ।

পাশে রাখা একটা ট্রাভেল ব্যাগ । ট্রাকার রা যেরকম ব্যাগ ব্যাবহার করে সেই রকম । কিন্তু রুনুকে যেন একটু মোটা লাগছে । সব থেকে আশ্চর্যের কথা হল রুনু পানির বোতল হাতে ইতু মিয়ার সাথে গল্প করছে । রুনুকে আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না তাহলে ইতু মিয়ার সাথে কথা বলছে কিভাবে ? ইউটেরাস কি সত্যি খেল দেখালো নাকি ? আমার কথাঃ যারা আমার লেখা পড়েন মোটামুটি সবার কাছেই গল্পটি পরিচিত মনে হবে ।

শায়মা আপু এই রকম একটা গল্প লিখেছিলেন কয়েকদিন আগে ! শায়মা আপুর লেখাটা পড়েই আমার গল্পটা লিখতে ইচ্ছা হয় । আপু গল্প গুলো কেবল দুঃখের হয় ! গল্প,পড়ে কেবল মন খারাপ হয় ! এই জন্য আমি কিছুটা আনন্দের গল্প লিখতে চেয়েছি । ভেবেছিলাম আরো কিছুটা লিখবো ! কিভাবে রুনু সত্যি সত্যি বাস্তবে এল খোলাসা করবো, কিন্তু পরে মনে হল থাক ! পাঠক যেভাবে ভেবে মজা পায় পাক ! এটুকু তাদের উপর ছেড়ে দিলাম । আর একটা কথা, গল্পে যা বলেছি তার সব কিছুই আমার বানানো, এর কোন ভিত্তি নাই ! সবাই ভাল থাকবেন !  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.