আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোশাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাধীনতা

যেথায় পড়শী বসত করে, আমি একদিন ও না দেখিলাম তারে। আজ একটা খবর চোখে পড়ল। সোশাল মিডিয়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য কুয়েটের ৬ জন মেধাবী শিক্ষার্থী কে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং আরো কয়জন কে বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। খবরের সূত্র View this link এ খবর টা সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটাকে আবারো সামনে নিয়ে এসেছে। সোশাল মিডিয়াতে কি আমি আমার মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারব না? প্রশ্নটি যত সহজ, এর উত্তর টি হয়তো তত সহজ না।

কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন তাদের অনুভূতি, মতামত সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ করছে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষের ধ্যান-ধারনা, চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা, রুচি, মেধা, জ্ঞান ও মূল্যবোধের পার্থক্যও ব্যাপক। সে কারণে, মাত্র একজনের প্রকাশ করা একটা লেখা, ঘটনা বা সামান্য একটা মন্তব্য, একটা নির্দিষ্ট গন্ডি, এলাকা, এমনকি দেশের বিপুল পরিমাণ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। একে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে আপনি যেমন অজ্ঞতা/অন্ধকারের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষকে আলোর সন্ধান দিতে পারেন, আবার এরই মাধ্যমে কেউ কেউ বিপুল জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্তও করে ফেলতে পারে। এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও এর দ্বারা কেউ কেউ লাভবান হতে পারেন, আবার কারো কারো সর্বনাশের কারণও হতে পারে এই মিডিয়া।

এজন্যই সোশাল মিডিয়া আজকে এত শক্তিশালী। আধুনিক মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে তাই এর গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং এর তাৎপর্য কে অনুধাবন করার সময় এসেছে। ফিরে আসি সেই মূল প্রশ্নে। সোশাল মিডিয়াতে কি আমি আমার মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারব না? প্রথমত; আমাদের বুঝতে হবে 'স্বাধীনতা' মানে কি। ছোটবেলায় শোনা একটা গল্পের কথা সামান্য মনে পড়ে (আমার শুধু থীম টা মনে আছে, প্রকৃত ঘটনা টা মনে নেই)।

সেখানে একজন শিক্ষক/বাবা তার সন্তান কে বোঝান স্বাধীনতার প্রকৃত মর্ম। শিশুটিকে একটিমাত্র আম দেয়া হয়। বলা হয় এ আমটি তোমার। তোমার কাছে এখন অনেকগুলি বিকল্প আছে। ১) তুমি আমটি এখনই লুকিয়ে লুকিয়ে নিজে খেয়ে ফেলতে পারো ২) সবার সামনেই খেয়ে ফেলতে পারো কারণ আমটি এখন তোমার।

এখানে কারো কিছু বলার নেই। ৩) তুমি ইচ্ছা করলে তোমার আরো দুটো ছোট ভাই-বোনের সাথে শেয়ার করে আমটি খেতে পার। ৪) এমন কি, তুমি নিজে একেবারেই না খেয়ে তোমার ছোট বোনটিকে আমটি দিয়ে দিতে পার। ইত্যাদি। এই যে তোমার জিনিষের প্রতি তোমার যে অধিকার, তোমার সামনে অনেকগুলো বিকল্প যেটা তোমার ইচ্ছার নিয়ন্ত্রণাধীন, এ ব্যাপারে অন্যের কিছুই বলার বা করার নৈতিক অধিকার নেই, এটাই ব্যাপক অর্থে তোমার স্বাধীনতা।

আবার, তুমি যদি আমটি কারো দিকে ছুড়ে মারো তাকে আঘাত করার উদ্দেশ্য্‌, সেটাও তোমার ইচ্ছার একটা সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে, তবে সেটা স্বাধীনতা নয় নিশ্চয়। কিন্তু উপরের চারটি বিকল্পের ভেতরে তোমাকে যদি যে কোন একটি করতে বলা হয়, এবং তুমি যদি আমটি নিজে না খেয়ে তোমার ছোট বোন কে দিয়ে দাও, তাহলেই তুমি স্বাধীনতার প্রকৃত আনন্দ যে কি, সেটা অনুভব করতে পারবে। এই যে ত্যাগ করতে পারার অধিকার এবং তার যে আনন্দময় গৌরব, এটাই হলো প্রকৃত স্বাধীনতা। লেখা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। পরিশেষে, এ লেখার মাধ্যমে যা বলতে চেয়েছি, সেটা হলো, স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার নয়।

যা ইচ্ছা তাই বলার অধিকার বা বলাটাই বাক-স্বাধীনতা নয়। যে কাজ যতটুকু করে বা যা লিখে বা বলে আমি ত্যাগের সেই আনন্দময় গৌরব অনুভব করতে পারি, সে পর্যন্তই আমার প্রকৃত স্বাধীনতা। এর থেকে অত্যধিক বিচ্যুত হলে সেটা স্বেচ্ছাচারিতার পর্যায়ে চলে যেতে পারে যেটা নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে ভাববার সময় হয়েছে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.