আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার "বাহারি" রকমের ছাত্রদের কথা-

বর্তমানে একটা না, দুইটা না, তিনটা না... চার চারটা ছাত্রকে পড়াচ্ছি! নিজের Energy দেখে নিজেই হত, আহত, নিহতবাক থেকে বর্তমানে বাকবাকুম পায়রা অবস্থায় আছি! যাই হোক, এক ছাত্র তার খালার বিয়েতে যাওয়ার ফলে এক সপ্তাহের জন্য চাপ কিছুটা কম, ফিরে এলেই চাপে পুরা আলুর চপ হয়ে যাব! শনি,সোম,বুধ দুই জনকে পড়াই আর রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি বাকি দুইজনরে; শুক্রুবার নিজেরে নিজেই পড়াই! দুর্ভাগ্যবশত আজকে তিনজনকে পর পর পড়ানোর দায়িত্ব পড়সে! আল্লাহ্‌র নাম নিয়া রওয়ানা দিলাম...তাঁদের সাথে আজ নিম্নরূপ পড়াশুনা হল--- ছাত্র-১ : ক্লাস টু তে পড়ে, ছোট-খাট মাসুম বাচ্চার মত চেহারা।( বাচ্চার চেহারা তো বাচ্চার মতই হবে- জি না! কিছু বাচ্চার চেহারা দেখলেই ইবলিশের কথা মনে পড়ে!) আমার চেয়েও চিকন শারীরিক গঠন, যাকে বলে কারিনার "জিরো ফিগার"! ছাত্র-শিক্ষক পাশাপাশি দাঁড়ালে যে কেও বলবে- "বাপ কা বেটার মত, শিক্ষক কা ছাত্র!" -কি হোমওয়ার্ক ছিল? -ভাইয়া, ২০ থেকে ৬০ পর্যন্ত কথায় লিখা। -দেখি খাতা... খাতা দেখে আমি টাস্কিত! বানান কিছু ভুল- সেটা ব্যাপার না, কিন্তু যত ঊন আছে, সেই সব জায়গায় "ডন" লিখা! ডনত্রিশ, ডনচল্লিশ, ডনপঞ্চাশ! আমি সুধালাম- খাতা ভর্তি ডন! ব্যাপারটা কি? ছাত্রের চেহারা দেখে মনে হল- সে বামপন্থী! "ডন" বা "ডান" কোন কিছুই সে বুঝে না! -সব জায়গায় শুধু ডন! তুমি কি আমার মত শাহরুখ খানের ফ্যান নাকি? নাকি অমিতাভের? কারে ভাল্লাগে? -ভাইয়া, আমার তো ইমরান হাশমি রে ভাল্লাগে! (আমার মূর্ছা যাওয়ার পালা! কেয়ামত আসন্ন!) -(খানিকটা ধাতস্থ হয়ে!) আর কি পড়া ছিল? -ভাইয়া, রবীন্দ্রনাথের ছুটি কবিতা। -লিখা শুরু কর না দেখে। লিখা শেষ হওয়ার পর খাতা দেখে আমি ৪৪০ ভোল্টের শক খাইলাম! বাকি সব বানান বাদ দিলাম, কবির নাম সে লিখেছে- রন্দ্রিনদাত ঠাকুর!?!? ভাগ্য ভাল যে কবিগুরু বেঁচে নেই, বেঁচে থাকলে নিজের নামের এই বানান দেখলে নির্ঘাত এই নিষ্ঠুর দুনিয়া হতে স্বেচ্ছায় "ছুটি" নিতেন! -এই অবস্থা কেন? পড় নাই? -ভাইয়া, আমি ভাবি নাই আপনি লিখতে দিবেন না দেখে! -তাহলে কি ভাবসিলা? আঁকতে দিব? রঙ করতে বলব কবিতা? আমার শক্ত মুখ দেখে ছাত্র ফিক করে হাসতে গিয়েও হাসল না! অবশেষে তাঁহার জননীর সামনে তাহাকে কিছু কটু কথা শুনিয়ে দ্বিতীয় ছাত্রের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম! ছাত্র-২: ক্লাস টু তে পড়েন ইনিও! ছোট-খাট শরীর, কিন্তু স্বাস্থ্য মোটামুটি ভাল! আমার দেখা প্রথম মানুষ(ও বাচ্চা) যার ভ্রূর শেষ প্রান্ত উপরের দিকে খানিকটা বাঁকা হয়ে উঠানো, যেন ভ্রূ দুটি আকাশকে( বা বাচ্চাটার মাথার চুলকে)স্পর্শ করতে চাচ্ছে! এই ভ্রূ দেখলেই সেই ইংরেজি বাক্যটা মনে পড়ে- Sky is the limit! পড়া লিখা শেষে খাতা দেখার সময় আবার তাজ্জব হওয়ার পালা! বানান ভুল নাই বললেই চলে, কিন্তু কোন বাক্যের শেষে দাঁড়ি নাই! এইটা দেখে আমার মনে এক সাহিত্যের অনুভুতি সৃষ্টি হল(নিজে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র কিনা!)! ছাত্রকে সুধাই- তুমি কি চাওানা জীবন কখনও শেষ হোক? ছাত্র আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন "কোই মিল গেয়া" ছবির এলিয়েন "জাদু"কে তার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে! এমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল- মানে কি ভাইয়া? -মানে তো তুমি জানো! একটা বাক্য তেও দাঁড়ি নাই কেন? তোমার খাতা দেখে তো মনে হয়- বাদ দাও তো সব! জীবন চলতেই থাকুক, তুচ্ছ দাঁড়ি, কমা দিয়ে একে থামানোর মানে কি? তাই নাই!?!?! -না ভাইয়া, আসলে ভাল্লাগতেসিল না দাঁড়ি দিতে! HULK এর মত হালকা অবাক হয়ে তৃতীয় ছাত্রের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম! ছাত্র-৩:ক্লাস থ্রি তে পড়েন ইনি, ছোটোখাটো,ভাল স্বাস্থ্য! আমার সামনে খুব মাসুম ভাব নিয়া থাকার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি যে কতটা বদের হাড্ডি, তা তাঁহার চঞ্চল নয়নজোড়া দেখলেই বুঝা যায়! আমার পড়া শিখতে তার কখনই ভাল লাগে না! -কি পড়া ছিল? -ভাইয়া, Present tense এর প্রকারভেদ। -প্রতিটা প্রকারভেদের গঠন আর ৩ টা করে উদাহরণ লিখ! লিখার সময় তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল তাঁকে কেও জোর করে আলকাতরা খাইয়ে দিয়েছে, না পারছে গিলে ফেলতে, না পারছে আমার সামনে বমি করতে! কিছুক্ষণ লেখার পর হঠাৎ বলল- আচ্ছা ভাইয়া, আপনি না বলসিলেন, universal truth বা চিরন্তন সত্য হলে present tense হয়? মানে যেটা সারাজীবন সত্যি হয়? -হ্যাঁ, বলসিলাম তো? সমস্যা কি? -না, সমস্যা নাই, আমি যদি ইংরেজিতে লিখি- যদি পানি গরম করি, তাহলে সেটা ফুটে বাষ্প হয়- তাহলে এটা present indefinite tense এর একটা ভাল উদাহরণ হয় না ভাইয়া? রাগে, দুঃখে মাথার চান্দি গরম পানির মতই ফুটতে থাকলো! গতদিন এই জন্য দেড় ঘণ্টা এত কষ্ট করে Tense পড়াইসিলাম?!?!? কিছু হালকা ধমক ধামক দিয়া তাঁহার ঘর ত্যাগ করিয়া অবশেষে "স্বগৃহে" প্রত্যাবর্তন করিলাম! পুনশ্চ ১- ছাত্র নাম্বার ৪ আরও ইন্টারেস্টিং এবং এদের সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেধাবী... তাঁকে নিয়ে ঘটনা অন্য কোনদিন বলব! :-D পুনশ্চ ২- যারা সারাদিন আমাকে পাগল বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন, তাঁদেরকে বলছি--- আমি যদি এরকম পাগল দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকি, তাহলে আমার আচরণে পাগলামি থাকা অস্বাভাবিক না! কপাল ভাল, আমি এখনও বেঁচে আছি এই ছাত্রদের মাঝে, সৃষ্টিকর্তা! আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! :-)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।