আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাস্তা , টিউশনি , ওয়েভ ফাংশন আর বরুনা কিংবা নীলাঞ্জনার হাত (কাব্যপর্ব)

আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া সন্ধানো করিয়া স্বপ্নেরও পাখি ধরতে চাই আমি স্বপ্নেরও কথা বলতে চাই আমার অন্তরের কথা বলতে চাই... তার সাথে পরিচয় হওয়ার অনেক আগে থেকেই তাকে আমি চিনি । সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে হার্টবিট ১৪৫। কথা বলতে হয়নি শুধু হেঁটে গেছে তাতেই এই অবস্থা । অনেকটুকু সময় একসাথে চলে গেলেও একবার কথা বলার সাহস হয়নি . . . । নিরমুলেন্দু গুনের একটা কবিতা আছে "আজ সাহস করে আঙুল ছোঁব . . . ।

আঙুল ছোঁয়ার সাহস আমার কোন কালেও হবে না । ভালোবাসা বোকাদের সাহসী করে । সর্বোচ্চ সাহস নিয়ে তার সাথে প্রথম কথা বলতে যাই । সেই শুরু এরপর সাহসী হয়ে উঠি আমি । বিশ্ববিদ্যালয়য়ে পুলিশের লাঠি, রাত দুটোয় অচেনা শহরের মহাসড়ক ধরে হাঁটা কিংবা দুরাত বাসায় না ফেরা (যে বাসায় কিনা সন্ধ্যা সাতটার পর সান্ধ্য আইন জারী থাকে, দেরী হলে পায়ের নিচে গুলি করা যাবে!)।

এমনকি তার সাথে রিকশায় চড়া পর্যন্ত মধ্যবিত্তের দুর্ধর্ষ সাহসিক কাজ গুলো বোকা ছেলেটা একে একে করে ফেলল । নিজের কাছেই নিজে বড় হয়ে উঠতে থাকি ধীরে ধীরে । সেই ভালোবাসা কিভাবে বোকা এবং ভীতু ছেলেটাকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে গেল সেই গল্প অন্য কোনদিন শোনাবো । পড়ালেখার বাইরের পড়ালেখায় আগ্রহ ছিল বহু আগে থেকেই, ভাল ছাত্র ছিলাম না কোন কালেও । জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ চলত গগ্রাসে আর সুনীল, সমরেশ, শরৎ কিংবা রবীন্দ্র চলত টুকটাক ।

মনে আছে প্রথম টিউশনির পুরো টাকাটা দিয়েই শুধু বই ই কিনেছিলাম, কোন ঈদ হয়ত এমন গেছে নতুন পাঞ্জাবী কেনা হয়নি কিন্তু কোন বইমেলায় এমন হয়নি যে বই কেনা হয়নি । তবে কবিতা পড়া হয়নি কখনও, পাশ করার জন্য হয়ত পড়তে বাধ্য হয়েছি কিন্তু পড়ার জন্য কবিতা; তাও আবার ছন্দ ছাড়া !! অসম্ভব !!! কবিতা পড়া শুরু হোল । আমার দ্বিতীয় প্রেম, প্রেমিকার নাম কবিতা । গুণ, নজরুল, সুনীল, হুমায়ূন আজাদ, পুনেন্দু পত্রী, হেলাল হাফিজ এমনকি হালের আনিসুল হক পর্যন্ত । এক একটা কবিতা পড়ি আমার বায়ো-কোপট্রিন দিয়ে শীতল রক্তের স্রোত বয়ে যায় ।

“তুমি এই যে বসে আছো, আঙুলে ছোঁয়ানো থুতনি কপালে পড়েছে চূর্ণ চুল পাড়ের নক্সায় ঢাকা পা ওষ্ঠাগ্রে আসন্ন হাসি- এই দৃশ্যে অমরত্ব তুমি তো জানো না, নীরা, আমার মৃত্যুর পরও এই ছবি থেকে যাবে । ‘’ কি আশ্চর্য !!! সারা জীবনে কত বই পড়লাম, ভাবে মাটিতে পা পড়ে না । আর এই কবিতার চারটা লাইনের অমরত্ব, আকুতি কি ভয়ংকর । সুনীলের মৃত্যুর পরেও নীরার আঙুলে ছোঁয়ানো থুতনি কিংবা ওষ্ঠাগ্রের হাসি নীরাকে অমরত্ব দান করল । সুনীল চলে গেছেন সুনীলের নীরা অমর . . . ।

নির্মলেন্দু গুণ, লোকটাকে আগে মনে হত বেটার ভাব দেখ । শুধু রবিন্দ্রনাথের মত দাড়ি রাখলেই কবি হওয়া যায় না । তারপর যখন তাকে জানলাম তখন বুঝলাম অসীম শূন্যতার অনুভূতিকে সসীম বর্ণমালা দিয়ে তার মত করে আর কেউ প্রকাশ করতে পারে নি । “আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে,আমি চাই কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা খুলে দিক। কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।

কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক,কেউ অন্তত আমাকে জিজ্ঞেস করুক : 'তোমার চোখ এতো লাল কেন?” আমার ভালবাসা যখন আমাকে মাঝপথে ছেড়ে চলে গেল তখন আমার দুঃষহ নিঃসঙ্গতার একমাত্র সঙ্গী ছিলেন সৌম্য দর্শন এই মানুষটা । “তুমি যেখানেই হাত রাখো আমার উদগ্রীব চিত্র থাকে সেখানেই৷ আমি যেখানেই হাত পাতি সেখানেই অসীম শূন্যতা, তুমি নেই” আমার কবিতা শোনানোর মানুষ আজ হয়তো আমার কবিতা আর শোনেনা , হয়ত ভিন্ন গ্রহে সুখেই আছে। মেয়েটাকে দারুণ অনুভব করি আজও , শোন মেয়ে এবার তোমায় বলি কি ভেবেছিলে তুমি; তুমি চলে গেলে বুঝি ভুলে যাব সব ? অন্তরে তোমার যে মন্দির গড়েছি তাতে পূজোর অর্ঘ্য কিংবা ফুলের অভাব হবেনা কোন দিনও । তোমাকে ছাড়াই ঠিক বেঁচে থাকব আরও অনেক গুলো শরৎ , শুধু দুঃখ একটাই তুমি বুঝলে না . . .। ।

প্রথম পর্ব রাস্তা , টিউশনি , ওয়েভ ফাংশন আর বরুনা কিংবা নীলাঞ্জনার হাত দ্বিতীয় পর্ব রাস্তা , টিউশনি , ওয়েভ ফাংশন আর বরুনা কিংবা নীলাঞ্জনার হাত (বসন্তপর্ব) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।