সত্য সন্ধানে সর্বদা নির্ভিক চারুকলার সামনের ছবির হাট। কেউ বলে গাজার হাট। সে যে হাটই হোক না কেন জায়গাটা আমার খুবই পছন্দের। আড্ডা দেয়ার জন্যই না শুধু, অনেক কিছু শেখারও আছে এই ছবির হাটে। জীবন বাস্তবতা, দর্শন, আকর্ষন, উৎশৃঙ্খলতা, শিল্প সাহিত্য, ইহকাল-পরকাল, জৈবিক চাহিদা কি নেই এখানে।
সব কিছুরই আলোচনা, সমান ভাবে আলোচনা (সমআলোচনা), একপাক্ষিক আলোচনা (গুয়াড়পনা) সবই হয় এখনে। তবে যাই হোক না কেন আজ আমি লিখছি একটা বিশেষ শ্রেণীর আলোচক, গবেষক কিংবা জ্ঞান গাম্ভীর্যপূর্ণ পন্ডিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে।
এদেরকে আমরা চিনি প্রগতিশীল হিসাবে। কেউ বা তাদের সমালোচনার বাক্যে বলে তথাকথিত প্রগতিশীল। সে যাই হোক এসব প্রগতিশীল ব্যক্তিদের ভীড়ে প্রকৃত প্রগতিশীলদের চেনা বড় দায়।
এদের চেনার বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তারা হবেন কিছু উদাস মনের। এটা তাদের হাটা চলা, হাব ভাবে বোঝা যাবে। তবে এই উদাসীনতা প্রকাশটা যে সম্পূর্ণই ঐচ্ছিক তা একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়। দক্ষ অভিনেতা যখন অভিনয়টাকে অভিনয় হিসেবে দেখাবে, তখন দর্শক নিশ্চয় বুঝবে এটা অভিনয়।
আর যদি অভিনয়টাকে বাস্তব জীবনের অংশ হিসাবে দেখে তাহলে দর্শক বুঝবে সে প্রাকৃতিক।
এসব প্রগতিশীলদের চেনার আরেকটি উপায় হলো তাদের পোশাক আর চুল দাড়ির মহড়া। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল কবি ছিলেন তাই তাদের চুল দাড়ি রাখতে হবে এটা ভেবে তারা তা করেননি। সাহিত্য সাধনায় তারা এতটায় মশগুল ছিলেন যে জাগতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে তাদের তেমন কোন খেয়ালই ছিল না। নিউটন অংক কষার সময় নিজের ক্ষুদার অনুভবটাও ভুলে যেতেন।
এসকল ব্যক্তি তাদের চুল গজালো না দাড়ি গজালো সেগুলো খেয়াল করা সময় পাননি। তাদের চুল দাড়িগুলো যে ঐচ্ছিক ছিলনা তার প্রমাণ হলো সেগুলো পরিচর্যা। রবীন্দ্রনাথের চুল শিথী করে আচড়াতে দেখা যায়নি, কিংবা চুলের দাড়িকে পরিপাটি করে রাখতে দেখা যায়। জ্ঞান চর্চায় তারা এতোটায় ব্যস্ত থাকতেন যে অনেক দিন গোসল না করার কারণে তাদের শরীরের কাপড়, চুল-দাড়ি সব সময় উসকো-খুসকো দেখা যেত।
এবার আসেন আমাদের ছবির হাটের প্রগতিশীলদের চুল-দাড়ির ব্যবচ্ছেদ করি।
জ্ঞান চর্চায় বা সৃষ্টিশীল কর্মে তাদের যতটা না মনোযোগ তার চাইতে বেশি মনোযোগ তাদের চুল-দাড়ির উপর। কেউবা খোপা করেন, কেউ বা বাধেন রাবার ব্যান্ডে। কেউ আবার মারেন তেল কেউবা জেল। আর এটার যখন আড্ডায় বসেন তাদের হাত থাকে চুল বা দাড়িতে।
একবার এক জনের সঙ্গে আমার আড্ডা দেয়ার সৌভাগ্য হলো।
সে নব গঠিত একটি বাম সাংস্কৃতিক দলের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তি। তার নামটা বাপ-মা ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে রেখেছেন মোহাম্মদ ........ (নামটা বলতে চাচ্ছি না)। তার সকল সনদপত্রে এই নামই আছে। কিন্তু প্রগতিশীলতার জন্য সে নামটাকে পাল্টে ফেলেছেন তার নিজের মতো করে। এখন তার নাম খৃষ্টধর্ম ও মুসলমান ধর্মের সংমিশ্রনে।
তবে বানানটা একটু ভিন্ন রয়েছে। এবার সে মোহাম্মদ না রেখে রাখলেন মুহমদ। এবারও পুরো নামটা বলবো না। কারণ তিনি সামুর একজন ব্লগারও। যা হোক তারও চুল দাড়ির প্রদর্শনি দেখার মতো।
আমি তাকে বললাম দাদা (সবাই তাকে ভাই না বলে দাদা বলে) আপনার চুলগুলোতো অনেক সুন্দর। সে উত্তর দিল ভাই চুল রাখার যা সমস্যা। প্রতিদিন শ্যাম্পু করা লাগে। তারপর দিতে হয় জেল। আর হ্যাট মাথা না দিলে ধুলা-বালিতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
তার এমন কথায় এটা স্পষ্ট যে তার চুল আর দাড়ির পেছনে সবার চাইতে কম করে হলেও দুই ঘন্টা বেশি সময় ব্যয় হয়। আর দিনে ২৪ ঘন্টার ১৬ ঘন্টায় তার মনোযোগ থাকে চুল দাড়িতে। এবার ভাবুন এরা কিভাবে শিল্প চর্চা বা সৃজনশীল কাজ করবে। আর তাদের আড্ডার মুল বক্তব্যগুলো শুনলে আরো বোঝা যাবে তাদের দৌড় মসজিদ পর্যন্ত নাকি মসজিদের ওজুখানা পর্যন্ত। তাদের আলোচনা নিয়ে পরে একদিন কথা বলবো।
এসব প্রগতিশীলগণ তাদের চুল-দাড়ি রাখার পেছনে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন, চে গুয়েভারাকে আদর্শ মানে। তবে এটাই ভাবি তাদের কোন গুনটা আছে তাদের মধ্যে। তাই তো সমালোচকরা বলেন এরা তথাকথিত প্রগতিশীল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।