দেশের খ্যাতনামা জুস ব্র্যান্ড ‘প্রাণ’। নাম প্রাণ অথচ প্রাণেই ভেজাল। ফলের রসের নামে চলছে প্রতারণা। এই কোম্পানির কোন ফলের জুসেই নেই ফলের রস। রয়েছে কেবল কৃত্রিম সুগন্ধি।
মিষ্টি কুমড়ার সাথে ম্যাংগো ফ্লেভার দিয়ে তৈরি করা হয় এই জুস। খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় এই ভেজালের প্রমাণ মিলেছে।
খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোমল পানীয় ও জুসের নামে আমরা যা পান করছি তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
জুসে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ সোডিয়াম সাইক্লামেট, কাপড়ের রং, সাইট্রিক এসিড ও প্রিজারভেটিভ (সোডিয়াম বেনজোয়িক ও পটাশিয়াম)। অম্লতা বাড়াতে ফসফরিক এসিড এবং ঠাণ্ডা রাখতে ইথিলিন গ্লাইকল মেশানো হচ্ছে।
আর জুসের নামে এসব পানীয় দীর্ঘদিন পানের ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, দাঁতের ক্ষয়, কিডনির সমস্যাসহ নানা রোগ হতে পারে।
শিশু ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, এ ধরনের পানীয় মানবদেহের জন্য ভয়াবহ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
১০ বছর আগেও দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ। এখন এ সংখ্যা দুই কোটির বেশি এবং তাদের অর্ধেকই শিশু। এ ছাড়া দেশে বছরে অন্তত ৮৪ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।
কৃত্রিম সুগন্ধি মেশানো এসব পানীয় গর্ভবতী ও বৃদ্ধদের জন্যও ক্ষতিকর। তাদেরও কিডনি ও লিভার আক্রান্ত হতে পারে।
এদিকে প্রাণ কোম্পানির আম, কমলা, লেবু, লিচু, স্ট্রবেরি, আপেল ও আনারসের জুসের উত্পাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রোববার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই পণ্যের উত্পাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা-ও জানতে চাওয়া হয়। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপিত মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ রুল জারি করেন।
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (মিডিয়া) সুজন মাহমুদ রোববার রাতে পরিবর্তন ডটকমকে জানান, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করায় এ ঝামেলা হয়েছে। তিনি বলেন, “বিএসটিআই প্রাণ গ্রুপসহ ৩১টি গ্রুপের লাইসেন্স বাতিল করেছে। বিএসটিআই প্রাণ ফ্লেভার ড্রিংকস এর লাইসেন্স বাতিল করে, অথচ পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে জুসের ছবি দিয়ে ছাপিয়েছে। জুসে পাল্প (ফলের জুস) থাকে ১৮ শতাংশ। আর ড্রিংক হচ্ছে সিনথেটিক।
আমাদের কোম্পনির ড্রিংকসে কোন পাল্প নেই। ”সুজন মাহমুদ আরও বলেন, “২০১০ সালে প্রাণ ফ্লেভার ড্রিংকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে আমরা বিএসটিআই-এর কাছে তা নবায়নের জন্য আবদেন করি। এ সময় বিএসটিআই ড্রিংকসে ১০ শতাংশ পাল্প দিতে বলে। কিন্তু ড্রিংকসে ১০ শতাংশ পাল্প দিলে ব্যবসা করা কঠিন হবে জানিয়ে আমরা পাল্পের পরিমাণ কমানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য ফের আবেদন করি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন অবস্থাতেই বিএসটিআই আমাদের ড্রিংকসের লাইসেন্স বাতিল করে।
”
এ প্রসঙ্গে বিএসটিআইয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবর্তন ডটকমকে জানান, কোমল পানীয় বা জুসে এমনভাবে ভেজাল মেশানো থাকে যে, রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়া বোঝার উপায় থাকে না। যেকোনো খাদ্য ও পানীয় বাজারজাত করার আগে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগে। জুস উৎপাদনের শুরুতে ভালো মানের নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে সার্টিফিকেট নেওয়া হয়। অতি মুনাফা করতে গিয়ে পরে ব্যবসায়ীরা নিম্ন মানের জুস তৈরি করেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “ছয় মাস পরপর নমুনা পরীক্ষার নিয়ম আছে।
কিন্তু নানা ব্যস্ততা এবং লোকবলের অভাব থাকায় বিএসটিআই তা করতে পারে না। তারপরও বিএসটিআই নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ”
প্রাণ জুস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফ্রুট ড্রিংকস বাজারজাত করার জন্য যখন প্রাণ লাইসেন্স নেয়, তখন গুণগতমান ঠিক থাকলেও পরে আর থাকেনি। বিএসটিআইর পরীক্ষাগারে সম্প্রতি বিষয়টি ধরা পড়লে এসব পণ্যের সিএম লাইসেন্স বাতিল করা হয়। পাশাপাশি এসব ভেজাল পণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পণ্যের প্যাকেটে বিএসটিআই অনুমোদিত লোগো ব্যবহার করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ”
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একটি সূত্র জানায়, ২০১০ সালে তারা আট কোম্পানির ১২টি ব্র্যান্ডের জুস বিএসটিআইয়ের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে। পরীক্ষায় ফলের রসের তেমন অস্তিত্ব মেলেনি। অথচ ওই ১২টি জুসের মধ্যে ১১টিতেই দেওয়া ছিল বিএসটিআইয়ের মান সার্টিফিকেট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যে ভেজাল রোধ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না হলেও মূল ভূমিকাটি সরকারকেই নিতে হবে।
এর সঙ্গে প্রয়োজন সমন্বিত নাগরিক উদ্যোগ। পাশাপাশি ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
View this link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।