আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আফসার সাহেবের রম্য গল্প লেখার একদিন

........ নিত্যকার দিনের মত অফিসে যাচ্ছিলেন আফসার সাহেব । অফিসে যাবার জন্য বাসে উঠে ঠেলাঠেলি করে সুবিধামত একটা জায়গায় বসে পড়লেন । কন্ডাক্টরের হাঁকডাক সহ নানা রাকম আওয়াজ কানে আসছে তাঁর । একমসয় বিরক্ত হতে শুরু করলেন তিনি । কি করা যায়, ভাবতে লাগলেন আফসার সাহেব ।

ইদানিং তাঁর খুব হাসির গল্প পড়ার বাতিক হয়েছে । একটা হাসির গল্পের সংকলন তাঁর ছেলেকে কে জানি গিফট করেছিল কে জানি, কি এক খেয়ালে আফসার সাহেব সেটা পড়তে আরম্ভ করেছিলেন । অদ্ভুত কারণে একদম পড়া শেষ করে তবেই অন্য কাজে মন দিতে পেরেছিলেন । কিন্তু এখন তিনি সেই সমস্ত গল্পের প্লটগুলো স্মরণ করে হালকা হওয়ার চেষ্টা করছেন না । একবার নিজেই হাসির গল্প লিখার চেষ্টা করা যায় কিনা তিনি সেই চিন্তায় মশগুল হয়ে আছেন ।

চারপাশের সোরগোল থেকে মন সরাতে তিনি আরও মনোযোগ দিয়ে রম্য-ভাবনা ভাবতে লাগলেন । কন্ডাক্টর এসে দুইবার ভাড়া চাইলেও তিনি খেয়াল করলেন না । পরে পাশের যাত্রীর ডাঁকে হুশ ফিরলে ভাড়াটা চুকিয়ে আবারও রম্যলেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পাঁয়তারা কষতে লাগলেন তিনি । কিন্তু কি নিয়ে লিখবেন তিনি? ভাবছেন, ভাবছেন এবং তিন মিনিট ধরে ভেবেই চললেন আফসার সাহেব । এমন সময় রাস্তার পাশের মিউনিসিপ্যালিটির ডাস্টবিনে কিছু কাক চোখে পড়ল তাঁর ।

তবে পাখি নিয়েই লেখা হবে রম্য, ভাবলেন তিনি । তবে সেটা কাক মোটেই হবে না, কাক থাকবে জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের ছবিতে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে, কোন রম্যরচনায় না । এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে তাঁর মাথায় দোয়েল পাখি নিয়ে একটি মজার স্মৃতি মনে পড়ল । সেটার উপর নির্ভর করেই তাঁর প্রথম রম্যগল্পটি লিখবেন বলে ঠিক করলেন তিনি । সারাদিন অফিস করে আর রম্যগল্পের কথা মনেই পড়ল না তার ।

অফিস শেষে যখন তিনি বাসে উঠলেন তখন তার সকালের কথা মনে পড়ল । বাস্য গিয়েই যাতে লেখা আরম্ভ করতে পারেন এজন্য মনে মনে গল্প বুনতে লাগলেন তিনি । বাসায় ফিরেই যেই ভাবনা সেই কাজ । দুদ্দার করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে লিখতে বসে পড়লেন । শুরুটা সবচেয়ে ভালো করার প্রচেষ্টা চালালেন তিনি ।

নানা রকম চিন্তা ভাবনার পর, সবচাইতে ভালো সূচনাটা তার লেখার পাত্য ফুটে উঠতে লাগল । ------ “অন্তু ১০ আনা বিস্ময়ের সাথে ৬ আনা দুঃখ মেশানো দৃষ্টিতে বাইরে থেকে উড়ে এসে ঘরের ভেতর আটকে যাওয়া দোয়েলটার দৌড়াদৌড়ি দেখছে । দোয়েল পাখি ঢুকে পড়েছে এজন্য সে বিস্মিত হয়নি । তার ঘরের আশপাশ এমনিতেই অনেকটা খোলামেলা, তাই মাঝেমাঝেই তাই চড়ুই পাখি ঘরের মাঝে এসে পড়ে আবার জানালা খুলে দিলেই আবার সুড়ুত করে বেরিয়ে যায় । কিন্তু এই দোয়েলটা বের হতে পারছে না ।

আলমারির উপর বসে আছে । একতু পর পর হুড়হুড় করে উড়ে এসে জানালার কাছে দিয়ে টিপাইমুখ বাঁধের উপর বাংলাদেশের মন্ত্রীবাহী হেলিকপ্টারের মত চক্কর মেরে আবার মাউন্ট আলমিরার শীর্ষদেশে ফিরে গেল । আর একারণেই অন্তুর বিস্ময় ও দুঃখ । কয়েকদিন আগেই সে তার সাধারন জ্ঞানের বইতে পড়েছে, দোয়েল বাংলাদেশের জাতীয় পাখি । এটা ভেবেই অন্তুর মন আরো খারাপ হয়ে গেল ।

একটা দেশের জাতীয় পাখি কেন এত ভুদাই হবে? না, না , ভুদাই বলা যাবে না । মা অন্তুকে এসব ভাষায় কথা বলতে মানা করে দিয়েছে । তাহলে কি বলা যায়, “সিলি দোয়েল!” ভাবল অন্তু । কিন্তু অন্তু দেশের বাকি “জাতীয়” বিশেষণযুক্ত অন্যান্য সম্পদগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানে না । হিন্দী-বাংলা নানা সিরিয়ালের ঠেলায় তার বাসায় খবর দেখতে পারা লুঙ্গি পরে প্যারাসুট নিয়ে পাহাড় থেকে লাফ দেয়ার মতই অদ্ভুত ব্যাপার ।

বাকি “জাতীয়”দের অবস্থার কথা জানলে শুধুমাত্র জাতীয় পাখির এই অধঃপতন(!) এর ব্যাপারে অন্তুর এত অবাক লাগত না.........” এইটুক লিখে থামলেন আফসার সাহেব । গল্পটা তার মনমত হচ্ছে না । তাছাড়া ঠিক রম্যগল্পের আমেজ তিনি ফুটিয়ে তুলতে পারছেন না । গল্পটা নিয়ে আরো চিন্তা করতে হবে, ভাবলেন আফসার সাহেব । তবে কেন জানি গল্পটা শেষ করার তাগিদ আসছে না ।

আপাতত লেখালেখি বন্ধ করলেন তিনি । খেয়েদেয়ে এবার একটু বিশ্রাম নেবার উদ্দ্যেশ্য তার । রম্য গল্পের প্রতি তার আগের মমতাটা হালকা হতেই তিনি বুঝতে পারলেন, সারাদিনের ক্লান্তি এতক্ষণে তাঁকে জেঁকে ধরল । অন্তুর গল্পের লেখক আফসার সাহেব লেখাটি শেষ করবেন কি করবেন না সেটা আমরা জানি না । তবে আফসার সাহেবের গল্পের লেখক তার গল্প এইখানেই শেষ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে ।

সে চায়, একটিবারের জন্য হলেও সবাই আফসার সাহেবের মত নিজেকে সৃষ্টিশীলতাকে যাচাই করার একটা চেষ্টা করুক । কে জানে সেই চেষ্টার পর হয়ত আফসার সাহেব কিংবা এই গল্পের লেখকের মত না হয়ে অনেক অনেক ভালো কোন সৃষ্টিকর্মের জন্ম দিয়ে দিতে পারেন আপনি! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.