আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক শিক্ষক পরীক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষা

সবার আগে দেশপ্রেম বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক শিক্ষক পরীক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। তাঁদের সংলাপ ছিল এ রকম: পরীক্ষক: ব্যাংকের কাজ কী? পরীক্ষার্থী: মানুষের টাকা নির্দিষ্ট হারে সুদ দেওয়ার শর্তে জমা রাখা। সে টাকা সুদের বিনিময়ে বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের জোগান দেওয়া বা খাটানো। পরীক্ষক: বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে আদায়ের অযোগ্য ঋণ আছে কি না। থাকলে তার পরিমাণ কত? পরীক্ষার্থী: আছে।

গত জুন নাগাদ ছিল ১৯ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। পরীক্ষক: কোন ব্যাংকে মন্দ ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি এবং কত টাকা? পরীক্ষার্থী: সোনালী ব্যাংকে। অন্তত পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরীক্ষক: অন্য ব্যাংকে আদায়-অযোগ্য ঋণ আছে কি না? কোন ব্যাংকে কত? পরীক্ষার্থী: আছে। অগ্রণী ব্যাংকে এক হাজার ৮৪৫ কোটি, জনতা ব্যাংকে এক হাজার ১৯৬ কোটি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে ৮২১ কোটি, রূপালী ব্যাংকে ৪৮৯ কোটি, ইসলামী ব্যাংকে ৪২১ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংকে ৩১৪ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ২৯০ কোটি, উত্তরা ব্যাংকে ২৬৫ কোটি— পরীক্ষক: থাক, থাক, আর বলতে হবে না।

সম্প্রতি একটি ব্যাংক থেকে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান সামান্য কিছু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যদি বলতে পারো তোমাকে ফুল মার্কস দেব। পরীক্ষার্থী: সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে। পরীক্ষক: কত টাকা—অঙ্কে লেখো। পরীক্ষার্থী: একটু বড় জায়গা দরকার, তবু লিখছি—৩,৮০০,০০০০০০০.০০ টাকা মাত্র।

পরীক্ষক: বাংলাদেশের মতো দেশে এই টাকা কম না বেশি? পরীক্ষার্থী: মোটেই বেশি না। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের এর চেয়ে বিশ গুণ বেশি সম্পদ আছে। পরীক্ষক: তা যদি হয়, তা হলে অর্থমন্ত্রী মহোদয় কেন বললেন, ‘অর্ধেক টাকা উদ্ধার করা হবে?’ বাকি অর্ধেক টাকার দাবি ছাড়তে চাইলেন কেন? পরীক্ষার্থী: মায়া-মমতা থেকে। কী আর হবে পুরো টাকাটা ফেরত নিয়ে? ওরা তো ব্যাংকের লোকদের অনেক দিয়েছে। ওগুলো তো টাকা দিয়েই কিনতে হয়েছে।

পরীক্ষক: কাকে, কী দিয়েছে? পরীক্ষার্থী: সামান্য কিছু উপহারসামগ্রী যেমন বাড়ি, গাড়ি ও গরু এবং নগদ কিছু টাকা। এসব তো আমাদের দেখিয়ে দেয় না, পত্রিকা থেকে জেনেছি সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা অনিয়মে ২৭টি গাড়ি, কয়েকটি বাড়ি এবং মোটা অঙ্কের নগদ টাকা উপঢৌকন নিয়েছেন অনিয়ম সহযোগীরা। আর এ অনিয়ম সহযোগীর তালিকায় রয়েছে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তা ছাড়াও ওপর মহলের নাম। ওপর মহলের নির্দেশেই সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে এত বড় অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এতে নাক না গলানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও ম্যানেজ করা হয়।

অনিয়মে সহযোগিতা করার জন্য সোনালী ব্যাংক প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যমানের গাড়ি ও বাড়ি পেয়েছে। গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় ৮০ লাখ টাকা করে ১২টি র‌্যাভ ফোর গাড়ি দেওয়া হয় সোনালী ব্যাংককে। পরীক্ষক: [অফিস সহকারী ছেলেটিকে খুব জোরে পাখা ছেড়ে দিয়ে এক গ্লাস পানি আনতে বলে] থাক, থাক, আর দরকার নেই। [পানি অর্ধেকটা পান করে, বাকিটা চোখেমুখে ছিটিয়ে] ঋণগ্রহীতা অথবা উপঢৌকনগ্রহীতাদের একটি লোমও কি দুদক, অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থাৎ আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র টেনে ছিঁড়তে পারবে? পরীক্ষার্থী: দুদকের কর্মকর্তারা নিল আর্মস্ট্রংয়ের মতো চাঁদে যেতে পারবেন, কিন্তু তাঁদের একটি লোমও ছিঁড়তে পারবেন না। পরীক্ষক: এত টাকা ঋণ, মালিক নিশ্চয়ই দেউলিয়া।

তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর ব্যক্তিগত টাকাকড়ি কিছু আছে কি? পরীক্ষার্থী: আছে। তানভীর সাহেব ও তাঁর স্ত্রীর নামে ‘শতকোটি টাকার মেয়াদি আমানত হিসাব (এফডিআর) বিনিয়োগ আছে। এফডিআর বাবদ অর্জিত আয়ের তথ্য গোপন করেছেন। ’ পরীক্ষক: ব্যাংক থেকে এত টাকা ঋণ নেওয়া এবং সে ঋণ পরিশোধ না করেই—ব্যক্তিগতভাবে এত টাকা এফডিআর করা ঠিক কি না? নিশ্চয়ই তার পূর্বপুরুষের বহু অর্থ-সম্পদ ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালে এবং ১৯৮২ সালের মার্চে তাঁর নিশ্চয়ই বহু টাকা ব্যাংকে ছিল? সে সম্পর্কে কী জানো? পরীক্ষার্থী: আমাদের দেশের সব সম্পদের মালিক জনগণ।

ব্যাংকের টাকাও জনগণের। যিনি ঋণ নিয়েছেন তিনিও জনগণের একজন। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেননি। এই টাকা ফেরত না দিলেও কোনো দোষ নেই। ১৯৭৫ ও ১৯৮২ সালে তাঁর ব্যাংকে কত টাকা ছিল তা এনবিআর বলতে পারবে।

এবং সে খোঁজ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া উচিত। আর কি কোনো প্রশ্ন আছে? পরীক্ষক: না। আমার মাথাটা ঘুরছে। রাস্তা থেকে এক ভাগা গুঁড়া ইঁচা মাছ নিয়া আমার বাড়ি যাওয়া লাগবে। তুমি যাও।

তোমাকে দিলাম ফুল মার্কস। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.