আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তরাজ্য বিএনপির নয়া কমিটি: নেপথ্যে ব্রিটিশ পাউন্ড, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আর ভাইয়ার প্রতি আনুগত্যের খেলা

যুক্তরাজ্য বিএনপির নয়া কমিটি: নেপথ্যে ব্রিটিশ পাউন্ড, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আর ভাইয়ার প্রতি আনুগত্যের খেলা Click This Link 7.6.2013 কিছুদিন আগে ঘোষিত হয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপির বহু প্রতীক্ষিত নয়া কমিটি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু স্বাক্ষরিত বিশাল এই কমিটি নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মিডিয়া, স্থানীয় কমিউনিটি, রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কমিটিতে স্থান না পাওয়া সাবেক কমিটির অনেক নেতা-কর্মী ছাড়াও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অনেকেই নব-ঘোষিত এই কমিটি নিয়ে হতাশা ও একে অন্যের সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কিন্তু দলের স্বার্থে, লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়র মহাসচিব তারেক রহমানের বিরাগভাজন হবেন-এই ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেননা। অথচ বিএনপির যেকোন প্রোগ্রাম বা কমিটি ঘোষণা উপলক্ষে কর্মীদের মধ্যে যে রকম চাঞ্চল্য দেখা দেয় বা কমিটিকে বরণ করে নেয়ার জন্যে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে রকম উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়, নবঘোষিত এই কমিটিকে নিয়ে তেমন কোন দলীয় প্রাণ-চাঞ্চল্য বা উদ্দীপনা এখন পর্যন্ত লন্ডন বা তার আশে-পাশের কোন এলাকায় দেখা যায়নি।

বরং, ব্রাডফোর্ড, ইয়র্ক, ম্যানচেস্টার, লিংকনশায়ার, ডারবী, লীডস, নিউক্যাসল, আবারডীন, গ্লাসগো প্রভৃতি শহরে এই কমিটি নিয়ে বেশ হতাশা ও ভিতরে ভিতরে ক্ষোভ প্রকাশিত হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, নতুন কমিটি বিএনপিকে কোন অবস্থাতেই গতিশীল ও শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্রিটেনের মাটিতে প্রতিষ্টা করতে পারবে কিনা, তাতে রয়েছে সন্দেহ। পত্রিকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, অনেকেই এই কমিটিকে নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন তুলেছেন। ইতিমধ্যে প্রকাশিত বাংলা নিউজে সংবাদের সাথেও অনেককেই একমত পোষণ করতে দেখা গেছে। লন্ডনের এই কমিটিতে আছেন, এমন একজন, আক্ষেপ করে বলেছেন, এই কমিটি কিছুতেই শহীদ জিয়ার আদর্শকে ধারণ করে বিএনপিকে এগিয়ে নিতে পারবেনা।

কেননা, বর্তমান কমিটির নেতৃত্বের মধ্যে এমন কোন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পন্ন কেউ নেই, বিএনপির মতো প্রধান রাজনৈতিক দলের গুরু দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করার মতো কোন রাজনৈতিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাহীন কারো দ্বারা এই মুহূর্তের বিএনপিকে শক্তিশালী করতে পারবেনা। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পরেই লন্ডনে রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব অতীব প্রয়োজনীয়, আর এই প্রয়োজনীয়তার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে শুধু মাত্র টাকা, ব্যবসা আর আনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়ে যে কমিটি করা হয়েছে, তা যথার্থ হয়নি। ত্যাগী, দক্ষ, অভিজ্ঞ আর সিনিয়র নেতৃত্বদের অবমূল্যায়ন- ব্রিটেনের মতো জায়গায় দলের জন্য খুব একটা সঠিক হয়নি বলে তিনি জানান। জানা যায়, যুক্তরাজ্য বিএনপির এই কমিটি মূলত টাকা(ব্রিটিশ পাউন্ড), রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, আর তারেক জিয়ার প্রতি সীমাহীন আনুগত্যকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যে কারণে অভিজ্ঞ, অনেক ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করা হয়েছে।

নবগঠিত কমিটিতে স্থান পেতে, এই নেতৃত্ব কম করে হলেও ব্রিটিশ মুদ্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড, ২০ হাজার পাউন্ড, এবং অন্যান্য পদের জন্য সমপর্যায়ের উপঢৌকন হিসেবে প্রদানে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। কমিটিতে স্থান পাওয়া কেউ কেউ নিজেরাই এই কথা একজন আরেকজনের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন। নবগঠিত এই কমিটির প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি দুজনেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, প্রেসিডেন্টের রয়েছে রেস্টুরেন্ট সহ নানা ঘোষিত-অঘোষিত ব্যবসা। অঢেল টাকা-পয়সার মালিক তিনি। তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে সক্রিয় না হলেও হালের রাজনীতিতে তিনি বেশ সরব।

বিএনপির যুক্তরাজ্যের সিনিয়র নেতা হিসেবেও তিনি পরিচিত। কমিটিতে যারা স্থান পাননি, তারা এবং বর্তমান কমিটিতে উল্লেখযোগ্য পদ-পদবী পাননি, এমন সকলেই বর্তমান প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির ক্যাশ-পাউন্ডের কথা বেশ উচ্চস্বরেই বলছেন। ত্যাগী কর্মীরা পাউন্ড-ষ্টার্লিং এর কাছে নিজেদের অসহায়ত্ব অনায়াসেই স্বীকার করলেন। পূর্ব লন্ডনের বাংলা টাউন ব্রীক লেনের সোনার গাও রেস্টুরেন্ট এখন নতুন কমিটি ও বিএনপির সকল স্তরের নেতাদের মোক্ষম কেন্দ্র স্থলে পরিণত হতে চলেছে। কেননা, এই সোনার গাও রেস্টুরেন্টের মালিক এম এ কায়সার এখন বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সেক্রেটারি।

দেশে থাকাকালীন কায়সার ছাত্রদলের উপজেলা, জেলা কমিটিরও কোন সদস্য ছিলেননা। জগন্নাথপুর উপজেলার বিএনপি, ছাত্রদলের কোন নেতা-কর্মীর কাছে কায়সার তেমন কোন পরিচিত রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নন। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, পাউন্ডের হাতেখড়ি আর দলীয় প্রধানের প্রতি সীমাহীন আনুগত্য তাকে অল্প বয়সেই কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই এনে দিয়েছে যুক্তরাজ্যের মতো দেশে বৃহৎ দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ। সোনার গাও রেস্টুরেন্টের বেইসম্যান্টে রয়েছে, বিশাল এক বাঙ্কুয়েটিং রুম, ধারণা করা হচ্ছে, দেশে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন না হলে, তারেক জিয়াকে আরো ক-বৎসর ব্রিটেনে থেকে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। সেজন্য চাই দলের জন্য এই সময় পর্যন্ত স্থায়ী এক মিটিং এর স্থান,আর দলের আর্থিক উৎস যোগানের মতো কার্যকর সাপোর্ট।

আর এদিক চিন্তা করেই বর্তমান প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি তারেক জিয়ার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে চলে আসেন। প্রচলিত একাডেমিক শিক্ষা আর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সেকারণেই এক্ষেত্রে খুব একটা বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। বিএনপির এই কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর থেকে বিএনপির রাজনীতিতে, গ্রুপিং এ ব্যাপকভাবে সক্রিয় ও নিয়মিত খবরের শিরোনাম হতেন যে সকল নেতৃবৃন্দ তাদের অনেককেই এখন আর আগের মতো সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছেনা। বিলুপ্ত ঘোষিত আগের কমিটির ব্যারিস্টার এম এ সালাম, আব্দুল মালেক সহ আরো অনেককেই এখন একেবারে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ বিএনপির এই দুই নেতা কোন না কোন ইস্যু নিয়ে প্রতিদিন বেগম জিয়া ও তারেক জিয়ার নাম নিয়ে ব্রিটেনের পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া, আর ডাউনিং ষ্ট্রীট আর লর্ড,কমন্স সভা মাতিয়ে রাখতেন।

প্রতিদিন কোন না কোন সভা-সমাবেশ, সেমিনার, পার্লামেন্ট মেম্বারদের সাথে সাক্ষাৎ আর জোটের অন্তর্ভুক্ত দলসমূহ নিয়ে সারা ব্রিটেনে সভা-সমাবেশ ও শোডাউন করতে দেখা যেতো। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই এই দুই নেতা ও তাদের অনুসারীরা এখন নীরব হয়ে আছেন। এব্যাপারে তাদের বক্তব্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে তাদের খুব ঘনিষ্ঠজনদের কাছে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক এম মহিদুর রহমানেরও কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে লন্ডনের বাংলা মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, তারেক জিয়ার সিলেকশনের সাথে মহিদুর রহমান আস্তা প্রকাশ করে দলীয় রাজনীতি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বিএনপির মধ্যম সারির অনেক নেতা-কর্মী বর্তমান কমিটিকে নিয়ে আশাবাদী, তারেক জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ বলে জানালেন। সান্ডারল্যান্ড, ডার্লিংটন, মীডলসবারা, রচডেল,সোয়ানসী, মিল্টন কীস, ক্যামব্রিজ, বৃষ্টল, প্লে-মাউথ, বর্ণ-মাউথ,আয়ারল্যান্ডস, সাউথশীল্ডস,হারো, প্রভৃতি স্থানের অনেকেই মনে করেন নগদ এবং পর্যাপ্ত স্থান সংকুল করতে সক্ষম এমন নেতৃত্বই এই মুহূর্তে জরুরী। ব্রিটেনের মাটিতে বিএনপিকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন কমিটি ভালোমতোই কাজ করতে পারবে বলে তাদের অনেকেরই ধারনা, যদিও তাদের কেউ কেউ মনে করেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.