আমি আসলে ধর্ম ও অধর্মের মাঝে বাস করছি। বুঝতে পারছি না কোনটি ঠিক। তাই নিজের নাম দিয়েছি "আ-নাস্তিক"। ডায়েরি লেখার অভ্যাস আমার। ইদানিং কাগুজে জিনিসটা সেভাবে টাচ করা হচ্ছিল না ... আবার এমএস ওয়ার্ডকেও ইউজ করা হয়ে উঠছিল না।
কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আসা একটা ফোন কল কিছু চিন্তা-ভাবনা করতে আমাকে বাধ্য করল। তাই ভাবলাম কিছু লিখি। আবার লেখার পর স্থায়িত্বের একটা প্রশ্ন আসে। এক্ষেত্রে ব্লগ বেটার একটা জিনিস। তাই এখানে শেয়ার করলাম।
এটা নিজস্ব কিছু চিন্তা ... জোর করে কাউকে বিশ্বাস করানোর কিছু এখানে নেই!
============================================================================
আজ ২৬ অক্টোবর, ২০১২ সাল।
প্রায় ১০০ দিন আগের কথা। HSC রেজাল্ট দিয়েছে। আমার বাসায় আমি, শুভ আর আইদিদ। গোল্ডেন পাইনি বলে আমার আর শুভর মন খানিকটা খারাপ।
আর আইদিদ এ+ পাবার আনন্দে ভেসে যাচ্ছে। একে-তাকে ফোন করছে, খবর বলছে। তার ফ্যামিলিও বেশ খুশি। তাই তার আনন্দের মাত্রাটাও বেশি ছিল।
বাংলায় এ+ মিস হয়েছে বলে বেশিক্ষণ মনটাও খারাপ রাখতে পারিনি।
কারণ আমাদের সাথে অনেক ছেলে গোল্ডেন পায়নি, অনেকে এর থেকেও খারাপ করেছে। আর শুভ পায়ন – এটা যেমন আমার জন্য একটা স্বস্তির ব্যাপার ছিল, তেমনি আমি পাইনি – এটাও তার জন্য একই ব্যাপার। নিজেদের মধ্যে একটা চাপা কম্পিটিশান কাজ করত বিধায় এই অনুভূতিটা আমি ধরতে পেরেছিলাম।
যাই হোক। আইদিদ আর শুভ একে আরেকজনের সাথে প্রবল হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত।
আমিও তাদের সাথে তাল মিলাচ্ছি। এমনই একটা সময় আমি হাসতে হাসতে বলি, “আর তিন মাস পর যখন কোথাও চান্স পাব না, তখন এই হাসি মুখ থেকে উধাও হয়ে যাবে ... কান্না করে কূল পাওয়া যাবে না। ”
এখন তিন মাসের বেশি সময় কেটেছে। আমি ইতিমধ্যে ঢাবি পরীক্ষা দিয়েছি। শুভ ঢাবি, জাবি দিয়েছে।
আর আইদিদ আমাদের সকলকে ছাপিয়ে চারটা পরীক্ষা দিয়েছে – মেরিন, ঢাবি, জবি আর জাবি। একটাতেও টিকেনি। তার নিজের ভাষায় সে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এদিক থেকে শুভ ১০০% সফল, কারণ ঢাবি আর জাবির দুটোতেই সে চান্স পেয়েছে। যদিও রেজাল্ট একেবারে প্রত্যাশিত হয়নি; জাবিটা খানিক খারাপ হয়েছে।
আর আমি? দিলাম একটা, কোনমতে পাশ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি। ১২০ এ তুলতে পেরেছি বায়ান্ন দশমিক দুই পাঁচ। পাশ ৪৮ এ। পরীক্ষার আগে ভেবেছিলাম কোনমতে দশ-বিশটা দাগাতে পারব। এর বেশি কোনভাবেই সম্ভব না।
তাই ঠিক করেছিলাম সবার আগে শিট জমা দিয়ে DUS এর লাচ্ছি আর রোল খাব। কিন্তু প্ল্যান অনুযায়ী কিছু হয়নি। প্রশ্ন পাবার পর আমার ভেতরের ভাল ছাত্রের সত্ত্বা জেগে উঠে। একেবারে ছোট্ট প্রিপারেশান নিয়ে যে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তাকে মোটামুটি “বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদিনী” টাইপ অবস্থা। যতটুকু পারি ভাল করার চেষ্টা করি।
বাকিটা রেজাল্টের পর দেখা যাবে।
রেজাল্ট দিল। প্রথম ১০ হাজারের মধ্যেও নেই। Merit Position এসেছে 13625. জানতাম ভাল হবে না। কিন্তু প্রথম ১০ হাজারকে ফর্ম ফিলাপের সুযোগ পেতে দেখে আমার খানিকটা আফসোস হল, “ইশ্! যদি আরেকটু সামনে থাকতাম!”
এরপর আরো দু সপ্তাহ পেরিয়ে আজকের দিনটা এল।
কিছুক্ষণ আগে শুভ কল করেছিল। এই চৌদ্দ দিনের ব্যবধানে সে আমাকে বেশ কয়েকবার কল করেছিল। ঢাবিতে চান্স পাওয়াতে প্রত্যেকবারই কথা বলার মেইন টপিক ছিল ঢাবি। কথাগুলো মূলত সে-ই বলত, আমি শুনতাম। আজকেও একই কাণ্ড ঘটল।
অদ্ভুত কারণে সে বুঝতে পারে না যে একজন লোক যে বিষয়ে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করতে পারে, তার সাথে ও বিষয়ে কথা বলতে নেই। অবশ্য তার যে কমন সেন্স কম, এটা আমার আগে থেকেই জানা।
আজকে কথায় কথায় সে বলল যে ফয়সাল মেরিনে চান্স পেয়ে গেছে। ভাল খবর। আমাদের আরেক সহযোগী ভর্তি পরীক্ষা নামক বাজে একটা ব্যাপার থেকে পুরোপুরি বেঁচে গেল।
কিন্তু তারপরেও সে শুভর সাথে নাকি কথা বলতে লজ্জা পায়! কেন? কারণ শুভ ঢাবিতে চান্স পেয়েছে, সে পায়নি!!
হ্যাঁ, আপাত দৃষ্টিতে কথাটাতে ভুল ধরা কঠিন। ঢাবির থেকে মেরিন অবস্থান খানিকটা হলেও কম। কিন্তু তাই বলে হেলাফেলা করার মত না। আর টাকাটাকে আমি যদি মেইন ফ্যাক্টার ধরি, তাহলে ফয়সাল আমাদের বিএন কলেজের ২০১২ ব্যাচের সায়েন্স বি সেকশানের সকলকে ছাড়িয়ে গেছে। কারণ আমাদের পক্ষ থেকে এখনো কেউ অত উচ্চমূল্যের পজিশানে যাওয়ার জন্য রেডি হয়নি বা চান্সটা পায়নি।
সে পেয়েছে। এবং পরবর্তী ৫ বছর পর সে শুভর পজিশান নিয়ে উলটা হাসতেও পারে! কারণ মেরিন থেকে পাশ করতে সময় লাগে না। সাথে নিশ্চিত চাকরি ত আছেই। অন্যদিকে শুভ বুয়েট বা ঢাবি – যেখানেই পড়ুক না কেন, পাঁচ বছরে সে বেড়ুতে পারবে না। আরো ভালভাবে বললে ভাল কোন চাকরির জন্য প্রিপায়ারড হবে না।
বাস্তবতা তখন ফয়সালকে বিজয়ী ঘোষণা করবে যে কিনা এখন সাদামাটাভাবে শুভকে করছে।
অবশ্য এই কথাগুলো ফয়সালও ভালভাবে জানে। আর তার দোমনাভাব বা লোক দেখানো বিরক্তিকর ভাবটার কথা সকলেই জানে। তাই শুভকে খুশি রাখার জন্য নিজেকে এখন খানিকটা ছোট করল। কিন্তু বছর কয়েক পর সে নিজের নিশ্চিত পজিশান দেখে হাসবে ... তখন শুভর তেমন কিছু বলার থাকবে না!
বাস্তবতা মানুষকে মাটিতে নামিয়ে আনে।
যে আইদিদ HSC তে এ+ পেয়ে খুশিতে ডগমগ হয়েছিল, সে এখন আফসোস করে, “ধুর! কেন যে এ+ টা পেলাম ... এটাই এখন আমার গলার ফাঁস হয়ে গেছে!!” অবাক কাণ্ড! কেন এমন হল? ঐ যে, কোথাও চান্স না পাবার বেদনা। এই কঠিন বাস্তবতা তাকে এখন এই পজিশানে ঠেলে দিয়েছে।
আর আমার খবর কী? আপাতত কোন খবর নাই। ঢাবি চান্স পাইনি ... এটা নিয়ে কখনো বাড়তি চিন্তা করিনি। যদিও ফেইসবুকে তন্ময়কে দেখলে খানিকটা আলগা হা-হুতাশ করি, কিন্তু ওটা আমার মন থেকে আসে না।
সে যখন বিভিন্ন নীতি কথা ফলায়, তখন বেশ মজাই লাগে।
কিন্তু খানিকটা ঝামেলা হয়েছে। লোকে এখন পজিশান জিজ্ঞেস করলে মুখ ফুটে বলতে হয়, “চান্স পাইনি!” গতকাল এক পার্টিতে গিয়েছিলাম। দুইজন জিজ্ঞেস করল। দাদুর বাসায় বেড়াতে গেলাম, ওখানে দাদু জিজ্ঞেস করল।
সাথে টুকটাক জিজ্ঞাসা ত আছেই! বিরক্তিকর অবস্থা! হাসিমুখে মজা করে বললে পরে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। চান্স পাইনি, এটা মজা করে বলার কি আছে?
যাই হোক। বাস্তবতা আমাকে যেদিকেই ঠেলুক না কেন, আমি আমার কাজটা করে যাব। আমার মেইন টার্গেটে আমাকে পৌঁছুতেই হবে ... কারণ স্বপ্নটা আমঃ দেখেছি। কাজেই এটা পূরণের দায়িত্বটাও আমার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।