আমি খুব সাধারন মাপের এক মানুষ। বেঁচে আছি, এটাই জীবনের একমাত্র সত্যি। বেঁচে থাকাটা সব সময় অনুভব করার চেষ্টা করি। ভীষন অভিমানী, মোটেও ঝগড়াটে নই। আড্ডা মারতে ভালোবাসি, গসিপ করতে মোটেও ভালোবাসিনা, কারোর হাঁড়ির খবর নেইনা, মানুষের কষ্ট শেয়ার করার মত দুঃসাহস মনে পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী, আজ, ২০শে অক্টোবার থেকে শুরু হচ্ছে সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব।
আজ ষষ্ঠী পূজো দিয়ে শুরু এবং সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী পূজো শেষে ২৪শে অক্টোবার প্রতিমা বিসর্জন শেষে হবে শারদোৎসবের সমাপ্তি। পূজা বছরের যে কোন সময় করা যায়, দূর্গাপূজাও ক্ষেত্রবিশেষে, গোষ্ঠী বিশেষে অন্য নামে অন্য ঋতুতেও অনুষ্ঠিত হয়। কিনতু বাঙ্গালীর দূর্গাপূজা উদযাপিত হয় শরৎকালে, সেই রামায়ণের যুগ থেকে। ধর্মীয় গল্প সম্পর্কে আমার জ্ঞান সীমিতের চেয়েও অনেক কম, নেই বললেই চলে। সম্প্রতি প্রয়াত মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি, সকল ধর্মের মূলবাণী এক, সেই মূল বাণীটি হচ্ছে, মানব ধর্মই আসল ধর্ম।
কর্মজীবনে মা ছিলেন স্কুলের গনিত ও হিন্দুধর্মের শিক্ষিকা। পুরোপুরি বিপরীত বিষয়, বিজ্ঞান ও ধর্ম, এই দুটি বিষয়েই মায়ের ছিল পরিষ্কার ধারনা। এই দুই থেকেই মা মূলটুকু নিয়েছেন, আমাদের শিখিয়েছেন, যে কোন পরিস্থিতিতে মনে ও মননে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করতে, জীবে দয়া করতে, দুঃখীকে সেবা করতে। কতটুকু শিখেছি জানিনা, তবে মায়ের নির্দেশ সব সময় পালন করতে না পারলেও অমান্য করিনা। মা অনেক ধর্মীয় গল্প জানতেন, যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মা’কে জিজ্ঞেস করলেই ‘পুরাণ’ থেকে দুই একটা গল্প শুনিয়ে দিতেন, ঈশপের গল্প শোনাতেন, উনি চাইতেন, গল্পের মূল বাণীটুকু যেন হৃদয়ঙ্গম করতে পারি।
আমার মা প্রচুর পড়াশোনা করতেন, বিপ্লবী বই থেকে শুরু করে গল্প-উপন্যাস, ধর্মীয় শিক্ষার বইও ছিল উনার সংগ্রহে। শুধু হিন্দু ধর্মই নয়, ইসলাম , বাইবেল সম্পর্কেও উনি অনেক কিছু জানতেন। স্কুলের মৌলবী স্যারের কাছ থেকে গল্প শুনে, নানা বই পড়ে আমার মা হয়ে উঠেছিলেন ‘দারুন অসাম্প্রদায়িক’ এক ব্যক্তিত্বের অধিকারীনি। মায়ের কাছ থেকে পাঠ নিয়েছি, হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খৃষ্টান, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই মানুষ। ৭৫ বছর বয়সী মা আমার, কতখানি অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, ৮ই অক্টোবার উনার মৃত্যুর পরেই তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে, উনার সন্তানদেরকে সান্ত্বনা দিতে আসা মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে।
আমার মা’ ছিলেন সর্বজনের, ‘মা’ ছিলেন সার্বজনীন, সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই মা ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত। উনার মৃত্যুতে পাড়ার সুইপার থেকে শুরু করে, স্কুলের আয়া ‘মেহের খালা’, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসাইটে প্রফেসারকেও কাঁদতে দেখে আমার কান্না থেমে গেছে। শোকের বদলে মনে এক ধরনের আনন্দ এসেছে। উপলব্ধি করেছি, মা শুধু আমার ছিলেন না, উনি ছিলেন সকলের। মা তাঁর কর্মের মাধ্যমেই হয়ে উঠেছিলেন অসাম্প্রদায়িক, সকল গোত্রের, সকল ধর্মের ক্রন্দনরত মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে আরেকবার মেনে নিয়েছি, মানব ধর্মই হবে জীবনের মূল বাণী।
ধর্মীয় কাহিনী সম্পর্কে আমার কোন ধারনা না থাকলেও মায়ের গল্পের একনিষ্ঠ শ্রোতা, তাঁরই ভ্রাতুষ্পুত্রী, নূপুরের খুব ভাল ধারনা আছে। কম বয়সী এই মেয়েটি থাকে নিউইয়র্কে, নূপুরের কাছেই জেনেছি, শরৎ ঋতুতে দূর্গাপূজা উদযাপনের কাহিনী। হয়তো সকলের ধারনার সাথে মিলবে না, তবুও নূপুরের বলা গল্পটি আমার ভাল লেগেছেঃ
ত্রেতাযুগ বা রামায়ণ যুগের পূর্বে মূল দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতো বসন্ত ঋতুতে। ত্রেতাযুগে শ্রী রাম সর্ব প্রথম শরৎকালে দূর্গাপূজা করেন। রাবন রাজার শৃংখল থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে গিয়ে, শ্রী রাম বিশাল সমুদ্রের কাছে এসে তাঁর যাত্রা থামিয়ে দেন।
সমুদ্র পার হওয়ার কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে ভীষন মুষড়ে পড়েন। সমুদ্র কিভাবে ডিঙ্গানো যায় সেই দুঃশ্চিন্তা, দুর্ভাবনায় অস্থির রামকে ‘সমুদ্র দেবতা’ স্বপ্নে দেখা দেন। স্বপ্নেই শ্রীরাম কে সমুদ্র দেবতা দেবী মহামায়ার পূজা করার জন্য অনুরোধ করেন। বলেন, একমাত্র দেবী মহামায়া সন্তুষ্ট হলেই রাম সমুদ্র ডিঙ্গাতে পারবেন এবং রাবন রাজাকে পরাস্ত করে সীতা দেবীকে উদ্ধার করতে পারবেন। স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশ মত যথাসময়ে রাম দূর্গাপূজার আয়োজন করেন।
বিধি অনুযায়ী ১০৮টি নীলপদ্ম দিয়ে দূর্গা মায়ের পূজা সম্পন্ন হয়, শ্রী রাম ১০৭টি নীলপদ্ম যোগাড় করতে পেরেছিলেন। একটিমাত্র নীলপদ্মের জন্য পূজা হবেনা, তাই কি হয়? রামচন্দ্রের চোখের রং ছিল নীল, একটি নীলপদ্মের বিকল্প হিসেবে নিজের একটি চোখ দান করতে উদ্যত হতেই দেবী দূর্গা রামচন্দ্রকে দেখা দেন। রামচন্দ্রের পূজায় তুষ্ট হয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করেন। ‘রাম-রাবণ’ যুদ্ধে রামচন্দ্র দিগ্বিজয়ী রাবন রাজকে পরাস্ত করেন, ধর্মের জয় হয়, স্ত্রী সীতাকে রাবন রাজার কবল থেকে মুক্ত করেন।
আরও অনেক পরে, ‘কলিযুগে’ আরেকবার দূর্গাপূজা উদযাপিত হয় শরৎকালে।
সুরেশ বৈদ্য নামের এক বনিকের সপ্তডিঙ্গা নদীতে ডুবে যায়, বাণিজ্যে সমস্ত সম্পত্তি হারিয়ে উদভ্রান্তের মত ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে পথিমধ্যে রাজ্যহারা আরেক রাজার সাথে বনিকের সাক্ষাৎ হয়। রাজ্যহারা, সম্পত্তি হারা দুই অসহায় পুরুষ, চলতিপথে এক মুনি ঋষির সাক্ষাৎ পান। সেই ঋষি দুই ভাগ্যহীনকে ‘শ্রী রামচন্দ্রের’ ‘অকালবোধন’ পূজার গল্প শোনান, দেবী দূর্গার পূজা করতে বলেন। রামচন্দ্রের দূর্গাপূজার কাহিনী শুনে দুই ভাগ্যহারা অনুপ্রাণিত হন, দুজনে মিলে দূর্গাপূজা করেন। সেই সময়টাও ছিল শরৎকাল।
পূজায় দেবী সন্তুষ্ট হন, তাঁদের হারানো সম্পদ আবার তাঁরা ফিরে পান। সেই থেকেই ‘দূর্গাপূজা’ উদযাপিত হয় শরৎকালে।
দূর্গাদেবী মুলতঃ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরাধ্য দেবী হলেও দুর্গাপূজা হচ্ছে সার্বজনীন। বাংলার হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ দেশের সকল সম্প্রদায়ের মাঝে দূর্গাপূজা বাংলার শারদোৎসব হিসেবে পরিচিত। সার্বজনীন শারদোৎসবে বাংলার প্রতিটি মানুষের অংশগ্রহণ মানুষে মানুষে মহামিলনের বাণীকে উদ্দীপিত করে।
আমার জেলাশহর নারায়নগঞ্জের আমলাপাড়াতে প্রতিবছর উদযাপিত হয় শহরের সবচেয়ে প্রাচীন দূর্গাপূজা। শতবর্ষ আগে পাড়াটি ছিল হিন্দু প্রধান, এমন কি মুক্তিযুদ্ধের আগেও দেখেছি আমলা পাড়াতে হিন্দুদের প্রাধান্য। এখন আমলাপাড়ার জনগোষ্ঠীর অর্ধেক হিন্দু, অর্ধেক মুসলমান। পরিবর্তন এসেছে জনগোষ্ঠীতে, পরিবর্তন আসেনি উৎসব উদযাপনে। আমলাপাড়ার দূর্গা পূজাতে হিন্দু ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি মুসলমান ধর্মাবলম্বীরাও অংশ গ্রহণ করেন।
দেবী মূর্তি স্থাপন থেকে শুরু করে বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময়ও হিন্দু-মুসলিম ছেলেরা একসাথে প্রতিমার কাঠামোতে হাত লাগান। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী পূজাতে সন্ধ্যারতির সময় ঢাকের বাদ্যির তালে তালে যারা নাচেন, তাদের মধ্যে থেকে হিন্দু-মুসলিম আলাদা করে চেনার প্রয়োজন হয়না। শারোদোৎসবে সকলেই মিলে-মিশে একাকার হয়ে যান।
প্রতি বছর দূর্গাপূজার প্রারম্ভে পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে, দেশের বিভিন্ন স্থানে দেবী মূর্তি ভাংচুরের ঘটনা। মন খারাপ হয়, প্রবাসে বসেই চোখের জল ফেলি।
ঐ সমস্ত দুর্বৃত্তদেরকে ডেকে বলতে ইচ্ছে হয়, ” তোরা আয়, দেখে যা এসে, নারায়ণগঞ্জে হিন্দু-মুসলিম মিলে মিশে কিভাবে দূর্গাপূজা উদযাপন করি”। অতি সম্প্রতি ব্লগে ‘বিন্দু বিসর্গ’ নামের এক ব্লগার আমার একটি লেখার উপর মন্তব্য করেছে,
“আমাদের এলাকাতে অল্পকিছু সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাস করেন। সংখ্যায় এতই কম যে দূর্গা উৎসবে পূজো তুলে তা বিসর্জন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না। তার পরেও প্রতিবছর তারা পূজো উদযাপন করেন। আর একাজে সর্ব ভূমিকা নেয় এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়।
পূজোর ঢাক বাজানো থেকে শুরু করে আয়রতি ও বিসর্জন সব কাজেই পাড়ার ছেলেরাই অগ্রগামী যা উৎসবকে সার্বজনীন রুপ দেয়। আমি কখনও শুনি নাই যে তাদের পূজো উৎসবে কোন সমস্যা হয়েছে। স্বাগতম হে দেবী—”
‘বিন্দু বিসর্গের’ এলাকার অসম্ভব অসাম্প্রদায়িক জনগনের প্রতি আমার শ্রদ্ধা থাকলো।
প্রবাসে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে। খুব বড় শহর ছাড়া প্রবাসের আর কোথাও দূর্গাপূজা তিথি অনুসারে সম্পন্ন হয়না।
কারন তিথি অনুযায়ী পূজা আয়োজন করতে গেলে উইক ডে তে আয়োজন করতে হয়, কারোর ছুটি থাকেনা। সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার নিমিত্তেই পূজা উদযাপনের দিনক্ষণ পালটে যায়, শনি, রবি ছাড়া পূজা আয়োজন করা সম্ভব হয়না। তাছাড়া পুরোহিত স্বল্পতার সমস্যাও আছে। একজন পুরোহিতের পক্ষে কখনোই সম্ভব হয়না, একই সাথে দুই তিন জায়গায় পূজা করা। এক স্টেট থেকে আরেক স্টেটে যেতেও কমপক্ষে তিন চার ঘন্টা সময় লাগে।
তাই পুরোহিতের সময়ের উপরও নির্ভর করতে হয় আমাদেরকে।
আমি থাকি মিসিসিপিতে। এ বছর মিসিসিপির জ্যাকসান শহরে দূর্গাপূজা হবে ২৭শে অক্টোবার। মূল পূজা উদযাপনের এক সপ্তাহ পরে। মনটা অবশ্যই খারাপ লাগছে, কিনতু কিছুই করার নেই।
যে পুরোহিত পূজা করবেন, আগের সপ্তাহে তিনি টেনেসি রাজ্যের মেমফিস শহরে পূজা করবেন। মেমফিসে তুলনামূলক অনেক বেশী বাঙ্গালী (হিন্দু-মুসলিম), পুরোহিত থাকেন মেমফিসে, তাই ‘মেমফিসবাসী’র দাবী বেশী। আমাদের পূজা হয় একদিনে, শুধুই শনিবার। খুব কম বাঙ্গালী বলেই পূজাটি ঘরোয়া রূপ নেয়। দেবী মূর্তি কলকাতা থেকে আনানো হয়েছে, বছর দুই আগে।
অন্যান্য স্টেটের মত আমাদের স্টেটের দেবী মূর্তিও পূজাশেষে খুব যত্ন করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। খুবই ব্যয় বহুল ব্যাপার প্লেনে করে মূর্তি আনানো। সেজন্যই একবারের পূজিত মূর্তি দিয়েই পরের বছর কাজ চালানো হয়। প্রবাসে নিয়ম নাস্তি, এটাই আমাদের সান্ত্বনা। ১০৮টি নীলপদ্ম দিয়ে শ্রীরামচন্দ্র দূর্গা পূজা করেছিলেন, আমরা কোথায় পাব নীলপদ্ম! আমার বাড়ীর আঙীণায় স্থলপদ্মের গাছ আছে, এই সময়টাতেই স্থল পদ্ম ফুটে।
আমরা থাকি জ্যাকসান শহর থেকে অনেকটা দূরের এক শহর কলম্বাসে, তিন ঘন্টা ড্রাইভ করে এক গোছা স্থলপদ্ম নিয়ে আমরা গিয়ে হাজির হই জ্যাকসানে। আমার বাড়ীর স্থলপদ্ম দেবী দূর্গার দশ হাতে শোভা পায়, দেখে দু’চোখ জলে ভরে আসে। মনে মনে প্রার্থনা করি, “মা গো, জগতের সকলেই সুখী হোক, সকলের দুঃখ দূর করে দাও মা”।
গত পাঁচ বছর ধরেই মিসিসিপির জ্যাকসানে আমরা দূর্গাপূজা করছি। আশেপাশের ছোট ছোট শহর থেকে কিছু কিছু বাঙ্গালী চলে আসে মিসিসিপির পূজাতে যোগ দিতে।
অন্য জায়গায় কি হয় জানিনা, কিন্তু মিসিসিপির জ্যাকসান শহরে গেলে দেখা যায়, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি। এখানে পূজা-পার্বন, ঈদ-রোজা, ক্রিসমাস থেকে শুরু করে যে কোন উৎসবে সকলের উপস্থিতি আরেকবার মনে করিয়ে দেয়, হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খৃষ্টান—-আমরা বাঙ্গালী!
দূর্গাপূজা সার্বজনীন, তাই সকলকে সার্বজনীন শারদীয় শুভেচ্ছা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।