পৃথিবীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি প্রাণী খাবারের অনুসন্ধান করে। মানব-শিশুও এর ব্যতিক্রম নয়। খাদ্য মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা এবং অধিকার। তবে কোন খাবারের কী গুণ, কোন খাবার কতটুকু খাওয়া উচিত, কোনটা অতি প্রয়োজনীয়, কোনটা নিষিদ্ধ_ না জানার ফলে নানারকম ঘাটতি বা বাড়তি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ইংরেজিতে একটি কথা আছে - মন জয় করতে হলে তাকে ভালোমতো আপ্যায়নের বিকল্প আর কিছু থাকতে পারে না।
জন্মের পর থেকে শিশুকে সঠিক ও সুষম খাবারের অভ্যস্ত করতে হবে।
৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সী শিশুর খাবার
৬ মাসের পর থেকে শুধু মায়ের দুধ শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে না। শিশুর ওজন প্রথম ৬ মাসে জন্ম ওজনের দ্বিগুণ হয়, ১ বছরে তিনগুণ এবং ২ বছরে প্রায় চারগুণ হয়। শিশুকে কোনো নতুন খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হলে অন্তত ২ মাস সময় প্রয়োজন। এ সময়ে খুব সহজেই পরিবারের খাবার থেকে তার পুষ্টি চাহিদা মেটে।
পরিবারের খাবার অর্থাৎ চাল, ডাল, বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাছ, মাংস, সয়াবিন, ফলমূল থেকে শিশুর উপযোগী করে খাবার তৈরি করা যায়। প্রথমে শিশুকে ফলের রস যেমন_ কমলা, আনার, মালটার রস দিয়ে বাইরের খাবার শুরু করতে হয়। এতে অভ্যস্ত হলে শিশুকে সুজি/চালের গুঁড়ার হালুয়া খাওয়াতে হবে। তারপর আস্তে আস্তে খিচুড়ি শুরু করতে হবে।
৭ মাস থেকে খাবারের রুটিন
সারাদিনে যতবার সম্ভব বুকের দুধ খাওয়াতে হবে দিনে কমপক্ষে ১ বার ফলের রস অথবা ফল (কলা/কমলা ইত্যাদি) খাওয়াতে হবে।
বাচ্চার চাহিদামতো দিনে (দুপুরে ও রাতে) ২ বার খিচুড়ি খাওয়াতে হবে। বাচ্চাকে ১-২ বার সুজি/চালের হালুয়া খাওয়াতে হবে। ৭-৮ আট মাস বয়স থেকে একটু একটু ডিম সিদ্ধ বা পোচ করে খাওয়ানো যাবে। এ ছাড়া শিশুকে পরিবারের সবার সঙ্গে খাবারের টেবিলে বসাতে হবে এবং পরিবারের রান্না খাবার থেকে একটু একটু করে খাবার মুখে দিয়ে অভ্যস্ত করতে হবে যাতে এক বছর বয়সের পর থেকে সে পুরোপুরিভাবে সবার জন্য রান্না করা খাবার খেতে পারে।
১ থেকে ৩ বছরের শিশুর খাবার
শিশুর জন্য ২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ সর্বোৎকৃষ্ট দুধ।
তাই ২ বছরের পর থেকে তাকে বাইরের দুধ দেয়া যেতে পারে। প্রতিদিন ২-৩ গ্লাস দুধ শিশুর চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনমতো চিনি দিয়ে খাওয়াতে হবে। দুধ ছাড়াও খিচুড়ি, হালুয়া, আটার রুটি, মৌসুমি ফল শিশুর খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং আস্তে আস্তে পরিবারের সবার জন্য রান্না করা খাবারে তাকে অভ্যস্ত করতে হবে। যেমন_ সকালে নাশতার টেবিলে পরিবারের সবাই যা খায় সেগুলো তাকে অল্প অল্প করে মুখে দিতে হবে। আবার দুপুরে সবাই যখন খেতে বসবে তখন তা থেকে একটু একটু মুখে দিতে হবে।
যাতে সে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে এবং পরিবারের খাবারে অভ্যস্ত হতে পারে।
৪ থেকে ৬ বছরের খাবার
সব শিশুর পুষ্টি চাহিদা একরকম হয় না। ছেলেমেয়ে, শারীরিক গঠন, বয়সভেদে একই বয়সী শিশুদের মধ্যে পুষ্টি চাহিদা ভিন্ন হতে পারে। যেহেতু শিশুরা ৪ বছর বয়স থেকে স্কুলে যায়, সেহেতু তাদের টিফিনসহ প্রতিদিনের খাবারের একঘেয়েমি দূর করে খাবারে নতুনত্ব আনতে হবে। প্রতিদিন সকালে আলুভাজি-রুটি না দিয়ে কোনোদিন বিভিন্ন ধরনের সবজির মিশ্রণে নিরামিষ ও রুটি, জেলি/জ্যাম দিয়ে রুটি, ডিম দিয়ে রুটি অথবা পাউরুটি টোস্ট করে বা সুজি দিয়ে রুটি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের খাবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বাচ্চাদের খাবার উপযোগী করে পরিবেশন করা যেতে পারে।
৭ থেকে ৯ বছরের খাবার
এ বয়সের ছেলেমেয়েরা নিয়মিত স্কুলে যায়, খেলাধুলা এবং পড়াশোনা করে। তাই তাদের খাদ্যের চাহিদাও ৪-৫ বছরের ছেলেমেয়েদের চেয়ে বেশি হয় এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত খাবার একান্ত প্রয়োজন।
এ বয়সে বাচ্চাদের বাইরের খাবার অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের চিপস, জুস, ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ ধরনের প্রবণতা বন্ধ করা উচিত। দোকানে যেসব খাবার পাওয়া যায় সেগুলো বাসায় স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করা যায়।
বাচ্চাদের বোঝাতে হবে, বাইরের খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ঠিক নয়। শিশুদের কোমল মন, সুতরাং সুন্দর করে বুঝিয়ে বললে তারা বুঝতে পারবে। তাদের খাবার অবশ্যই বৈচিত্র্যময় হতে হবে, যাতে তারা খাবার খাওয়ার জন্য আকর্ষণ অনুভব করে।
১০ থেকে ১৫ বছরের খাবার
শিশুদের বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ২ বছর বয়স পর্যন্ত সর্বাপেক্ষা দ্রুত হয়। এরপর বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে আসে এবং আবার ১০-১১ বছর বয়স থেকে বৃদ্ধির হার বেড়ে যায়।
মেয়েদের ১১-১৩ বছর বয়সে এবং ছেলেদের ১৩-১৫ বছর বয়সে এ বৃদ্ধি সর্বাপেক্ষা দ্রুত হয়ে থাকে। এরপর আবার বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে যায়। তবে ছেলেমেয়েদের বৃদ্ধির সাধারণ নিয়ম কিছুটা নির্ভর করে বংশগত ও পারিপাশ্বর্িক অবস্থা যেমন_ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, খেলাধুলা, মুক্ত বাতাস ইত্যাদির ওপর। আর বাকিটা নির্ভর করে সুষম ও পর্যাপ্ত খাদ্যের ওপর। বৃদ্ধির হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাবার চাহিদাও বাড়তে থাকে।
তাই খাবারের ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।