শিশুর বিকাশের সমস্যায় অভিভাবকদের করণীয়
আহমেদ হেলাল ছোটন
বিভিন্ন কারণে একটি শিশুর বেড়ে ওঠা আর দশটি শিশুর মত না হয়ে একটু অন্যরকম হতে পারে। কিন্তু তার বেড়ে ওঠাকে নিশ্চিত করতে- সমাজের মূলস্রোতে তাদের ফিরিয়ে আনতে অভিভাবকদের ভূমিকা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাথমিক অবস্থায় অভিভাবকেরা বুঝতে পারেন না যে তার শিশুটির বিকাশ স্বাভাবিকভাবে হচ্ছেনা। পরবর্তীতে যখন তারা বুঝতে পারেন তখন সামাজিক লোকলজ্জ্বা ও অসচেতনার কারণে সঠিক করণীয় কাজটি থেকে তারা বিরত থাকেন। সুচিকিৎসার মাধ্যমে যে শিশুটির বিকাশ স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনা যেত কেবলমাত্র অভিভাবকদের সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত না নেয়ার কারণে সে হয়ে ওঠে পরিবার ও সমাজের বোঝা।
মনে রাখতে হবে যে শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে বা যে শিশুটির চিন্তা ও আচরণে অস্বাভাবিকতা রয়েছে সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেও হয়ে ওঠতে পারে অন্য সব সাধারণ শিশুর মত। অভিভাবকদের লক্ষ রাখতে হবে তার নিজের শিশুটি বা তার নিকটজনের শিশুরা ঠিকমত বেড়ে উঠছে কিনা- যদি কখনো মনে হয় শিশুটির বিকাশ কিছুটা ধীর বা তার চিন্তা ও আচরণ অস্বাভাবিক তবে দেরী না করে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হন। কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার মাধ্যমেই এ ধরণের শিশুদের চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে যত দ্রুত তার চিকিৎসা শুরু হবে তার স্বাভাবিক হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও তত বেশি। শিশুর বিকাশের সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো লক্ষণ যদি কোনো শিশুর মধ্যে দেখা যায় তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই- হতাশ হবার কিছু নেই।
যত দ্রুত সম্ভব তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসুন।
চিকিৎসকের কাছে আসবার পর চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। নির্দেশিত পরামর্শ পালন করুন ও নিয়মিত ওষুধ সেবন করান। শিশুর প্রতি নির্দেশিত আচরণ পালন করুন। মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এমন শিশুর প্রতি বৈরিভাব পোষন করবেন না, তাকে হেয় বা তাচ্ছিল্য করবেন না - তাকেও সমান অধিকার দিন।
আপনার আত্মীয় বা প্রতিবেশী কোনো শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসতে তার বাবা-মাকে উৎসাহিত করুন- তাদের সাহস দিন।
বিকাশজনিত সাধারণ কিছু প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ কিভাবে বুঝব একটি শিশুর বিকাশ স্বাভাবিক হচ্ছে না?
উত্তরঃ যদি কোনো শিশুর মধ্যে বিকাশের সমস্যার লক্ষণ দেখা যায়, তবে তার বিকাশ ঠিকমত হচ্ছে কিনা নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসুন।
প্রশ্নঃ শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে তার কি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?
উত্তরঃ অবশ্যই। সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষন নিয়ে সেও স্বাভাবিক শিশুর মত বেড়ে উঠতে পারে। তবে কোনো কোনো সময় দেরীতে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় বা জন্মগত কোনো ত্র“টির কারণে বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে সে শতকরা একশতভাগ সুস্থ না হলেও উপযুক্ত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সে স্বাভাবিক
জীবন যাপন করতে পারে।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে শিশুর বিকাশ জনিত সমস্যার কি চিকিৎসা রয়েছে? থাকলে কোথায়?
উত্তরঃ বাংলাদেশে এ ধরণের সমস্যার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসক, অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সহ বিভিন্ন সরকারী চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের শিশুদের সহায়তা দেয়া হয়।
প্রশ্নঃ শিশুর বিকাশজনিত সমস্যায় ওষুধের ভূমিকা কতটুকু?
উত্তরঃ শারীরবৃত্তীয় নানা পরিবর্তণের কারণে শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় । ওষুধ এই শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলীকে স্বাভাবিক করে তোলে। বিভন্ন মনোসামাজিক চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধ তাকে সুস্থ করে তুলতে বিশেষ সহায়ক।
কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরণের ওষুধ শিশুকে সেবন করানো বিপজ্জনক।
প্রশ্নঃ শিশুর বিকাশে তার স্কুলের ভূমিকা কতটুকু?
উত্তরঃ শিশু তার দিনের অনেকটাসময় স্কুলে কাটায়। তাই পরিবারের পাশাপাশি তার স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় স্কুলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলের পরিবেশ হতে হবে নিরাপদ ও শিক্ষকেরা হবেন স্নেহশীল।
বিশেষ করে বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এমন শিশুদের প্রতি কোনো ধরণের বৈরি আচরণ যেন স্কুলে না হয় এবং তাদের যাতে হেয়-তাচ্ছিল্য না করা হয় সে দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ নজর দিবেন। স্কুল থেকে দূরে না সরিয়ে স্কুলে আসা যাওয়ার সুযোগ দিলে শিশুরা বিকাশের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
প্রশ্নঃ এ ধরণের সমস্যা কি বংশগত?
উত্তরঃ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব শের প্রভাব থাকতে পারে- সবক্ষেত্রে নয়। বংশে কারো ধরণের সমস্যা থাকলে বিশেষত বাবা- মা বা ভাই বোনদের কারো বিকাশজনিত সমস্যার পূর্বইতিহাস থাকলে শিশুর এ ধরণের সমস্যা হবার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
শিশুর বিকাশ ও শিশুর মনঃসামাজিক সমস্যা-১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।