আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! অনীনদিতা অফিসের দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবে এমন সময় ওর হাতটা চেপে ধরলাম । প্রথমে অনীনদিতা একটু যেন চমকে উঠল । হঠাত্ করে যে কারো হাত চেপে ধরলে যে কেউ চমকে উঠবে ।
অনীনদিতা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আমাকে দেখে মুখের ভাবটা পরিবর্তন হয়ে গেল ।
-তুমি এখানে ?
আমি একটু হাসলাম ।
বললাম
-চল ।
-কোথায় ?
-চল । আমি যেখানে নিয়ে যাই ।
অনীনদিতার মুখটা একটু কেমন যেন হল ।
-তানভীর এখন অফিস আমার ।
-তো কি হয়েছে ? চল ।
আমি ওর হাতটা ধরে টান দিলাম কিন্তু ও আসতে চাইল না ।
-আমার অফিস ।
-আসবে না তুমি ?
এবার অনীনদিতা একটু দ্বিধায় পড়ে গেল ।
-প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর ।
-আচ্ছা । ঠিক আছে । আসতে হবে না ।
আমি অনীনদিতার হাত ছেড়ে দিলাম । ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘুড়ে হাটা দিলাম ।
কয়েক কদম হেটেছি এবার অনীনদিতা নিজেই এসে আমার পথ রোধ করলো । আমি খুব ভাল করেই জানতাম যে অনীনদিতা আসবে এবং আমাকে আটকাবে । আমার হাত ধরে বলল
-এমনটা কেন কর ! আমার অফিস না !
-যাও । আমি মানা করেছি তোমাকে । যাও অফিসে গিয়ে কাজ করগে মন ।
তোমার ডিপার্টমেন্ট এইচ আর না ? যাও ।
আমি আবার ঘুরতে গেলাম কিন্তু অনীনদিতা আমার হাতটা ছেড়ে দিলো না ।
-আচ্ছা কতক্ষন লাগবে ?
-জানি না । তুমি আসবে না আমি যাবো !
-আচ্ছা চল । চল ।
তুমি এমন কর না । জানি না কাল ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আমায় কি বলবে !
আমি হাসলাম । অনীনদিতা কে নিয়ে বাসে উঠলাম । যেখানটায় যাওয়ার প্লান করেছি ওখান টাতে যেতে মোটামুটি দুই আড়াই ঘন্টা লাগার কথা ।
বাসে পিছনের একটা ডাবল সিট নিয়ে বসলাম দুজন ।
যাত্রা শুরু হল ।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
-যাচ্ছি কোন এক জায়গায় !
-সবই ঠিক আছে । শুধু অফিসটা !
-তা কবে যাবো তোমার সাথে । সাধারনত মানুষ ছুটিয় দিন গুলোতে বেড়াতে যায় । কিন্তু একটা ব্যাপার কি জানো ! অদ্ভুদ কারনে আমি যার সাথে বেড়াতে যেতে চাই ছুটির দিন গুলোতে তার কোন খোজই পাওয়া যায় না ।
এমনকি তার মোবাইল পর্যন্ত থাকে ।
অনীনদিতা কোন কথা না বলে চুপ করে থাকলো ।
আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারি না ছুটির দিন গুলোতে অনীনদিতার কি হয় ।
ও কোথায় হারিয়ে যায় ? মোবাইলটা বন্ধ রাখে !
এটার কোন মানে আছে ?
বিমানবন্দর স্টেশনে বাস থেকে নামলাম । ওখান থেকে রিক্সা নিতে হল ।
যখন জায়গা মত নামলাম অনীনদিতার আনন্দ দেখে কে ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-সত্যি তুমি এটা করবে আমি ভাবতেই পারি নি ।
তারপর রেললাইনের উপর দিয়ে বাচ্চা মেয়ের মত দৌড়া দৌড়ি করতে লাগল । অনীনদিতার আনন্দ দেখে নিজের কাছেই খুব ভাল লাগল । ওর উপর খানিকটা রেগেছিলাম কিন্তু এখন মনে হল খামোখা রাগ করে এমন চমত্কার দিনটা নষ্ট করে লাভ নাই ।
অনেক দিন থেকেই এমন একটা জায়গা খুজছিলাম মনে মনে ।
যেখানে গাছ পালায় ঘেরা থাকবে চারিপাশ । তার মাঝখানে দিয়ে রেললাইন চলে গেছে । আর একটু দুরেই একটা একটা লেক আছে । ওখানে নৌকা আছে ।
অনীনদিতার অনেক দিনের ইচ্ছা এমন একটা জায়গায় আমার সাথে যাবে ।
-এই কি ভাবছ ?
আমি অনীনদিতার দিকে তাকিয়ে দেখি ও রেল লাইনের উপর হাটছে আপন মনে ।
-এই এদিকে আসো ।
আমি অনীনদিতার দিকে এগিয়ে গেলাম । অনীনদিতা যে লাইনটার উপর দাড়িয়ে আছে আমাকে তার পাশেরটাকে দাড়াতে বলল । আমি দাড়ালাম ।
তারপর অনীনদিতা ওর হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিল ।
তারপর দুজন হাটতে লাগলাম রেল লাইনের উপর দিয়ে !
অনীনদিতার অনেকদিনের ইচ্ছা এমন করে দুপাশে রেল লাইন দিয়ে হাটা !
হাটে হাটতে আমরা অনেকদুর চলে এলাম ।
ওর মুখটার দিকে তাকিয়ে মনে হল যেন ওর মত আনন্দে আর কেউ নাই ! আমাকে নিয়ে রেল লাইনের উপরেই বসে পড়লো ।
ভাগ্য ভাল আজ রোদের তেজটা কম । আকাশ টা কেমন একটু মেঘ মেঘ !
অনীনদিতা আমার কাধে মাথা রেখে অনেকক্ষন চুপ করে থাকলো !
আমি বললাম
-কি হল ? চুপ করে আছো কেন ?
-স্বপ্নের মধ্যে আছি মনে হচ্ছে ।
মনে হচ্ছে কথা বললেই হয়তো স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে !
-আচ্ছা !!
আমি অনীনদিতার মুখটা হাত দিয়ে উচু কে ওর নাকে মৃদু করে একটা কামড় দিলাম ।
-আউ !!
আমি বললাম
-স্বপ্ন ভেঙ্গেছে ! এটা স্বপ্ন না বাস্তব !
-কিন্তু স্বপ্নের থেকেও সুন্দর ! আমি কখনও ভাবি নি আমার স্বপ্নটা এভাবে পুরন হয়ে যাবে !!
কিছু বলার আগেই অনীনদিতা আমাকে জড়িয়ে ধরলো । খুব জোড়ে জড়িয়ে ধরলো । যেন কিছুতেই আমাকে হারিয়ে যেতে দিবে না ।
-আরে বাবা এভাবে জড়িয়ে ধরেছ কেন ? আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি ?
-তুমি চাইলে্ও পারবে না ।
আমি তোমাকে হারিয়ে যেতে দিবো না । কিছুতেই দিবো না !
-আচ্ছা ঠিক আছে এবার আসো !
-কোথায় ?
অনীনদিতা কে নিয়ে সামনের লেকের দিকে যাই ।
লেকটা বেশ বড় !
আমি বললাম
-নদী এখানে নাই । আপাতত লেক দিয়ে কাজ চালাতে হবে । চলবে ! লৌকায় চড়ি চল ।
যখন অনীনদিতাকে নিয়ে নৌকায় উঠলাম দেখি ওর চোখে পানি চলমল করছে ।
স্পষ্টই সেটা আনন্দের ! আশ্রু ভড়া চোখ নিয়ে ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে !!
-তুমি এস আমার জন্য করেছ ?
-আমি কি করলাম ? তুমি এরকম জায়গা যেতে চেয়েচিলে আমি নিয়ে আসলাম ।
অনীনদিতা আমার আরো একটু কাছে এগিয়ে এল ।
নৌকায় এক পাশে আমি বসে । অনিনদিতা আমার গায়ের উপর হেলান দিয়ে বসলো ! আমি ওকে ভাল করে জড়িয়ে ধরলাম পিছন থেকে ।
-আমার খুব ভাল লাগছে ! খুব বেশি ! আচ্ছা তুমি কিভাবে জানলে আমার এই ইচ্ছার কথা গুলো !
-আমি না জানলে আর কে জানবে ?
নৌকা চলছে তার আপন মনে আমরা গল্প করছি আপন মনে ।
হঠাৎ অনীনদিতা বলল
-ক্ষুদা লেগেছে ।
আমি ঘড়ির দিকে তাকয়ে দেখি প্রায় তিনটা বেজে গেছে । কখন যে এতো সময় পার হয়ে গেছে টের পাই ননি ।
আমি আগে থেকেই সব রকম প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলম ।
ব্যাগে করে খারার নিয়ে এসেছিলাম । দুজন মিলে নৌকার উপর লাঞ্চ করলাম !!
-আই মিষ্টি খাওয়া বা না ?
-এখনে মিষ্টি পাবো কোথা....
আমি অনীনদিতার চোখে দিকে তাকয়ে কথা শেষ করতে পরলাম না ।
এই দুষ্ট মেয়েটা !!
আমি বললাম
-মিষ্টি ?
অনীনদিতা একটু হেসে মাথা নাড়াল !
-হুম ! মিষ্টি !
-আসো তোমাকে খাওয়াচ্ছি !!
এই বলে ওর দিকে আরো একটু এগিয়ে গেলাম ।
-এই ভাল হবে না বলছি......
-ভাল করছি দাড়াও ..। যাবে কোথায় ....
তোমার যখন ইচ্ছা করে
কাছে নিতে আপন করে
বলবে শুধু একটা বারে
আসবো আমি ঘোড়ায় চড়ে !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।