সাভারে ভবন ধসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছে হেফাজতে ইসলাম। বিপদের সময় মানবিক দায়িত্ব হিসেবে আহতদের সুচিকিত্সার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত দিতে সাভারসহ বিভিন্ন মেডিকেল সেন্টারের রক্তদান কেন্দ্রে দ্রুত ছুটে যান বিভিন্ন মাদরাসার হাজার হাজার ছাত্র। দুর্ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করেন হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতারা। প্রয়োজনে লাখো ব্যাগ রক্ত দিতে তাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত বলে ঘোষণা দেন তারা। নিহতদের মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় বিভিন্ন স্থানে দোয়া অনুষ্ঠান করে সংগঠনটি।
এছাড়া শোকাহত মানুষের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং তদন্ত করে এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে দায়ীদের শাস্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান হেফাজত নেতারা।
রক্তদানের বিশেষ উদ্যোগ : সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাভারে ভবন ধসের খবর শোনার পরপরই বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে পদক্ষেপ নেন হেফাজতে ইসলাম নেতারা। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা বিপদে পড়ায় সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়ে রাজধানীর সব মাদরাসা ছাত্রদের রক্ত দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী আহতদের সুচিকিত্সার জন্য যে বিপুল পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন সেই দাবি মেটাতে হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে সাভার-ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নেতাকর্মী রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ নেন। সাভার এনাম মেডিকেলে হাফেজ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নেতাকর্মী সারিবদ্ধভাবে রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ নেন।
তাছাড়া মাওলানা মাহফুজুল হকের নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেলে, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফীর নেতৃত্বে পঙ্গু হাসপাতালে, মাওলানা যোবায়ের আহমদের নেতৃত্বে আগারগাঁও সন্ধানী হাসপাতালে শত শত নেতাকর্মী আহতদের চিকিত্সার জন্য রক্ত দান করেন। সে সঙ্গে তাত্ক্ষণিকভাবে আয়োজিত বিভিন্ন রক্ত সংগ্রহ ক্যাম্পে গিয়েও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী এবং রাজধানীর অন্তত ৩০টি মাদরাসার ছাত্ররা এই মহান কাজে অংশগ্রহণ করেন। তারা সারাদেশের মানুষকে এই কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। আহতদের জন্য যদি লাখো ব্যাগ রক্ত লাগে তা দিতে হেফাজত নেতারা প্রস্তুত আছে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান।
দোয়া মাহফিল : সাভারের মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের মাগফিরাত কামনা ও আহত ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে এক দোয়া মাহফিল করে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর।
বিকালে লালবাগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাহফিলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে দেশের বিবেকবান প্রতিটি মানুষকে বিশেষত ইসলামপ্রিয় ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা। তারা বলেন, আপনারা যে যেভাবে পারেন এই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের রক্তের প্রয়োজন, খাবারের প্রয়োজন, পানির প্রয়োজন, আপনারা নিজ নিজ উদ্যোগে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন। নেতারা এই ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিতে কর্মজীবী নারীর জীবন ও কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজন জীবিকা এবং কর্মজীবী নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
তারা বলেন, আমাদের এই দাবির প্রতি তোয়াক্কা না করে সরকার ও কিছু নারীবাদী সংগঠন তাদের জীবন ও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না করে বরং তাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ঢাল হিসেবে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অপতত্পরতা চালাচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, হেফাজতে ইসলামের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির হীন উদ্দেশ্যে আগামী ২৭ এপ্রিল ঢাকায় নারী সমাবেশ ঘটানোর পাঁয়তারা করছে সরকারি মদদপুষ্ট মহল। নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে রাশেদ খান মেননের মত চিহ্নিত ইসলামবিরোধীরা। আমরা বলতে চাই, রাশেদ খান মেনন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি হওয়ার পর ভিকারুননিসা ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে কোটি কোটি টাকার ভর্তিবাণিজ্য হয়েছে সে দুর্নীতির খবর গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছিল। এই দুর্নীতিবাজদের দ্বারা নারীদের জীবন, জীবিকা ও কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধান আশা করা অরণ্যে রোদন মাত্র।
তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যই নারীদের রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে রাস্তায় নামাতে চায়। আমরা কর্মজীবী নারীদের লক্ষ্য করে বলতে চাই, আপনারা কারও উসকানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে আগামী ২৭ এপ্রিল ঢাকায় নারী সমাবেশে যোগদান না করে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষার জন্য নফল রোজা রেখে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করুন। এ ধরনের কোনো গজব যেন আল্লাহ আমাদের ওপর না দেন, সেজন্য তার দরবারে দোয়া ও মোনাজাত করুন।
মাওলানা মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মোনাজাত-পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন মুফতি তৈয়্যেব, প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা যোবায়ের আহমদ, মাওলানা জসিম উদ্দীন, মাওলানা নোমান মাজহারী, মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা আবদুল হাই ফারুকী, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম।
হেফাজত নেতাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : এদিকে সাভারের রানা প্লাজায় মর্মান্তিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মহানগর সদস্য সচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল।
এ সময় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম সাভার থানার আহ্বায়ক মাওলানা আবদুল মান্নান, হাফেজ হাবিবুর রহমান, মাওলানা আবু জাফর, মাওলানা আবদুল্লাহ, মাওলানা আনোয়ার হোসাইন, মাওলানা তাফাজ্জল হকসহ কয়েকশ’ নেতাকর্মী। নেতারা ঘটনাস্থল ছাড়াও এনাম মেডিকেল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে আহতদের খোঁজ-খবর নেন ও বিভিন্ন বাড়ি এবং প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, এই ঘটনা মর্মান্তিক ও দেশের ইতিহাসে একটি দুঃখজনক ঘটনা। আমরা দুর্গত এলাকায় ঘুরে মানুষের যে অসহায় অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। আমরা এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সারাদেশের জনগণকে এই অসহায় লোকদের পাশে দাঁড়ানোর এবং তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।
আমাদের দুঃসময়ে প্রমাণ দিতে হবে মানুষ মানুষের জন্য।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।