আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাকে শুটকির হাত থেকে বাচাও !!!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! অনীনদিতা আবার কথাটা জিজ্ঞেস করলো । -কেমন হয়েছে ? এই বিদঘুতে জিনিস আবার কেমন হবে ? এই জিনিস কেউ খায় দুনিয়ায় ! তুই জানিস না ফাজিল মেয়ে ! আমি কোন মতে আর এক লোকমা গিলে বললাম -দারুন হয়েছে । আমার তো মনেই হচ্ছে না যে আমি শুটকি খাচ্ছি ! মনে মনে বললাম মনে হচ্ছে না আবার ! এই বিদঘুটে শুটকির গন্ধে আমার নাড়িভূড়ি উল্টপাল্ট আসছে । অনীনদিতার মুখের হাসি আর একটু প্রসারিত হল । -দেখেছ ? আমি বলেছিলাম না ? আমি এতো চমত্‍কার করে রাধবো তুমি টেরই পাবা না ! হুম টের তো পাই ই নি ।

তুমি যখন সায়েন্সল্যাব মোড়ে ছিলা আমি শাহবাগ থেকেই এই জিনিসের গন্ধ পেয়েছি । এই চিজের গন্ধ আবার না পাই । আমি হেসে বললাম -আসলেই ভাল হয়েছে । অনীনদিতা বলল -ভাল হয়েছে ! সত্যি ? আমি অনীনদিতার চোখের দিকে তাকালাম । ইস ! কি আগ্রহ নিয়েই না ও আমার মুখের কথা শোনার জন্য ।

আমার একটু এপ্রিশিয়েশন শোনার জন্য । আমার মনটাই ভাল হয়ে গেল । আমি অনীনদিতাকে বললাম -সত্যি ভাল হয়েছে । -তুমি মিথ্যা বলছো না তো আমাকে খুশি করার জন্য ? তুমি তো শুটকিমাছ খাও ই না । -এতো দিন খাই নি কারন তোমার মত এতো আদর দিয়ে কেউ রান্না করে খাওয়াই ।

এই রকম আদর দিয়ে রান্না করলে আমি ধুতুরার ফলও হাসি মুখে খেয়ে ফেলব । -ধুতুরার ফল ? এটা কি ? -চিনো না ? -না । -অনীনদিতা হাসল । -এটা হল এক প্রকার ফল । আমাদের এলাকায় খুব হয় ।

কারো মনে যখন খুব দুঃখ হয় তখন এই ফল খেয়ে আত্ম হত্যা করে । -মানে ? -মানে কিছু না । অনীনদিতার মুখটা একটু মলিন হয়ে গেল । -এমন কথা কেন বল ? আমি কি ...! -আরে এমন কিছুই । কেবল কথার কথা বললাম ।

-এরকম কথা বলবা না আর ! খবরদার ! -আচ্ছা বাবা বলব না । অনীনদিতা সব সময় খুব ইচ্ছা আমাকে রান্না করে খাওয়াবে । প্রতি ছুটির দিন গুলোতে কিছু না কিছু নিয়ে আসবে । প্রতি অফিস ছুটির দিন আমাকে একটু কিছু না খাওয়ালে নাকি ওর ভালই লাগে না । একটু ঝামেলা হলেও আমি আসি ।

বারবার মনে হয় মেয়েটা আমার জন্য এতো কষ্ট করছে, না আসলে ও নিশ্চই খুব কষ্ট পাবে । আর অনীনদিতাকে কষ্ট দেই কিভাবে ? প্রতিদিনই কিছু না কিছু খাচ্ছিলাম । কিন্তু আজকে যখন অনীনদিতা টিফিন বাটি নিয়ে আমার সামনে এল আমার নাকটা কুচকে উঠল । বাটি না খুলেই বোঝা যাচ্ছিল যে আজ অনীনদিতা শুটকি রান্না করে এনেছে । শুটকি ! আমার সব থেকে অপছন্দের খাবার ।

আই জাষ্ট হেইট শুটকি ! আমার বিরক্তির সীমা রইল না । কিন্তু অনীনদিতার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলাম না । ব্যাচারী কষ্ট পাবে । অনীনদিতা বলল -আমি খাইয়ে দেই ? -আরে কত মানুষ রয়েছে । মানুষজন কি ভাববে ? আসলে আমি বেশি খেতে চাচ্ছিলাম না ।

জিনিসটা যতই ভাল হোক শুটকি বেশিক্ষন সহ্য করা মুশকিল । আমার কথা শুনে অনীনদিতা বলল -আচ্ছা মানুষজন কি বলবে ? ঐ দিন রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে চুম খেলে তখন তোমার মনে হয় নি মানুষ কি ভাববে । আর এখন আমি খাইয়ে দিবো এতে তোমার সমস্যা । আসলে তোমার খেতেই ইচ্ছা করছে না । যাও খেতে হবে না ।

এই বলে অনীনদিতা টান মেয়ে টিফিন বাটিটা দুরে ছুড়ে মারল । -আরে আরে কর কি । কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে । রাস্তার মাঝ খানে সব তরকারী ছড়িয়ে পড়েছে । অনীনদিতা অন্য দিকে মুখ করে বসে রইল ।

যাক শুটকি খেতে হচ্ছে না এটা একটা ভাল দিক । কিন্তু এই মেয়ে যে এখন রাগ কে আছে এটার কি হবে ?? -আরে বাবা আমি তো খাচ্ছি লাম । তাই না ? -না তুমি খা্ছিলা না । ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিলছি লা । -না বিশ্বাস কর ! তা না ।

আমার আসেই ভাল লাগছিল । তুমি কেন এই রকম করে ফেলে দিলে ! আমি মনে মনে বললাম ভাল হয়েছে ফেলে দিয়েছ ! আর একটু খেলে তো আমার খবরই ছিল । অনীনদিতা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল -সত্যি ভাল লাগছিল ? -সত্যি বলছি । অনীনদিতার মনটা একটু প্রসন্ন হল । -ঠিক কাল আবার নিয়ে আসবো ।

বাসায় লইট্যা মাছের শুটকি আছে । খুব চমৎাকর লাগবে খেতে । তাহলেই হয়েছে ! আল্লাহ আমাকে এই শুটকির হাত থেকে বাচাও !! বাচাও !! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.