এটা আমার রাজত্ব মধ্যরাত। চারদিক অন্ধকার। পাশের থেকে ভোঁসভোঁস আওয়াজ হচ্ছে। রুমমেট ঘুমাচ্ছে বুঝতে পারল রাসিদ। সে আর ডাকলো না তাকে।
এদিকে তেষ্টাও পেয়েছে খুব। মোবাইলে সময়টা দেখল রাসিদ। রাত ৪ টা ৪৯ মিনিট। টানা ৯ দিন এই শীতের দিনে, ঘুমানোর আদর্শ সময়ে ঘুম ভাংল তার। এমনি এমনি নয় অবশ্য তা।
সত্যি বলতে রাসিদ সেই মেয়ের প্রেমে পড়েছে। আরও গাঢ় ভাবে বললে সে সোনালী নয়নার প্রেমের চোরাবালিতে পড়েছে সে এমনভাবে যে নিজেকে আর বাচাতে পারছেনা। আজকাল রুমমেট রাও আশ্চর্য হয়েছে ওর এই স্পষ্ট পরিবর্তনে। সেদিন মাকসুদ ভাইও সরাসরি বলল কথাটা। রাসিদ শুধু মাথাটা নাড়িয়ে চলে গেল।
অথচ অন্য কোন সময় হলে হয়ত এ নিয়ে টানা ৩ ঘণ্টা বকবক করত রাসিদ।
গত কয়েক দিনে কোন ক্লাস মিস হয়নি তার। আড়াই বছরের ক্যাম্পাস জীবনে সসে এই প্রথম টানা ৫ দিন ক্লাস করল। এটা এতদিন রাসিদও বিশ্বাস করতনা যে টানা এক সপ্তাহ সে ক্লাস করতে পারবে। অথচ সব উল্টে দিয়ে সে দিব্যি ক্লাস করছে।
বাস স্টপেজে সে সবার আগে আগে যায়। এমনকি আগে যে নিচের তলায় যে সিট গুলোতে বসেও দেখেনি, সেই সিটে বসে বসে আসে। সব কিছু শুধু সেই একটা মেয়েরি জন্য। এতদিন রাসিদ জানত, পৃথিবীর সব পুরুষের সব কাজের পিছনে থাকে একজন নারী, এখন সে বুঝতে আরম্ভ করেছে কথাটা কতখানি সত্য।
সামনে পরিক্ষা।
তাই হাল্কা পড়াশুনা করার জন্য বই খুলল রাসিদ। বই সামনে মেলেই সে তাজ্জব হয়ে গেল। ওর সামনে বইএর পৃষ্ঠায় সেই সোনালী নয়নার হাস্যজ্জ্যল মুখ। সকালে সূর্য তখনও ওঠেনি, কিন্তু রাসিদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল যেন সূর্যের আলো ওর চেহারায় ঠিকরে পরছে। রাসিদের আর পড়া হলনা।
পড়বে কি? ওর মাথায় তো ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু স্বর্ণাকে নিয়ে ভাবনা। রাসিদ তার কবিতার খাতা আর কলম টা নিয়ে বসে পড়ল। ভাবনাগুলো কলমের মাথা দিয়ে প্রবেশ করতে লাগল পৃষ্ঠায়।
কবিতা লিখতে লিখতে কখন যে সময় পার হয়ে গেল টেরও পেলনা রাসিদ। ঘড়ির অ্যালার্ম জানিয়ে দিল ৬ টা বাজে ‘রাসিদ, সোনালী নয়নাকে দেখতে যাবার সময় হয়েছে’।
রাসিদ দ্রুত নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে রওনা দিল স্টপেজে। আজ কথা বলবে এমন একটা মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে তার। বাস স্টপেজে গিয়ে দেখল সে দাড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দাঁড়াল রাসিদ। জীবনে প্রথমবার কোন একটা মেয়েকে এতটা ভাল লেগেছে এবং সেই মেয়ের পাসে দাঁড়িয়েছে এই কথা ভাবতে ভাবতে সেদিন আর সোনালী নয়না কে কিছু বলা হলনা তার।
এরই মধ্যে বাস চলে আসল। আর সবার মত রাসিদও উঠল বাসে। গিয়ে বস্ল ছেলেদের একদম সামনের সিট টাতে। সেই সোনালী নয়নাও তাকে দেখল একবার। তার ঠোঁটের কোনায় ফুটে উঠল একচিলতে হাসি।
রাসিদ সেই হাসিতেই কুপকাত হয়ে পড়ল এমনি যে পুরো সময় সে তার দিকেই তাকিয়ে থাকল আরেকবারের আশায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।