আজকাল গুল্লুর খুব অস্থির লাগে । দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে । সে কি কাউকে বুঝতে পারছে না, নাকি কেউ তাকে বুঝছে না ! রাত হলেই হাজার রকম প্রশ্ন গুল্লুকে ঘিরে ধরে । কেন তাকে বেঁচে থাকতে হবে ? এই জীবন যাপনের অর্থ কি ? তার সব ভাবনা শেষ হয় মৃত্যুতে গিয়ে । যেন মৃত্যু তাকে দুই হাত বাড়িয়ে ডাকছে ।
বেঁচে থাকা মানেই যদি যন্ত্রনা হয় তাহলে যন্ত্রনাকে বাচিয়ে রেখে লাভ কি ?গুল্লুর বেঁচে থাকাটা শু্ধু হিমির জন্য প্রয়োজন। সে অনেক ভেবে দেখেছে- হিমি তাকে সত্যিকারের ভালোবাসে। গতকাল হিমির সাথে তার দেখা হয়েছে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে । হিমি, গুল্লুকে দেখে ঝলমলে হাসি দিয়েছিল । হাসিটা দেখেই গুল্লুর মন খুশিতে ভরে গিয়েছিল ।
হিমিকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে । হিমি বলল- আমাকে ক্ষমা করেছে তো? গুল্লু বলল, কিসের ক্ষমা ? হিমি সুন্দর করে বলল, ভুলে গেছো বুঝি? বাঁচলাম। সেদিন আফতাব নগরে তোমাকে হঠাৎ চুমু দিয়ে দিলাম। গুল্লু বলল, ভাবতে গেলেই সব ফোটোগ্রাফের মতন চোখের সামনে ভেসে উঠে। হিমির কাছে এলেই গুল্লুর মৃত্যু চিন্তা হারিয়ে যায়।
পৃথিবীতে এই একমাত্র তরুনী এখনও গুল্লুর জন্য এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে উন্মুখ হয়ে থাকে । এই মেয়েটির জন্য কি গুল্লু অনেকদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারে না?সময় করে ব্যাপারটা ভেবে দেখবে গুল্লু ।
গুল্লু কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছে হিমিকে- "একদা এমনই বাদল শেষের রাতে/ মনে হয় যেন শত জনমের আগে/ সে এসে সহসা হাত রেখে ছিল হাতে,/ চেয়েছিল মুখে সহজিয়া অনুরাগে। / সেদিনও এমনই ফসল বিলাসী হাওয়া/ মেতেছিল তার চিকুরের পাকা ধানে,/ অনাদি যুগের যত চাওয়া,যত পাওয়া/ খুজেছিল তার আনত দিঠির মানে। / একটি কথা দ্বিধা থর থর চুড়ে/ ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী।
" হিমি গুল্লুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে- আবেগতাড়িত সহজ সরল এই মানূষটিকে কেন তার এত ভালো লাগে? মানুষটির ভিতরে একটা গভীর ব্যাপার আছে, আছে মুগ্ধতা । টাকা, ক্যারিয়ার, সাফল্য গুল্লুকে ছিবড়ে করে ফেলেনি । লেকের চারপাশে অনেক ছেলেমেয়ে বসে আছে তাদের দিকে তাকিয়ে হিমি বলল,বাঙ্গালী ছেলে মেয়েরা এখন কত ফ্রীলি মেলামেশা করে !তাদের মধ্যে সেই রোমান্টিক ভীতু ভীতু ভাবটা নেই, কিন্তু তোমার মধ্যে সেটা আছে । আমার অনেক ভালো লাগে । হিমি সব সময় বিদায় নেওয়ার আগে বলে- এরপর কি রঙ্গের শাড়ি পড়ে আসবো ? যেদিন হিমির গুল্লুর সাথে দেখা হয়, সেদিন সে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে ।
বালিশ ভিজে যায় চোখের পানিতে । বুকের মধ্যে কেমন যেন চাপ চাও কষ্ট হয় । গুল্লুর জন্য মায়ায় বুক ভেসে যায় । এ কেমন মানষ জুটলো তার কপালে !
এই পর্যন্ত লিখে রাজীব নূর থামলেন । তার সিগারেট খাওয়ার সময় হয়েছে ।
এখন অনেক রাত । রাত খুব রহস্যময় । রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা দারুন একটা ব্যাপার । গুল্লু আর হি্মিকে নিয়ে নূর সাহেব কি করবেন বুঝতে পারছেন না । মাঝে মাঝে তার ইচ্ছা করে দুইজনকেই মেরে ফেলবেন ।
কিন্তু এই দুইজন মানষের আনন্দে সে আনন্দ পায়, ব্যাথায় হয় ব্যাথিত। তারা তার ইচ্ছায় চলে না, তাদের ইচ্ছায় রাজীব নূরের চলতে হয় । এই দুইজন মানব মানবী'র প্রতি তার এক আকাশ ভালোবাসা জন্মেছে । নূর সাহেব পর পর দুইটা সিগারেট শেষ করলেন, তারপর আবার লিখতে বসলেন, লিখতে লিখতেই আপন মনে হাসে কখনও মাথা নাড়ে আবার কখনও দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। অনেকে মনে করেন, এই লেখা গুলো রাজীব নূরের অভিজ্ঞতার ফসল ।
সে শুধু অভিজ্ঞতার উপর দার্শনিকতার একটা প্রলেপ দিয়ে দেন । আসুন এবার দেখি- যদি রাজীব নূরের একটা বৌ থাকতো- তাহলে এই মধ্যরাত্রে সে কি করতো !
মাঝরাতে রাজীব নূরের বৌ হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখত- স্বামী পাশে নেই । তার বুকে একটা ধাক্কা লাগতো। ভাবত কোথায় গেলো মানুষ টা ? সব ঘর খুঁজে অবশেষে ব্যালকনিতে তাকে পাওয়া যাবে । পেছন থেকে পিঠের উপর হাত রেখে বলত- ঘুমোওনি ? রাজীব নূর তার স্ত্রীর দিকে বোকা'র মতন চেয়ে থাকত ।
বৌ কাছে আসতো । নরম করে চেপে ধরত নিজের বুকে রাজীব নূরের মাথা । বলতো- অনেক রাত হয়েছে, এখন ঘুমাও গো । একটু বিশ্রাম নাও । রাজীব নূর হয়তো বলতো- ঘুম তো আসে না ।
তারপর বৌ বলতো- এসো আমি আদর দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই । তখন রাজীব নূর আদুরে গলায় বলতো- তাহলে আসো আজ আমরা না ঘুমিয়ে- সারারাত আদর করে করে পাড় করে দেই । বৌটি লজ্জা পেত ! রাজীব নূর কবিতা দিয়ে আদর শুরু করতো- "এই পৃথিবীর মধ্যে ছিল/ অনন্ত এক শীতল পাটি। / অনেক দাঙ্গা ঝগড়াঝাঁটি/ পার হয়ে তাই ভালবাসা/ জাগিয়েছিল অনেক আশা,/ ...ফুটিয়েছিল অজস্র রং/ খানিকটা তার গদ্যে এবং/ খানিকটা তার পদ্যে ছিল। "
লেখার সুর কেটে গেছে ।
এখন আর এ বিষয়ে লিখতে পারব না । অন্য প্যাঁচাল পাড়ি- দুনিয়ার মানুষের অনেক দুঃখ কষ্ট। যাদের দুই বেলা ভাত জোটানো নিয়ে তেমন সমস্যা নেই তাঁদের নব্বই ভাগ কষ্টই প্রেম ঘটিত। জ্ঞানী লোকেরাও প্রায় একই কথা বলে গেছেন, If you love something set it free; if it returns its yours forever, if not it was never meant to be । প্রেমিক-প্রেমিকা শব্দটা পুরোপুরি অর্থহীন বাজে শব্দ ।
একজনের সাথে কথা বলতে ভাল লাগে, দেখা হলে কাছাকাছি হতে ভালো লাগে আর তার নাম হয়ে গেল প্রেম। আপনি যাকে প্রেমিক ভাবছেন যদি তাকে অন্য কারো সাথে দেখেন তখন প্রেম আর থাকে না। ছেলে হলে নাক ফাটাফাটি আর মেয়ে হলে শক্তি থাকলে চুলের মুঠি ধরে শাস্তি দেয়া; এটা প্রেম নয়, নষ্টামির একটা সুন্দর নামকরণ। কারণ যেকোনো জিনিসের ভাল লেবেল না থাকলে তা চালানো যায় না। আমি প্রেম করছি এটা অন্যরা শুনলে যেন খারাপ মনে না করে।
আশির দশকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিয়ের পরে শতকরা নববই ভাগ ক্ষেত্রে ডিভোর্স হয়ে গেছে। বিয়ের আগে যে ছেলেরা কতরকম কথা বলে যারা বিয়ে করে নি বুঝতে পারবে না। বিয়ের পরে ছেলেদের রূপ কী হয় তা বিবাহিত মহিলাদের জিজ্ঞেস করলেই জানা যায়। সেই প্রেমিকের কী রূপ হয় জানতে পারলে নিজের পড়াশোনা, জ্ঞানার্জন, যোগ্যতাকে বাদ দিয়ে তথাকথিত প্রেমের পেছনে কোনো ছেলে বা মেয়ে ঘুরতো না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।