যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য নোবেল পুরষ্কার [বিশেষ করে শান্তি (ইদানিং সাহিত্য ও)] অনেক আগ থেকেই সাম্রাজ্যবাদীদের মতাদর্শিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছিল। সাম্রাজ্যবাদ শুধু সামরিক আর অর্থনৈতিক ক্ষমতার বলেই টিকে থাকেনা, সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য, বিশ্বব্যাপী তাদের শোষণ-নিপীড়ন আর দোর্দণ্ড শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতারও একান্ত প্রয়োজন। বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা আদায়ের জন্য সাম্রাজ্যবাদীরা সমাজের বুদ্ধিজীবী এবং পণ্ডিতদের মাধ্যমে এমন এক জ্ঞানকাঠামো বা চিন্তাধারা তৈরি করে যাতে করে এমন এক সাম্রাজ্যবাদী মতাদর্শ সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে যার বাহ্যিক দিক থাকবে মানবিকতা, মানবাধিকার আর সভ্যতার ফুলেল ঘ্রাণে ভরপুর, কিন্তু এই তথাকথিত আদর্শের মর্মমূলে থাকবে অন্তর্গত বিষক্রিয়া। এই বিষক্রিয়ায় বিশ্ব সমাজের মানুষের মন-মগজ- চিন্তা চেতনা এমনভাবে আক্রান্ত হবে যে সবাই বিশ্ব শোষকদের আর লুণ্ঠনকারীদেরকেই গনতন্ত্র, মানবাধিকার আর সভ্যতার প্রতিভূ হিসেবে মনে করতে থাকবে। এই বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতার পাটাতনে দাঁড়িয়েই সাম্রাজ্যবাদীদের সমস্ত শোষণ, লুণ্ঠন, আধিপত্য, গণহত্যা আর যুদ্ধবাজ নীতি আইনি বৈধতা পেয়ে যাবে।
নোবেল কমিটি কোন রাখঢাক না রেখেই সাম্রাজ্যবাদীদের অনুগত সেবাদাসদের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিয়ে দুনিয়ার শান্তিকামি মানুষের সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো প্রবঞ্চনা করে চলেছেন। মিসরের আনোয়ার সাদাত (ইস্রাইলি দখলারিত্তের সহযোগী), ইয়াসির আরাফাত (প্রথমে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবি হলেও পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং হানাদার ইস্রাইলের সেবাদাসত্ত করে বিভিন্ন চুক্তি করে ফিলিস্তিনি স্বার্থ জলাঞ্জলি দেন),জিমি কার্টারের মতো যুদ্ধবাজ নেতা, ফিলিস্তিনি গণহত্যার সাথে জড়িত শিমন পেরেজ, ইরানের গনবিপ্লবের বিরোধী এবং পশিমাদের সেবাদাস শিরিন আবাদি, মিয়ান্মারের সু চি, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত বারাক ওবামা , ক্ষুদ্রঋণ এর মাধ্যমে চড়া সুদে গরিব মানুষকেও কিভাবে শোষণ করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করা যায় তার পথিকৃৎ বাংলাদেশের ডক্টর ইউনুস সহ এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে তাদেরকেই নোবেল শান্তিতে ভূষিত করা হচ্ছে যারা একান্তই সাম্রাজ্যবাদীদের অনুগত, সেবাদাস অথবা মতাদর্শিক সহযোগী । এবার ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশে দেশে যুদ্ধের মাধ্যমে আধিপত্য, লুণ্ঠন আর শোষণের মার্কিন সহযোগী ইউরোপীয় ইউনিয়ন পেয়েছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। ঐক্যের মাধ্যমে শান্তি আনার চেষ্টার স্বীকৃতি হিসাবে এ বছর নোবেল পুরস্কার পাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
নরওয়ের নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, ইউরোপে শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে লড়াইয়ে গত ছয় দশকের অবদানের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এ পুরস্কার দেয়া হলো। কার ঐক্য ? কিসের ঐক্য ? কার শান্তি? কিসের শান্তি? গত ছয় দশকের এই সংস্থার কার্যক্রম খতিয়ে দেখলে যে কেউই বুঝতে পারবেন যে, এই সংস্থাটি ইউরোপীয় দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য কি করে দেশে দেশে গোপনে, প্রকাশ্যে অন্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন এবং অর্থনৈতিক শোষণ (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, আই এম এফ; জি-৮ গ্রুপ এসবের মাধ্যমে এশিয়া এবং আফ্রিকার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রনের মধ্য দিয়ে) এর কাজে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একান্ত সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের আধিপত্য আর নিয়ন্ত্রন বজায় রাখার জন্য এবং অন্য দেশের তেল গ্যাস লুণ্ঠনের জন্য এই সংস্থা সামরিক বাহিনী ন্যাটোর (ন্যাটো হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের সন্ত্রাসী সংস্থা) মাধ্যমে ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্থান, লিবিয়া, সহ বিভিন্ন দেশে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে গণহত্যা সহ এসব দেশ দখল করার কাজে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে সম্পূর্ণ ভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে। ইরানের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপে এই সংস্থার হমিতম্বি আমরা দেখছি। মজলুম ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলের সমস্ত গনহত্যা , হামলা, অবরোধকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থন এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে।
এই হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারের নমুনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই এই সংস্থাটি হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে সুসংগঠিত সন্ত্রাসী। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এই সংস্থার ডাবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড নীতি আমরা দেখেছি ফিলিস্তিনে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার হামাসকে উৎখাত করার ক্ষেত্রে তাদের ষড়যন্ত্রে। নির্বাচিত হামাস তাদের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে বলে তাকে উৎখাত করতে হবে, গাজায় অবরোধ দিয়ে হামাস সরকারকে পঙ্গু করে দিতে হবে। এই হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গণতান্ত্রিক নীতির নমুনা।
যতক্ষন গনতন্ত্র সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণ লুণ্ঠনকে বৈধতা দিবে, ততক্ষন গণতন্ত্র গনতন্ত্র বলে চিৎকার করবেন ইউরপিয়রা, আর যখনি তাদের আধিপত্তের বিরোধী কোন দল গনতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচিত হয়ে আসবেন তখন সেই সরকারকে উৎখাত করার জন্য উঠে পড়ে লাগবেন, এই হচ্ছে ই ইউ এর ভণ্ডামি । এই ধরনের সংস্থাকে শান্তিতে নোবেল দিয়ে সন্ত্রাস, লুণ্ঠন, আগ্রাসন, গণহত্যা, আর সাম্রাজ্যবাদকেই পুরস্কৃত করল নোবেল কমিটি , এশিয়া , আফ্রিকা, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির আগুন যে এতে আরও বাড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। তীব্র নিন্দা জানানো ছাড়া আমাদের আর কি বা করার আছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।