চাঁদের দিকে হাত বাড়ালে তার আলো কিছুটা লেগে যায় চিত্তে শরীরটা ঝাঁকিয়ে বের করে নিয়ে দরজার হাত দিয়ে মাসুদ পিছন ফিরে একবার তাকিয়ে বলে , ‘তোমার নামটা যেন কি?’
ক্লান্ত আধবোঝা চোখ কিঞ্চিত তুলে অস্পষ্ঠ স্বরে জবাব দেয় সে- ‘মালা’।
‘ওহ মালা, তুমি অনেক সুন্দর! কোনদিন বলা হয়নি তোমাকে। আজ আমি তোমার ঘরে একটু বসি? যেতে ইচ্ছে করছে না। অবশ্য যদি তোমার আপত্তি না থাকে। ’
এবার শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে বিছানার একপাশে বসে মালা।
অযাচিত আবদার রেখে বলে, -বসেন।
মাসুদ কি যেন ভেবে আবার বলে, ‘থাক। চলেই যাই। ভাল থেক তুমি। ’
মালা কিছুটা অপ্রস্তুত হয় মাসুদের কথায়।
২২ বছরের কোটা জীবনে এমন করে কেউ ভাল থাকতে বলেনি কোনদিন। মাসুদও অনেকদিন এসেছে তার কাছে। চাহিদা মিটে গেলেই মুখ না ফিরেই হন হন করে চলে গেছে। কোনদিন নামটাও জানতে চায়নি। আজ হঠাৎ ? লোকটার নিশ্চয় কোন গোলমাল হয়েছে! নইলে মালাদের কেউ নাম জানতে চায় নাকি? তাদের কি আর সত্যিকার কোন নাম থাকে? বাপ-মায়ের দেয়া নাম তো কোটায় ঢোকার সাথে সাথে ভুলিয়ে দেয়া হয়।
বাকীটা জীবন কাটে নতুন কোন নামে। কুঠরি ঘরটার দরজার বাইরে হা পিতাস করে বাবা-মায়ের দেয়া সেই নাম। সে নামের আর্তনাদ পৌছায় না আর মালাদের কান অবধি। এক সময় সত্যিকারের নামটা ঝাপসা হতে হতে মুছে যায়। অনেকদিন পর আজ মালার মনে পড়ে তার মা-বাবার দেয়া নামটা।
কত আদর করে বাবা ডাকতো তাকে সোহাগী! বাবা হাট থেকে ফিরে বাজারের ব্যাগটা মায়ের হাতে দিতে দিতে ডাকতো ‘সোহাগীরে, তোর জন্য মিঠাই আনছি রে মা, তুই কই?’ সোহাগী দৌড়ে গিয়ে বাবার হাত থেতে মিঠাই নিতো। একমাত্র মেয়ে ছিল সে। মা কি কম আদর করতো? চাঁদনি রাতে আকাশের চাঁদটার দিকে দেখিয়ে বলতো, ‘চান্দটার চাইতে কত্ত সুন্দর আমার সোহাগী!’ মালা ভাবতে ভাবতে সে সব দিনে হারিয়ে যায়। যেন একবার মালা থেকে সোহাগী হয়ে ওঠে। তার চোখের কোণায়েএক ফোঁটা জল বেড়িয়ে আসে জননীর জরায়ু ফেটে ভুমিষ্ট হওয়ার যন্ত্রণা দিয়ে।
২২ টি বছর এই একফোঁটা তপ্ত জল নিয়ে অন্তসত্তা ছিল তার চোখ! আজ প্রসব বেদনা দিয়ে ভুমিষ্ট হয়েছে কপোলে।
সরদারনি এসে দরজার বাইরে থেকে সজোরে ধাক্কা দেয়, ‘মা-লা! এই মাগী, এক হারামীকে নিয়া এতক্ষণ পড়ে থাকলে তোর তিন বেলার ভাত জুটবে? জলদি শাড়ি পইরা পথের মোড়ে গিয়া দাঁড়া। খরচাপাতির যা দাম পড়চে, লিপস্টিকের দামটাই তো আইজ তুলতে পারিস নাই! এত্তো আয়েশ তোর!’
ডাকটা যেন তীর হয়ে বুকে বিধে যায় মালার। হকচকিয়ে উঠে সে। পাতলা শাড়িটার এক প্যাঁচ বুকে জড়িয়ে ঝটপট পরে নেয় সে।
ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক লাগিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে আবার রাস্তায় দাঁড়ায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।