***হোস্টেলে থাকি। ক্লাস,পড়া,টিউশনি এই করে জীবন যায় যায় অবস্থা, এর মধ্যে নতুন উপদ্রপ-চোর। ডাইনিং এর হাড়ি পাতিল থেকে শুরু করে বই-খাতা সব। আন্ডারওয়ার গুলোও নিরাপদে রাখা দায়। বড়ই কষ্টে আছি।
এখানে যে দারোয়ান নেই তা না, অনেকগুলো দারোয়ান আছে। ওদের সময়ও ভাগ করা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। গতকাল সন্ধ্যায় টিউশনি থেকে হোস্টেলে ফিরে শুনি হোস্টেলের ভিতরে রাখা একটা সাইকেল চুরি হয়েছে। সাইকেলের মালিকের নাম শুনে তো আমি থ।
পাঠক ধারনা করেন তো সাইকেলের মালিক কে?
হ্যাঁ ঠিকি ধরেছেন- হোস্টেলের গেটের দারোয়ানের সাইকেল, হোস্টেলের ভিতর থেকে চোর নিয়ে গেছে ।
*** বিকেলে ঘুমানো আমার পুরনো অভ্যাস। তাছাড়া এখন এতই ক্লান্ত থাকি, বিকেলে না ঘুমালে রাতে পড়তেই পারি না। আমার এই অভ্যাসের কথা বন্ধু মহলে সবাই জানে। এ কারনে বিকালে আমার মোবাইল সাউন্ড বন্ধ করা লাগে না,ঘুমাই তাই কেউ ফোনও দেয় না।
আজ দুপুর থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। ঠান্ডা আবহাওয়া শান্তিতে ঘুমিয়েছি। পাশের রুমের শহীদুল্লাহ আমার রুমে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তুলে-"কিরে ঘুমাইতাছছ নাকি?"
আমি বললাম- না ঘুমাই না ফুটবল খেলি। কেন কি দরকার?
শহীদুল্লাহ-না এমনি আইলাম,মনে করছি তুই ঘুমাইতাছছ। ঠিক আছে ঘুমা।
(আমারে ঘুম থেকে তুইলা কি জিগান লাগবে ঘুমাই কি না! শালা)
***আমার ক্লাসমেটের মধ্যে আশিকের অন্য রকম প্রতিভা। যে কোন মেয়েকে দু'এক দিনের মধ্যেই পটিয়ে ফেলে। একারনে তাকে আমরা প্লেবয় ডাকি। আমাদের মোবাইল নাম্বারের চেয়ে আশিকের মোবাইলে মেয়েদের নাম্বারই বেশি থাকে। অন্যদিকে দেলোয়ার হল মিটমিটে শয়তান।
একদিন ক্লাস বন্ধ থাকায় এই দুইজন সহ আরও পাঁচ-ছয় জন মিলে আজব এক কাজে মেতেছে। কাজটা হলো- আশিক মেয়েদের মোবাইল নাম্বার দেয়, আর দেলোয়ার সেই নাম্বারে কল করে লাউড স্পিকারে জিজ্ঞেস করে-"আপা কিছু মনে করবেন না, আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, আপনি দাঁড়ায়ে নাকি বসে প্রস্রাব করেন। ' সাধারনত এরকম প্রশ্নে মেয়েরা প্রথমেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়,কি বলবে বুঝতে পারে না,ম ম ম করতে থাকে। এটাই এদের মজা। এভাবে কয়েক জন মেয়েকে বলার পর এদের সাথে এসে জুটেছে নিজেকে সর্বদা স্মার্ট দাবী করা নটরডেম থেকে আসা সাজিদ।
(বুঝলাম না নটরডেম থেকে আসা পোলাপান সবসময় নিজেরে এলিট,স্মার্ট ভাবে কেন!!!) সাজিদ তো খুবই মজা পাইছে। দেলোয়াররে কয়- "আমি কমু, আমি কমু। " দেলোয়ারে করছে কি- আগেই বলা হইছে এমন একটা মেয়েকে আবার কল দিয়া লাউড স্পিকার অন করে সাজিদ রে বলতে দিছে।
সাজিদ - "আপা কিছু মনে করবেন না, আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, আপনি দাঁড়ায়ে নাকি বসে প্রস্রাব করেন। "
মেয়েতো আগেই একই নাম্বার থেকে একই প্রশ্ন শুনেছে,সেহেতু ঝটপট উত্তর-"শয়তান,তোর মুখে করি।
"
তারপর সাজিদের মুখটা নাকি দেখার মত হয়েছিলো।
***দ্রুত সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ......আর কয়েক মাস পরেইচ ছয় বছর ধরে থাকা এই হোস্টেলটা শুধুই স্মৃতি হয়ে যাবে। ব্যস্ততার খাতিরে আমরা ভুলে যাব কোন এক বিকেলে এভাবেই আনন্দ-বেদনায় ভেসেছিলাম। অচেনা ফ্যাকাসে হয়ে যাবে আমাদের সোনালী সময়ের চেনা মুখ গুলো।
হয়ত হঠাৎ করে চাকরি সূত্রে দেখা হয়ে যাবে কারও সাথে, ক্ষনিকের জন্য মনে পরে যাবে টিভি রুম প্রিমিয়ার লিগ, আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল মিছিলের মারামারি, গভীর রাতে হোটেলে খেতে যাওয়া...... যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস বন্ধুরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।