বাসায় ঢুকেই ধাক্কা খেলাম। ছোট মামা বসে আছে। খুবই শান্ত ভঙ্গীতে। হাতে সিগারেট। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বাসায় এলে তিনি সিগারেট ধরান।
আগে সাহস পেতেন না।
‘কি রে শাওন, এখন আসার সময় হলো?’
চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন ছোট মামা।
উত্তর দিলাম না, কাচুমাচু ভঙ্গীতে হাসলাম।
তারপর দ্রুত ভেতরের রুমে ঢুকে গেলাম। এখন আমি নিরাপদ।
মা রান্নাঘরে। ছোট ভাইয়ের জন্য চা বানাচ্ছে। বর্ষা পাশের ঘরে বসে তারস্বরে পড়ছে। আগামী বছর ওর এসএসসি পরীক্ষা। জিপিএ ফাইভ না পেলে না কি আত্মহত্যা করবে।
এসব যখন বলে তখন আমার হাসি পায়। আত্মহত্যা এতো সোজা! চাইলেই করা যায়! আমি করতে পারলাম কই!
মাথার উপর সিলিং ফ্যানটা ঘটঘট করে ঘুরছে, তাতে বৃথা শব্দ উৎপন্ন করা ছাড়া আর কোন কাজ হচ্ছে না যদিও। মামার হাতে সিগারেট দেখে সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মা কখন এসে পড়ে তার ঠিক নেই। ছোট ভাইয়ের জন্য চা বানিয়েছে যখন তখন আমার ভাগেও এক কাপ পড়বে।
জানালাটা খুলে দিলাম। বাতাসের নাম গন্ধ নেই। শার্ট খুলে বিছানার উপর বসলাম। টপটপ করে ঘামছি। যদিও পরিশ্রম হয় এমন কোন কাজ করি নি আমি।
দরজায় মা এসে দাঁড়িয়েছে। হাতে চায়ের কাপ।
‘চা খেয়ে কাপড় বদলে মামার সামনে যা, কি জানি বলবে তোকে,’ ফিসফিস করে বললেন মা যেন ছোট মামা ঐ ঘর থেকে শুনে না ফেলে।
চায়ের কাপটা নিয়ে চুমুক দিলাম। মা চলে গেলেন।
ভাইদের কেউ আসলে তাকে খুব উৎফুল্ল দেখায়, কেন সেটা আজো বের করতে পারি নি।
হ্যাঙ্গার থেকে ভালো একটা শার্ট পরে নিলাম। মামা কোন সিরিয়াস ব্যাপারে কথা বলবেন, কাজেই আমারও সেজেগুজে সিরিয়াস ভঙ্গীতে যাওয়া উচিত।
পাশের রুম থেকে বৃষ্টির তারস্বরে পড়ার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, ভালো লাগছে শুনতে। এই বাড়িতে ওর কারনেই বোধহয় আমরা সবাই বেঁচে আছি।
ছোট মামার রুমে যাওয়ার আগে বলে নিই, আমার আরেকটা ভাইও আছে, নাম বাদল। বাবা বৃষ্টি কিংবা বর্ষাকাল খুব পছন্দ করতেন। চেয়েছিলেন প্রথম সন্তান মেয়ে হোক, নাম রাখবেন বর্ষা। হলাম আমি। নাম দিলেন শাওন।
এরপর নিশ্চিত ছিলেন মেয়ে হবে, হলো আরেক অনাকাংখিত পুত্রসন্তান, তার নাম রাখলেন বাদল। এরপর হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারপর হঠাৎ শুনলাম আমার বোন হবে, ভালো লাগলো শুনে। সন্তানের লিংগ জানার পদ্ধতি ততোদিনে আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। বাবার এতোদিনের আশা পূর্ন হচ্ছে।
মায়ের পেটে থাকতেই ওর নাম তাই আমরা জেনে গেলাম। ও হচ্ছে বৃষ্টি।
রুম ঢোকার মুখে একটু দাঁড়ালাম। ছোট মামা কি বলবেন ভাবার চেষ্টা করছি।
‘তুই সারাদিন ঘুরে বেড়াস কি মনে করে? তোর বাবা কি জমিদারি রেখে গেছে?’
‘জ্বি না।
’
‘তোর কি কোনদিন আক্কেল হবে না। ’
নিরুত্তর থাকতে হবে।
‘বাচ্চু ভাইয়ের ফার্মেসীতে ঢুকিয়ে দেবো? কাজ করবি?’
এই সময় মায়ের দিকে চোরা চোখে তাকাবো, যেন তিনি আমাকে উদ্ধার করেন এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে।
‘ঐ সব কাজ শাওন পারবে না। কোন অফিসে ঢুকিয়ে দেয়া যায় কি না দ্যাখ,’ মা বলবে।
‘তোমার প্রশ্রয়েই তো এই অবস্থা। কোন সিভি আছে, বায়োডাটা?’
নিরুত্তর থাকতে হবে, তাহলেই মামা বুঝে যাবে উত্তরটা কি।
‘কালই বায়োডাটা বানাবি, তিন কপি। এক কপি আমার দোকানে রেখে যাবি, পারবি না?’
হ্যা-সূচক মাথা নাড়াবো।
‘বুবু, বাদল কই?’
মা অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাবেন।
আমি মেঝের দিকে তাকাবো। পাশের রুমে বৃষ্টির তারস্বরে পড়া থেমে যাবে। বাদল কই আমরা কেউ জানি না।
অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম, এতোক্ষন যেসব কথা ভাবছিলাম সেরকম কোন কথা নাও বলতে পারেন মামা।
পর্দা ঠেলে রুমে ঢুকলাম।
পুরো রুম সিগারেটের ধোঁয়ায় অন্ধকার, মা সিগারেটের গন্ধ মোটেও সহ্য করতে পারেন না, তিনিও নির্বিকার বসে আছেন।
‘শাওন,’ গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন মামা। ‘তোর মা’র সাথে কথা হয়েছে, তুই শুনে নিস। ’
মায়ের দিকে তাকালাম। মা হাসি হাসি ভঙ্গীতে আশ্বস্ত করলেন খারাপ কিছু নয়।
‘ঠিক আছে,’ কোনমতে বললাম আমি।
‘কাল থেকে আর পড়াতে যাওয়ার দরকার নেই,’ মামা বললেন।
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো আমার। ওটাই আমার একমাত্র রোজগার। কি এমন হয়েছে যে আমি আর পড়াতে যেতে পারবো না।
ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে তো ভালোই রেজাল্ট করেছে।
================xxxxxx+++++++++++++++
"লেখার ধরন কি চেনা চেনা লাগে?" ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।