ব্যাঘ্র যুগে শুধু মৃত হরিণীর মাংস পাওয়া যায় (লেখায় মৃদু হাসির ট্যাগ প্রযোজ্য)
এমনকি বিজ্ঞানীরাও রসিকতা করেন! লেখার মত কিছু পাচ্ছি না, আর এমন অবস্থায় বরাবরই যা করে থাকি - মন হালকা করে হাসার উপকরণ খুঁজে বের করলাম। বিখ্যাত কিছু রসময় ঘটনা, কমন পড়বে না প্রায় সুনিশ্চিত!
১. বোল্টজম্যান (অস্ট্রিয়ান ফিজিসিস্ট, ১৮৪৪-১৯০৬) যখন আদর্শ গ্যাসের ওপর লেকচার দিতেন, তখন খুব ক্যাজুয়ালি একের পর এক জটিল সমীকরণ বলে যেতেন। এতে ছাত্রদের খুব সমস্যা হত। এক ছাত্র একদিন তার কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ করল এবং সমীকরণগুলো বোর্ডে লিখে লিখে বোঝাবার জন্য অনুরোধ করল। তিনি রাজি হলেন।
পরেরদিন লেকচার। বোল্টজম্যান শুরু করলেন, জেন্টলমেন, আমরা যদি বয়েলের সূত্র আর চার্লসের সূত্র কম্বাইন করি, তাহলে আমরা পাই, pv= p\sub 0 v\sub 0 (1 + a t). কিন্তু আমরা জানি \sub a S \sup b = f(x) dx x (a), অতএব, pv=RT and \sub V S f(x,y,z) dV = 0. সূত্রটা এতই সোজা যেন 1+1=2। সেই মুহূর্তে বোল্টজম্যানের ছাত্রের অভিযোগ মনে হল, তিনি বোর্ডে লিখলেন '1+1=2'. তারপর আগের মতই লেকচার চালিয়ে যেতে লাগলেন!
২. ডারউইনের আত্মজীবনী থেকে কিছু 'ইন্টারেস্টিং' অংশ -
একদিন একটা বুড়ো বার্ক গাছের বাকল উঠানোর সময় আমি সেখানে অতি দুর্লভ প্রজাতির দুটো গুবরে পোকা দেখতে পাই। এগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন মনে করে আমি দুই হাতে দুটাকে ধরলাম। কিন্তু তখনি আরেকটা নতুন প্রজাতির গুবরে পোকা দেখতে পেলাম, যা ছেড়ে দেওয়া যে কোন জীববিজ্ঞানীর পক্ষে অপরাধ হিসেবে গন্য হবে।
তাই অনন্যোপায় হয়ে আমি আমার ডান হাতের পোকাকে মুখে পুরে নিলাম এবং ঐ নতুন পোকাকে হাত দিয়ে ধরে ফেললাম। দুর্ভাগ্যক্রমে, মুখের পোকাটি রাগান্বিত হয়ে আমার গলায় গরম বিষাক্ত গ্যাসীয় তরল ছেড়ে দেয়। এর ফলে আমি সাময়িক প্যারালাইজড হয়ে পড়ি। এই সুযোগে তিনটি গুবরে পোকাই পালিয়ে যায়।
তাই এর পর থেকে আমি সর্বদা নিজের সাথে পোকা ধরার জাল রেখে থাকি।
৩. জীববিজ্ঞানী উইলিয়াম বাকল্যান্ড সবকিছুই চেখে দেখার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। একবার ইতালিতে ঘুরতে গিয়ে তিনি এক বিখ্যাত চার্চের নাম শুনলেন। এই চার্চের মাজেজা হল, এক সেইন্ট চার্চের এক স্থানে মারা যান। তার পর থেকে প্রতিদিন ঐ স্থানে তাজা রক্তের দাগ দেখা যায়। মুছে ফেললেও পরেরদিন আবার সেই দাগ ঠিকই উদয় হয়।
এই দাগ দেখার জন্য ইতালির কোণা কোণা থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ এসে জড় হত।
বাকল্যান্ড একদিন গাইডকে নিয়ে চার্চে গেলেন। রক্তের দাগের সামনে দাঁড়ালেন। তারপর গাইডের বিস্মিত দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে নির্বিকার মুখে ঐ রক্ত চাটলেন, তারপর আবার দাঁড়িয়ে জানালেন, 'এইটা রক্ত না, বরঞ্চ বাদুড়ের মূত্র। প্রতিদিন রাতে বাদুড় এসে এখানে মূত্রত্যাগ করে, সেটা সকালে রক্তের দাগ বলে মনে হয়।
'
সত্যিই এই মহামানব সবই টেস্ট করতেন দেখা যায়!
৪. উইনার (গণিতবিদ, ১৮৯৪-১৯৬৪) খুব ভুলোমনা লোক ছিলেন। তিনি সপরিবারে ক্যামব্রিজে থাকতেন। একবার উইনারের পরিবার ক্যামব্রিজ থেকে আরেকস্থানে বাসস্থান বদল করল। তার স্ত্রী উইনারের স্বভাব সম্পর্কে জানতেন, তাই পইপই করে তাঁকে বারবার বলে দিলেন এবং নতুন বাড়ির ঠিকানা কাগজে লিখে টেপ দিয়ে বুকপকেটে লাগিয়ে দিলেন। কর্মস্থলে গিয়ে কোন না কোনভাবে উইনার সেই কাগজও হারিয়ে ফেললেন এবং দিনের শেষে পুরনো বাড়িতেই চলে গেলেন।
বাড়ির সামনে গিয়ে তার শিফটিং করার কথা মনে হল। কিন্তু নতুন বাড়ি কোথায় তা সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই! কি করা যায়? হঠাৎ তিনি আইডিয়া পেলেন। বাড়ির পাশে একটা ছোট মেয়ে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, 'এক্সকিউজ মি, তুমি হয়তো আমাকে চেন, আমি নরবার্ট উইনার। আমরা অন্য একটা বাড়িতে আজকে মুভ করেছি।
তুমি কি জান সেটা কোথায়?
ছোট মেয়েটা ঘাড় দুলিয়ে বলল, হ্যাঁ বাবা, মা জানত তুমি ভুলে যাবে।
৫. প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সংস্থা, একাদেমি অফ সায়েন্সেস, একবার এক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রথম বক্তৃতা দেন কৃষিতত্ত্ববিদ লাইসেনকো। ইনি ছিলেন ক্রিয়েটিভ ডারউইনিজমের প্রবক্তা। তো বক্তৃতায় লাইসেনকো বংশগতভাবে প্রাপ্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর জবরদস্ত একটা ভাষণ দিলেন।
তার বক্তৃতা শেষে বিখ্যাত ফিজিসিস্ট ল্যান্ডাউ জিজ্ঞেস করলেন, 'তাহলে আপনি বলছেন, যদি আমরা একটা গরুর এক কান কেটে দেই, তারপর ঐ গরুর বাচ্চার কান কাটি, তারপর ঐ গরুর বাচ্চার বাচ্চার কান কাটি, এবং এইভাবে চালাতে থাকি, তাহলে একটা না একটা সময়ে কান কাটা গরু জন্ম নেওয়া শুরু করবে?
লাইসেনকো গম্ভীর হয়ে বললেন, 'হু, ঠিক তাই। '
-ভাল কথা। তাহলে ব্যাখ্যা করেন, এখনো কুমারি মেয়ে কেমন করে জন্ম নেয়?
৬. অস্কার ওয়াইল্ড ট্রেনের এক কামরায় বসেছেন। তার বিপরীত দিকে দুই মহিলা বসেছে, এবং তারা জানালা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বেশ তর্কাতর্কি শুরু করেছেন। রেফারি ভূমিকা পালন করছে কন্ডাক্টর।
প্রথমজন বলছেন, 'যদি জানালা খোলা থাকে, তাহলে নির্ঘাত নিমোনিয়া হয়ে আমি মরে যাব। '
দ্বিতীয়জন বলছেন, 'জানালা যদি বন্ধ থাকে, আমি নিশ্চিত দম আটকে মরব। '
মধ্যে থেকে কন্ডাক্টর পড়েছে ফ্যাসাদে। একটা সময় অস্কার বিরক্ত হয়ে বুদ্ধি দিলেন, 'কন্ডাক্টর, প্রথমে জানালা খুলে দাও। একটা মরবে।
তারপর জানালা আটকে দাও। আরেকটা মরবে। তখন জানালা শেষবারের মত খুলে মরা দুটোকে বাইরে ফেলে দাও। ব্যাস, শান্তি আর শান্তি। '
৭. আলেক্সান্ডার ইমানুয়েল (জীববিজ্ঞানী, ১৮৩৫-১৯১০) একবার ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করছিলেন।
তার গবেষণার বিষয়বস্তু - একটা ব্যাঙ সর্বোচ্চ কতদূর লাফাতে পারে।
তো তিনি একটা ব্যাঙকে নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে বললেন, 'ব্যাঙ, লাফ দে। ' ব্যাঙটা লাফাল। মেপে দেখলেন ১ ফুট। পরীক্ষণ খাতায় লিখলেন, 'চার পা বিশিষ্ট ব্যাঙ - ১ ফুট লাফায়।
'
এবার ব্যাঙের এক পা কেটে দিয়ে আবার বললেন, 'ব্যাঙ, লাফ দে'। ব্যাঙ লাফাল, দূরত্ব মেপে খাতায় লিখলেন, 'তিন পা বিশিষ্ট ব্যাঙ - ১০ ইঞ্চি লাফায়। '
এবার দ্বিতীয় পা কেটে ফেললেন বিজ্ঞানী। 'লাফ দে, ব্যাঙ। ' ব্যাঙ লাফাল, তিনি খাতায় লিখলেন, 'দুই পা বিশিষ্ট ব্যাঙ - ৭ ইঞ্চি লাফায়।
'
কর্তন প্রক্রিয়া চলতে লাগল। এবারেও ব্যাঙের কানের কাছে অনেক চিল্লাচিল্লির পর এক পা নিয়ে ব্যাঙটা কোনোমতে লাফাল। বিজ্ঞানী খাতায় লিখলেন, 'এক পা বিশিষ্ট ব্যাঙ - ৩ ইঞ্চি লাফায়। '
এবারে ইমানুয়েল ব্যাঙের সর্বশেষ পা-টাও কেটে ফেললেন। নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে তাগাদা দিলেন, 'লাফ দে ব্যাঙ।
'
ব্যাঙ তো নট নড়ন-চড়ন।
-'লাফা ব্যাটা লাফা!'
কোন নড়াচড়া না করে ব্যাঙটা নির্জীব হয়ে পড়েই রইল, নড়ল না।
বিজ্ঞানী রেগেমেগে ব্যাঙের কানের কাছে মুখ নিয়ে হুমকি দিলেন, 'না লাফালে মেরে ফেলব একেবারে। লাফ দে বলছি!'
কয়েক মিনিট ধরে চলা বিজ্ঞানীর তুমুল তর্জনগর্জন-বকাবকিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে একইভাবে পড়ে রইল ব্যাঙটা। হতাশ হয়ে ইমানুয়েল হাল ছেড়ে দিলেন, অবশেষে খাতায় লিখলেন, 'পা হীন ব্যাঙ - কানে শোনে না'।
৮. একদিন প্রোফেসর ব্রুস আলবার্টস (জীববিজ্ঞানী, ১৯৩৮-২০১৩) ক্লাসের শুরুতে আগের দিনের পড়া জিজ্ঞেস করছিলেন। তিনি সামনের দিকে বসা এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, 'মিস সোফি, তুমি কি বলতে পার, মানব দেহের কোন অংশ উত্তেজিত হলে দশগুণ বড় হয়ে যায়?
সোফি মেয়েটার গাল লাল হয়ে গেল, উত্তর না দিয়ে মুখ ঢেকে সে ফিকফিক করে হাসতে লাগল।
প্রোফেসর বিরক্ত মুখে বললেন, 'তুমি বসো। মিস স্মিথ, তুমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?
-'ইয়েস প্রোফেসর। জিনিসটা চোখের মণি।
'
-'ধন্যবাদ। তুমি বসো। মিস সোফি, তুমি আবার একটু দাঁড়াবে প্লিজ?'
মেয়েটা অপরাধী মুখে দাঁড়াল। আলবার্টস তার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, 'তোমাকে আমি তিনটা কথা বলব।
প্রথমতঃ, তুমি তোমার হোমওয়ার্ক কর নি
দ্বিতীয়তঃ, তুমি একজন অত্যন্ত নোংরা মানসিকতার মানুষ,
তৃতীয়তঃ, তোমার ভবিষ্যৎ বিবাহ জীবন খুবই হতাশাপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
'
৯. উইলিয়াম ব্র্যাবাণ্ট ও এডগার আদ্রিয়ান - দুই পুরনো বন্ধু কথা বলছেন এক পার্কে বসে। এডগার বলছেন, 'ব্র্যাবান্ট, তোমাকে বেশ দেখাচ্ছে তো! অনেক তরুণ মনে হচ্ছে। ' বৃদ্ধ ব্র্যাবান্ট এই শুনে খুশি হয়ে বললেন, 'তাই হবে, আমি ডায়েট করি তো! জানো, এই গতকাল এক কলেজে পড়া মেয়ে আমাকে প্রস্তাব দিল। '
-'কি প্রস্তাব?'
-'বলল, সে নাকি আমাকে ডেট করতে চায়। কিন্তু সত্যি বলতে কি জানো, কেমন যেন অদ্ভুতভাবে কথাটা বলল, বুঝলাম না।
'
আদ্রিয়ান হেসে বললেন, 'বৎস, এখনকার মেয়েরা অনেক এগিয়েছে, বুঝেছ? তারা সরাসরি প্রস্তাব দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। '
-'উঁহু, সেটা অদ্ভুত লাগে নি। অন্য কিছু। '
-'তাহলে হয়তো তোমার সাথে মেয়েটার বাপের চেহারার মিল আছে। তোমাকে দেখে বাপের কথা মনে পড়ে গেছে, তাই প্রস্তাব দিয়েছে।
'
-'আহহা, তাও না। মানে, ডেট করবে ভালো কথা, কিন্তু তার সাথে কার্বন ১৪ এর সম্পর্কটা কি?'
যারা গল্পের হাসিটা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা এখানে যান Click This Link মর্মার্থ বুঝতে পারবেন আশা করি।
১০. যুবককালে এডগার অ্যালান পো আর্মিতে ঢুকেছিলেন। একবার কুচকাওয়াজ করতে গিয়ে প্যারেড মাস্টারের ঝাড়ি খান, তিনি সাদা গ্লাভ না পরে হলুদ গ্লাভ পরেছিলেন বলে। ঝাড়ি খেয়ে পো ভীষণ খেপে যান, কিন্তু কিছু না বলে তিনি প্যারেডের নিয়ম-কানুনের বইটা প্যারেড মাস্টারের কাছ থেকে চেয়ে নেন।
পরের দিন পো সব নিয়ম কানুন মেনে প্যারেড গ্রাউন্ডে এলেন, প্যারেড মাস্টারকে কেতাদুরস্ত স্যালুট ঠুকলেন। তবুও আসা মাত্রই তাঁকে আর্মি থেকে বহিস্কার করা হল, কারণ দেখানো হল 'কর্তব্য পালনে অপারগতা ও অমার্জিত আচরণ'।
তো কি করেছিলেন পো?
তিনি পিঠে রাইফেল ঠিকমতই ঝুলিয়েছিলেন। হাতে সাদা গ্লাভ, কোমরে সাদা বেল্ট ও তলোয়ার ঠিকই পরেছিলেন। কিন্তু সমস্যা হল, ঠিক এটুকুই পরেছিলেন।
এসব ছাড়া তার শরীরে একটা সুতোও ছিল না।
**প্রথম পার্ট - Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।