যুক্তরাজ্যে পালিয়ে আছেন দাপুটে হারিছ চৌধুরী
নেসারুল হক খোকন
হারিছ চৌধুরী। বহুল আলোচিত একটি নাম। তিনি আর কেউ নন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ পদটিতে ছিলেন। ওই সময় বিএনপি সরকারের প্রত্যেকের কাছে তিনি ছিলেন বিরাট ক্ষমতার এক মহীরুহ।
দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি শুধু নিজেই ক্ষমতার ব্যবহার করতেন না, সে সময় তার নামেই অনেক কিছু হয়ে যেত। দলের মধ্যে তার পক্ষে ও বিপক্ষে নানা মত থাকলেও বাস্তবতা ছিল, তিনি দলীয় প্রধানের রাজনৈতিক সচিব। তাই তার ক্ষমতার পরিধি কেউ পরিমাপ করতে চাইতেন না। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ বিশাল মানুষটি হঠাৎ ওয়ান-ইলেভেনের প্রথম প্রহরে হাওয়া হয়ে গেলেন। ঢাকার গুলশানের আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ি, শখের হরিণ, বিষয়-সম্পত্তি সবকিছু ফেলে পালিয়েছেন তিনি।
এখন পর্যন্ত নিরুদ্দেশ। ঘরে-বাইরে কেউ জানে না তার খবর। প্রায় ছয় বছর তিনি দেশ ছাড়া। দেশে নেই স্ত্রী-সন্তানরাও। বিদেশে তার অবস্থান নিয়ে গুজবের ডালপালারও শেষ নেই।
কেউ বলেন লন্ডনে, কেউ বলতে চান অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইরানে। নিজ জেলা সিলেটের কানাইঘাটের অনেকের দাবি, তিনি নানার বাড়ি ভারতের করিমগঞ্জেই আছেন। তাকে দেখে এখন আর কেউ চিনতেই পারবেন না। মুখভর্তি লম্বা দাড়ি, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু প্রশ্ন হলÑ রাজনৈতিক অঙ্গনের এ বিশাল মানুষটি আসলে কোথায় আছেন? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই যুগান্তরের এ অনুসন্ধান।
টানা ২২ দিনের অনুসন্ধানে দেশ-বিদেশের নানা সূত্রে তথ্য-তালাশ করে একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তিনি লন্ডনের ছোট্ট শহর হলওয়েতে আছেন। সঙ্গে আছেন স্ত্রী ও দু’সন্তান। কিন্তু সে জীবন বড় কষ্টের ও আÍগোপনের। এ খবর তার পরিবারের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সদস্য জানেন। নিয়মিত যোগাযোগও আছে তাদের।
কিন্তু রহস্যজনক কারণে তারা যেন মৃত্যুপণ করেছেনÑ সে খবর কাউকেই বলা যাবে না।
হারিছ চৌধুরীর পালিয়ে থাকার স্থান সম্পর্কে গোপনীয়তা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তার পরিবারের সব সদস্য। কেউ যাতে তার আÍগোপনে থাকার ঠিকানা ফাঁস না করতে পারে সে জন্য পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের ইস্পাতকঠিন ঐক্য বজায় রাখার চেষ্টা চলে সর্বক্ষণ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, সবাই যেন তথ্য গোপন রাখার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। অতি আপনজন হলেও এক ভাই আর এক ভাইয়ের কিংবা বোনের টেলিফোন নম্বর পর্যন্ত দিতে চান না।
খুঁজতে খুঁজতে বাসায় গিয়ে হাজির হলেও ভেতর থেকে বলে দেয়া হয়, তিনি বাসায় নেই। সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের এড়িয়ে চলতে নানা সতর্কতার যেন শেষ নেই। যে ভুয়া সিমে একবার কথা বলেন, পরের বার তা ব্যবহার করেন না। এমন তথ্য জানিয়েছেন হারিছ চৌধুরীর চাচাত ভাই আশিক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনেরা। তবে হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে তার যে যোগাযোগ আছে এবং তিনিই যে যোগাযোগ রক্ষা করার প্রধান মাধ্যম, সে প্রমাণ তিনি নিজেই দিয়েছেন।
যুগান্তর প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে আশিক চৌধুরী সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় অকপটে বলে ফেলেন, ‘তাইলে একটা কতা কইতাম পারি, স্ত্রী-সন্তান নিয়া তাইন ভালা আছইন’ (তবে একটা কথা বলতে পারি, তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাল আছেন)। এমনি নানা প্রতিকূলতার মধ্যে হারিছ চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়াসহ তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একটানা ২২ দিন যুগান্তরের পক্ষ থেকে ঢাকা, সিলেট, লন্ডন, ভারত, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে নানা মাধ্যমে তথ্য তালাশ করা হয়। সরেজমিন ও টেলিফোন সূত্রে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যে বেরিয়ে এসেছে এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনীতিক হারিছ চৌধুরী ৬ বছরের পলাতক জীবনের নানা কাহিনী।
যেভাবে পালালেন হারিছ চৌধুরী : ২০০৭ সাল। বেসামাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
একদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, অন্যদিকে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। সংঘাতময় রাজনীতি। রাজপথে অবিরাম রক্তপাত। পিটিয়ে প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলার মতো নির্মম প্রতিযোগিতা। এমনি এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ওই বছরের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়।
সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। ঢাকা শহরে সান্ধ্যআইন জারি করা হয়। রাত থেকেই শুরু হয় ধরপাকড়। এ অভিযানে রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা, দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্ত, এমনকি বড় বড় ব্যবসায়ী পর্যন্ত গ্রেফতার হন। এ অভিযান চলে টানা প্রায় তিন মাস।
সেনাসমর্থিত সরকারের নানামুখী ঝটিকা অভিযান শুরু হলে হারিছ চৌধুরী দেশের মধ্যে আÍগোপনে চলে যান। কিন্তু যখন দুদকের তালিকায় তার নাম এসে যায়, তখন তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
দিনটি ছিল ২১ জানুয়ারি। প্রথমে সিদ্ধান্ত নেন পালিয়ে ভারতের করিমগঞ্জে নানার বাড়ি যাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতের আঁধারে জš§ভূমি কানাইঘাট ছাড়বেন।
এর আগে ওইদিন কিছুটা ব্যস্ত সময় পার করেন। ছুটে যান গ্রামের বাড়ি কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে তার মরহুম পিতা শফিকুল হক চৌধুরীর কবর জিয়ারত করতে। সন্ধ্যার মধ্যে নিজেকে গুছিয়ে নেন। মোবাইল ফোন সেটটি বন্ধ করে দেবেন বলে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে শেষবারের মতো ঢাকার বাসায় থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পারের কাণ্ডারি ছিলেন তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় দিঘিরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মুমিন চৌধুরী।
নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়া বিপদমুক্ত করতে তিনি মুমিন চৌধুরীর নম্বরবিহীন একটি প্রাইভেট কার (বর্তমানে অন্যের মালিকানাধীন) কল করে দর্পনগরের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর সেই প্রাইভেট কার নিজেই ড্রাইভ করে রাতেই নিকটবর্তী জকিগঞ্জ সীমান্তে (ভারতের ওপারে করিমগঞ্জ সীমান্ত) যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। বিশ্বস্ত সোর্স হিসেবে তাকে নিরাপদে ভারত সীমান্তে পৌঁছে দিতে জকিগঞ্জের উত্তরকুল পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরাও অপেক্ষা করছিলেন। অপরদিকে হারিছ চৌধুরীর আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন ভারতের করিমগঞ্জ সীমান্তে তারই মামত ভাই আফতাব উদ্দিন। করিমগঞ্জের প্রভাবশালী মুসলিম পরিবার হওয়ায় ভারত সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফ সদস্যরাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। রাত ১২টা। সীমান্তের কাছাকাছি কালীগঞ্জ বাজারে গিয়ে গাড়ি নিয়ে ঘর্মাক্ত দেহে হাজির হারিছ চৌধুরী। কিন্তু বিধি বাম। হঠাৎ শুরু হয়ে যায় প্রচণ্ড বেগে ঝড় আর বৃষ্টি।
কোন উপায়ান্তর না পেয়ে কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মানিকজোর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ককাই মিয়ার বাড়িতে রাতযাপন করেন। এরপর ওই দিন ফজরের নামাজের পর স্থানীয় শেওলা ব্রিজ পার হয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার শারহ পাড় গ্রামে ছোট ভাই সেলিম চৌধুরীর মামা শ্বশুর মতিন মিয়ার বাড়িতে অবস্থান নেন। গলায় গামছা আর মাথায় ক্যাপ পরে চালকের ছদ্মবেশ ধারণ করেন। এরপর শারহপাড় গ্রাম থেকে নিকটাÍীয়ের একটি পিকআপ নিজেই ড্রাইভ করে সিলেট শহরের শিবগঞ্জে যান এবং মতিন মিয়ার শহরের বাসায় ৪ দিন অবস্থান করেন। এরপর সুযোগ বুঝে গ্রেফতার এড়াতে সেই একই পিকআপ চালিয়ে ঢাকায় আসেন এবং শাহজানপুরে বড় বোন এখলাছুন নাহারের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
এখানে চার দিন অবস্থান করে কৌশলে গুলশানের বাসা থেকে পাসপোর্টসহ জরুরি কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেন। এরপর ২৯ জানুয়ারি রাতে ফের একই পন্থায় পিকআপ চালিয়ে ঢাকা থেকে জকিগঞ্জ সীমান্তে গিয়ে পৌঁছেন। পুলিশ, বিডিআর ও বিএসএফ’র সহায়তায় তিনি সীমান্তের ওপারে করিমগঞ্জে নানার বাড়ি গিয়ে হাজির হন। হারিছ চৌধুরীর পালিয়ে যাওয়ার পুরো ঘটনাটি অনেকটা বাংলা ছায়াছবির কাহিনীর মতো। কিছুটা অবাস্তব মনে হলেও চরম এ সত্য ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধিসহ তার কয়েকজন নিকটাÍীয়।
যাদের সঙ্গে এ নিয়ে যুগান্তর প্রতিবেদকের ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের কানাইঘাটের দর্পনগর গ্রাম ও সড়কের বাজারে বিস্তর আলাপ হয়।
হারিছ চৌধুরীর খবর জানেন যিনি : হারিছ চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রথমে ঢাকায় বিভিন্ন সূত্রে কথা বলা হয়। ঢাকা থেকে সিলেটে কয়েকজন নিকটাÍীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এড়িয়ে যান। ঢাকার কয়েকটি রাজনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করে জানায় যে, সিলেটের কানাইঘাটে তার একজন নিকটাÍীয় হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। সূত্র ধরে ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের কানাইঘাট গিয়ে হাজির হই।
সেখানে ৪ অক্টোবর টানা ১০ দিন অবস্থান করে হারিছ চৌধুরীর সঠিক অবস্থান এবং তার সঙ্গে সরাসরি মোবাইল ফোনে কথা বলার সব চেষ্টা করা হয়। সূত্র অনুযায়ী কানাইঘাটে তথ্য তালাশে নেমে পরে নিশ্চিত হয় যে, হারিছ চৌধুরীর চাচাত ভাই আশিক চৌধুরীই যোগাযোগ রক্ষা করার প্রধান মাধ্যম। তিনি জেলা বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কানাইঘাট উপজেলা চেয়াম্যান। বিভিন্ন সূত্রে কথা বলা ছাড়াও ওই ১০ দিনে সকাল-বিকাল-রাত আশিক চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ হয়। কখনও সরাসরি, আবার কখনও মোবাইল ফোনে।
হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে কথা না বলে কানাইঘাট ছাড়ছি না বুঝতে পেরে তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে দর্পনগর গ্রামে যেতে বলেন। রাত ৮টা। গ্রামের লোকজন নিয়ে তিনি শোরগোল কথা বললেন। যুগান্তর প্রতিবেদককে দেখেই গেস্টরুমে বসতে দেন এবং আশ্বাস দেন রাত ৯টায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবেন। আর কিছুক্ষণ পরেই হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে পারব।
সুখবরটি বলতে না পারার তর সইছিল না বলে ঢাকা অফিসকে অবহিত করি। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখার পর তিনি আসেন। এ সময় হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘তাইন কই আছইন আমি জানতাম না’ (তিনি কোথায় আছে আমি জানি না) বলে উত্তর দেন। তাইন ভাগিয়া যাওয়ার পর আর ফোন দিছইন না (পালিয়ে যাওয়ার পর ফোন দেননি)। এলাকার লোকজন বলছে, আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করউকা আমি জানি না’ (বিশ্বাস করেন আমি জানি না)।
তবে মাঝে মধ্যে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে তানজিম ও ছেলে নাইম চৌধুরী লন্ডন থেকে যোগাযোগ করেন বলে তিনি স্বীকার করেন। হারিছ চৌধুরীর ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কী কথা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেমন আছি এসব কথা জানতে ফোন করে। এছাড়া বিশেষ কোন প্রয়োজনে তারাই বলে দেয়, কী করতে হবে। ভাই হিসেবে তিনি (হারিছ) কোথায় আছেন, কেমন আছেন আপনার জানতে ইচ্ছা করে না? বা তানজিমের কাছে আপনি কখনো জানতে চাননি? এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক চৌধুরী বলেন, প্রতি মুহূর্তেই ইচ্ছা করে। কিন্তু জানি, যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না।
তাই এ ব্যাপারে কথা বলি না। কেন সম্ভব হবে না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছে অনেক বিষয়। কেমন আছেন তা তো জানতে পেরেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে মুখ ফসকে বলে ফেলেন, ‘ঝি, তাইন ভালা আছইন’ (তিনি ভালো আছেন)। ইটুকু বলতাম পারি, তাইন (তিনি) স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালা আছইন (স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালো আছেন)। তাহলে কী তিনি লন্ডনে? জানতে চাইলে আবারও তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেন।
এ কথার ফাঁকেই আশিক চৌধুরীকে নিজের মোবাইল দিয়ে একটু বলার সুযোগ করে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। বলা হয়, কথা বলে দিতে চেয়েছিলেন বলেই তো অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আছি। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি নন। এরপর অনেক অনুরোধের পর তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করে দেখি যোগাযোগ করা সম্ভব হয় কিনা। হারিছ চৌধুরীর মেয়ের মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ করে দেবেন বলে ইঙ্গিত দেন এই চেয়ারম্যান।
এ জন্য প্রতিবেদককে সময় দেয়া হয় ৩০ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে যা বললেন : ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ২টার দিকে সিলেট শহর থেকে দর্পনগরে অবস্থানরত আশিক চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে আবার যোগাযোগ করা হলে এই প্রদিবেদককে তিনি বলেন, ভাই অনেক কষ্টে মেয়ে তানজিমের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। কিন্তু সে কোন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। এ সময় বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে যুগান্তরের পক্ষ থেকে কয়েকটি লিখিত প্রশ্ন দিয়ে মেয়ের মাধ্যমে হারিছ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে তিনি রাজি হন। সে অনুযায়ী ৭টি প্রশ্ন লিখে দেয়া হয়।
কিন্তু ওইদিন রাতে তিনি মোবাইল ফোনে প্রতিবেদকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তার অপারগতার কথা প্রকাশ করে বলেন, মেয়ে তানজিম রাজি হয়নি। সে জানিয়েছে, এসব প্রশ্ন আব্বুকে দিলে তিনি রেগে যাবেন। তিনি কোন সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিতে চান না। এদিকে অপর একটি সূত্র থেকে হারিছ চৌধুরীর দু’জন নিকটাÍীয়ের ফোন কললিস্ট থেকে লন্ডনে বসবাসরত মেয়ে তানজিমের ব্যবহƒত সম্ভাব্য একটি মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়। ওই ফোনে কথা বলার সময় ঢাকা থেকে যুগান্তর প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
এরপর আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ছোট ভাই সেলিম চৌধুরী যা বললেন : হারিছ চৌধুরীর ছোট ভাই সেলিম চৌধুরী সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছে তান (হারিছ চৌধুরী) সম্পর্কে কোন খোঁজখবর নাই। আফনে বিশ্বাস করউকা ভাই তাইন পলাতক ওয়ার পর তাকি এখদিনও আমার আলাপ ওইছে না, আফনার যা দরকার বড় ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান’র (আশিক চৌধুরী) লগে মাতিলাউকা। আমি পানি আত লইয়া কছম কররাম, মরনর সময় পানি খাইতাম, আমার কাছে কুন ইনফরমেশন নাই। ’ পানি হাতে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করার সময় তিনি নিজেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত উল্লেখ করে বলেন, আমরা ৫ ভাই ছিলাম।
বড় ভাই (হারিছ) নিখোঁজ, আরেক ভাই (আবুল হাসনাত) গত বছর মারা যাওয়ার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। আমার এখন কিছুই মনে থাকে না। আমি সবকিছু ভুলে যাই। সর্বশেষ ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি হারিছ চৌধুরী যেদিন পালিয়ে যান সেদিন তার সঙ্গে থাকার কথা স্বীকার করেন। ওইদিনই হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে তার শেষ সাক্ষাৎ হয় বলে জানান।
কীভাবে পালিয়ে গেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার অতীত কিছুই মনে নেই। ইরানে অবস্থানরত হারিছ চৌধুরীর আরেক ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর টেলিফোন নম্বরটি চাওয়া হলে সেলিম চৌধুরী তার নম্বরটিও নেই বলে জানান। একপর্যায়ে তার এ কথা বিশ্বাস করতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থের দোহাই দেয়ার চেষ্টা করেন।
কথা বললেন না বড় বোনও : তিনদিন চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি হারিছ চৌধরীর বড় বোন এখলাছুন নাহার চৌধুরীর সঙ্গে। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন ঝামেলা এড়াতে তিনি গত এক বছর ধরে অপিরিচিত কোন ফোন কল রিসিভ করেন না। ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে হারিছ চৌধুরী বড় বোনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। অগত্যা ঠিকানা সংগ্রহ করে রাজধানীর উত্তর শাহজাজানপুরে তার নিজের ৩৯৫/১ সামসান কুঠির নামের পাঁচতলা বাড়িতে গিয়েও দেখা করা সম্ভব হয়নি। শনিবার সকালে বাড়ির গেটে গিয়ে প্রতিবেদক নিশ্চিত হন যে, এখলাছুন নাহার চৌধুরী ও তার স্বামী সামছুল হক দু’জনই বাড়িতে আছেন। পরিচয় দেয়ার পরও তারা বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতি দেননি।
এরপর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ল্যান্ড ফোনে কল করা হলে কলটি রিসিভ করেন এখলাছুন নাহার চৌধুরীর স্বামী সামছুল হক। এ সময় তিনি যুগান্তরের পরিচয় দিতেই সামছুল হক এখলাছুন নাহার চৌধুরীর স্বামী পরিচয় দিয়ে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘তাইন বাসাত না’ (স্ত্রী এখলাছুন নাহার বাড়িতে নেই)। কোথায় গেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাইন ভাই-বোন অনেকেউতো আছনইন, কুনানো গেছইন কইতাম পাররামনা (কোথায় গেছেন বলতে পারি না) বলেই সংযোগ কেটে দেন তিনি। এরপর কয়েকবার ফোন করা হলেও আর ফোন রিসিভ করা হয়নি। কয়েক মিনিট পর আবারও ফোন করা হলে ওপাশ থেকে লিটু নামে একজন নিজেকে এখলাছুন নাহার চৌধুরীর সহকারী পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি বাসায় নেই।
কখন আসবেন তাও জানি না বলেই সংযোগ কেটে দেন।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি কিছুই জানে না : লন্ডন বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মালেক যুগান্তরকে বলেন, এক সময় আমার সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর সম্পর্ক ভালো ছিল। তবে ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে তার সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ হয়নি। তিনি জানান, এক সময় লন্ডনে হারিছ চৌধুরীর ছেলেমেয়ের স্থানীয় অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছি। তবে বর্তমানে লন্ডনের কোন শহরে তার স্ত্রী-সন্তানরা বসবাস করছে তা জানি না।
এ প্রসঙ্গে আবদুল মালেক আরও বলেন, আমি জানতাম হারিছ চৌধুরীর মেয়ে হলওয়ে সিটিতে দুই রুমের একটি ভাড়া বাসায় স্বামীকে নিয়ে থাকতেন। দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকায় আর খোঁজ-খবর নেইনি।
এ প্রসঙ্গে বৃহত্তর সিলেট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি ব্যারিস্টার আতাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, হারিছ চৌধুরীর নাম শুনেছি; কিন্তু তার সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তিনি লন্ডনে আছেন কিনা তা তার জানা নেই।
ইন্টারপোল শাখায় তথ্য নেই : হারিছ চৌধুরীর সন্ধান জানতে পুলিশ সদর দফতরে অবস্থিত পুলিশের ইন্টারপোল শাখার এআইজি মাহবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে কোন তথ্য তার জানা নেই।
তবে এ বিষয়ে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে চাননি।
বিএনপিও জানে না : হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে কোন যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, আমার সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর দীর্ঘদিন কোন যোগাযোগ হয়নি। এমনকি আমার জানামতে হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির অন্য কোন নেতার যোগাযোগ হয়েছে বলেও শুনিনি। এর বেশি তিনি আর কোন মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে একইদিন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর থেকে হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ হয়নি।
দলের কেউ যোগাযোগ করেছে এমন আলোচনাও কখনও শুনিনি। হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার বিষয়ে বিএনপির ব্যাখ্যা জানতে চাইলে রিজভী বলেন, বিএনপি নেতাদের রাজনৈতিকভাবে দমন-পীড়ন করতে সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন মামলা দিচ্ছে। হারিছ চৌধুরীকেও একই উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়ানোর বিষয়টিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সরকারি কৌঁসুলির বক্তব্য : বিদ্যমান মামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চঞ্চল্যকর মামলা হল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা।
এ মামলায় পলাতক হারিছ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সরকার পক্ষের কৌঁসুলী অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, নিশ্চয়ই সরকার পদক্ষেপ নেবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন : বিভিন্ন মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ও সাজাপ্রাপ্ত হারিছ চৌধুরীকে সরকার দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে তার বিষয়েও একই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর বেশি কিছু নয়।
লন্ডনেই থাকতেন স্ত্রী জ্যোৎøা আরা : হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জ্যোৎøা আরা চৌধুরী ১৯৯৯ সাল থেকেই লন্ডনে বসবাস শুরু করেন। ছেলে নাইম চৌধুরী জনিকে স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে ভর্তি করার পর তার লেখাপড়া তদারকির জন্য লন্ডনে অবস্থ্না নেন তিনি।
২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে হারিছ চৌধুরী প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ হলে দেশে নিয়মিত বসবাস করলেও মাঝে-মধ্যে লন্ডনে যাতায়াত ছিল তার। বর্তমানে বার অ্যাট ল’ সম্পন্ন করে ছেলে নাইম চৌধুরী জনি নরওয়েভিত্তিক একটি তেল কোম্পানির লন্ডনে দায়িত্ব পালন করছেন। মেয়ে সামিরা তানজিম বাংলাদেশে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় বার অ্যাট ল’ সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনিও লন্ডনে অবস্থান করছেন। যুক্তরাজ্যে বিলাসবহুল একটি বাড়িরও মালিক হারিছের পরিবার।
লন্ডনের একটি সূত্র জানিয়েছে, হারিছ চৌধুরীর স্থাবর সম্পত্তির বেশিরভাগই তার ছেলে-মেয়ের নামে।
মোবাইলে জানা যায় : হারিছ চৌধুরীর তৃতীয় ভাই আবুল হাসনাত চৌধুরী সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১১ সালে হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ সময় ভাইয়ের জানাজায় হারিছ চৌধুরী বিদেশের অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি অংশ নেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি দীর্ঘক্ষণ কান্নাকাটি করেন।
এ সময় মোবাইল ফোনের স্পিকার ওপেন থাকায় উপস্থিত এলাকার মানুষও সেদিন হারিছ চৌধুরীর কান্নাকাটি শুনতে পান।
বাড়িটি এখন শুধুই স্মৃতি : ওয়ান-ইলেভেনের আগে কানাইঘাটের নিভৃত পল্লীর দর্পনগরে হারিছ চৌধুরীর যে বাড়ীটি ছিল বিভিন্ন স্তরের মানুষের পদচারণায় মুখর, আজ সেটি নীরব সাক্ষী। নিস্তব্ধ। দু’একজন কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই সাজানো ওই বাড়িটিতে। সময়ের ব্যবধান আর ক্ষমতার প্রভাবে বাড়িটি পরিণত হয়েছিল এক ‘মিনি টাউনে’।
সাংবাদিক পরিচয় দিলে বাড়ির কেউ কথা বলতে চাননি। সুরমা নদীর পাড়ে এই বাড়িটিতে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে ব্যাংক, ভূমি অফিস, পুলিশ ক্যাম্প, দাতব্য চিকিৎসালয়, পোস্ট অফিস, মিনি চিড়িয়াখানা, প্রাথমিক স্কুলসহ সব কিছুই ছিল। বাড়ির সামনে শানবাঁধানো দীঘি এখন শুধুই স্মৃতি। তিনি বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছিলেন বন্যপ্রাণীদের এক মিনি চিড়িয়াখানা। মায়া হরিণের মতো বিরল প্রজাতির প্রাণী তার চিড়িয়াখানায় স্থান পায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর হারিছ চৌধুরীর চিড়িয়াখানা থেকে ৭টি হরিণ উদ্ধার করে চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দেয়া হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর এ মামলায় বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ আদালত তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন।
পাঁচ মামলা ও কারাদণ্ড : হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে। দুদকের সম্পত্তির হিসাব না দেয়ার মামলায় ২০০৭ সালের ২২ মে তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত। এটাই ছিল হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রথম রায়।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির গাড়ি জালিয়াতির মামলায় ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর ৫৯ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ২২ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আদালত তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। এটাই মামলার সর্বশেষ রায়। ২০১১ সালের ৯ আগস্ট জিয়া চ্যারিটিবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়। বর্তমানে এই বৈধতা প্রশ্নে উচ্চ আদালতে শুনানি চলছে।
এ ছাড়া বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাক্ষ্যও চলছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা এ ব্যাপারে তৃতীয় দফা তদন্ত অব্যাহত রয়েছে ।
পারিবারিক পরিচিতি : হারিছ চৌধুরীর মরহুম পিতা শফিকুল হক চৌধুরী ছিলেন অধুনালুপ্ত থানা প্রশাসনের সার্কেল অফিসার (সিও)। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল ফেনীতে। মা সুরতুন্নেছা ছিলেন গৃহিণী।
৫ ভাই ৪ বোন। ভাইদের মধ্যে হারিছ চৌধুরীই বড়। মেজ ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরী পেশায় চিকিৎসক। ইরানের একটি সরকারি হাসপাতালে তিনি কর্মরত। তৃতীয় ভাই আবুল হাসনাত চৌধুরী সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
তিনি ২০১১ সালে হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। চতুর্থ ভাই সেলিম চৌধুরী স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন ঢাকায়। ৫ম ভাই কামাল চৌধুরী বর্তমানে সিলেটে। তিনি ব্যবসায়ী। ৪ বোনের মধ্যে সবার বড় এখলাতুন্নেসা চৌধুরী।
তিনি ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। স্থায়ীভাবে ঢাকায় উত্তর শাহজাহানপুরে বসবাস করছেন। পরবর্তী তিন বোন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছেন। মূলত বড় বোন ও ছোট ভাই সেলিম চৌধুরীই হারিছ চৌধুরীর বিষয়-সম্পত্তি তদারকি করছেন।
ছাত্র ও রাজনৈতিক জীবন : ঢাকার নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র হারিছ চৌধুরী শুরুতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সিলেটের জকিগঞ্জে একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন কিছুদিন। যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ভাই শেখ কামালের হাত ধরেই যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। পরে ৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যোগ দেন জাগদলে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি হারিছ চৌধুরীকে। একে একে সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতিসহ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তবে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হওয়ার পর তিনি অনেকটা আলাদিনের চেরাগের মতো ক্ষমতা হাতে পেয়ে যান। যার সুবাদে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নানা উপায়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তবে বিএনপির গত কাউন্সিলে তাকে কোন পদেই রাখা হয়নি। ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে তার ব্যয় করার মতো টাকা ছিল না।
এ প্রসঙ্গে কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, মনোনয়ন লাভের পর ঢাকা থেকে বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে মাঠে নেমেছিলেন। এরপর ’৯১ সালেও বিএনপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে দুই নির্বাচনেই তিনি পরাজিত হন।
দৈনিক যুগান্তর ** ঢাকা == ৮ অক্টোবর ২০১২ সোমবার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।