আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলছে দূর্গা পূজার প্রস্তুতি

আমি পেশায় সংবাদকর্মী। এর পাশাপাশি পড়াশুনাও করি। আর ফেসবুকে বসি, আরও অনেক কিছু করি। সব এখন মনেও নেই। দিনক্ষন গোনা বলতে গেলো এক প্রকার শুরুই হয়ে গেছে।

এখন অপেক্ষা কখন পুরোহিত ভক্তিমনে চন্ডি থেকে পাঠ করবেনÑ ‘যা দেবী সর্বেভূতেসু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমোঃ নমোঃ’। বছর ঘুরে আবার দুর্গতিনাশিনী দশভূজা দেবী দুর্গা আসছেন আমাদের মাঝে। শারদীয় দূর্গা পূজা হলেও এবার শরৎ পার করে হেমন্তে আসছেন মা। এতে অপেক্ষার প্রহর বেড়েছে। কিন্তু তাতে কি মা’র আগমনে আনন্দ তো আজ প্রতিটি হিন্দু ধর্মালম্বীদের ঘরে ঘরে।

আসছে ১৫ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবী আগমনের ঢামাঢোল। এবারে দেবী দূগা গজে (হাতি) মর্ত্যলোকে আসবেন এবং দোলায় (নৌকা) চড়ে আবারো কৈলাশ পর্বতে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন। দেবীর আগমনে এরই মধ্যে মন্দির ও ম-পে ম-পে চলছে জোর প্রস্তুতি। প্রতিমা শিল্পীরা এখন ব্যস্ত প্রতিমার গায়ে তুলির শেষ আঁচড় এঁকে দিতে। ব্যস্ত মায়ের ভক্তরাও।

ঘরদোর পরিস্কার আর নতুন পোশাক কিনতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সবাই। আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ২১ অক্টোবর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, ২৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়া শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে শেষ হবে এই বর্ণিল উৎসব। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাবে, এবার সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার ম-পে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যা গতবারের তুলনায় প্রায় ২ হাজার বেশি।

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির হিসাব মোতাবেক এ বছর ঢাকা মহানগরীতে ২০২টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে গতবারের তুলনায় এবার ৬টি বেশি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। থানাওয়ারি হিসেবে চকবাজারে ৫টি, লালবাগে ৫টি, হাজারীবাগে ৯টি, কোতয়ালী ২০টি, বংশাল ১টি, সূত্রাপুর ৩৫টি, গেন্ডারিয়া ১৪, কদমতলী ৭টি, শ্যামপুর ৬টি, ডেমরা ৯টি, যাত্রাবাড়ি ৮টি, সবুজবাগ, মুগদা ও শাজাহানপুরে ৭টি, মতিঝিলে ১টি, রামপুরায় ১টি, খিলাগাঁওয়ে ৩টি, বাড্ডায় ৯টি, ভাটারা ৪টি, গুলশান ও বনানীতে ৬টি, খিলক্ষেত ৩টি, তেজগাঁও ৫টি, শেরেবাংলা নগর ২টি, শাহবাগ ২টি, রমনা ১টি, ধানমন্ডি ১টি, মোহাম্মদপুর ৮টি, দারুসসালাম ৮টি, মিরপুর ১টি, শাহআলী ১টি, পল্লবী ১টি, কাফরুল ১টি, উত্তরখান ১টি, উত্তরা ২টি, বিমানবন্দর ১টি এবং তরুাগ থানায় ১টি করে পূজাম-প রয়েছে। শনিবার ও রোববার রাজধানীর বেশ কয়েকটি পূজা ম-প ঘুরে পূজার ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা গেছে। দেবীকে স্বাগত জানাতে সবখানেই এখন সাজ-সাজ রব।

মন্ডপে মন্ডপে মাটি আর খড়ের গন্ধ মিলেমিশে একাকার। কোথাও দেবীর হাতের আঙ্গুল বানানো হচ্ছে। কোথাও আবার পরম যতেœ শিল্পী তৈরী করছেন দেবীর মুখের ছাঁচ। নিরাভরণ দূর্গা প্রতিমা দিকে দৃষ্টি ফেললে মনে হচ্ছে শিল্পীর হাতের যাদুতে মহালয়ার আগেই প্রান পেয়েছে দেবী দূর্গা। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজা ম-পে এখনো রয়েছে গত বছরের প্রতিমা।

প্রথা অনুযায়ী, আগের বছরের প্রতিমা বিসর্জন করে ষষ্টীর দিন নতুন প্রতিমা উঠাবে ম-প কর্তৃপক্ষ। পূজা ম-পের সামনে খোলা শেডের নিচে নির্মাণ হচ্ছে প্রতিমা। প্রতিমা দেখার অনুমতি নেই, তারপরও উঁকি মেরে যা দেখা। আর তাতেই বোঝা গেলো, এবারো দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। কাঠামো নির্মান এরই মাঝে শেষ।

এখন বাকি রঙের ছোঁয়া দিতে। রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত প্রতিমাশিল্পী সুকুমার পাল এবারো এখানকার প্রতিমাটি নির্মাণ করছেন। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করে মাঝখানের চার বছর বারের বাদে প্রতি বছর এখানকার প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার আর শাঁখারীবাজার। ঢাকার সবচেয়ে জনবসতি ও ঘিঞ্জি এলাকা।

বেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী থাকেন এখানেই। শুধু পুরান ঢাকার নয়, নতুন ঢাকা ও এর আশেপাশের জেলা থেকে প্রতিবছরই পূজা দেখতে ছুটে আসেন হাজারো দর্শনার্থী। তাদের জানানো যাচ্ছে এই দুই এলাকায় তারা একে একে দেকতে পাবেন ২৫টি প্রতিমা। তাঁতীবাজার-শাঁখারীবাজার এলাকার অলিগলিগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা এমনই লাগোয়া যে, একটি মন্ডপের প্যান্ডেল শেষ হতে না হতেই আরেকটি এসে হাজির। মাথা নুইয়ে আর ভিড় ঠেলে এগুতো হবে পুরো রাস্তা।

ইতোমধ্যেই জনসন রোড ও ইংলিশ রোডের মাথায় সাজানো হয়েছে বড় প্যান্ডেল। যা দেখে সবাই বুঝতে পারছেন বছর ঘুরে আবারো মা দূর্গা আসছেন বাবার বাড়ি। শুধু শাখাঁরীবাজার ও তাঁতীবাজার নয় আশেপাশের লক্ষীবাজার, ফরাশগঞ্জ, আরমানিটোলাসহ সব এলাকায় এখন বিরাজ করছে পূজার আমেজ। শুধু হিন্দু ধর্শালম্বীরাই নয়, সব ধর্মের মানুষেরাই এখন পূজার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কারণ, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’।

মূলত অষ্টমী পূজার মধ্য দিয়েই দূর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতার শুরু। আর অষ্টমী মানেই কুমারী পূজা। আর কুমারী পূজা মানেই রামকৃষ্ণ মিশন। রামকৃষ্ণ মঠ ঘুরে দেখা গেলো পালদের ব্যস্ততা। তৈরী হচ্ছে মা দূর্গার প্রতিমা।

কুমারী পূজার সময় এখানে থাকবে উপচে পড়া ভিড়; তাই তো এখনকার নিরাপত্তার ব্যবস্থাও বেশ জোরদার করা হয়েছে। মালিবাগ, মৌচাক, সিদ্ধেশ্বরীসহ এর আশেপাশের এলাকার সবচেয়ে বড় পূজার আয়োজন করে থাকে সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির। মা আনন্দময়ীর হাতে গড়া মন্দির গত প্রায় দুই যুগ ধরে আয়োজন করে আসছে দূর্গা পূজার। সর্বজনীন কল্যাণ কামনায় আয়োজিত শারদীয় উৎসব উপলক্ষে মন্দিরটিতে এখন চলছে শেষ প্রস্তুতি। দেবীকে নানা রূপে সাজাতে ব্যস্ত এখন ব্যস্ত কারিগররা।

আর মন্দিরের সকলে ব্যস্ত পূজার কার্ড বিতরণ আর পূজার নিমন্ত্রণে। যেকোন উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে তারুন্যের উচ্ছ্বাস। তারুণ্যের এই উচ্ছ্বাস দেখতে প্রৌঢ়দেরও বেশ ভিড় থাকে। শারদীয় দূর্গা পূজাও এর ব্যাতিক্রম নয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে এবারো বসছে জাকজমকপূর্ণ দূর্গা পূজা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হলেও প্রায় তিন দশক ধরে এখানে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়াও, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকাসহ নগরীর বাকি সব এলাকার কোথাও চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। কোথাও আবার প্যান্ডেল ও আনুষঙ্গিক বিষয়ের কাজ চলছে। পুজা ম-পগুলোতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢাকা মহানগরীর ২০২টি পূজামন্ডপ ছাড়াও সারাদেশের প্রায় ৩০ হাজার পূজাম-পে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় সব পূজাম-পে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।

পূজার সময় কেউ যাতে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়াতে না পারে, এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা পূজাম-পগুলো পরিদর্শন করবেন। এরপরও যদি কেউ অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পূজা উপলক্ষে জেলা, বিভাগ ও মহানগরে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হবে। পূজার সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর।

তিনি জানান, প্রতিটি এলাকায় পুলিশকে সহযোগিতার জন্য তরুণদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা লাগবে। পূজার সময়সূচী ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির দেওয়া সময়সূচী অনুযায়ী, ২০ অক্টোবর শনিবার পূর্বাহ্ন ৯-৫৭ মধ্যে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ অনুষ্ঠিত হবে। সায়ংকালে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। পরদিন ২১ অক্টোবর রোববার পূর্বাহ্নে ৮-১৫ মধ্যে দেবীর নব পত্রিকায় প্রবেশ, স্থাপন, কল্পরম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ২২ অক্টোবর পূর্বাহ্নে ৯-৫৭ মধ্যে দেবীর মহষ্টমী কল্পরম্ভ ও বিহিত পূজা ও রাত্রি ১২-৪৬ থেকে ১-৩৪ মধ্যে সন্ধি পূজা সমাপন।

একই দিন সকালে দেশের সকল রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। ২৩ অক্টোবর পূর্বাহ্নে ৯-৫৭ মধ্যে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা আরম্ভ এবং ২৪ অক্টোবর বুধবার পূর্বাহ্ন ৭-৫৫ মধ্যে দেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপন ও দর্পন বিসর্জন। বিকেল ৪টায় জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গন থেকে বের করা হবে বিজয়া শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি পলাশী মোড়, জগন্নাথ হল, দোয়েল চত্বর, জাতীয় প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, বংশাল, বাহাদুর শাহ পার্ক (সাবেক ভিক্টোরিয়া পার্ক) হয়ে বুড়িগঙ্গা তীরে গিয়ে শেষ হবে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি থেকে পাঠানো সময়সূচী অনুযায়ী, আগামী ২৯ অক্টোবর শ্রী শ্রী লক্ষী পূজা, ১২ নভেম্বর বিজয়া সম্মেলন এবং ১৩ নভেম্বর শ্রী শ্রী শ্যাম্যা পূজা ও দীপাবলি অনুষ্ঠিত হবে।

‘তর সয়না আর যে আমার, ঢাকে কাঠি পড়বে আবার/ আনবো তোকে শাঁখ বাজিয়ে, বোধন হবে উলু দিয়ে/ ঘুচিয়ে দে মা আঁধার-কালো, সারা বছর দেখব আলো’- এই গানটিই এখন বাজছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের মাঝে। আর সেজন্যই এত প্রস্তুতি, এত হৈ-চৈ। কিন্তু পাঁচদিনের উচ্ছ্বাস শেষে মা চলে যাবেন ভক্তদের কাঁদিয়ে। দিয়ে যাবেন আগামীবার আসার প্রতিজ্ঞা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.