আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুনিয়া আনন্দময়, যার মনে যা লয় (পর্ব-দুই)

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর। দুনিয়া আনন্দময়, যার মনে যা লয় (পর্ব এক) ঢাকা শহরকে মসজিদের শহর বলা হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মসজিদ বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ঢাকা শহরে কোনো একটা এলাকা যখন নতুন গড়ে ওঠে স্বভাবতই ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা প্রথমে একটি মসজিদ গড়ে তোলার দায়িত্ব হাতে নেন।

এলাকার প্রভাবশালী বিত্তবান লোকদের দ্বারস্থ হয়ে মসজিদ স্থাপনে সাহায্য সহযোগিতা নিতে হয়। কারণ মসজিদ স্থাপনের জন্য জায়গার প্রয়োজন হয়। মসজিদের স্থাপনা নির্মাণে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। আর এ কাজে সমাজের বিত্তবানরাই উদার হস্তে এগিয়ে আসেন। আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে আমাদের নতুন গড়ে ওঠা এলাকাটির জন্যও একটি মসজিদের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।

ব্যক্তিমালিকানাধীন অল্প একটু জমির সাথে সরকারি খাস জমি মিলিয়ে চার কাঠার মত জমি পাওয়া গিয়েছে। এখন প্রয়োজন জমির উপর স্থাপনা নির্মাণ। বাড়ি বাড়ি চাঁদা তুলে, মুষ্ঠির চাল সংগ্রহ করে কোনোরকমে বাঁশের বেড়া দিয়ে একটি ছাপড়া তোলা হলো। তখন মসজিদটির নাম হলো 'ছনটেক ছাপড়া মসজিদ'। আমরা ছোটরা খুবই উৎসাহের সাথে চাঁদা তোলা থেকে আরম্ভ করে শারিরীক শ্রম দিয়ে মসজিদটি গড়ে তুলেছি।

ধীরে ধীরে এলাকায় জনবসতি বাড়তে থাকে। আগে যেখানে এলাকার অধিকাংশ লোকের ঘরবাড়ি ছিল বাঁশের বেড়া কিংবা টিনের তৈরি সেগুলো বিল্ডিংয়ে পরিবর্তিত হয়ে যেতে লাগলো। এলাকায় বিত্তবান অনেক লোকের আগমন ঘটলো। এখন এলাকার মসজিদটির উন্নয়ন না ঘটালে আর হচ্ছে না। সবাই সাধ্যমতো দান দক্ষিণা দিয়ে মসজিদটিকে একতলা বিল্ডিংয়ে রূপান্তরিত করলো।

ততদিনে মসজিদটির নাম পরিবর্তিত হয়ে 'ছনটেক জামে মসজিদ' নাম ধারণ করেছে। উচ্চ শিক্ষার্থে আমি দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে ছিলাম। মাঝে মাঝে বাড়িতে এলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তাম আর ভাবতাম এভাবেই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি ইতিহাস রচিত হয়। শিক্ষা শেষে কর্মে প্রবেশ করলাম। পোস্টিং ঢাকার বাইরে।

তাই বাড়িতে তেমন একটা আসা হয় না। মাঝে মাঝে যখন আসি নামাজ পড়তে মসজিদে যাই। এলাকার মুরুব্বীদের সাথে দেখা হয়। তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় হয়। সবাই ভাবে বড় সরকারি চাকুরি করি।

তাই এলাকার মসজিদে বড় একটি অনুদান আমার কাছে প্রাপ্য। একবার এক ঈদের জামাত শেষে মসজিদ কমিটির সভাপতি আগত মুসুল্লিদের উদ্দেশে বক্তৃতা রাখেন। একতলা মসজিদে মুসুল্লিদের জায়গা হচ্ছে না। বিশেষ করে জুম্মার নামাজ এবং ঈদের নামাজে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। তাই মসজিদের সম্প্রসারণ প্রয়োজন।

এটিকে বাড়িয়ে দোতলা করতে হবে। অর্থ সংকুলান হলে তিনতলাও করা যেতে পারে। মসজিদের উন্নয়নে একপয়সা ব্যয় করলে সত্তর পয়সার ছওয়াব পাওয়া যাবে। মসজিদে ব্যয়িত অর্থ আখেরাতে হিসাব সহজ করতে সহায়তা করবে। সবার কাছে তিনি উদাত্ত আহ্বান রাখেন সাধ্যমতো সহায়তা করার জন্য।

সেই বসাতেই যে যার সাধ্যমতো সহায়তার আশ্বাস দেয় এবং সভাপতি মহোদয় সবার নাম একটি কাগজে টুকতে থাকেন। আমার কাছে সহায়তার প্রতিশ্রুতি চাইলে আমি বলি পরের দিন আসার জন্য। আমি সাধ্যমতো সহায়তা করবো। পরের দিন কমিটির কিছু লোক আমার কাছে আসে। আমি তাদেরকে একহাজার টাকা দিই।

টাকাটা হাতে নিয়ে তারা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। মাত্র এক হাজার টাকা মসজিদ উন্নয়নের জন্য দিয়েছি তারা ভাবতেই পারছে না। তারা উদাহরণ টেনে আনে এলাকার এক বড় ভাইয়ের। তিনি বিআরটিএতে ছোটখাট এক পদে চাকুরি করেন। তিনি মসজিদের উন্নয়নে এক লাখ টাকা দিয়েছেন যে টাকা দিয়ে ইমাম সাহেবের নামাজ পড়ানোর স্থান সহ সামনের সম্পূর্ণ দেওয়াল সুদৃশ্য টাইলস দিয়ে মোড়ানো হয়েছে।

আর প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকুরি করে আমি মোটে একহাজার টাকা সহায়তা দিয়েছি এটা তারা ভাবতেই পারছেন না। আমি কিছুটা লজ্জায় পড়ে অপারগতা প্রকাশ করি। দুনিয়া আনন্দময় হলেও সে সময়টা আমার কাছে নিরানন্দ হয়ে ধরা দেয়। এক বন্ধুর কাছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। বন্ধুর জবাব, "যে এলাকার মসজিদ যত চাকচিক্যময় সে এলাকার মানুষ তত ঘুষখোর এবং দুর্নীতিপ্রবণ।

দুর্নীতির টাকা কিছু দান-খয়রাত করে মসজিদের চাকচিক্য বাড়ালেও তাদের অন্তরের ময়লা সহজে কাটবার নয়। " ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।