ইসলামের অনেক জায়গায় যাকাত কথাটির উল্লেখ আছে কোরআনে। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি নির্দেশনা। কোরআনের বহু জায়গায় যাকাত ও সালাতের কথা অতোপতো ভাবে জড়িত। আল্লাহ্পাক সূরা রুমের ৩৯ নাম্বার আয়াতে বলছেনঃ “ওয়ামা আ-তাইতুম মিন যাকা-তিন তুরিদুনা ওয়াজ্বহাল্লা হি ফাউল ইকা হুমুল মুদ্ব’ইফুন” অর্থঃ এবং তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষে যাকাত দান করে, তাহাদিগের ধন ও সম্পদ বৃদ্ধি পায়; ওরাই সমৃদ্ধশালী। কোরআন বলছে “আকিমুস সালা-তা ওয়া আ-তুয্ যাকা-তা ওয়া আকরি দুল্লা-হা ক্বারদান হাসানান” অর্থঃ সালাত প্রতিষ্ঠিত করো, যাকাত আদায় করো।
এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ বা কর্জে হাসানা দাও। যাকাতকে কোরআনে সদ্কাও বলা হয়েছে। “যাকাত” শব্দটি “জাক্কা” শব্দ হতে এসেছে; যার অর্থ পবিত্র হওয়া বা নিজেকে শুদ্ধ করা। সূরা তওবার ১০৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলছেনঃ “খুয্মিন আমওয়া-লিহিম সাদাকাতন তুত্বাহহিরুহুম ওয়া তুযাক্কিহিম বিহা ওয়া সাল্লি আলাইহিম” অর্থঃ ওদর সম্পদ হওত সদ্কা গ্রহণ করো, ইহা দ্বারা তুমি তাহাদিগকে পাক করিবে ও আশীর্বাদ করিবে। এযাকাত অন্যাণ্য নবী-রাসুলদের উম্মতের বেলায়ও ছিলো বলে কোরআন সাক্ষ্য দেয়; সূরা বাকারা ৮৩ নং আয়াতে।
সূলা মুমিনুনের ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ “ওয়াল্লাযিনা হুম লিয্যাকা-তি ফা-ইলুন” অর্থঃ যারা স্বীয় যাকাত প্রদানে সক্রিয়। কালেমা সাওম বা রোজা ও হাজ্জ্ব সম্পর্কে কোরআনে পৃথক পৃথক নির্দেশ এসেছে এবং কালেমার বিষয়টি মৌলিকভাবে নির্দেশ আছে। কিন্তু সালাত ও যাকাতকে একই সঙ্গে একই আয়াতে বার বার নির্দেশ দেয়া আছে বিভিন্ন আঙ্গিকে। এই রহস্যটি সকলকে জানতে হবে,এটা আসলেই জানার বিষয়। কেন কোরআন সালাতের সাথে যাকাতের নির্দেশ দিচ্ছে।
যাকাত পাবে নিঃস্ব, ফকির, মিসকিন ও মুসাফির। সূরা তওবা ৬০ আয়াত। সালাত,রোজা.হাজ্জ্ব, কলেমা ও যাকাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভ হলেও যাকাত ও হাজ্জ্ব সামর্থবান মানুষের জন্য নির্ধারিত বলে হাদীসে কথিত আছে। আর সামর্থহীনদের স্তম্ভ হলো তিনটি, মানে কলেমা,সালাত ও রোজা। তাহলে কি দাড়ালো ধনীদের জন্য ইসলামের বুনিয়াদ বা স্তম্ভ হলো পাঁচটি আর গরীবদের জন্য ইসলামের স্তম্ভ হলো তিনটি।
মানে ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভ সবার জন্য নয়! ইহা’ই কি কোরআনের বিধান? না, হতে পারে না। ইহা কোরআনের বিধান নয়। কোরআনের বিধান হতে হবে সবার জন্য সার্বজনীন মানে সব মানুষের জন্য সমান প্রযোজ্য। কোরআনের বিধান জাগতিক ধনী-গরীব হিসাবে নয়। এটা হলো প্রাথমিক যুগের উমাইয়া-আব্বাসীয়া রাজশক্তী এবং তাদের পোষা মোল্লা মৌলবীদের অন্ধ কুপমন্ডুকতার কারসাজি।
এরা যাকাত বলতে শুধু পার্থিব ধনের যাকাত’ই বুঝেছিলো এবং মানুষকে তা বুঝিয়েছিলো এবং সেইভাবে সস্তা বস্তপঁচা শত সহস্র কিতাব ও তারা রচনা করেছিলো কেবল তাদের সার্থে, তাদের কিছু মত চরিতার্থ করার জন্য। তারা একটি কথা বোঝেনি এবং বুঝতেও পারেনী যে পার্থিব ধনের যাকাতটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কল্যাণ এর জন্য। এবং তাহলো প্রতীক বা রূপক হিসাবে প্রযোজ্য যা মানব জাতির ইহলোকের জন্য সাময়িক এবং সামাজিক কল্যাণকর হিসাবে প্রযোজ্য। ইহা প্রতীক, আসলে উপমা, যার মাধ্যমে আসল পাওয়া যায় বা, হকিকতে পৌঁছাতে পারে। মুহাম্মাদ (সাঃ) পার্থিব ধনের যাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন মানব সমাজের নিঃস্ব ব্যক্তিদের মঙ্গলার্থে যার দ্বারা মানব সমাজ আর্থিক, সামাজিক ভাবে সাম্যের দিকে এগুতে পারে।
ইহা কোরআনের যাকাতকে লক্ষ্য করে দেয়া হয়েছে; যা আসলের উপমা বা প্রতীক স্বরূপ। মাওলানারা মানুষকে যাকাত বলতে যা বুঝাচ্ছে তার কোন নির্দিষ্ট পরিমান কোরআনে নেই। কোরআনের কথা হলো প্রয়োজনে অতিরিক্ত তোমাদের যা আছে তা-ই যাকাত দিতে হবে। রাসুল (সাঃ) ইহলোকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায যে সুষ্ঠ বিধি-বিধান প্রবর্তন করেছেন এবং আর্থিক যাকাত ব্যবস্থা তার একটি। কোরআনে যেখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মানুষকে বিলি করতে বলেছে সেখানে আড়াই পার্সেন্ট যাকাত কথাটা এলো কোথা থেকে? ইসলাম সম্পদ জমাতেই নিষেধ করেছে সেখানে যাকাত মানুষের মনগড়া আড়াই পার্সেন্ট এটা আমার অভিমত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।