আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভায়াগ্রার অনুমতি, তরুণ সমাজের জন্য ঝুঁকি

যৌন উত্তেজক ওষুধ ‘ভায়াগ্রা’ বাংলাদেশে তৈরি ও বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটি (ডিসিসি)। জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে গত মে ২০ ডিসিসির ২৪১তম বৈঠকে ভায়াগ্রা তৈরির অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের পর এ পর্যন্ত ৩৩টি অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানি ভায়াগ্রা তৈরির অনুমোদন নিয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত, ঢালাওভাবে ভায়াগ্রা তৈরির অনুমোদন দেয়ায় স্বাস্থ্য সেবায় এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। শুধু যাদের যৌন অক্ষমতা রয়েছে তাদের ভায়াগ্রা সেবনের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বিএমএ ও সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ বলেন, বিশ্বের কোনো দেশে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি করা হয় না। ভায়াগ্রা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত ওষুধের দোকানে বিক্রি তো দূরের কথা, নামও উচ্চারণ করা যায় না, কিন্তু এদেশে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া হরহামেশাই ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ভায়াগ্রার মতো বিপজ্জনক ওষুধ যত্রতত্র বিক্রি হলে তরুণ সমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে। অতি মুনাফালোভী এক শ্রেণির ওষুধ উৎপাদনকারী মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ভায়াগ্রা তৈরির অনুমোদন নিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তা বলেন, ভায়াগ্রা কোনো জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নয়।

এ মুহূর্তে ভায়াগ্রা তৈরি করে বাজারজাত করার পেছনে রয়েছে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের লোভ। ডিসিসি’র সভায় বলা হয়, চোরাপথে এদেশে প্রচুর ভায়াগ্রা আসছে। তাই চোরাচালান ঠেকানোর অজুহাতে দেশে ভায়াগ্রা উৎপাদনের অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় উপস্থিত কিছু সদস্য এই যুক্তি মেনে নিলেও কমিটির অন্যতম সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ভায়াগ্রা অনুমোদনে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। বৈঠকে তিনি বলেন, ভায়াগ্রা জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মধ্যে পড়ে না।

এটি যৌন অক্ষম ব্যক্তিদের দেয়া হয়ে থাকে। এ ধরনের রোগীর সংখ্যা দেশে এক বা দুই শতাংশ হতে পারে। ভায়াগ্রা ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। দেশে এটি ঢালাওভাবে উৎপাদিত হলে তরুণ সমাজ সবচেয়ে বিপদগামী হবে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভায়াগ্রা তৈরির জন্য অর্থলোভী কয়েকটি কোম্পানি অনুমোদন গ্রহণ করেছিল।

২০০১ সালের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, জাতীয় অধ্যাপক ও হার্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার ডা. এ মালিক বলেন, ভায়াগ্রা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নয় এবং এটির অপব্যবহারের সম্ভাবনা আছে বলে সে সময় এ ওষুধ তৈরির অনুমোদন বাতিল করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সেই কোম্পানিগুলো প্রায় একযুগ তদ্বির করে অবশেষে গত মে মাসে ভায়াগ্রা অনুমোদন বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে শুধু ভায়াগ্রা রপ্তানি করার অনুমোদন দেয়া হয়। বিপদের কথা ভেবে বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়নি ঐ সরকার। অনুমোদনপ্রাপ্তরা এদেশে বাজারজাত না করলে অতি মুনাফা হবে না বিধায় উৎপাদন বন্ধ রাখে।

গত মে মাসে বাজারজাত করার অনুমোদন পেয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। উৎপাদনের সাথে সাথে বাজারজাত হচ্ছে বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ভায়াগ্রা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নয়। ডায়াবেটিস, কিডনিসহ অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে মৃত্যুর আশংকা থাকে।

দেশে ভায়াগ্রা বাজারজাত হলে ভালোর চেয়ে ক্ষতি হবে অনেক গুণ বেশি। তরুণ সমাজের মধ্যে এর ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যাবে। তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দেশে ইয়াবা ট্যাবলেটের আগ্রাসনে তরুণ সমাজ ইতিমধ্যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।

এর মধ্যে ভায়াগ্রা আসায় তরুণ সমাজে এর ভয়ংকর প্রভাব পড়বে। চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএন হুদা বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্যতীত যত্রতত্র ভায়াগ্রা বিক্রি এবং চোরাই পথে ভায়াগ্রা আসা বন্ধ করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞ ছাড়া ঐ ওষুধের ব্যবস্থাপত্র না দেয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে ভায়াগ্রা তৈরির অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি। ভায়াগ্রা ব্যবহারে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।

এ বিপজ্জনক ওষুধ সেবনে স্বাস্থ্যসেবায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। তিনি অবিলম্বে ভায়াগ্রা অনুমোদন বাতিলের দাবি জানান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিসিসি কমিটির এক শীর্ষ সদস্য বলেন, চোরাই পথে ভায়াগ্রা আসা রোধ, টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ ও দেশের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে ভায়াগ্রা উৎপাদন ও বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংবাদে ভায়াগ্রার ক্ষতিকর নানা দিকের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যাবে কিনা তা’ সরকারই ভেবে দেখবেন।

তরুণ সমাজ যাতে ধ্বংসের দিকে ধাবিত না সেদিকে অবশ্যই সরকারকে নজর রাখতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।