সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর পর গত মার্চে ডিজনি কর্তৃপক্ষ তাদের পোশাক সরবরাহকারী ও লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয়, যাতে বাংলাদেশের মতো ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো’ থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিতে বলা হয়।
ডিজনি কনজ্যুমার প্রোডাক্টসের প্রেসিডেন্ট বব চাপেক বলেন, “অনেক চিন্তা-ভাবনা ও আলোচনার পর আমরা মনে করেছি যে, আমাদের পোশাক সরবরাহের উৎসগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাধাগুলো মোকাবেলা করার এটাই সবচেয়ে যৌক্তিক উপায়। ”
সে অনুযায়ী, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও ইকুয়েডর, ভেনেজুয়েলা, বেলারুশ ও পাকিস্তান ওয়াল্ট ডিজনির আর কোনো কাজ পাবে না।
ডিজনি ওই সিদ্ধান্ত জানানোর এক মাসের মাথায় সাভারে স্মরণকালের ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনা ঘটে, যাতে নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে।
গত ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাবে বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে আসে।
পশ্চিমের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে কম দামে পোশাক কিনলেও এ দেশের কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে তাদের ‘অবহেলার’ বিষয়টিও আলোচিত হয় বিভিন্ন প্রতিবেদনে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পোশাক বর্জনেরও হুমকি দেয়া হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইতোমধ্যে জানিয়েছে, পোশাক কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা ‘ব্যবস্থা’ নেয়ার কথা ভাবছে, যার মধ্যে জিএসপি সুবিধার বিষয়টিও আসতে পারে।
এই সুবিধার আওতায় ইউরোপের বাজারে কিছু বাণিজ্য সুবিধা পায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের এই শিল্পে ৩৬ লাখের বেশি শ্রমিক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও এ খাতের বহু শ্রমিকের আয় মাসে তিন হাজার টাকার বেশি নয়।
গত বছরের নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে অন্তত ১১২ জন পোশাক শ্রমিক নিহত হন। এর আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানেও ২৬২ জন পোশাক শ্রমিক অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন।
বিশ্বে বাহারি পোশাকের অন্যতম বড় ক্রেতা ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে মূলত শিশু কিশোরদের পোশাক কেনে। বিশ্বের নামি-দামি কোম্পানিগুলোকে নিয়ে করা ফরচুন-৫০০ তালিকায়ও ডিজনি রয়েছে।
ডিজনির মুখপাত্র তাসিয়া ফিলিপ্পাতোস বলেন, “দুর্ঘটনার পর বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ওয়াল্ট ডিজনিই প্রথম বাংলাদেশে উৎপাদন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেও আমরা এ দেশ থেকে যে পরিমাণ পোশাক কিনি তা খুবই সামান্য। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কারখানাগুলো থেকে যে পোশাক আনা হয় তার মাত্র এক শতাংশ আসে বাংলাদেশ থেকে। বাকি চারটি দেশ থেকে আরো কম পোশাক কেনা হয়। ”
ওয়াল্ট ডিজনি বলছে, জবাবদিহিতা, দুর্নীতি ও সহিংসতাসহ বিভিন্ন মানদণ্ড বিচার করে বিশ্ব ব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে পাঁচ দেশে থেকে ডিজনি পোশাক কেনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে সব দেশের অবস্থা ওই মানদণ্ডে ‘সবচেয়ে খারাপ’।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে ভাল অবস্থানে না থাকলেও হাইতি, কম্বোডিয়াসহ আরো কিছু দেশ থেকে পোশাক কেনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে ডিজনি। তবে শুধু সেসব কারখানা থেকেই তারা পোশাক কিনবে, যেগুলো আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স করপোরেশ পরিচালিত ‘বেটার ওয়ার্ক’ কর্মসূচির অংশীদার।
বাংলাদেশের কারখানাগুলো ‘বেটার ওয়ার্ক’ কর্মসূচির অংশীদার হতে রাজি হলে ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকে পোশাক কেনার বিষয়টি ডিজনি বিবেচনা করবে বলে ফিলিপ্পাতোস জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।