হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র পয়েন্টে ধরে ধরে বলছি -
১। সামহোয়ারইন ব্লগকে দেখছি প্রথম থেকে। এককালে এইখানে আমার অনেক প্রিয় লেখকরা ব্লগাইতো। তাদের দেখে দেখে ব্লগিং শিখেছি। ব্লগারদের সংখ্যা শুরুর ৩/৪ বছর অনেক কম ছিলো।
অধিকাংশ ব্লগারই ছিলেন জাত লেখক। এদের মধ্যে যারা সেরা ছিলেন তারা লেখালেখির জগতে ব্লগে অথবা ব্লগের বাইরে সুপ্রতিষ্ঠিত।
২। সামু চেঞ্জ হয়ে গেছে। এখানে এখন অনেক ব্লগার।
এক দুইশ লেখকএর এলিট কালচার এখন এই ব্লগ না। এইখানে লাখো ব্লগার। লাখো ব্লগারএর সেন্টিমেন্ট এবং ব্লগ কালচার যা হবে ব্লগও তাই হবে।
৩। নির্বাচিত পোস্ট সিস্টেমে ব্লগএর ঐতিহ্য ধরে রাখা যাবে কিনা সন্দেহ আছে।
কারন সংখ্যাগরিষ্টদের পছন্দ অপছন্দ নির্বাচকদের সাথে না মিলাতে নির্বাচকদের নিয়া প্রশ্ন উঠছে।
৪। ব্লগএর পরিবেশ আগের মতো মুক্তমত ও খোলামেলা পরিবেশ আর নাই। এইটা পরীক্ষামূলক সত্য। আমি নিজেই এই ব্লগে এক কালে মোহাম্মদএর ছবি পোস্ট করেছি, সেইটা অবশ্য মোহাম্মদএর পজিটিভ ইমেজএর ছবি ছিলো।
কিন্তু এখন সেই ছবি দিলেও আমার ব্যান চাইয়া আন্দোলন হবে এইটা নিশ্চিত। আমার বন্ধু দুরের পাখি চ্যালেঞ্জএর জবাবে কোরআনের প্যারোডি লিখেছে ব্লগে। সেই পোস্ট এখনো আছে ব্লগে। তার ব্যান হইতে হয়নাই, ব্যানএর জন্যে আন্দোলনও হয় নাই। পোস্টে সমালচনা হইছে, তবে তা ভদ্রতার লিমিটেশন অতিক্রম করেনাই।
সেই পরিবেশ ও অবস্থা এখন আর ব্লগে নাই এই বাস্তবতা মাইনা নিতে হবে।
৫। দাড়িপাল্লার কার্টুনএর জবাবে সিংহভাগ উত্তেজিত জনতা ছাগু না, এই ট্যাগিং দেয়া ঠিক হবেনা। সুযোগে আলুপোড়া খাইছে ছাগুরা সেটা শিওর। কিন্তু প্রতিবাদি সিংহভাগই সাধারণ ব্লগার।
ঐ কার্টুন তাদের সেন্টিমেন্টএর সাথে যায়না।
আমার মতে তারা অসহিষ্ণু। দাড়িপাল্লার পোস্ট আমি দেখেছি প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পরে। প্রতিবাদ শুরু না হইলে আমার মতো অনেকেই এইটা দেখতো না। সিম্পল রিপোর্টেই ঐ পোস্ট নাই হইতো, দাড়িপাল্লা শাস্তি পেতো, ফ্লাডিং করায় ঐ পোস্টের হিট বেরেছে, ঐ কার্টুন আরো অনেক মানুষ দেখেছে এবং ব্লগে গোলমাল হইছে, অহেতুক কিছু মানুষকে অশ্লীল আক্রমন করা হইছে।
এইটা আমার মতামত। কিন্তু আমার মতামতে কিছু যায় আসেনা। কারন ব্লগএর সিংহ ভাগএর সেন্টিমেন্টে এইগুলা ঠিক আছে। গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা এইসবকে জায়েজ করে। এইখানে আমি একজন সংখ্যালঘু মাত্র।
৬। ব্লগএর সিংহভাগ মানুষ চালাক না। কিন্তু অধিকাংশ নাস্তিক চালাক। এই চালাকির তারতম্যের জন্যে ব্লগ এডমিন ও মডুদের নাস্তিক ঘেষা মনে করার কোন কারন নাই। এইটা ভুল বুঝাবুঝি।
নাস্তিকরা সতর্ক এবং চালাক হওয়ায় তারা ব্লগের নীতিমালা কম ভঙ্গ করে। অন্যদিকে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়া নীতিমালা বহির্ভুতভাবে গালিগালাজ করায় প্রতিবাদীরা ব্যান খায়, এইটা সিম্পল বাস্তবতা।
৭। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে খানিকটা অবাক হয়ে দেখলাম যে পুরা ইস্যুতে ব্লগের হাতেগোনা বাইচা থাকা নাস্তিক পরিচিতের একজন হওয়ায় আমিও গালি খাচ্ছি। সোনা, বর্নমালা এবং সামু ব্লগেও আমাকে মডারেটর হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে।
এই তথ্যের উৎস কি আমার জানা নাই। এমন হতে পারে যে এদের মতে আমি ব্যান খাওয়ার মতো অনেক কাজ করি, কিন্তু ব্যান খাইনা। এইখানে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাইযে আমি ব্যান খাওয়ার মতো কাজ করিনা। কিন্তু আপনাদের কাছে হয়তো সেগুলা ব্যান খাওয়ার মতো কাজ। এর জন্যে আমারে মডু ভেবে লাভ নাই, আমি যাস্ট নীতিমালা মাইনা চলি।
এখন রাগের চোটে আমারে গালি দিতে পারেন, তাতে কিন্তু আবার আপনারাই নীতিমালার খাড়ায় পরে ব্যান খাইতে পারেন। এইখানে আমার কোনই দোষ নাই।
৮। ব্লগ কর্তৃপক্ষরে বলতে চাই যে, আপনেরা আপাতত ব্লগিয় মুসলিম সেন্টিমেন্টরে দমন এবং শাস্তিমূলক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করলে আমি সেইটার তীব্র বিরোধীতা করি। দুইটা কারনে, প্রথমত এতে ব্লগএর গনতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের অবস্থান তৈরি হয় ( যে কারনে ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেকে নাস্তিক বান্ধব মনে করছে)।
দ্বিতীয়ত, এতে ব্লগে নাস্তিক বিদ্বেষ বৃদ্ধি পাবে। স্টিকি পোস্টে দেখেছি অহেতুক আমার ফেসবুকএর একটা কমেন্টএর স্ক্রিনশট নিয়া তার বক্তব্য টুইস্ট করে আমাকে আক্রমন করা হচ্ছে। খুব আজিব লাগছে, কারন আমার মোহাম্মদএর কার্টুন নিয়া মুসলিমদের সেন্টিমেন্ট আর আমার সেন্টিমেন্ট এক না। ঐ পোস্টের জন্যে আমি শুধু দাড়িপাল্লার কান্ডজ্ঞানএর সমালোচনা করুম, আর কিছুর না। বাকি যা হইছে তার দায় অন্যদের।
এখন আমার এই সিম্পল মতের জন্যেই আমাকে গালি খাইতে হবে। কেনো? কারন নাস্তিক বিরোধী সেন্টিমেন্ট। দমনমূলক নীতি সেই সেন্টিমেন্ট আরো বারাবে এবং আমাদের পক্ষে ব্লগিং করা কঠিন হবে।
৯। সামু ছাড়াও আরো অনেক ব্লগ আছে।
কিন্তু সামু মূলত গণব্লগ। সামুর গণব্লগ চরিত্র যতো প্রবল হইছে সামুর পুরাতন এলিট ব্লগাররা ততোই সামু ছাইড়া অন্য খানে গেছে। আমি মূলত গণব্লগ পছন্দ করি, তাই সামুতেই ব্লগিং করি, কারন এখানে বহু মত ও পথএর মানুষএর সাথে মত বিনিময় করা যায়, নিজের মত তাদের কাছে পৌছানো যায়। আমার অনেক ভাই ব্যারাদারই সামু ত্যাগ করে ফেসবুকে, মুক্তমনায়, চতুর্মাত্রিকে, নাগরিকে কিংবা উন্মোচন ব্লগে হিজরত করেছেন। সামুর গণব্লগ চরিত্র যদি মূলত মুসলিম সেন্টিমেন্টএর প্রতিনিধিত্ব করে তাইলে আমার মতো যারা এখনো সামুতে আছে তাদেরও হিজরত করতে হবে।
এইখানে আমি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা কে সম্মান করবো। আমি চেষ্টা করেছি আমার মতো করে এই ব্লগ আকড়ে পরে থাকতে। বিভিন্ন সোস্যাল একটিভিজম আর আমাদের ভুখন্ডের হিন্দু, মুসলিম নির্বিশিষে তাবৎ জনগোষ্ঠির স্বার্থের পক্ষেই আমি লেখি। ইভ টিজিংএর বিরুদ্ধে লিখেছি, জ্বালানি সম্পদ রক্ষার পক্ষে লিখেছি, শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্ব ব্যাংকএর আগ্রাসনের বিপক্ষে লিখেছি, পোস্ট কলোনিয়াল পদ্ধতিতে ইতিহাস চর্চা করেছি, মুসলিম দার্শনিক বিজ্ঞানীদের জীবন ও দর্শন নিয়ে লিখেছি, আবার সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় বিভিন্ন ব্লগে যারা মুসলমানদের সন্ত্রাসী ও ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম বানানের জন্যে প্রোপাগান্ডা ছড়ান তাদের বিরুদ্ধেও লিখেছি, যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এইসব কিছু ছাপিয়ে দেখা যাচ্ছে যে এখন আমার নাস্তিক পরিচয়টাই মূখ্য।
তাই দাড়িপাল্লার পোস্টএর সুবাদে আমাকেও গালি খেতে হবে। টার্গেট লিস্টে থাকতে হবে। আমি জানি অনেকে ব্যক্তিগত বিরোধএর কারনে এইটারে প্রোমোট করছে। কিন্তু ব্যক্তিগত বিরোধ যখন সাম্প্রদায়িক বিরোধে রূপ নেয় তখন সেইটা ভয়ঙ্কর হয়। এইরকম পরিবেশে ব্লগিং করা কঠিন।
বিশেষ করে আমি যেহেতু ব্লগে সোস্যাল একটিভিজম প্রোমোট করার চেষ্টা করি সেইটা এই পরিবেশ খুবি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
১০। আগেই বলেছি দমন নীতি দিয়া গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতাকে নিয়ন্ত্রন করা যাবেনা। তারচেয়ে বরং গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতাকে অস্বিকার করা ভালো। এটা এখন পরিস্কার যে সামহোয়ারইনব্লগ যেভাবে গড়ে উঠেছিল, যাদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল এবং তারপরে যাদের নিয়ে বিকোষিত হয়েছিল তাদের মতামত ও সেন্টিমেন্ট আর ব্লগএর বর্তমান একটিভ সংখ্যাগরিষ্ট ব্লগারদের সেন্টিমেন্টএর মাঝে ফারাক আছে।
ব্লগ কর্তৃপক্ষকে দুইটার একটা বেছে নিতে হবে। হয় বর্তমান গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতাকে সুস্পষ্টভাবে অস্বিকার করতে হবে, বলে দিতে হবে যে এইটা মুক্ত প্লাটফর্ম, এইখানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ মুসলমান বলে তাদের সেন্টিমেন্টএর কোন বাড়তি গুরুত্ব নাই, সেই সেন্টিমেন্ট নিয়া বেশি উদ্বেগ থাকলে ব্লগ থেইকা বিদায় হইতে হবে। অথবা গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা মেনে নিয়ে সংখ্যাগরিষ্টের সেন্টিমেন্ট যাতে আহত না হয় তার জন্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা করেন যেই নীতিমালা বুঝে নিয়ে আমরা নিঃসঙ্কচিত্ত্বে হিজরত করতে পারি। আমি হিট হওয়ার জন্যে ব্লগিং করিনা, অন্যেরে সচেতন করার জন্যে এবং নিজেরে উন্নয়নের জন্যে করি। কিন্তু যেইখানে দড়জা জানালা বন্ধ করে চেতনা ঢুকতে দেয়া হবেনা বলে পন করা হবে সেইখানে জোড় করে চেতনা ঢুকাইতে গিয়া গালি খাওয়ার সখ আমার নাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।