আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার দল ক্ষমতায়, এটা কি কামরানের জন্য সমস্যা?

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান দুবার সিটি করপোরেশনের ও একবার পৌরসভার মেয়র হয়েছেন নিজ দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায়। এবার তাঁর দল ক্ষমতায়। এটি তাঁর জন্য ‘অনুকূল’ না ‘প্রতিকূল’, তা বোঝা যাবে ১৫ জুন।
অন্যদিকে বহুধাবিভক্ত স্থানীয় বিএনপি সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার ‘একতাবদ্ধ’। দলীয় এই ঐক্য আরিফুল হকের জন্য কী ফল বয়ে আনবে, সেটাও জানা যাবে ১৫ জুন।


কামরান-সমর্থকেরা বলছেন, ভোটের রাজনীতিতে কামরান বরাবরই এগিয়ে। তিনি ভোটারের মন বোঝেন। তবে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের মতো এখানকার ভোটাররাও পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকবেন কি না, সেই ভয়ও আছে সমর্থকদের মধ্যে।
বদরউদ্দিন কামরান প্রথম সিলেট পৌরসভার মেয়র হন ১৯৯৫ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি।

২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালের প্রথম নির্বাচনে এবং ২০০৮ সালে কারাবন্দী অবস্থায় দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। প্রথমবার ক্ষমতায় ছিল বিএনপি, দ্বিতীয়বার ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনবার ওয়ার্ড কমিশনারও নির্বাচিত হন কামরান।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত নির্বাচনে কামরানের মূল পুঁজি ছিল আবেগ।

২০০৮ সালের নির্বাচনে কারাগারে থাকায় তিনি প্রচারণা চালাতে পারেননি। তাঁর বৃদ্ধ মা ভোটারদের বলেছিলেন, তাঁদের ভোটেই কারাগার থেকে কামরানের মুক্তি মিলবে। সেটা কাজে দিয়েছিল। এবার কামরান প্রচারণা চালানোর সময় ভোটারদের বলছেন, ‘গতবার মা ছিল। এবার আমার মা নেই।

আপনারাই আমার মা-বাবা। শেষবারের মতো আমাকে ভোট ভিক্ষা দিন। ’ কখনো কখনো তিনি মায়ের কথা বলে কেঁদেও ফেলছেন। তবে এবার আবেগের পাশাপাশি বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁকে।
১৯৯৫ সালের পর থেকে টানা ১৮ বছর সিলেট নগরের পিতা কামরান।

এত সময়ের মধ্যেও নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারেননি তিনি। একটু বৃষ্টি হলেই নগরে পানি জমে যায়। সম্প্রতি বৃষ্টি হলে নগরের যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়, সেখানে গণসংযোগে যাননি তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের মাঝারি সারির এক নেতা বলেন, আগে তো বলা গেছে যে দল ক্ষমতায় নেই, কাজ করা যাচ্ছে না। এবার তো দল ক্ষমতায়।

শুধু জলাবদ্ধতা নয়, আরও অনেক সমস্যা রয়েছে, যেগুলোর সমাধান হয়নি। এ জন্য ভোটারদের মধ্য থেকে পরিবর্তনের ডাকও শোনা যাচ্ছে।
কামরান দলের চেয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন বলেও দলে অভিযোগ আছে। এ জন্য নতুন নেতৃত্ব উঠে আসছে না। এতে কামরানের সঙ্গে মাঝারি ও নিচু সারির নেতাদের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব রয়েছে।


তবে কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, কামরানের জনপ্রিয়তার মূল ভিত্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যেকোনো পরিস্থিতিতে মানুষ কাছে পায় বলে তাঁকেই বারবার বেছে নেয়। এবারও তাঁকেই নির্বাচিত করবেন ভোটাররা।
দীর্ঘদিন পর বিএনপিতে ঐক্য: সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান জীবিত থাকাকালেই সিলেট বিএনপি সাইফুর ও ইলিয়াস আলী গ্রুপে বিভক্ত ছিল। আরিফুল হক ছিলেন সাইফুরের পক্ষে।

এক-এগারোর সময় আরিফুল গ্রেপ্তার এবং পরে সাইফুর রহমানের মৃত্যুতে একক নেতৃত্ব চলে যায় ইলিয়াস আলীর হাতে। তখন কোণঠাসা হয়ে পড়েন আরিফুল। ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর তাঁর অনুসারী নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইউম জালালী, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নাসিম হোসাইন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শামসুজ্জামান তাঁদের অবস্থান ধরে রাখেন। সর্বশেষ সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ নেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী। আরিফুল হক শমসের মবিনের আস্থাভাজন হয়ে আবারও দৃশ্যপটে চলে আসেন।


এই চারজনই মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন এবং আরিফুল হককে বাদে যে কাউকে দলের সমর্থন দিলে মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে আরিফুল হককে সমর্থন দেওয়া হয় এবং দলে ঐক্য ধরে রাখার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরই আরিফুলের পক্ষে প্রচারে নামেন সবাই।
চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে সাইফুর ও ইলিয়াস গ্রুপকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কেন্দ্র থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তা সফল হয়নি।


এবারের ঐক্যকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর সঙ্গে ৮ জুন ঢাকায় গিয়ে দেখা করেন আরিফ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল গতকাল সকালে সিলেটে এসেছে। আজ বিশ্বনাথের রামদানায় ইলিয়াসের মা সূর্যবান বিবির কাছে গিয়ে আরিফের জন্য দোয়া চেয়ে আসবেন তাঁরা।
তবে আরিফের বিরুদ্ধে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। নগরের একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েও তিনি পুলিশ পাহারায় চলাফেরা করতেন।

নগর উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ‘অঘোষিত মেয়র’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি এম এ হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের মধ্যে এখন আর দূরত্ব নেই। প্রথমে প্রার্থী নিয়ে দ্বিমত ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার আহ্বানে সবাই অস্তিত্বের প্রশ্নে জীবনবাজি রেখে মাঠে নেমেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের কথাটা ভোটারদের মধ্য থেকেই প্রথম এসেছে।

আমরা সেটা লুফে নিয়েছি। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.