আমি ব্লগার; ধর্মান্ধ জঙ্গী আর ধর্ম নিয়ে কটুক্তিকারী উভয়কেই সমান ঘৃণা করি!
ছেলেবেলার সোনালী দিন গুলোকে নিয়ে লিখছিলাম; আজ লিখব পোলাপান বয়সের খেলাধুলা নিয়ে। পোলাপান বয়স বলতে লেংটা কাল বা হাফপ্যান্ট পরা বয়সের খেলাধুলা গুলো মনে করার চেষ্টা করব। আগের লেখায় যেমনটি বলছিলাম, যাদের ছেলে বেলাটা গ্রামে কাটেনি তারা আসলেই দুর্ভাগা! যেমন খেলাধুলার কথায় যদি বলি, পুরা প্রকৃতিই ছিল আমাদের খেলাধুলার সরঞ্জাম! ঢাকা শহরে বেড়ে উঠা বাচ্চাদের কথা বাদই দিলাম; আমার ছেলে তার ছেলেবেলাটা কাটাচ্ছে উন্নত বিশ্বের একটা ধনী দেশে; এখানে খেলনার জন্য আলাদা মার্কেট আছে, খেলার মাঠেরও অভাব নেই। কিন্তু তারপরও ওর খেলাধুলা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ- কেমন যেন তাতে প্রানের ছোঁয়া কম। সেটা আরো ভাল বুঝা যায়, যখন ওকে দেখি ওর দাদা বাড়ীতে গিয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে মুক্ত পরিবেশে প্রকৃতির সরঞ্জাম নিয়ে খেলতে!
যা-ই হোক, ছেলের কথা বাদ দিই; লিখতে বসেছিলাম নিজের ছেলেবেলার খেলাধুলা নিয়ে।
অনেক খেলার কথাই ভুলে গেছি হয়ত; দেখি কতটুকু মনে আছে ...
সুপারীর খোলা দিয়ে গাড়ীঃ এটি একটি বহুল পরিচিত জনপ্রিয় খেলা। বড় সুপারী গাছ থেকে খসে পড়া পাকা ডাল দিয়ে গাড়ী টানাটানি খেলতাম। একজন চ্যাপ্টা জায়গায় বসতাম আর কয়েকজন মিলে ওটাকে টানতাম। নির্দিষ্ট দূরত্বের পর পর যাত্রী চেঞ্জ হতো; এটা নিয়ে দুর্নীতি এমনকি মারামারি পর্যন্ত হতো! একজন খোলায় চড়ে আরাম নিয়ে যখন আর খোলা টানতে চাইত না তখনই বাধত গ্যাঞ্জাম! গাড়ী চলার সময় পাছুতে মৃদু সুড়সুড়ি বড়ই আরামদায়ক ছিল; তবে মাঝে মাঝেই ঠিক মত বসার আগে বদ বন্ধুরা হেঁচকা টান দিলে ধূলায় গড়াগড়ি খেয়ে কাপড় ময়লা করে মা’র প্যাঁদানি খাওয়াটা ছিল দুঃখজনক!!
বাঁশ কঞ্চি’র গাড়ীঃ এই গাড়ী ছিল মূলত মাল টানা গাড়ী, এই গাড়ীতে করে ছাগলের খাবার, শুকনা জ্বালানী পরিবহন করা হতো। এটা মাঝে মাঝে যাত্রীবাহী হিসাবে সুপারী খোলার গাড়ীর উন্নত সংস্করণ হিসাবেও ব্যবহ্রত হত।
ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে নেওয়ার পর যে মোটা অংশ পড়ে থাকত তার গিঁট ফুটা করে বানানো হতো চাকা। এই কাজে অবশ্য সিনিয়র বড় ভাইদের সাহায্য নিতে হত; পারিশ্রমক স্বরূপ তাদের ঐ গাড়ীতে চড়িয়ে কিছুক্ষণ আরাম দিতে হত! গাড়ীর এই চাকা গুলি বেশিদিন টিকত না এবং টানাও ছিল কষ্ট সাধ্য! তবে কেও যদি এই চাকার পরিবর্তে সাইকেলের চারটা বিয়ারিং যোগাড় করে লাগাতে পারত তখন তা বি এম ডব্লিউ গাড়ীর এর মর্যাদা পেত।
-----------------------------------------------------------------
বিজ্ঞাপন বিরতিঃ
আগের লেখাটা এখানে ...
প্রকৃতির সাথে বেড়ে উঠা (১) – ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর সুখ!!! -----------------------------------------------------------------
নদীতে গ্রীষ্মকালীন গোছলঃ হ্যাঁ, এই গোছলটাও আসলে এক ধরনের খেলা ছিল। আমাদের বাড়ীর পাশেই চিত্রা নদী; গরমের দিনে সেখানে দল বেঁধে গোছল করতে যেতাম। ২/৩ ঘন্টা ধরে গোছল ছিল মামুলি ব্যাপার।
সেখানেও চলত নানা রকম খেলা- হইলডুব, ছোয়াছুয়ি, দম বন্ধ করে ডুব দেওয়া খেলা, কলা গাছের উপর সওয়ার হয়ে নৌকা বাইচ খেলা, লুঙ্গি ফুলিয়ে ভেসে বেড়ান, একজন আরেক জনের কাঁধে দাঁড়িয়ে কতদুর পর্যন্ত পানিতে নামা যায় তার প্রতিযোগিতা, দুই জনের হাতের উপর সওয়ার হয়ে জাম্প দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের নদীটা ছিল ছোট, সাঁতার কেটে উপারে গিয়ে বাঙ্গী চুরি করে খাওয়া ছিল আরেক এডভেঞ্চার! এভাবে গোছল করতে করতে পানি হয়ে যেত চরম ঘোলা, যখন গোছল শেষে উপরে উঠতাম গায়ে ময়লার পুরু স্তর জমা হতো। চোখ লাল টকটকে, সেটা তাড়ানোর জন্য আস্টালী গাছের পাতাদিয়ে চোখ ঘোষে কি যেন একটা ছড়া কাটতাম। অধিকংশ দিন মা লাঠি নিয়ে না আসা পর্যন্ত মনে পড়ত না যে এখন উঠতে হবে; মার তাড়া খেয়ে পালিয়ে কতদিন যে গায়ের কাপড় গায়ে শুকিয়েছে তার ইয়োত্তা নেই।
প্রাকৃতিক স্লাডঃ এটা সাধারণত বর্ষা কালে পুকুরের ঢালে বানান হতো- উপর থেকে সোজা পানি পর্যন্ত।
প্রায়ই দেখা যেত ইংলিশ প্যান্টের সব জায়গা ঠিক আছে কিন্তু পাছুর দু’পাশে ছেড়া! এটা ছিল ওই প্রাকৃতিক স্লাইড খেলার কুফল!
জাম্বুরার ফুটবলঃ প্রথম একটা ফুটবল কেনার সামরথ হলো সম্ভাবত ক্লাশ সেভেন বা এইট এ; তার আগে চলত জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলা। জাম্বুরা প্রথমদিকে শক্ত থাকত, পায়ে ব্যাথা লাগত, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তা নরম হয়ে যেত এবং সিড়ে পড়ত। এই জাম্বুরা কে টেকসই করার জন্য অনেক উপায় ইদ্ভাবন করা হতো কিন্তু কোনটাই তেমন কাজে দিত না। প্রতিদিন জাম্বুরার যোগান দিয়ে ছোট খাট চুরি ধারীও করতে হয়েছে; সেটা মা’র হাতে ধরা খেয়ে ব্যাপক প্যাঁদানিও খেতে হয়েছে।
কুতকুত খেলাঃ এটা মনে হয় সব এলাকাতেই খেলা হয় তবে ভিন্ন নাম হতে পারে।
মাটিতে দাগ দিয়ে এক পায়ে ভর করে একটা মাটির চাড়া কে কুতকুত বলতে বলতে এক নিঃশ্বাসে নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া। চাড়া দাগে পড়লে ফাউল!
মার্বেল খেলাঃ এই খেলাটার উপর কি কারনে যেন মুরুব্বীদের বিরাট বদনজর ছিল। কোন ছেলে মার্বেল খেলছে মানে সেই ছেলে একদম গোল্লায় গেছে, সে আর মানুষ হতে পারবে না। তাই মার্বেল খেলতে হতো লুকিয়ে লুকিয়ে; তবে বছরে ২ দিন প্রকাশ্যে মার্বেল খেলা জায়েজ ছিল, সেটা ঈদের দিন।
খেজুর গাছের সরপা দিয়ে বাজীঃ এটা ছিল শীতের শুরুর সান্ধ্যকালীন খেলা।
শীতের শুরুতে যখন খেজুর কাছ তোলা/কাটা হতো খেজুর রসের জন্য, তখন খেজুর গাছের ডালের সাথে কিছু সরপাও কেটে ফেলা হতো। এই সরপাগুলো কুড়িয়ে এনে সন্ধ্যা বেলায় বাজি খেলতাম। প্রথমে একটা বড় কচু পাতা (মাঙ্গিরি কচু, যেটা সাধারণত বৃষ্টির সময় ছাতার বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করতাম) কাঠি দিয়ে চাকা চাকা করে ফুটাতাম তারপর সেখানে সরপা পুড়ান ছাই আগুন থাকতে থাকতে ঢুকেয়ে মুখ বেঁধে ঘুরাতাম আর মাঠের আইল দিয়ে দৌডাতাম। এই খেলার প্রিপারেশন কয়েক ঘন্টা ধরে চলল্লেও এর স্থায়িত্ব ছিল ২/৩ মিনিট মাত্র। তবে অন্ধকার রাত্রে সরপার জনন্ত ছাই গুলো নৈসর্গিক দৃশ্য উপহার দিত।
ডুমুর ফল দিয়ে লাটিম, সাইকেলের পুরাণ টায়ার দিয়ে এক চাকার গাড়ী বানানো, হাডুডু, বৌচি, গুটি ... আরো কত নাম না জানা মজার খেলা যে ছিল!! সব এখন মনেও নেই!! একটূ চোখ বন্ধ করে কিছু সময়ের জন্য ফিরে যাবেন সেই ছোট বেলার বরনালী দিন গুলোতে? আরো কোন খেলার কথা মনে পড়ে??
যখন ছোট মানুষ হিসাবে বড়দের কাছে ডমিনেটেড (?) হতাম; তখন মনে মনে ভাবতাম... ইশ কবে যে বড় হব!! আর এখন ভাবি ... একটা দিনের জন্য হলেও যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই ছেলেবেলাটায়!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।