আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয়তমা, গল্প শুনবে?

:-) ----প্রিয়তমা, গল্প শুনবে? ----উমম্‌ গল্প?! ----হু। অনেক অনেক দিন আগেকার একটা গল্প। ----রূপকথা? ----হয়তবা! শোনোই না! ----আচ্ছা! বল তাহলে! ----বহুদিন আগে কালু মিয়া নামে একজন মানুষ ছিল। ----কালু? হিহিহি। ----গল্পের মধ্যে হঠাৎ হেসে উঠতে নেই, প্রিয়! সব গল্প যে গল্প হয়না! ----তুমি বড্ড বেরসিক! ----তাই? আচ্ছা! কালু মিয়ার গল্প বলা শুরু করি আবার।

কালু মিয়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করত। নিতান্ত-ই সাদাসিধে মানুষ কালু মিয়া। তাঁর ছিল পাঁচ ছেলে-মেয়ে। হাঁড়ি বিক্রির টাকায় সে অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়ে মানুষ করত, তাদের পড়ালেখা করাত। কিন্তু তাঁর একটা ছেলে মানুষ হলনা।

----ছেলে কি হল? বান্দর? হাহা। ----নাহ! বানর না, একটা ছেলে অমানুষ হয়ে গেল। ----ওমা! কিভাবে? ----ছেলেটা একদিন বিশাল কোটিপতি হয়ে গেল হঠাৎ করে। অনেক বড় আলিশান বাড়ি সেই ছেলের, যার বাবা একদিন মানুষের বাড়িতেই হাঁড়ি বিক্রি করত! ----বাহ! ভালো তো! ছেলে তো মানুষ হয়েছে। বাড়ি বানিয়েছে।

অতঃপর সে পিতাকে লইয়া সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল। ----হাহাহা। না প্রিয়তমা। সব গল্প যে গল্পের মত হয়না! গল্পের মত হয়না বলেই কালু মিয়ার ঠাঁই হয়না তানভীর মাহমুদের বিলাসী প্রাসাদে। কালু মিয়া একচালা ঘরের ফুটো দিয়ে ছানি পড়া চোখে তাকিয়ে থাকেন দূর্নীতিতে মোড়া ছেলের প্রাসাদের দিকে।

হয়তবা বিড়বিড় করে বলেন, খোদা, আমার ছেলেটাকে ভালো রেখ। বিপদ যেন তাকে স্পর্শ না করে। বাবার মন বলে কথা! কি অদ্ভুত গল্প, না? ----হুঁ। অদ্ভুত। কিন্তু তার চেয়েও অদ্ভুত হচ্ছে তোমার বলা কথাগুলো গল্প না।

কিছু রূঢ় সত্য। দ্যা সলিড ট্রুথ! গল্প হলেই হয়তবা ভাল হত! ----চিনতে পেরেছ তাহলে তানভীর মাহমুদকে? ----হ্যাঁ। ঐ কুলাঙ্গারকে কে না চিনে? ----তাও ঠিক। কি অবলীলায় তুমি তানভীরকে ‘কুলাঙ্গার’ বলে দিলে! কিন্তু যারা তানভীরের মাথায় হাত বুলিয়ে চার হাজার কোটি টাকা কিছুই না বলে মুচকি হাসি দেয়—তাদের তুমি কি বলবে প্রিয়তমা? ----আমি জানিনা। ----হাহাহা।

জানতাম, এটাই বলবে তুমি। ‘আমি জানিনা' কথাটা এই দেশের মানুষের সবচে’ বেশি ব্যবহার করা একটা শব্দ। তাইনা? সহজ ও বটে। এই জন্য এই দেশে যখন না খেতে পেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ মরে যায়—আমরা নরম গদিওয়ালা সোফায় শুয়ে ভ্রু কুঁচকে বলি, “মানুষ মরে গেল নাকি? কই আমি তো জানিনা!” যখন ঘরের মধ্যে মানুষ খুন হয়, সাগর-রুনীরা অকালে ঝড়ে যায়--আমরা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে বলি, “বাংলাদেশে কোন খুন-খারাবি আছে নাকি? জানিনাতো!” জানিনা, জানিনা, জানিনা! আমরা কিচ্ছু জানিনা! তারপর ও আমরা ঠিক-ই জানি, মাটি কামড়ে এই দেশের মানুষ টিকে থাকে। জনসংখ্যা কমেনা।

সবজীর দাম কমেনা। জ্যাম কমেনা। জীবনযাত্রার মান বাড়েনা! মানুষ তবু এই দেশে বেঁচে থাকে! বেঁচে থাকতে হয়! সারভাইভাল অফ দ্যা ফিটেষ্ট! ----সারভাইভাল অফ দ্যা ফিটেষ্ট? হাস্যকর! মরে গিয়েও বেঁচে থাকার অপর নাম হয়তবা! অন্তঃত আমাদের দেশের জন্য! ----আরে নাহ! কি যে বল? কে বলল আমরা মরে গেছি! অনন্ত জলিলের ছবি দেখে আর ইংরেজী শুনে ছেলেমেয়েরা হাসিতে গড়াগড়ি খায়, ফেসবুক ছেয়ে যায় রুগ্ন মানুষের কান্নার সচিত্র রসালো বর্ননা শেয়ার এবং ভিখারীর মত একটা লাইকের আবেদনে! ব্লগ কখনোবা ভরে উঠে প্রতিবাদে, প্রতিরোধে! আমাদের হাতে কত্ত সময়! কত্ত বিনোদনের উপকরণ! আমরা কত্ত সুখী! ----সুখ?! ফেসবুক বিপ্লব?! হাহ্‌! ষ্টুপিড কথাবার্তা! এইসব কত দেখলাম! বাংলাদেশ তিউশিনিয়া হতে এখনো বহু বাকি বন্ধু! দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আমাদের—একবার না, বারবার, বারবার! আর আমরা পিঠ ঠেকাতেই থাকি, ঠেকাতেই থাকি। ----তিউশিনিয়ার মত বিপ্লব করে লাভ কি প্রিয়তমা? বুয়েটে ন্যায়ের পক্ষে সুস্থ আন্দোলনকেই যখন দেশের প্রধান অসুস্থ বলে রায় দেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী যখন যুদ্ধাপরাধীদের জন্য দোয়া-খায়ের করেন—তখন তোমার কি মনে হয়, আমাদের দেশে সচল আন্দোলন খুব বেশি মূল্যবান?! ----তাহলে তুমিই বলে দাও আমরা কি করব? আমাদের কি করা উচিত? ----প্রিয়তমা, আমরা সব কিছু বরং আজব দেশের রূপকথার গল্প হিসেবে মেনে নিই। তারপর আবেগে চোখ বন্ধ করে আবৃত্তি করি, “আমি যে পৃথিবীকে চেয়েছিলাম, তাকে আমি পাইনি।

তখনো আমার সময় আসেনি। তখনো আমার সময় আসেনি। আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে। " ----হাহা! পাশ কাটিয়ে যেতে চাওয়া সব কিছু? এড়িয়ে যাওয়া? ----হু। এখন যাও প্রিয়তমা।

দরজাটা বন্ধ করে দাও। ----দরজা বন্ধ করে দেব কেন? ----হাহাহা। ভয় পাচ্ছ তুমি, প্রিয়! আমাকে? ----নাহ! ----তাহলে কাছে এস। আমি দ্বার বন্ধ করে দেই। সত্যকে ঢুকতে দেওয়ার দরকার নেই।

আমরা বরং ভ্রমটাকেই রুখি। সত্য পঁচে মরুক। কিংবা বেঁচে থাকুক। দেশ উচ্ছন্নে যাক। আমার কি? আমার তো এখনো সময় আসেনি।

আমি জন্মেছি ভুল সময়ে। সেইজন্য-ই বুঝিবা আমার পা-ও চলেনি সঠিক পথে! চলবেও না কখনো! হাহাহা! তাই বেদনার পায়ে চুমু খেয়ে বলি, এই তো জীবন! অনেক কথা হল। এখন কাছে আস তো! বেদনারে চুমু দেওয়ার দরকার নাই। আমার ঠোঁটে মিষ্টি একটা চুমু দাওতো! প্লীজ! প্রিয়তমা! ______________ গল্পের পেছনের গল্পঃ অনেকদিন আগে ব্লগে একটা লেখা লিখেছিলাম মানুষ শিরোনামে। আজ প্রায় এক বছর পর মনে হল, আবার ও কিছু কথা লেখা দরকার ঠিক একইভাবে।

নিজের প্রশান্তির জন্য-ই! লিখতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, এখনকার সরলতা এক বছর আগের মত-ই আছে। একইভাবে ভাবে, একই কথাগুলো-ই ভাবে! শুধু বিষয়বস্তু পালটে গেছে। দাবার গুটি চালানো মানুষগুলো বদলে গেছে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।