আমার প্রথম ব্লগ
বুল্লেহ শাহ্ র জীবনদর্শন আমাকে ভীষন ভাবে নাড়া দেয় ওনার কাফি গুলি আমার অত্যন্ত প্রিয়। বুল্লেহ র সহনশীলতা তার প্রেমিক হৃদয় এর গভীরতা আমাকে ভীষন ভাবে অনুপ্রানিত করে । আজ সকালেই ঠিক করে ফেলি যে আমার এই প্রিয় মানুষটির জীবনকাহীনি দিয়েই শুরু করব সামু তে আমার ব্লগযাএা বুল্লেহ কিন্বা লালন সাঁই হোক আমাদের অনুপ্রেরনা। যাইহোক-
সন্ত বুল্লেহ শাহ্ ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ট সূফি সাধক। শুভ নাম আবদুল্লা শাহ্, তাঁর জন্ম ১৬৮০ খ্রি:, লাহোরের অন্তগত কসুরের পণদৌকি গ্রামে।
এক গোঁড়া সৈয়দ বংশে তার জন্ম ও বাল্যকালের শিক্ষাদীক্ষা। তাঁর পিতা ছিলেন ধমভাবাপন্ন। গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বুল্লেহ যান লাহোরে সেখানে দেখা সন্ধান পান প্রসিদ্ধ সুফি সাধক শাহ্ ইনায়ৎ ক্কাদিরির। ইনায়ৎ ক্কাদিরি ছিলেন ক্কাদিরি সন্প্রদায়ের একজন বিখ্যাত সুফি সাধক। সুফিতত্ত্ব সন্বন্ধে তাঁর কোরানের একটি টীকা প্রসিদ্ধ ।
বুল্লেহ তাঁকে মুরশিদ বা গুরুরূপে বরণ করেন।
বুল্লেহ সুফিমতে দীক্ষা গ্রহন করাতে তাঁর্ পরিবারের সকলেই অসন্ত্তষ্ট হলেন। বংশমর্যাদা ভূলে বুল্লেহ একজন সাধারন মানুষকে গুরূপদে গ্রহন করাতে আপত্তি ওঠে। বুল্লেহ এদেঁর হাতে অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করেন। শেষকালে তাঁর আন্তরিকতা দেখে পরিবারের লোকজন তাঁর প্রতি বিরোধিতা করা ছেড়ে দেন।
শোনা যায় তার এক আপন বোন সবসময় তাকে সহায়তা ও সাহায্য করেছিলেন। বুল্লেহ পরিবারের সন্পক ত্যাগ করে লাহোরে গিয়ে মুরশিদ ইনায়ৎ এর সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। গুরুর নিদেষে তিনি গোপনে সাধন-ভজন করতে থাকেন।
দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থায় প্রচলিত মুসলিম মতবাদের বিরুদ্ধে যাওয়া বিপজ্জনক ছিল। ইনায়ৎ শিষ্যকে প্রকাশ্যে সুফিমত প্রচার করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন।
কিন্ত দেখা গেল বুল্লেহ ইসলামের শরিয়ত মেনে চলছেন না। উপরন্ত শরিয়তের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। ইনায়ৎ বিরক্ত হন। তিনি ত্বরীক্কৎ (সাধনার পথে প্রাথমিক স্তর) –এর আড়ালে হক্কিকত(সুফিমতে আল্লাহ্ কে লাভের স্তর )গোপনে অনুসরন করতেন। রাজরোষের ভয়ে বাইরে কিছু বলতেন না বা করতেন না।
সে সময় ঔরঈজেবের রাজত্ব, ভয়ে সবাই তটস্থ থাকতো। বুল্লেহর প্রতি বিরক্ত হয়ে ইনায়ৎ তাকে ত্যাগ করেন। কিছুদিন পর বুল্লেহ বুঝতে পারেন তিনি যে পথে চলছেন তাতে অযথা বিপদ ডেকে আনা হবে। তার মনে অনুশোচনা হয় এবং তিনি গুরু নিকট ক্ষমা প্রাথনা করেন। ইনায়ৎ তাতে সাড়া দেন না।
বুল্লেহ জানতেন নাচ ও গানের প্রতি তাঁর গুরুর প্রীতি। তিনি ধৈর্যসহকারে নাচগান ভালভাবে শেখেন। লাহোরে গিয়ে তিনি সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন।
ইনায়ৎ ক্ষমা করেন, আবার তাঁকে পুনরায় গ্রহন করেন । বুল্লেহ তার গুরুর সৎসঙ্গে লাহোরে বাস করতে শুরু থাকেন।
যতদিন ইনায়ৎ জীবিত ছিলেন তিনি তাকে ছায়ার মতো অনুসরন করেছিলেন।
বুল্লেহের সাধন জীবনে দেখা যায় ৩টি স্তর। প্রথম স্তরে তিনি সুফিমত সন্বধে পড়াশুনা করেছিলেন ও সাধন-ভজন শুরু করেছিলেন । সেইসাথে তিনি শরিয়তের বিধিনিষেধ মেনে চলছিলেন। এই কালেই তিনি শুরু করেছিলেন কাফি রচনা [সাধারনত পাঞ্জাবি সুফি কবিতাকে কাফি বলে।
ফরাসি কাফিয়া (Rhyme) হতে এর উৎপত্তি। ]
দ্বিতীয় স্তরে দেখা যায়, তিনি সাধনজীবনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন। এখানে সাধকের গভীর শ্রদ্ধায় প্রেমাস্পদ দীক্ষাগুরু তাঁর ইষ্টের মযদা লাভ করেছেন। সাধকের দৃষ্টিতে গুরু ইষ্টে লয় হয়েছিলেন। এখানে বুল্লেহের দৃষ্টিতে তাঁর গুরু ইশ্বর অভেদ।
দ্বিতীয় স্তরের শেষভাগে বুল্লেহে আল্লাহ্ কে দষন করে ধন্য হয়েছিলেন। তিনি চান আল্লাহ্ র সাথে একাত্ম ঐকান্তিক মিলন ।
সাধক এগিয়ে চলেন। ক্রমে তিনি আরোহন করেন চরম সোপানে বোধ করেন পরম সত্য। আনন্দিত সাধক কবির কন্ঠে উচ্চারিত হয় অমিয় গীতি।
তিনি বলেন : পাইয়া হৈ কুছ্ পাইয়া হৈ সদ্ গুরু নে আল্লাখলখাইয়া হৈ। মানে আমি পেয়েছি,আমি কিছু পেয়েছি, সদ্ গুরু আমায় অরুপরতন আল্লাহ্ কে রুপবান করে (অব্যক্তকে ব্যক্ত করে)দেখিয়েছেন।
সন্ত বুল্লেহ্ র আল্লাহ্-অন্ত জীবন। তিনি সবসময় আল্লাহ্ র ভাবে পরিপুন থাকতেন। তিনি সবভূতে দশন করেছিলেন প্রেমময় আল্লাহ্ কে।
ছোট-বড়, মূখ-বিদ্বান, ধনী-দরিদ্র সকলের মধ্য অনুভব করেছিলেন সেই প্রেমময়কে । জীবনের শেষপ্রান্ত সন্ত বুল্লেহ অনুভব করেছিলেন যে, সেই একই আল্লাহ্ মহম্মদ, খ্রিষ্ট, কৃষ্ণ ও একজন রাস্তার ভিখারি সকলের মধ্যই রয়েছেন। তিনি ‘কানুন-ই-ইশক্’ এর মধ্যে বলেছন :
‘বৃন্দাবন মেঁ গৌ চরাবে !
লন্কা চড়কে নাদ্ বজাবে। ।
মক্কে দা বন্ হাজি আবে।
বাহ্ বাহ্ রং বটাই দা;
হুন কি থী আপ ছপাইদা। । ‘
অর্থাৎ তুমি বৃন্দাবনে গরু চরিয়েছিলে, তুমি লন্কাতে বিজয়নাদ বাজিয়েছিলে। আবার তুমি মক্কায় হাজি সেজে এসেছিলে। আর্শ্চয তুমি কত রুপ রং না বদলালে ! এখন কি আর তুমি লুকিয়ে থাকতে পারবে?
এভাবে তিনি বিভিন্ন ধমের সকল দেবতার মধ্যে আবিস্কার করেছিলেন সেই এক পরম সত্যকে।
এক অদ্বৈত্য অনুভূতিতে মগ্ন থাকতেন সন্ত বুল্লেহ্ । তাঁর কাছে এই বিশ্বভুবনের ভিন্ন কোনও অস্তিত্ব ছিল না।
লাহোরে তার গুরুদেব ইনায়ৎর দেহত্যাগ হলে তিনি জন্মভূমি কাসূর এ ফিরে আসেন। তিনি প্রিয়তম আল্লাহ্ র ভাবনায় সারাজীবন এতই বিভোর হয়েছিলেন যে, তাঁর আর বিয়ে করা হয়নি । তাঁর ভাবের অনুরাগী তাঁর আপন বোনও সারাজীবন অবিবাহিতা ছিলেন।
সন্তের জীবনের শেষভাগে এই সাধিকা বোন তাঁর সঙ্গে
বসবাস করতেন। সন্ত বুল্লেহ্ র দেহান্ত ঘটে ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দে। কাসুর এ তাকে সমাহিত করা হয়। সেখানে তাঁর সমাধিস্থান সাধকদের প্রিয় তীথস্থান।
তার নিকট আত্মীয়স্বজনেরা তাঁকে ত্যাগ করেছিলেন।
কিন্তু সাধারন মানুষের মনের গভীরে তিনি পেয়েছেন চিরস্থায়ী আসন। ইশ্বর প্রেমীদের হৃদয়ে উজ্বলভাবে জ্বলছে তাঁর জীবনের দীপশিখা। কাব্যসাধক দের কাছে তাঁর রচিত কাফি গুলি আনন্দসূধা।
সন্ত বুল্লেহ্ শাহ্ র ধর্মচেতনা শুধু যে মুসলমান দের প্রেরনা জুগিয়েছিল তাই শুধু নয় হিন্দুদের ও উৎসাহিত করেছিল। সন্ত বুল্লেহ্ শাহ্ ৩০ টি কাফির সংস্কৃত ছন্দে অদ্বৈতমুক্তাবলী টীকা্ লিখেছিলেন স্বামী বিষ্ণুদেবানন্দ গিরি।
এ থেকেই বোঝা যায় হিন্দু-সাধকদের কাছেও কত আদরনীয় সন্ত বুল্লেহ্ এর জীবন ও বানী।
বুল্লেহ্ র কাফি র একটি গান রাব্বি সেহগিল গেয়েছেন কাফি টি আমার খুব প্রিয় গানটিও খুব সুন্দর লিন্ক দিলাম
View this link
" Bulleh Shah must find his love,
He needn’t have the last fright.
His love is around, yet he looks for Him,
Misled in the broad daylight.". ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।