এদেশে যারা অন্যায়ের রাজা হাতে তাদের রাজদন্ড; আমরা হবো সত্য, হাতে ন্যায়দন্ড। রাজার পক্ষে নিযুক্ত রাজবেতনভোগী রাজকর্মচারী। আমাদের পক্ষে সকল রাজার রাজা, সকল বিচারকের বিচারক, আদি অন্তকাল ধরে সত্য – জাগ্রত আল্লাহ...
রাসূল স. বলেছিলেন, কেয়ামত তথা মহাপ্রলয়ের আগেই এই উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে শুধু একটি হবে নাজাতপ্রাপ্ত। এই হাদিসটি একটি ভবিষ্যৎবাণী এবং প্রিয়নবীর মু’জেযাও বটে।
কিন্ত উম্মতের জন্য বড়ই দুঃখজনক এবং নির্মম বাস্তব।
কিন্ত এই মাধ্যমে সুযোগ সন্ধানী, বা অতিউৎসাহী ধরণের মানুষেরা লোকমনে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকেন। যেকোন নতুন মাধ্যম দেখলেই নতুন ফেরকা বা ‘ইসলামে আরেকটি দলের উদ্ভব হয়েছে’ বলে বলে মূলত তারা ইসলামের মান ক্ষুণ্ন করার দুঃখজনক চেষ্টাই করে যান। আমরা বলবো না তারা এমন কাজ ইচ্ছা করেই করেন, বরং আমাদের অজ্ঞতাই এক্ষেত্রে মহাভূমিকা পালন করে।
মূলত ইসলামে ফেরকার অর্থ কী এবং কখন একটি জামাত বা দলকে ফেরকা বলা যায় এ সম্পর্কে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জানাশুনা নেই বললেই হয়।
তাই এখানে প্রথমেই আমরা উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ আলেম মাওলানা মনযুর নো’মানী রহ. এর একটি অতিপ্রাসঙ্গিক আলোচনা তুলে ধরছি। “কোন সম্প্রদায় কখনো এ ঘোষণা দিয়ে সৃষ্টি হয় না যে, সে একটা সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে উঠেছে। বরং তার নিজস্ব ধর্মীয় চিন্তাধারা, মতামত ও দাবীসমূহই তাকে উপদল বা সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে তোলে। আপনি যখন একথা বলবেন যে, পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও খাঁটি সত্য কেবল আপনার কাছেই রয়েছে এবং আপনিই তার দাওয়াত নিয়ে খাড়া হয়েছেন, আপনি ছাড়া অন্যন্য মুসলমান, ওলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখে এ’জামের নিকট যে দ্বীন আছে, তা-ও আংশিক অথবা বাতিল মিশ্রিত এবং আপনার দাওয়াত গ্রহণ করা তাঁদের জন্য আবশ্যক, যদি গ্রহণ না করে তাহলে তাদের ‘পজিশন’ ও মর্যাদা তাই হবে যা ইহুদী জাতির ছিল, তখন আপনিই তো আপনার এবং অন্যান্য মুসলমান জাতির মধ্যে পার্থক্য ও ভেদ রেখা টেনে দিচ্ছেন এবং এভাবেই আপনা-আপনিই একটা স্বতন্ত্র সম্প্রদায়ের জন্ম হয়ে যায়। যদিও বা আপনি হাজারো বার ঘোষণা করেন না কেন, ‘আমরা কোন সম্প্রদায় নই এবং আমরা সম্প্রদায় সৃষ্টির বিরোধী’।
”
এর আলোকেই আমরা বুঝতে পারি কারা ফেরকা, এবং কারা ফেরকা নয় বরং অধুনা মাধ্যম মাত্র।
এবার আসুন তাবলিগী দাওয়াত সম্পর্কে। বাস্তব কথা হলো আমি এবং অন্য কেউও এখন পর্যন্ত কারো মুখে শুনিনি যে, দাওয়াত ও তাবলিগের ব্যক্তিবর্গ কখনো দাবি করেছেন, তাদের এই দাওয়াতই একমাত্র খাঁটি। বাকিরা ভুল বা আংশিক সত্যের মাঝে আছে। এবং তারা উম্মতের মাঝে তাওয়াতুর বা ধারাবাহিকভাবে হাজার বছর ধরে চলে আসা সকল বিষয়েই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’কে অনুসারণ করেন।
সুতরাং দাওয়াত ও তাবলিগকে ভিন্ন ফেরকা বা ভ্রান্ত মতবাদ মনে করার আসলে কোন অবকাশই নেই। যদিও এই ভুল এখন অনেক কমে এসেছে, তবু যারা করে থাকেন তাদের প্রতি নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করার আহ্বান রইলো।
প্রসঙ্গতই বলতে হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত কারা। সুন্নাত তো হলো প্রিয়নবী স. এর ত্বরীকা বা পথ ও পন্থা। আর সাহাবাগণই হলেন জামা’আত।
প্রতি যুগেই তাদের সঠিক অনুসারী বাস্তব ছিলো। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এইযুগে যারা সু্ন্নাত এবং সাহাবা জামা’আতের অনুসরণ-অনুকরণ করবে আসলে তারাই প্রকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত।
মনে রাখবেন, মধ্যবর্তী এই সুদীর্ঘ চৌদ্দশ বছরে বিগত হওয়া সত্যপন্থী ওলামাদের কারো, বা কোন বিরাট সংখ্যকের সাথে যদি, আপনার ধর্মীয় চিন্তাধারা, মতামত ও দাবিগুলো সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি সৎ পথের দিশা হারিয়ে ফেলছেন এবং নিজের অজান্তেই আরেকটি নতুন চিন্তাধারা জন্ম দিচ্ছেন।
কারণ, সাড়ে চৌদ্দশ বছর পর আপনার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক খাটিয়ে আপনি যা বুঝেছেন তা প্রকৃত দ্বীন না, বরং প্রকৃত ও সত্য তো সেটা যা, নবিজী স. আমাদের শিখিয়ে গেছেন, এবং উম্মতের বিশ্বস্ত ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণের মাধ্যমে তাওয়াতুর বা ধারাবাহিকভাবে আল্লাহ তাআলা নিজের দ্বীনকে পূর্ণ সংরক্ষণ করেছেন এবং আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন।
কিন্ত অনেক জ্ঞানী মানুষ আছেন যারা, পূর্বসূরী সত্যপন্থী ওলামাগণের এই অনুগ্রহ(বাস্তবে তা আল্লাহরই অনুগ্রহ) অস্বিকার করেন।
এবং অনাকাঙ্খিতভাবে দাবি করে বসেন যে, ‘তাঁরা কুরআন-হাদিস বুঝেননি, বুঝেছি আমরা। তারা ছিলেন ভুল বা আংশিক দ্বীনদার। আজ এত বছর পর আমরা ঐ সকল বিষয় বুঝে ফেলেছি, তারা যা নবিজীর নিকটবর্তী যুগের হয়েও বুঝতে পারেন নি’ ।
আশ্চর্য ! সত্যিই আশ্চর্য না হয়ে যাবো কোথায় ? নবিজী স. বলেছিলেন, আমার এই যুগ সর্বোত্তম, তারপর পরবর্তী যুগ, তারপর পরবর্তী যুগ……….। এই জ্ঞানী মানুষদের জ্ঞানের স্পর্ধা দেখে বড়ই আশ্চর্য হতে হয় !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।