আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা, ১৬শ অধ্যায়

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে ১৫শ অধ্যায় Click This Link ইমন দেখেছে রাকিবের মায়ের চোখের কোণে চিকচিকে অশ্রুবিন্দু, ইমন জানে নিজে সে ভাবপ্রবন বেশী ; সেই কারনে বাস্তবপ্রবন কম এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে অধিক বিচরন। বেরিয়ে এসে মনে হল একটা কিছু করতে হবে , হাল ছেড়ে দেবে না সে । রাকিবের কষ্ট, তার মায়ের দু:খ এসব ডিঙ্গিয়ে সে কিছুতেই লীনার সুখীমুখের কাছে পৌছুতে পারে না, কোনভাবেই না । হাটতে হাটতে ফোন দিল লীনার বান্ধবী মিতাকে । ওর বরের সাথে তার দীর্ঘসূত্রিতায় আত্মীয়তা আছে, আজ খুব কাছের মনে হল ।

জানিয়ে দিল দেখা করতে চায় মিতা এবং ওনার সাথে । এরই মধ্যে রুমানাকে বলে রেখেছে জরুরী প্রয়োজন আছে যেন সময় দেয় । লীনা এবং রাকিব উভয়ের শুভাকাঙ্খী এরা কজনা, এদের সবাইকে নিয়ে একটা কোন উপায় বের করতে পারবে এমন একটা ক্ষীণ আশার আলো উঁকি দেয় ইমনের মনে । মিতা সব জানে লীনার ব্যাপারে, লীনা যেমন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু দীপুও তার একজন ভাল বন্ধু; এদের আলাপচারিতা নি:শব্দে শুনছিল সে । কিন্তু সবার সব কথা শুনে তারও মনে হল দীপু নিজেও কি এসবের মধ্য থেকে লীনাকে নিয়ে সুখী হতে পারবে ? লীনা কি পারবে সব কিছু ভুলে দীপুকে নিয়ে সুখী হতে ? হয়তো পারবে ! সময়ে মানুষ সব মানিয়ে নেয় ।

আবার মিতার মনে হল লীনা বাকীটা জীবন কি করে মেনে নেবে তার প্রিয় মানুষ চাচীর দু:খ, ছেলের একাকী দূরের জীবনে চাচী তার কতটা অসহায় বোধ করবে এসব ভেবে লীনা কি আসলেই ভাল থাকতে পারবে ভেবে ভেবে মিতারও মনে হল অন্য কোন কিছু । সেই উদ্যোগ নিল দীপুর সাথে এই বিষয়ে আলাপ করবার জন্য । রুমানা দায়িত্ব নিল তার মায়ের সাথে কথা বলবার । লীনা বা রাকিবকে এখনই কিছু না বলবার সিদ্ধান্ত নিল সবাই । মানুষ ভাবে একরকম ঘটে অন্যরকম ।

মিসেস রেহানার সাথে রুমানা বিষয়টা আলাপ করতেই উনি বারন করে দিলেন কোন নতুন উদ্যোগ গ্রহন করতে । লীনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, দুই পরিবারের অনেকে জেনে গেছে এই বিয়ের কথা । এখন আর নতুন কোন ইস্যু যেন তৈরী না হয় । রুমানা লক্ষ্য করলো তার মা কিছুদিনের মধ্যে কেমন নরম হয়ে গেছেন, হয়তো কাউকে কিছু বলতে পারছেন না মন খুলে, সবার মঙ্গলের জন্য সব মায়েরাই আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত; মা মানেই কি মেনে নেয়া । রুমানা জানে রাকিব তার মায়ের কতখানি ।

সে শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করলো , বললো ' আম্মা ধরো লীনার বিয়ে হয়ে গেল দীপুর সাথে তখন লীনা যদি অনুধাবন করতে পারে তার কারনে রাকিব একাকী জীবন বেছে নিল ,তার প্রিয় মানুষ চাচী তিনিও কষ্ট পাচ্ছেন তখন কি ও পারবে নিজেকে সুখী ভাবতে, তোমরা কি একবার সুযোগ দেবে না ওকে ভাবতে ? রেহানা: ভেবে কি সিদ্ধান্ত নেবে সে ? আমরা কি পারছি কোন উপসংহারে পৌছুতে? ছেড়ে দাও এসব , সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে । লীনা অন্যরকম মেয়ে , ও যদি আমাদের এমন চিন্তা ভাবনার বিষয়ে জানতে পারে তখন কি হবে জানো ? ও দীপুকেও বিয়ে করবে না আবার রাকিবের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবে না দীপুকে কষ্ট দেয়া হবে ভেবে । মাঝখান থেকে মেয়েটা হয়তো বিয়ে শাদীর পথই মাড়াবে না । ও অন্যের কষ্টকে বেশী গুরুত্ব দেয় । কি হবে এসব ঘাটাঘাটি করে ? রুমানা আমি কোনভাবে চাই না তুমি লীনার স্বাভাবিক আগামী দিনগুলোতে কোন ঝঞ্ঝাট তৈরীতে বিশেষ ভূমিকা রাখো ।

লীনার সাথে এসব বিষয়ে কোন কথা বলবে না এটাই আমার অনুরোধ । রুমানা কি করবে বুঝতে পারে না । আপাতত: মায়ের অনুরোধ মাথায় রেখে দিল । কিন্তু মিতা ? ও লীনার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ে । দীপু ঢাকায় এলে কালবিলম্ব না করে তার সাথে খোলাখুলি সব আলাপ করে, করতে হয় তাকে।

কারন দীপু নানা প্রশ্ন করে করে সব পরিষ্কার করে নিতে চায় । প্রথমেই জানতে চায় লীনার মতামত এবং যখন শোনে লীনা জানেনা এসবের কিছু তখন অবাক হয় । তারপর মিতাকে বলে , ' তোমরা কি করে ভাবলে আমি লীনাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে ভাবতে পারবো জীবন সঙ্গী হিসেবে, তোমরা রাকিব ভাইয়ের জন্য এত ভাবছো আর আমার জন্য ? আমার কি অপরাধ ? আমার কথা কিছুই ভাবছো না ?' মিতা : দীপু তুমি এবং লীনা দুজনই আমার ভাল বন্ধু, আমি কোনভাবে চাই না কোনদিন তোমরা নিজেদের কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারো এমন কারনে যার সমাধান কোন পথে আসবে না । রাকিব ভাই লীনার চাচাতো ভাই তুমি জানো এবং এটাও জানো যে পারিবারিকভাবে ওদের সবার আন্তরিকতা ঈর্ষনীয় । রাকিব ভাইয়ের অবিবাহিত একাকী জীবনের যে দীর্ঘশ্বাস সেটা দুই পরিবারের সবার গায়ে লাগবে এবং তার উত্তপ্ত রেশ লীনা যেখানেই থাকুক তাকে বিমর্ষ করবে ।

আমি সব সময়ে চেয়েছি তোমার আর লীনার সুখের যুগলবন্দী জীবন । কিন্তু আজ মনে হল এসব কথা তোমাকে বলা প্রয়োজন , যদি তোমার বা তোমাদের কোন দ্বিতীয় পথ থাকে । আমি নিজেই জানি না আমার কি বলা উচিৎ , কোনটা ঠিক কোনটা ভুল মানুষ কি পারে আসলেই নির্ণয় করতে ? আমাকে ভুল বুঝো না দীপু । দীপু: আমাকে আর কিছু বলো না, আমি কোনকিছুর বিনিময়ে লীনাকে হারাতে চাই না; লীনাকে গিয়ে বলবে আমি আর সময় নেবো না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে হবে । বুঝতে পারছি ঝামেলা বেঁধে যাচ্ছে ।

পৃথিবীতে তোমাদের রাকিব ভাই আর কোন মেয়ে পেল না , লীনাকেই তার মনে ধরল । আর এটাও জেনে রেখো লীনা রাকিব ভাই টাই কাউকে মেনে নেবে না, নিতে পারে না । দীপুর শেষের কথাগুলো এতটাই উচ্চ:স্বরে শোনালো যে মিতা আর কথা বাড়ানো সমীচীন মনে করল না । লীনার বিয়ে হবে আনন্দ হবে স্ফূর্তি হবে এমনটাই স্বাভাবিক । অথচ ভেতরে ভেতরে একটা চাপা নিরানন্দ গুমোট ভাব ।

লীনার বাবা আনোয়ার সাহেব এর মধ্যে একদিন মিসেস সালমাকে বললেন , ' শোন লীনার মা, লীনার বিয়ে হয়ে গেলে ভাই আর বেশী দিন দেরী করবেন না এই বাড়ী ডেভেলপারকে দিয়ে দিতে' । মিসেস সালমা: কেন তোমাদের দুই ভাইয়ের শর্ত হয়েছিল লীনা এবং রাকিবের বিয়ে হয়ে গেলে পরে এ বাড়ী ভাঙ্গা হবে । রাকিবের বিয়ের কিছু তো হোল না । আনোয়ার সাহেব : নাহ্ , ভাই নাকি রাকিবের সাথে কথা বলেছে , সে জানিয়ে দিয়েছে তার বিয়ের কোন ঠিক নাই কবে করবে তাই বাড়ী ভাঙ্গার বিষয়ে ওর বাবা নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে । এই শেষের কথা গুলো লীনার শোনা হয়ে যায় ।

কি দিয়ে কি হবে তারপর । চাচীরা তখন আলাদা থাকবে , আম্মা- আব্বা কেমন থাকবে এতকিছুর পরে , কিছুই ভাল লাগে না তার । পরদিন বাড়ীতে বলে মিতার সাথে সারাদিন কাটাবে বলে বেরিয়ে গেল । বিয়ের কিছু কেনা কাটাও দরকার আছে । মিতা মনে মনে এমন একটা কিছু চাইছিল আবার দ্বিধাগ্রস্ত ; লীনাকে খুব একটা উচ্ছ্বসিত লাগল না মিতার ।

লীনাই বলল , ' কিছুই ভাল লাগছে না , বিয়ে বিয়ে করে আর সামনে এগুতে পারছি না । বিয়েটা হয়ে গেলে বাসার সবার জন্য কেমন একটা পরিস্থিতি হবে ভাল লাগছে না । বিয়েটা কিছুদিন পিছিয়ে দেয়া যায় না ? কি বলিস?' মিতা : কি যে বলিস , দীপু তো তাড়া দিচ্ছে এগিয়ে আনবার জন্য । ওর আর তর সইছে না মনে হয় । লীনা : আমি কি করবো ? দুই পরিবারের একটাই ছেলে রাকিব ভাই সেও দেশে নেই , আসবেও না মনে হয় এখন ।

রুমানা আর তার জামাই নিয়ে কত দিক সামলাচ্ছে। বিয়েতে অনেক ঝামেলা, চাচী আছে তাই কত কিছু সহজে হয়ে যাচ্ছে । চাচী মানুষটা এত ভাল অথচ সারা জীবন কত কষ্ট পেল, শুধু কষ্টই পেল আর কিছু পেল না । মিতা নিজেকে সংযত করতে পারল না । বলল ,' তোর কারনে আরো কষ্ট এই ভাল মহিলার; তুই কি বুঝতেও পারিস না যে রাকিব ভাই তোর কারনে দেশ ছাড়া , এখন শুনছি বিয়ে শাদীর পথও নাকি মাড়াবেন না কোনদিন ।

আমরা অনেক কিছু জেনেছি এবং সে সব নিয়ে ভেবেছি লাভ হয় নি । দীপুকেও বলেছিলাম সে আরো বিগড়ে গেল । এসব জেনে বলছে তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে চায় । মিতা দেখল লীনার মুখটা বিষন্ন । চোখের কোনে পানি টলটল করছে ।

নি:শব্দে বসে রইল দু্জন । কিছুক্ষন পরে লীনাই বললো, জানিস তো আমি চাচীকে কতটা ভালবাসি , চাচী কতটা বাসে সে কথা আর কি বলবার আছে নতুন করে ; কিন্তু এখন আমি করবো কি ? আমার বিয়ে শাদীর ইচ্ছে মাথা থেকে চলে যাচ্ছে । কিন্তু দীপুকে ঠকানো আমার দ্বারা সম্ভব নয় মিতা । কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে সব ছেড়ে , এত ঝামেলা আর ভাল লাগছে না । দীপু এখন ঢাকায় থাকলে ভাল হোত, ওর সাথে কথা বলে যদি কোন লাভ হোত ।

মিতা, আমি আর পারছি না । আমি দীপুকে বিশেষ একটা অনুরোধ করবো তুই আমার পাশে থাকবি প্লীজ । লীনার চিঠি হাতে নিয়ে বিকেলের নির্মল আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে দীপু। আজ দুপুরে কুরিয়ার সার্ভিসের লোক দিয়ে গেছে । প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল লীনার পাঠানো এটা দেখে , আর এখন খুলে পড়ে তারপর বিস্ময়ে হতবাক ।

" আগামী সাতদিনের মধ্যে তোমার আমার বিয়ে হচ্ছে । এটা একা আমার সিদ্ধান্ত । এই চিঠি পাবার পর যত তাড়াতাড়ি পারো চলে আসো, তুমি এলে তারপর বাড়ীতে জানাবো । কোন প্রশ্ন নয় , কোন অজুহাত নয়; দেরী করবে না । তোমার কারনে দেরী হয়ে গেলে পরবর্তীতে কোন ঘটনায় আর কোন অভিযোগ নিয়ে দাড়াতে পারবে না ।

" চিঠির এই কয়টি লাইন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেকবার পড়ল দীপু । এ সব কথার পেছনে আরো কত কথা আছে ? কত ব্যথা আছে লীনার -- কোন কূল কিনারা খুঁজে পায় না দীপু । লীনা তার ঠিকানা, সব ভাল লাগা মন্দ লাগার নিশানা , এই লীনার কষ্ট তাকে পিষে ফেলতে চায়, মনে হোল পাঁজরের শক্ত হাড় গুড়িয়ে যাচ্ছে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে দীপুর অস্তিত্ব । ভালবাসবার মত বিড়ম্বনা আর নেই, কোন ধারালো অস্ত্র পারে না ভালবাসার মত সুক্ষ্মভাবে এফোড় ওফোড় করে দিতে চিন্তাস্রোত - অনুভুতি । দীপু কি আজ এক্ষুনি পথে নামবে , কোন দ্রুতযান শুধু নয় দ্রুততম যান প্রয়োজন তার ; এক ছুটে চলে যেতে চায় সে লীনার কাছে ।

লীনাকে হারানোর মত কোন ভুল সে করবে না । লীনা তার জীবনে কতখানি সে বুঝে গেছে এতদিনে । খুশীর আনন্দে ভেসে যাবার বদলে উদ্বিগ্ন দীপু একা একা পায়চারী করে কোয়ার্টারের বারান্দায় । রাতে দুটো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে নেয় । বেশী ধকল সে নিতে পারে না ।

চলবে...  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।