আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা , চতুর্থ পর্ব ।

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে

অসমাপিকা , তৃতীয় পর্ব Click This Link মোবাইলে চার্জ আছে কিনা দেখে রাখে লীনা । সন্ধ্যার পর হতে বার বার মোবাইলের দিকে চোখ চলে যেতে থাকে । কেন ফোন আসছে না , মিজান কথা বলতে পেরেছে কিনা দীপুর সাথে নানান কথা ঘুরপাক খায় মাথায় । রাতের খাবার খেতে বসে বার বার আনমনা হয়ে পড়ে সে । মা খেয়াল করে বলে , ' অনিয়ম করো না লীনা , খাওয়া - ঘুম এ সব শরীরের জন্য '।

হু হা করে টেবিল ছাড়ে লীনা । খাওয়ার টেবিল থেকে আচার আর চাটনী ফ্রীজে ঢুকিয়ে রাখতে গিয়ে শোনে তার মোবাইলে রিং হচ্ছে । ফোনটা ধরতে শেষ হয়ে যায় রিং টোন , জ্বলজ্বল করে আজ দুপুরে সেইভ করা নাম 'দীপু' । কোনদিন যা হয়নি আজ টের পায় তার অস্থির লাগছে ভেতরে ভেতরে , দীপুর ফোনের জন্য অপেক্ষা ছিল বিকেল থেকে । অথচ এখন দীপুর ফোন পেয়ে মনে হচ্ছে কি বলবে , কি ভাবে কথা বলবে , কি করে শুরু করবে ।

ফোনটা অফ করে দিল । বাসায় এখন পরিবেশও নেই কথা বলবার । এক একবার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ছে , আবার কেমন সংকোচ । সব কিছু তার নিয়ন্ত্রের বাইরে চলে যাচ্ছে , সে নিজেও কি নিজের নিয়ন্ত্রনে আছে ? ঘুমুতে গেল অন্যরাতের চেয়ে খানিক আগে । বিছানায় শুয়ে এপাশ -ওপাশ করতে করতে ঘুম এলো অনেক রাতে ।

ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলে যার কথা প্রথম মনে পড়ল সে হল দীপু । না জানি ফোন বন্ধ দেখে কেমন রিয়েক্ট করল ! আজ একটা বিশেষ দিন লীনার জীবনে । ও কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিতে চায় না । যেভাবে ভাবতে চাইছে পারছে না , কোথায় যেন তাল কেটে যায় বার বার । দীপুকে ও কষ্ট দিতে পারবে না আজ এতটুকুই মনে পড়ছে তার , তারপর সব কিছু অস্বচ্ছ ।

সব দিন যেমন করে ইউনিভার্সিটিতে যায় বাড়ীর লোকে হাসে , বন্ধুরা অবাক হয় তার পোষাকের উদাসীনতায় । ওর মনেই হয় না কখনো সেজে সুন্দর করে যাবার কথা ক্লাসে । পরিপাটি ভাবে গেলেই হয় ! আজ ইচ্ছে করছে সাজতে । অনেকক্ষন আয়নার সামনে বসে থেকে লজ্জা পেয়ে বসে তাকে । কাজল দিয়ে সময় নিয়ে চোখকে সাজায় , হালকা লিপস্টিক বরাবরের মত ।

টের পায় সব কিছুতেই তার তালগোল পাকিয়ে যাওয়া । নয়টার ক্লাস শেষ করে দশটায় থাকবার কথা ক্যান্টিনে দীপুর । লীনা নিজেই আর নয়টার ক্লাসে ঢোকে না । কি যেন একটা লুকোবার ছল , কেন তার মনে হচ্ছে সবাই সব জানে আশে পাশের । সবাই কি জানে আজকে লীনা দীপুর মন খারাপ উড়িয়ে দেবে ।

লীনা নিজে কিছু কি জানে সে কেন এসেছে , কতটুকু প্রস্তুতি তার আছে ! নয়টার কিছুক্ষন পরে মোবাইলে একটা এসএমএস , ' তুমি কোথায় ? দশটায় থাকতে বলেছিলে '? দীপু পাঠিয়েছে । লীনা লিখে দেয় , ' ক্যান্টিনে , নয়টার ক্লাসে আর যাইনি ' । দশটা বাজতে এখনো ৪৫ মিনিট , অনেক সময় বাকী । ব্যাগটা চেয়ারের পেছনে ঝুলিয়ে রাখে । ইচ্ছে করে কোনায় বসেছে নিরিবিলিতে ।

জানালা দিয়ে বাইরে দেখে । ঠিক জানালার পরে পানি ফেলে বোধ হয় । ঘাস , লতা পাতা সব সজীব চকচকে । একটা কুমড়ো গাছ , অনেক পাতার সবুজ বাহার , দুটো সবুজ প্রজাপতি উড়ছে । বসে পড়লে আর আলাদা করা যাচ্ছে না কুমড়ো লতা থেকে পাতা থেকে ।

কার হেটে আসবার শব্দ শোনা যাচ্ছে , ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে দীপু আসছে । তার মানে সেও ক্লাসে যায় নি । এত প্রস্তুতি যার জন্য সে এসে পড়ল বলে পালাতে চাইছে এখন ; সেটা আর হল কই ? উলটো দিকের চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে গিয়ে বসলো না । বলল , ' বসতে পারি '? কি আশ্চর্য ! এই ছেলেটার সাথে গত চার বছর এক সাথে পড়ছে , অনেক ধরনের কথা কানে এসেছে এমন লাগেনি আগে লীনার । আজকে কি হল ! বসতে চেয়ে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন দীপু তারপর অনুমতির অপেক্ষা না করে বসল ।

রাতের ফোনের কথা তুলল না কিছু । বলল , ' নাস্তা খাওয়া হয় নি আমার , তোমার জন্যেও বলি ?' শুধু মাথা নেড়ে না করে দিল লীনা । বাইরে প্রজাপতি দুটো কোথায় গেল , এত সবুজ সবটুকু জায়গায় , মনোযোগ দিয়ে প্রজাপতি খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল । দীপু নাস্তার অর্ডার দিয়ে একটা লম্বা মত প‌্যাকেট বের করে এগিয়ে দিল । বলল ' একটা কলম তোমার জন্য ।

' প্রথম কথা বলল বা বলতে পারল লীনা । বলল , ' থ্যাঙ্কস '। হাতে নিয়ে খুলল প‌্যাকেট লীনা , মেরুন আর সোনালী রঙের সুন্দর একটা কলম । দীপু নিজের নোট খাতাটা এগিয়ে দিল লিখে দেখবার জন্য । সে নোট খাতায় দাগ টেনে দেখল ঝকঝকে লেখা ।

কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকল লীনা , তারপর বলল ' দীপু আমি স্যরি । ডলির ব্যাপারে তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা উচিৎ হয় নি আমার । আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিলাম । ' দীপু , ' শুধু অন্যের জন্য তোমার মায়া হয় , নিজের জন্য হয় না ? নিজেকে কখনো ভালবাসতে শিখবে না তুমি ? তোমাকে সবাই অনেক ভাল বলে আমার রাগ হয় । কেন মানুষ ভাল বলে জানি আমি , কারন তুমি কেবল অন্যের জন্য ভাব ।

নিজের কথা ভাববে না ? আমার কথা ভাববে না ? আমার জন্য তোমার ফিলিংস গোপন করতে গিয়ে তুমি ধরা পড়ে যাও আমার কাছে , সেটা নিজেকে দিয়ে বুঝি আমি ' । কথায় পেয়ে বসেছে দীপুকে আজ । লীনার কানে কথাগুলো ঢুকছে কিনা বুঝতে পারে না দীপু । দেখে লীনা তার নোট খাতার মধ্যে একটা পাতায় নানান ধরনের আঁক কষছে বেখেয়ালে , আঁকছে কাটছে আবার আঁকছে । এক জায়গায় নিজের পুরো নাম লিখলো গোটা গোটা অক্ষরে , আবার কাটল ।

কথা বলতে বলতে দীপু লক্ষ্য করে লীনার নিজেকে সংযত করবার বিফল চেষ্টা । বলে , ' লীনা তোমাকে ভাল দেখাচ্ছে আজ '। লীনা বলে , ' আর কখনো বলবো না তোমাকে আঘাত দেবার মত কোন কথা , বললেও তুমি শুধরে নিও । তুমি কষ্ট পাও সে আমি চাই না , কোনদিনও না । ' আরো কি কি বলবে ভেবেছিল গুলিয়ে গেছে সব দীপুর সামনে বসে , দীপুর কথায় ।

দীপু বলে , ' আজ বিকেলে আসবে সেন্ট্রালে ? ' লীনা বাইরে তাকায় জবাব খোঁজে । সবুজ আর সবুজ চোখে তার । সবুজ সংকেতের মত । দুটো সবুজ প্রজাপতি আবার চোখে পড়ে উড়ছে এলোমেলো । তাকিয়ে ভাবে ও কি হ্যা করে দেবে দীপুকে ! হঠাৎ একটা হলুদ প্রজাপতি , সবুজ দুটোর চেয়ে বড় আর উজ্জল রঙের জানালার প্রায় কাছে চলে আসে তার ।

লীনা কি জানত হলুদ সংকেত হয়ে এমন সময়ে এটার আবির্ভাব হবে এ সময়ে ! দীপুর দিকে তাকিয়ে বলে , ' না দীপু আজ আসবো না বিকেলে , আসা হবে না । ' দীপু নাস্তা শেষ করে , লীনা চা খেতে খেতে দেখে দীপুকে আজ কেমন বাচ্চা ছেলের মত লাগছে , চোখে মুখে খুশী যেন উপচে পড়ছে । দীপুর চা খাওয়া শেষ হতে উঠতে চায় লীনা । ওর কেবলই মনে হয় চারিপাশে কৌতুহলী চোখ জোড়ায় জোড়ায় ওদের দেখছে । বলে , ' উঠতে হবে দীপু , চল '।

কলম ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে গিয়ে দীপুর নোটখাতা ঢুকিয়ে নেয় নিজেরটা ভেবে । দীপু তার নোট খাতার কথা ইংগিত করতে লজ্জা পেয়ে যায় লীনা । তাড়াতাড়ি বের করে দিতে গিয়ে কলমটাও দিয়ে দিতে উদ্যৎ হয় । দীপু বলে , ' শোন মেয়ে তুমি জানই না কি কাছে রাখতে হয় আর কি দিতে হয় । তোমার নিজের জিনিস চিনে নিতে ভুল করো না '।

তারপর বলে , ' এই নোট খাতাটা এখন থেকে আমার কাছে অনেক দামী , এটাতে তোমার লেখা প্রথম চিঠি আছে দুর্বোধ্য ভাষায় । সে ভাষা আমি ছাড়া পৃথিবীর কারো দ্বারা উদ্ধার করা সম্ভব না '। আর দাড়ায় না লীনা , জোরে জোরে পা ফেলে বেরিয়ে আসে ক্যান্টিন থেকে । আরো জোরে পা ফেলে সে পালাতে চায় , পালাতে চায় একজোড়া সকাতর মিনতিভরা চোখের মায়া থেকে । নিজের কাছ থেকেও পালাবার উপায় খোঁজে মরিয়া হয়ে ।

চলবে ...... পরের অধ্যায় Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।