আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা, ২০শ অধ্যায়

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে ১৯শ অধ্যায় Click This Link দরজার কাছে ইমনের গান শোনা গেল , গলা ছেড়ে গাইছে গান । " সেই রাতে রাত ছিল পূর্নিমা....." গানটা কি গেয়ে শোনাবো বন্ধু ? না থাক্ বিবাহ বাসরে উপহার হিসেবে এই গানটা দিয়ে অর্থ সাশ্রয় করাই হবে আমার মত মানুষের বুদ্ধির পরিচয় । ইমনের এমন দীর্ঘ বাক্য রাকিবের বোধশক্তির ধারে দিয়েও গেল না । কেবল 'হু' উচ্চারন করে বলল , 'ইমন তোর কি মনে হয় এসব সত্যি?' ইমনঃ আমি বিদায় হই ,তুই ভেবে ভেবে বের কর সত্যি না মিথ্যা । তবে লীনার সাথে বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলে যাস না ; তোর যা অবস্থা দেখছি ধরাধামে ওই মেয়ে ছাড়া কেউ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না ।

আমার একটা কার্ড রেখে যাই , যাতে মনে রাখিস । হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল ইমন । রাকিবের চারিদিকে কেমন শূন্যতা , মনে হোল কেউ নেই কোথাও । নিজেকেও খুঁজে পায় না সে, সেটাও কি লীনাকে দিয়ে দিয়েছে মনের অজান্তে ? লীনা তো জোর করেনি একটুও । রাকিব হয়তো সমর্পনের জন্যই প্রস্তুত হয়ে ছিল ।

পরদিন রাকিবের ঘুম ভাঙ্গল বেশ দেরীতে । মিসেস রেহানা অফিস চলে গেছেন । ছোট একটা চিরকুট পেল সাইড টেবিলে ," রাকিব , আমার অসুস্থতা তেমন বড় মাপের কিছু নয় , কোন অসুখ আমাকে অসুখী কেউ করতে পারবে না যদি তোমরা সুখে থাকো; সন্তানের কল্যানে মায়ের সব সুখ । আমি বড় ভাগ্যবতী তাই তোমাদের মত সন্তান গর্ভে ধারন করেছি । আশা করি আমাকে কখনো হতাশ করবে না ।

লীনাকে দু:খ দেবে না । " -- তোমার আম্মা । রাকিব আর কিছু ভাবতে চায় না আসলে পারছে না , ভাবলেশ রাকিব বুঝতে পারে এখন শুধু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন । তার মতামত পরিষ্কার জানিয়ে দিল বাড়ীতে এবং এটাও জানালো যে তার ছুটি যেহেতু অল্প দিনের তাই পরিবারের অনিচ্ছা না থাকলে বিয়ের কাজটাও সেরে ফেলতে চায় অবিলম্বে । দুই ভাইয়ের পরিবারে এবং আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে আনন্দের ঘন্টাধ্বনি বাজতে থাকল তুমুল।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন এগিয়ে এল । সন্ধ্যারাতে বিয়ের অনুষ্ঠান ; সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারে বউ সেজে ঢুকতে গিয়ে লীনা ঠিক মনে করতে পারছে না কার বিয়ে কিসের এত আলো সাজ । বিয়ের আয়োজনে নানান আনুষ্ঠানিকতায় এত ধকল যাচ্ছে যে লীনার ক্লান্তি এসে যাচ্ছে । একে একে সবাই চলে গেল যার যার বাড়ী; লীনাও গেল একই বাড়ীর অন্য ফ্লোরে অন্য পরিচয়ে এক নতুন জীবনে । রাকিবের ঘরটাকে যে কখন এমন করে সাজিয়েছে একেবারে অন্যরকম লীনা এই ক'দিনে জানতে পারেনি ।

সব কিছু যেন লীনার পছন্দের -- ঘরটা চেনাই মুশকিল হয়ে পড়ছে । ভারী শাড়ী গহনা নিয়ে বিছানার কোনায় বসতেই রাকিব বললো, 'সারাদিন অনেক কষ্ট করেছিস ক্লান্ত লাগছে তাই না ? আমার অনেক খারাপ লাগছে । তুই চেঞ্জ করে নেয় , তোর যাতে কমফোর্ট ফিল হয় তেমন ড্রেস পরে ফেল । আমি রুমানাকে বলে তোর জন্য ড্রয়ার গুছিয়ে রেখেছি '। লীনা অবাক হয়ে দুনিয়া ভুলে মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকে ।

রাকিব একটা চকলেটের বক্স বের করে খুলে ধরে লীনার সামনে । লীনার প্রিয় ক্যাডবেরী সব । বলে , ' তুই খুব পছন্দ করতিস ছোট বেলা থেকেই দেখতাম ; সারাদিন খাওয়া কি দিয়ে কি হল ঠিক নেই , ধর সব তোর জন্য আমি এনে রেখেছিলাম । ' লীনা আবেগ বিহ্বল । এই মানুষটা তাকে এমন করে ভালবাসে লীনা অবাক হয় ।

লীনার চোখে পানি টলমল, রুখতে চায় পাছে রাকিব দেখতে পেয়ে কি না কি গোলমাল বাধিয়ে ফেলে ; বড় বেসামাল তার চোখের পানি , ধরা পড়ে যায় লীনা । রাকিব লীনার কাছে বসে ওর হাতদুটো হাতের মধ্যে নিয়ে চুপ করে থাকে কিছুক্ষন , তারপর বলে , ' আমি বুঝতে পারছি না তোকে বিয়ে করে কষ্টে ফেলে দিচ্ছি কিনা, আসলে বাসার সবাই মিলে কেমন করে কি সব ঘটিয়ে ফেলল । আমি কি কোন ভুল করে ফেললাম ? আমার খারাপ লাগছে । ' লীনা শুনতে শুনতে আর পারল না , বলল, ' আমি এখুনি চাচীকে ডাকছি, ডাকব ? কি শুরু করেছো তুমি , তোমার নামে নালিশ করে দেব ?' লীনার বলবার ভঙ্গীতে হেসে ফেলল রাকিব । বলল, ' কি যে একটা বিয়ে করলাম শেষ অবধি , নিজের আম্মা বলে যে একজন ছিল তাকে মনে হয় আর পাওয়া যাবে না সে ভূমিকায়, এখন উনি আমার স্ত্রীর শাশুড়ী হয়ে সারাক্ষন খবরদারী করবেন এবং অতীত পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় সারাক্ষন মিসেস লীনার পক্ষে থাকবেন ।

আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার । " লীনা : আর আমার আম্মা ? সেও তো রাকিব বলতে অজ্ঞান । রাকিবের কোন দোষ খুঁজে পান না কোনভাবে , উনি তো আছে তোমার মাদার ইন ল । ' রাকিব; মানছি, কিন্তু তোর পাশে তোর মাদার ইন ল বেশী শক্তিশালী, আমার মাদার ইন ল নিপাট ভাল মানুষ । খুব অসুবিধার মধ্যে পড়ে গেলাম ।

দুজনেই হেসে হালকা হল যেন । রাকিব হঠাৎ একটা কি নিয়ে লীনার হাতে পরাবে বলে হাতের গহনা সরিয়ে জায়গা খুঁজতে লীনা দেখে নারকেল পাতার একটা ঘড়ি । খুব যত্ন করে পরিয়ে দিল লীনার হাতে । বলল, ' তোর মনে আছে লীনা ছোটবেলায় ছাদে এই ঘড়িটা বানিয়ে দিলে তুই সারাক্ষন পরে থাকতি , আর এটার লোভ দেখিয়ে তোকে দিয়ে কত কিছু করানো যেত , মনে পড়ে ? নে এটা পরিয়ে দিলাম এবং এখন থেকে আমার আদেশ শিরোধার্য তা না হলে নিয়ে নেব । যা,তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড় ।

ঘরের আলো নিভিয়ে দিল । বাইরে চাঁদ , আজ জোসনা । চাঁদের আলোর বন্যায় ক্লান্তি ভেসে গেছে রাকিবের , তার মনে জোসনার মত অস্ফুট আলোর আধেক বলা কথার মত ঢেকে থাকা সব কথারা জাগিয়ে রাখে তাকে। ফাগুনের এই জোসনায় পৃথিবী ঢেকে গেছে , চারিধারে মায়াবী আলো । ক্লান্ত শ্রান্ত লীনা বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল ।

রাকিব ওর মাথায় চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবল , 'কখনো আমি এই মেয়েকে কষ্ট দেব না , কিছুতেই না । ' এই একই রাতে একই চাঁদের জোসনা আঁচলে ঢেকে রাখা অঞ্জনগাছি গ্রামে এক যুবক একাকী বসে আছে; হারিয়ে যাওয়া পারুল নদীর অদৃশ্য ধারায় কান পেতে শুনছে খেয়ালী যুবক জোসনার মাতাল সূর । নদী কি সত্যি হারায় ? না হারাতে পারে ? নদীও কি সম্পর্কের মত জোয়ার ভাটার খেলাকে আগলে রাখে অদৃশ্য ? কে জানে ! চলবে .....  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।