আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা, ষষ্ঠ পর্ব ।

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে

পঞ্চম পর্ব Click This Link সাপ্তাহিক ছুটি শেষে যথারীতি ক্লাস শুরু । দীপুকে প্রতিদিন সবার আগে ক্লাসে ঢুকতে দেখা যায় । বন্ধুরা বলে ওকে ঝাড়ুদারের চাকরী যোগাড় করে দেবে । বেচারা এত সকাল সকাল ক্লাসরুমে ঢোকে ঝাড়মোছ করবার সময় । বাসায় দীপু মাকে নানা কাজে সহযোগীতা বেশী করছে ইদানীং ।

বড়ভাইয়ের আদেশ অনুরোধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে । ছোট ছেলের এহেন পরিবর্তনের কোন কারন খুঁজে পায় না তার মা । আর লীনা ? তার সবকিছুতে চমকে ওঠা বিনা কারনে ! আগে থেকে দীপুকে তার ভাল লাগে । কই তখন তো এমন অনুভূতি কাজ করেনি ! ভালবাসলে পরে মেয়েদের চোখে চেহারায় আচরনে প্রজাপতির রঙীন পাখার আলতো স্পর্শের শিহরন জাগে শুনেছে সে । কিন্তু তাকে দেখে এমন মনে হবার কথা কি অন্যদের ? সেদিন একটা কলম দিল দীপু আর ও সেটা নিল ।

যা কথা হয়েছিল সেদিন সে কি বিশেষ কিছু ছিল ? কই মনে পড়ে না লীনার ! মনে পড়ে সেদিন তাদের কথার সূর ছিল অচেনা , দূর আকাশের গায়ে ছড়ানো ছিল যা এতদিন । কচি পাতায় কুঁড়িতে নব বসন্ত বাতাসের মত নি:শব্দ কথা ছিল তাদের চোখে সেদিন । যা কিছু বলেছিল তার চেয়ে বেশী না বলা কথারা উঁকি দিয়ে গেছে , দোলা দিয়ে গেছে সেদিন । সে কথা জানে দীপু , সে কথা অস্বীকার করতে পারেনা লীনা । ক্লাসে আসতে তার সাজতে ইচ্ছে করে মনের মত দীপুর জন্য , সাজতে পারে না দীপুর জন্য লজ্জায় ।

এ অনুভূতির নাম কি ? কেন এমন হয় ? লেখা পড়া , এসাইনমেন্ট , আসা যাওয়া এসবে সময় কেটে যায় । দীপু একদিন জানতে চেয়েছিল লীনাকে বাসায় থাকবার সময় ফোন করায় কোন অসুবিধা আছে কিনা । লীনা বলেছে , " খুব প্রয়োজন না হলে না করাই ভাল " । এর মাঝে একদিন ইউনিভার্সিটি বাস মিস করে লীনা , সি এন জি পেতে দেরী হয়ে যায় তার । একটা পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসে ।

ওদিকে দীপু লীনার ক্লাসে আসতে দেরী দেখে কল করে । কল লিসিভ করছে না লীনা । লীনার সাথে একই বাসে আসে তৌহিদ তাকে ক্লাসে ঢুকতে দেখে উৎকন্ঠা বেড়ে যায় দীপুর । রবি কে বলে , ' কি হোল , লীনা ফোন ধরছে না , ক্লাসেও আসছে না । কোন বিপদ হলো নাকতো ?' ক্লাস শুরু হয়ে যায় ।

দীপুর অস্থির লাগে । কি হোল লীনার ? অসুস্থ ? বাসায় সমস্যা ? রাস্তায় কোন দুর্ঘটনা ? আর ভাবতে পারে না মাথা ঝিমঝিম করে । এমন সময় হনহনিয়ে লীনাকে ক্লাসে ঢুকতে দেখে দীপুর সব উৎকন্ঠা অস্থিরতা মূহুর্তে ভীষন অভিমানে রূপান্তরিত হোল । রাগ হোল নিজের ওপর এমন একটা মেয়ের জন্য কষ্ট পাওয়ায় । ক্লাস শেষে রবি ডেকে নিল লীনাদের চা খাবার জন্য ।

চা খেতে গিয়ে মোবাইলে দেখে লীনা মিসড কল , এসএমএস অনেক । দীপুর পাঠানো । সি এনজিতে আসবার সময় রাস্তায় বিভিন্ন শব্দে আর সি এন জি তে ওঠার অনভ্যাসে অতি সতর্কতায় মোবাইলের কোন শব্দ বা চিন্তা তার কাছে পৌছে নি । দীপুকে দেখে বোঝে ওর কারনে দীপুর কতটা খারাপ কেটেছে সময় । শান্ত বলে , ' লীনা তোমার দেরী দেখে , ফোন ধরছো না দেখে চিন্তায় চিন্তায় দীপুর মাথার অর্ধেক চুল ঝরে গেছে ।

ক্লাসে আসবার সময়ও ছেলেটার মাথায় কত ঘন চুল ছিল । এখন খুব রেগে আছে দীপু । ' রবি দীপুকে বলে , ' রাগ করেছো দোস্ত ? ' দীপু হেসে ফেলে । রবি বলে , ' এ যে দেখছি অনু পরিমান রাগ ! অনুরাগ ! কি হবে এখন ? এ রাগ ভাঙ্গানোর ক্ষমতা আছে কার ? ' সবার হাসি তামাশার মাঝেও লীনার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে একটা ব্যাথার মত ঠিক ব্যাথা নয় , দীপুর জন্য । দীপুর দিকে তাকাতে পারে না সরাসরি ।

রবির দিকে তাকিয়ে বলে , " স্যরি" । রবি অবাক হবার ভান করে , বলে ,' কার কথা কাকে ডেলিভারী !' সেদিন বিকেলে দীপুর একটা এসএমএস পায় লীনা , ' আমার ফিলিংস কি তুমি বুঝতে পারো , আমার ভাল লাগা ? পারো না মনে হয় '। লীনার ইচ্ছে করে বলতে , ' তোমাকে দেখবার আগে থেকে চিনতাম । তুমি পুরোন আমার সত্ত্বার মত । চেতনার অতন্দ্র প্রহরী আমার ।

একরাশ সুখ সাজানো ভেলায় সাথী তুমি আমার , শুধু তুমি । আমার দু:খবীণার ছেড়া তারের সূর কখনো দিক ভোলেনা তুমি আছো বলে । তোমাকে বুঝতে চাওয়ার সময় কোথায় ? নিজেকে বুঝে উঠতে পারি না । ' এসবের কিছুই বলা হয় না । সে এস এম এস করে , ' জানি না ' ।

চলবে.......... পরের অধ্যায় Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।